আল্লাহর ৯৯ নাম বাংলা অর্থ সহ, আল্লাহর ৯৯ নাম বাংলায় অর্থসহ আল্লাহর ৯৯ নাম, অর্থ সহ আল্লাহর ৯৯টি নাম, আল্লাহর গুণ ও বৈশিষ্ট্য সমূহ কি? মুসলিমরা কোন আল্লাহর ইবাদত করে, আল্লাহ কি? আল্লাহ কে? আল্লাহর পরিচয় কি? আল্লাহর বৈশিষ্ট্য কি? আল্লাহর ক্ষমতা কি? আল্লাহর কোন নামের অর্থ কি, কোন নাম দ্বারা কি বুঝুয়? আমি মনে করি একজন মুসলিম হেসেবে এগুলো প্রত্যকের জানা উচিত।
আপনার জীবনে জন্য সবচেয়ে জরুুরি পোষ্ট এটি, কারণ আপনি যদি মুসলমান হয়ে থাকেন। অবশ্যই আপনাকে আগে আল্লাহর পরিচয় জানতে হবে।
“আল্লাহর ৯৯ নাম বাংলা অর্থ সহ” শীর্ষক এই পোষ্টটি মনোযোগ সহ সম্পূর্ণ পড়া আপনার জীবনের একটি সেরা কর্ম সমূহের মাঝে একটি (নিজের রবের পরিচয় জানা)।
আশা করি এই পোষ্টটি পড়লে আপনার নলেজ এবং ঈমান মজবুদ হবে।
আপনি মুসলিম হয়ে কি করবেন, যদি না আল্লাহ ব্যাপারেই বিস্তারিত না জানেন!
তাই সময় না থাকলেও, অনুরোধ থাকলো পোষ্টটি সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য।
আপনি যদি ইসলাম ব্যাতীত ভিন্ন ধর্মের অনুসারী হয়ে থাকেন, তারপরেও, আপনার জানা উচিত যে- মুসলিমরা কোন আল্লাহর ইবাদত করে, আল্লাহ কি? আল্লাহ কে? আল্লাহর পরিচয় কি? আল্লাহর বৈশিষ্ট্য কি? আল্লাহর ক্ষমতা কি? আল্লাহর কোন নামের অর্থ কি, কোন নাম দ্বারা কি বুঝুয়?
নিম্নে আল্লাহর ৯৯ নাম বাংলা অর্থ সহ তুলে ধরা হলো-
১. (আল-হায্যু) – চিরঞ্জীব;
২. (আল-কায়্যুমু) – স্ব-প্রতিষ্ঠ, সংরক্ষণকারী;
- এ বিশ্বাস করা যে, আল্লাহ্ তা’আলা চিরঞ্জীব। নিজের জীবন না থাকলে তিনি সৃষ্টিকর্তা হবেন কিভাবে?
- আল্লাহ্ তা’আলা যে চিরকাল থেকে আছেন, তাঁকে কেউ প্রতিষ্ঠিত করেননি। বরং তিনি নিজে নিজে প্রতিষ্ঠিত। সমস্ত সৃষ্টির সত্তা ও গুণাবলীর অস্তিত্ব দানকারী ও তার সংরক্ষণকারী।
- অর্থাৎ, সবকিছুর অস্তিত্ব তাঁর দ্বারা প্রতিষ্ঠিত। তাঁর অস্তিত্ব কারও দ্বারা প্রতিষ্ঠিত নয়।
(আল্লাহর ৯৯ নাম বাংলা অর্থ সহ)
৩. (আল-হাক্কু) – সত্য;
- তিনি প্রতিষ্ঠিত সত্য এবং হক মা’বূদ। তাঁর খোদায়ী এবং শাহানশাহী সত্য ও যথার্থ। তিনি ব্যতীত আর সব মিথ্যা ও বাতিল।
৪. (আল-আওয়ালু) – প্রথম অর্থাৎ, অনাদি;
৫. (আল-আখিরু) – শেষ অর্থাৎ, অনন্ত;
৬. (আল-বাকী) – চিরস্থায়ী;
- তিনি অনাদিকাল থেকে বিদ্যমান অর্থাৎ, তাঁর অস্তিত্ব অনাদিকাল থেকে বিরাজমান। তাঁর অস্তিত্বে কখনও অনস্তিত্ব ছিল না। তাঁর সত্তা অনাদি।
- আল্লাহর সত্তা ব্যতীত অন্য কোন কিছু অনাদি নয়। যারা মৌলিক উপাদান, সূরত, বুদ্ধি ও আসমান সমূহকে অনাদি বলে থাকে, ইমাম গাযযালীর মতে তারা কাফের।
- তাঁর অস্তিত্ব অবশ্যম্ভাবী হওয়ার কারণেই তাঁর অস্তিত্ব সদা সর্বদা টিকে থাকবে। অর্থাৎ, তিনি চির বাকী, অনন্ত। তিনি যেমন অনাদি, তেমনি অনন্ত। তাঁর অস্তিত্বে যেমন কখনও অনস্তিত্ব ছিল না, কখনও অনস্তিত্ব আসবেওনা।
(আল্লাহর ৯৯ নাম বাংলা অর্থ সহ)
৭. (আয্ যাহিরু) – প্রকাশ্য;
৮. (আল-বাতিনু) – গুপ্ত;
- আল্লাহর অস্তিত্ব দেখা যায় না, তাঁর অস্তিত্ব গোপন। অর্থাৎ, তিনি গুপ্ত।
- তাঁর অস্তিত্ব সুক্ষ্ম ও গুপ্ত হওয়া সত্ত্বেও সৃষ্টির অণু-পরমাণু পর্যন[] তাঁর অস্তিত্বের ও তাঁর কুদরতের নিদর্শন বহন করে চলেছে। এ হিসেবে তিনি প্রকাশ্য।
৯. (আল-আলীমু) – মহাজ্ঞানী;
১০. (আল-খবীরু) – সর্বজ্ঞ,
১১. (আল-লাতীফু) – সূক্ষ্ম;
- বিশ্বাস করা যে, আল্লাহ তা’আলা সমস্ত সৃষ্টিকূলের সর্ববিষয়ে সম্যক অবগত ও জ্ঞানী। কোন কিছু তাঁর থেকে গোপন নয়। ক্ষুদ্র বৃহৎ কোন কিছু তাঁর জানার আওতা থেকে বাইরে নয়।
- সমগ্র মাখ্লূকের ক্ষুদ্র-বৃহৎ, জাহের-বাতেন সর্ব বিষয়ে তিনি অবগত। অর্থাৎ, তিনি মহাজ্ঞানী। কেউ কেউ বলেছেন যিনি বাতিনী বিষয় জানেন তাকে ‘খাবীর’ বলে এবং সাধারণ ভাবে জাননেওয়ালাকে ‘আলীম’ বলে।
- আল্লাহ তা’আলা যখন সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা, তখন সবকিছুর যাবতীয় জ্ঞান অবশ্যই তাঁর থাকবে। স্রষ্টা তাঁর সৃষ্টির বিষয়ে অনবগত থাকবেন তা হতে পারেনা।
- আল্লাহর জ্ঞান অনাদি। তিনি অনাদিকাল থেকে সর্ববিষয়ে অবগত ৷ ভবিষ্যতে তাঁর মালূকের মধ্যে যা সৃষ্টি হবে বা যেসব অনিত্ব বিষয় ঘটবে, সেসব বিষয়ে তাঁর অনাদি জ্ঞান রয়েছে। অর্থাৎ, তাঁর জ্ঞানে অনিত্ব কোন বিষয়ের জ্ঞান সংযোজিত হয় না। বরং যে কোন ঘটিত অনিত্ব বিষয় সম্বন্ধে অনাদিকাল থেকেই তিনি অবগত।
- গায়েব সম্পর্কিত জ্ঞান আল্লাহর খাস সিফাত বা গুণ। অতীত ও ভবিষ্যতের যাবতীয় বিষয়ের জ্ঞান এই পর্যায়ের অন্তর্ভুক্ত যা একমাত্র আল্লাহই জানেন।
- তিনি সবকিছুর জাহের বাতেন সম্বন্ধে যেমন অবগত, তেমনিভাবে সবকিছুর হাকীকত ও স্বরূপ সম্বন্ধেও অবগত অর্থাৎ, তিনি সর্বজ্ঞ।
- আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে হাযির নাযির জানা স্পষ্ট গোমরাহী ও বাতিল পন্থা।
- তিনি সূক্ষ্মদর্শী অর্থাৎ, এমন গোপন ও সুক্ষ্ম বিষয়ও তিনি অনুভব করেন যেখানে দৃষ্টি পৌঁছতে সক্ষম নয়।
(আল্লাহর ৯৯ নাম বাংলা অর্থ সহ)
১২. (আল-হাকীমু) – প্রজ্ঞাময়;
- আল্লাহ তা’আলার জ্ঞান পূর্ণত্যের স্তরে উপনীত। যেহেতু তিনি সবকিছুর যাহের বাতেন এবং সবকিছুর প্রকৃত স্বরূপ ও মূল রহস্য সম্বন্ধে অবগত, এ হিসেবে তাঁর জ্ঞান পূর্ণত্বের স্তরে উপনীত। তাঁর এই পূর্ণ জ্ঞানের ভিত্তিতেই তাঁর সব কাজ-কর্ম ও কথা হয়ে থাকে প্রজ্ঞাময়। অতএব তিনি হেকমতওয়ালা বা প্রজ্ঞাময়। হেকমত বলা হয় পূর্ণ জ্ঞানের ভিত্তিতে কাজ-কর্ম এবং কথা যথাযথ ও পাকাপোক্ত হওয়া।
১৩. (আল-ওয়াহিউ) – সর্বব্যাপী;
- তাঁর জ্ঞান ও দান সবটাই ব্যাপক। তাঁর জ্ঞান ও দানের আওতা থেকে কোন কিছু বাইরে নয়। তিনি তাঁর জ্ঞান ও নেয়ামত দিয়ে সবকিছুকে বেষ্টন করে আছেন- এ অর্থে তিনি সর্বব্যাপী।
১৪. (আল-মালিকু) – অধিপতি, সম্রাট;
১৫. (মালিকুল মুল্ক) – সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক;
- তিনি সকলের সম্রাট বা অধিপতি এবং সব কিছুর প্রকৃত মালিক। অতএব তিনি যা যেভাবে ইচ্ছা তৈরি করেন। সবকিছুর ব্যাপারে হস্তক্ষেপ ও সবকিছু পরিচালনার ব্যাপারে তিনি একচ্ছত্র ইচ্ছার অধিকারী।
- তিনি সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী। অতএব তিনি যেমন ইচ্ছা তেমন হুকুম করবেন, যেমন ইচ্ছা তেমন হস্তক্ষেপ করবেন, কেউ তাঁর হুকুম ও হস্তক্ষেপে বাঁধ সাধতে পারবে না। তিনি রাজাধিরাজ তাই যাকে ইচ্ছা রাজত্ব দান করবেন, যার থেকে ইচ্ছা রাজত্ব ছিনিয়ে নিবেন।
- তিনি সকলের মালিক আর সকলে তাঁর গোলাম। তাই মালিক হিসেবে গোলামকে তিনি যে হুকুম করবেন এবং তাদের ব্যাপারে যে হস্তক্ষেপ করবেন তাতে জুলুমের প্রশ্ন উঠতে পারে না। বিনা অপরাধেও যদি তিনি কাউকে শাস্তি দেন তাতেও কোন জুলুমের প্রশ্ন উঠতে পারবে না। কারণ জুলুম বলা হয় অন্যের মালিকানায় তার অনুমতি ছাড়া হস্তক্ষেপ করাকে। আর সব কিছুই আল্লাহ মালিকানা। তবে হ্যাঁ নেক কাজের উপর তিনি পুরস্কার দেয়ার ওয়াদা করেছেন। আর সে ওয়াদা অবশ্যই তিনি পূরণ করবেন। আল্লাহ্ কোন ওয়াদা খেলাপ করেন না।
- আল্লাহ্ তা’আলা মহা সম্রাট, রাজাধিরাজ। যা ইচ্ছা, যাকে যেমন ইচ্ছা হুকুম করেন, যেমন ইচ্ছা রাজ্য পরিচালনা করেন। এই হুকুম প্রদান ও রাজ্য পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় বাকশক্তি (‘কালাম’ ছিফাত) তাঁর রয়েছে। তাই আল্লাহর কালাম ছিফাত প্রমাণিত। বাকশক্তি না থাকা একটি দোষ। আল্লাহ তা’আলা যেহেতু সব দোষ থেকে মুক্ত, তাই তাঁর বাকশক্তি থাকা অপরিহার্য। তবে তাঁর কথা অন্য কারও কথার মত নয়, যেমন তাঁর অস্তিত্ব অন্য কারও অস্তিত্বের মত নয়।
(আল্লাহর ৯৯ নাম বাংলা অর্থ সহ)
১৬. (আল-মুইয্ষু) – সম্মানদাতা;
১৭. (আল-মুযিল্লু) – অপমানদাতা বা সম্মান হরণকারী;
- তাঁর একচ্ছত্র অধিকার স্বীকৃত। তিনি যাকে ইচ্ছা সম্মান দিবেন, কারণ সম্মান প্রদান তাঁর এখতিয়ারে। তিনি সম্মানদাতা।
- আবার যাকে ইচ্ছা তার থেকে সম্মান ছিনিয়ে নিবেন, কারণ অপমান প্রদান বা সম্মান হরণও তাঁর ইচ্ছাধীন। তিনি অপমানদাতা। তবে আল্লাহ্তা ‘আলা কারও অকল্যাণ করেননা, তাঁর কাছে কল্যাণই কাম্য।
১৮. (আল-খাফিযু) – অবনতকারী;
১৯. (আর্-রাফিউ) – উন্নয়নকারী;
- যার যতটুকু সম্মান ও স্তর রয়েছে তার সেই সম্মান ও স্তরকে তিনি নতও করেন। তিনি আল-খাফিযু ৷
- আবার যার যতটুকু সম্মান ও স্তর রয়েছে তার সেই সম্মান ও স্তরকে তিনি উন্নতও করেন। তিনি আর্-রাফিউ। এই নত ও উন্নত করার মধ্যে রিযক হরাস বৃদ্ধি করাও অন্তর্ভুক্ত।
২০. (আল-কাদিরু) – শক্তিশালী;
- তিনি তাঁর কোন কাজে উপকরণের মুখাপেক্ষী নন। কোন আসবাব ছাড়াই তাঁর সবকিছু করার ক্ষমতা রয়েছে। সর্ববিষয়ে তিনি ক্ষমতাবান।
২১. (আল-মুকতাদিরু) – পূর্ণ ও স্বয়ংক্রিয় শক্তির অধিকারী;
- তাঁর এই ক্ষমতা স্বয়ংক্রিয় ক্ষমতা এবং ত্রুটিমুক্ত ও পূর্ণাঙ্গ ক্ষমতা।
২২. (আল-ক্বাবিয়্যু) – অসীম ও অটুট ক্ষমতার অধিকারী;
- তিনি সীমাহীন ও অনন্ত ক্ষমতার অধিকারী, তাঁর ক্ষমতা কখনও শেষ হবে না এবং কখনও তাতে কোন দূর্বলতা দেখা দেয় না।
২৩. আল-মাতীনু) – সুস্থিত এবং অসম ক্ষমতার অধিকারী;
- তাঁর ক্ষমতা সুস্থিত ও দৃঢ়, যাতে চিড় ধরার বা দূর্বলতা আসার কোন অবকাশ নেই। এবং কেউ তাঁর ক্ষমতার সমকক্ষ নেই।
২৪. (আল-আযীযু) – পরাক্রমশালী,
- তাঁর ক্ষমতা ও শক্তিবলে তিনি পরাক্রমশালী, সকলকে তিনি পরাভূত করতে সক্ষম, কেউ তাকে পরাভূত করতে বা কেউ তাঁর মোকাবিলা করতে সক্ষম নয়।
২৫. (আল-মানিউ) – প্রতিরোধকারী;
- আল্লাহ যা কিছুই করতে চান তা কেউ প্রতিহত করতে পারে না। তিনি কারও কল্যাণ করতে চাইলে তা কেউ ঠেকাতে পারে না, এমনি ভাবে কারও ক্ষতি করলে তাও কেউ প্রতিহত করতে পারে না। তিনি প্রতিরোধকারী।
২৬. (আল-কাহারু) – মহাপরাক্রান্ত;
- তাঁর ক্ষমতা ও বিক্রমের সামনে সকলে অক্ষম ও পরাভূত। তিনি মহাপরাক্রান্ত।
২৭. (আল-জাব্বারু) – প্রবল বিক্রমশালী;
- আল্লাহ্ তা’আলা প্রবল বিক্রমশালী, কেউ তাঁকে অক্ষম করতে সক্ষম নয়।
২৮. (আস্ সামীউ) – সর্বশ্রোতা,
২৯. (আল-বাছীরু) – সম্যক দ্রষ্টা;
- আল্লাহ তা’আলা সর্বশ্রোতা। সবকিছু তিনি শুনতে পান। একই সাথে আল্লাহ পাক সমস্ত আওয়াজ শুনতে পান; তাঁর জন্য এক আওয়াজ অন্য আওয়াজ শোনার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হয়না।
- তিনি সর্বদ্রষ্টা। সবকিছু তিনি দেখতে পান। এমনকি মনের চিন্তা বা কল্পনার গোপনীয় বিষয়ও তার অগোচর বা অদেখা নয়। একই সাথে তিনি সবকিছু দেখতে পান, এক দৃশ্য অন্য দৃশ্য দেখার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হয়না।
৩০. (আল-খালিকু) – স্রষ্টা;
৩১. (আল-মুবদী) – আদি স্রষ্টা;
৩২. (আল-বারী) – উদ্ভাবনকর্তা;
৩৩. (আল-মুসাওবিরু) – আকৃতিদাতা;
৩৪. (আল-বাদীউ) – নমূনা বিহীন সৃষ্টিকারী;
- এ বিশ্বাস করা যে, আল্লাহ্ তা’আলা সমস্ত জগতের সৃষ্টিকর্তা।
- তিনি সৃষ্টিকর্তা এবং আদি সৃষ্টিকর্তা (আল-মুবদী)।
- সবকিছুর নমূনাও আল্লাহ্ তা’আলা উদ্ভাবন করেছেন। অর্থাৎ, তিনি আল-বারিউ।
- সবকিছুর আকৃতিও আল্লাহ্ তা’আলা দান করেছেন। অর্থাৎ, তিনি আল-মুসাওবিরু। বিভিন্ন রকম আকৃতি আল্লাহ্ তা’আলা সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টি করা এসব আকৃতি একটা অন্যটা থেকে ভিন্ন ও স্বতন্ত্র।
- জগত সৃষ্টি করার সময় তার সামনে কোন আসল বা নমুনা ছিল না। কোন আসল ও নমুনা ছাড়াই তিনি সবকিছু সৃষ্টি করেছেন। অর্থাৎ, তিনি আল-বাদীউ।
- আল্লাহ্ তা’আলা সবকিছুর সত্তা, সবকিছুর গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্য সমুদয়ের সৃষ্টিকর্তা। এমন নয় যে, তিনি শুধু একটি বস্তু সৃষ্টি করেছেন অতপর তার গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্য আপনা আপনি সৃষ্টি হয়েছে।
- আল্লাহ্ তা’আলা মানুষের সৃষ্টিকর্তা, তাদের কর্ম-এরও সৃষ্টিকর্তা। মানুষ তার কর্মের সৃষ্টিকর্তা নয়।
- আল্লাহ্ তা’আলা যা কিছু সৃষ্টি করেছেন, যা কিছু করেছেন সবকিছুর সাথে তাঁর ইরাদা সংশ্লিষ্ট। তাঁর ইরাদা ব্যতীত কোন কিছু অস্তিত্বে আসতে পারে না। তিনি ইরাদা করেন অতপর সেটাকে সৃষ্টি করেন। এমন নয় যে, তিনি ইরাদা করেন আর সেটা হয় না।
(আল্লাহর ৯৯ নাম বাংলা অর্থ সহ)
৩৫. (আন্ নূরু) – জ্যোতির্ময়;
৩৬. (আল-হাদী) – পথ প্রদর্শক;
- আল্লাহ তা’আলা নূর বা জ্যোতির্ময়, হাদী বা হেদায়েত দানকারী ও পথ প্রদর্শক। তিনি যাকে ইচ্ছা পথ দেখান অর্থাৎ, হেদায়েত দান করেন যাকে ইচ্ছা গোমরাহ করেন। মু’তাযিলাদের মত বক্তব্য ঠিক নয় যে, বান্দার জন্য যা কল্যাণকর আল্লাহর উপর তা করা ওয়াজিব। অতএব হেদায়েত মানুষের জন্য কল্যাণকর বিধায় সকলকে হেদায়েত করা আল্লাহর উপর ওয়াজিব। তাদের বক্তব্য ঠিক নয় এ কারণে যে, কুরআনে কারীমে আল্লাহ্ তা’আলা হেদায়েতকে তাঁর ইচ্ছাধীন বলেছেন।
- আল্লাহর ইরাদা অনাদিকাল থেকে বিদ্যমান। যা কিছু তিনি ভবিষ্যতে নির্দিষ্ট সময়ে সৃষ্টি করবেন বা যা তাঁর সৃষ্টির মধ্যে যথাসময়ে ঘটবে তার সাথে তাঁর ইচ্ছা ও ইরাদা অনাদিকাল থেকেই বিজড়িত রয়েছে।
৩৭. (আর-রাশীদু)- সত্যদর্শী
- তিনি শুধু পরকালের বিষয়ে পথ প্রদর্শনকারী নন বরং তিনি আর-রাশীদু বা জগতের পথ প্রদর্শনকারী অর্থাৎ, দ্বীনী ও দুনিয়াবী যাবতীয় বিষয়ে পথ প্রদর্শনকারী। এবং তাঁর যাবতীয় পদক্ষেপ সত্য ও সঠিক। তিনি সত্যদর্শী (আর-রাশীদু)।
৩৮. (আল-মুহ্য়ী) – জীবনদাতা;
- সৃষ্টির সবকিছুর মধ্যে জীবন সঞ্চারকারীও তিনি। তিনিই জীবনদাতা (আল-মুহ্য়ী)। অন্য কেউ জীবনদাতা (আল-মুহয়ী) নয়। তিনি ব্যতীত কোন প্রাণীর মধ্যে আপনা আপনি কোন বিবর্তন প্রক্রিয়ায় বা প্রাকৃতিক নিয়মের অধীনে জীবন সঞ্চারিত হয়নি। যারা ডারউইন উদ্ভাবিত বিবর্তন প্রক্রিয়ায় মানব জীবন সৃষ্টি হওয়ার প্রবক্তা, তারা আল্লাহর এই ছিফাতকে অস্বীকারকারী কাফের।
৩৯. (আল-ওয়াহিদু) – একক;
৪০. (আল-আহাদু) – এক অদ্বিতীয়;
- তিনি একক। তাঁর কোন দ্বিতীয় অর্থাৎ, শরীক বা সমকক্ষ নেই।
- তাওহীদ বা আল্লাহর একত্বে বিশ্বাস করতে হবে। এই তাওহীদ বা একত্ব আল্লাহর সত্তার ক্ষেত্রে যেমন, তাঁর গুণাবলী ও ইবাদতের ক্ষেত্রেও তেমন।
- অর্থাৎ, আল্লাহর সত্তা যেমন এক, তাঁর সত্তায় যেমন কেউ শরীক নেই, তেমনিভাবে তাঁর গুণাবলীতেও কেউ শরীক নেই এবং একমাত্র তাঁরই ইবাদত করতে হবে, ইবাদতেও তাঁর সাথে কাউকে শরীক করা যাবে না।
- আর যখন তাঁর শরীক না থাকা প্রমাণিত তখন তাঁর সন্তানাদি না থাকাও প্রমাণিত। কেননা পুত্র পিতার শ্রেণীভূক্তই হয়ে থাকে। অতএব আল্লাহর পুত্র থাকলে সেও খোদায়ীতে শরীক থাকবে। অথচ আল্লাহ্ শরীক থেকে পবিত্র।
- তাওহীদের বিপরীত হলো শিরক। অতএব একাধিক মা’বূদে বিশ্বাস করা শির্ক। যেমন অগ্নিপূজক সম্প্রদায় কল্যাণের মা’বূদ হিসেবে ‘ইয়াযদান’ এবং অকল্যাণের মা’বূদ হিসেবে ‘আহরামান’ কে বিশ্বাস করে। এটা শির্ক।
- এমনিভাবে খৃষ্টানরা তিন খোদা-এর প্রবক্তা। উক্ত তিন খোদা হলোঃ পিতা অর্থাৎ, আল্লাহ্, পুত্র অর্থাৎ, ঈসা (যীশু) [আঃ] এবং পবিত্ৰাৱা অৰ্থাৎ, হযরত জিব্রাঈল (আঃ) বা মতান্তরে মরিয়াম (মেরি) [আঃ]। হিন্দুগণ ব্রহ্মাকে সৃষ্টিকর্তা, বিষ্ণুকে পালনকর্তা এবং মহাদেবকে সংহারকর্তা বলে মানে; এভাবে তারা একাধিক ভগবানে বিশ্বাসী। এছাড়াও তারা বহু দেবদেবীতে বিশ্বাস করে, তারা প্রায় ৩৩ কোটি দেবতায় বিশ্বাস করে। এটা শির্ক।
- এমনিভাবে আল্লাহর গুণাবলীতে কোন সৃষ্টিকে শরীক করা, যেমন মানুষের কোন কল্যাণ সাধন কিংবা বিপদ মোচন ইত্যাদি বিষয়ে কোন সৃষ্টিকে ক্ষমতাপ্রাপ্ত মনে করা, এটা শির্ক।
- এমনি ভাবে আল্লাহর সাথে ইবাদতে কাউকে শরীক করাও শির্ক, যেমন জলের (অর্থাৎ, গঙ্গার), সূর্যের, রামের, যীশুর, দেবতার ইত্যাদির পূজা করা শিরক।
(আল্লাহর ৯৯ নাম বাংলা অর্থ সহ)
৪১. (আল-মুকীতু) অর্থ- আহার্যদাতা;
৪২. (আল-আব্রায্যাকু) অর্থ- রিযিকদাতা;
- আল্লাহ্ তা’আলা মাখলূকের আহার্য দানকারী। শারীরিক ও আৱিক উভয় ধরনের আহার্য এর অন্তর্ভুক্ত।
- আল্লাহ্ তা’আলা রায্যাক অর্থাৎ, রিযিক সৃষ্টিকারী ও রিযিক দানকারী। ইন্দ্রীয়গাহ্য ও অতিরিন্দ্রীয় সব ধরনের রিযিক এর অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ্ তা’আলা যত মাখলূক সৃষ্টি করেছেন ও করবেন সকলের রিযিকের দায়িত্ব তিনি গ্রহণ করেছেন।
- প্রত্যেকে তার জন্য বরাদ্দকৃত রিযিক পুরোপুরি অর্জন করবে। কেউ তার রিযিক গ্রহণ করবে না বা অন্য কেউ তার রিযিক গ্রহণ করবে তা সম্ভব নয়। কারণ আল্লাহ যার জন্য যে রিযিক বরাদ্দ করেছেন অবশ্যই সে সেটাগ্রহণ করবে অন্য কারও পক্ষে সেটা গ্রহণ করা সম্ভব নয়। রিযিক বলতে হালাল হারাম উভয়টাকে বোঝায়। কেননা রিযিক বলা হয় যা আল্লাহ কোন প্রাণীর জন্য প্রেরণ করেন ও তার কাছে পৌঁছান। তবে সেটি হারাম হলোে আল্লাহ তা পছন্দ করেন না।
(আল্লাহর ৯৯ নাম বাংলা অর্থ সহ)
৪৩. আল-বাসিতু) – সম্প্রসারণকারী;
৪৪. (আল-ক্বাবিযু) অর্থ- সংকোচনকারী;
- রিযিকের হরাস-বৃদ্ধি আল্লাহর হাতে, তিনি যার জন্য ইচ্ছা রিযিক বৃদ্ধি করে দেন। তিনি সম্প্রসারণকারী (আল-বাসিতু)।
- যার জন্য ইচ্ছা হরাস করে দেন। তিনি সংকোচনকারী। তবে এই সংকোচন বা সম্প্রসারণ তাঁর হেকমতের ভিত্তিতে হয়ে থাকে, স্বেচ্ছাচারিতার ভিত্তিতে নয় ৷
৪৫. (আল-ফাত্তাহু) অর্থ- উন্মুক্তকারী;
- যাদের রিযিক বন্ধ আছে তাদের রিযিকের দুয়ার আল্লাহ্ তা’আলা খুলে দেন। এমনিভাবে যেকোন বিপদ-আপদ থাকলে বিপদের গিরা আল্লাহ্তা ‘আলা খুলে দেন। তিনি উন্মুক্তকারী।
৪৬. (আল-হাফীযু) অর্থ- সংরক্ষণকারী;
- বিপদ আসার পর তা থেকে তিনি উদ্ধার করেন, আবার বিপদ-মুসীবত আসার পূর্বেও তা থেকে তিনি বান্দাকে হেফাযত ও রক্ষা করেন। তিনি সংরক্ষণকারী।
৪৭. (আল-মু’মিনু) অর্থ- নিরাপত্তা বিধায়ক;
- তিনি শুধু বিপদ-আপদ থেকে উদ্ধার করা নয় বরং যাবতীয় বিপদ-আপদ থেকে উদ্ধার এবং মালূকের জন্য নিরাপত্তা প্রদান ও নিরাপত্তার সরঞ্জাম যোগান দানকারী। এ অর্থে তিনি নিরাপত্তা বিধায়ক।
৪৮. (আস্-সালামু) অর্থ- নিরাপদ, শান্তিময়;
- তাঁকে বিপদ থেকে উদ্ধার করার প্রয়োজন হয়না। বরং তিনি নিজে বিপদ-আপদ ও দোষ ত্রুটি থেকে মুক্ত ও নিরাপদ এবং শান্তি দানকারী। তিনি নিরাপদ ও শান্তিময়।
৪৯. (আল-মুহাইমিনু) অর্থ- রক্ষক, নেগাহবান;
- আল্লাহ্ তা’আলা সব জিনিসের নেগাহবান ও পাহারাদার। তিনি সকলের সব অবস্থার প্রতি স্বযত্ন লক্ষ্য রাখেন।
৫০. (আল-ওয়ালী) অর্থ- অধিপতি; অভিভাবক;
- শুধু রিযিক প্রদান, বিপদ-আপদ থেকে উদ্ধার ও রক্ষা নয়, তিনি সবকিছুর অধিপতি ও অভিভাবক, সবকিছুর ব্যবস্থাপক, সবকিছু সম্পাদনকারী।
৫১. (আল-ওয়াকীলু) অর্থ- কর্মবিধায়ক;
- আল্লাহ্ তা’আলা কর্মবিধায়ক অর্থাৎ, তাঁর নিকট যা কিছু সোপর্দ করা হয় তিনি তা সম্পাদনকারী। সে মতে আল্লাহর উপর কেউ ভরসা করলে তিনি তার কর্ম সম্পাদন করে দেন।
৫২. (আল-ওয়াহ্হাবু) অর্থ- মহানুভবদাতা;
- আল্লাহ্ তা’আলা তাঁর মাখলূককে যা কিছু দেন এক্ষেত্রে তাঁর কোন উদ্দেশ্য বা স্বার্থ নেই, দুনিয়াতে একজন আরেকজনকে দেয়ার পশ্চাতে যেমন কোন উদ্দেশ্য বা স্বার্থ থাকে। আল্লাহ্ তা’আলা কোন উদ্দেশ্য বা স্বার্থ বা বিনিময় ছাড়াই দিয়ে থাকেন। তিনি হলোেন মহানুভবদাতা।
৫৩. (আল-কারীমু) অর্থ- উদারদাতা;
- আল্লাহ্ তা’আলার দানের জন্য সওয়াল করারও প্রয়োজন হয় না। তিনি সওয়াল ছাড়াই নিজ উদারতায় দান ও অনুগ্রহ করে থাকেন। তিনি উদারদাতা।
৫৪. (আল-গানিয়্যু) অর্থ- অভাবমুক্ত; মুখাপেক্ষীহীন;
- মাখলূকের রিযিক পৌছাতে গিয়ে এবং অন্য কাজ সম্পাদন করতে গিয়ে তাঁর কখনও অভাব দেখা দেয় না, তিনি অভাব মুক্ত। এমনিভাবে কোন কাজ সম্পাদন করতে গিয়ে তিনি কারও মুখাপেক্ষীও হন না। তিনি মুখাপেক্ষীহীন। আসমান জমিনের সবকিছুর যিনি মালিক তাঁর অভাব হতে পারার ধারণা অমূলক। তিনি অভাবী হতে পারেননা।
৫৫. (আল-মুগণী) অর্থ- অভাব মোচনকারী;
- আল্লাহর অভাব হওয়ার প্রশ্ন ওঠে না বরং তিনি সকলের অভাব মোচনকারী অর্থাৎ, তিনি আল-মুগ্মী।
৫৬. (আল-ওয়াজিদু) অর্থ-প্রাপক;
- আল্লাহ্ তা’আলা যা চান তাই পান অর্থাৎ, তাই হয়। এ অর্থে তিনি প্রাপক। কোন কিছু তাঁর থেকে অব্যাহতি পায় না, কোন কিছু তাঁর পর্যন্ত পৌছুতে সক্ষম নয় ৷ অথবা এর ব্যাখ্যা হলো তিনি কারও মুখাপেক্ষী নন।
৫৭. (আনাফিউ) অর্থ- কল্যাণকারী;
৫৮. (আয্যাররু) অর্থ- অকল্যাণের মালিক;
- তিনি কল্যাণ অ-কল্যাণ সবটার মালিক। তিনি যেমন কল্যাণকারী তেমনি অকল্যাণকারীও। কল্যাণ অকল্যাণ উভয়টা তাঁর হাতে।
৫৯. (আল-বারু) অর্থ- নেকময়;
- কল্যাণ-অ-কল্যাণ সবই আল্লাহর হাতে, তবে তিনি কারও অকল্যাণ করেন না বরং তিনি সকলের সাথে কল্যাণের আচরণ এবং নেকীর মুআমালা করেন তিনি নেকময়। অতএব যার ব্যাপারে আল্লাহ যা করেন তার মধ্যেই তার জন্য কল্যাণ নিহিত।
৬০. (আল-মুমীতু) অর্থ- মৃত্যুদাতা;
- আল্লাহ্ তা’আলা যেমন জীবনদাতা, তেমনি মৃত্যুদাতাও তিনি। নির্ধারিত সময়ে প্রত্যেকের মৃত্যু ঘটবে। কিয়ামতের সময় শিঙ্গায় ফুৎকারের মাধ্যমে সকলের মৃত্যু ঘটবে I
৬১. (আল-ওয়ারিসু) অর্থ- স্বত্বাধিকারী;
- সিঙ্গায় ফুৎকার দেয়ার পর যখন সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাবে, তখন একমাত্র তিনিই থাকবেন সবকিছুর স্বত্বাধিকারী এবং মালিক। বাহ্যিকভাবে যারা দুনিয়ার অনেক কিছুর মালিক বলে মনে হত, তাদের কারও তখন কোন অস্তিত্বও থাকবে না।
৬২. (আল-মুঈদু) অর্থ- পুনঃসৃষ্টিকারী;
৬৩. (আল-বা’ইছু) অর্থ- পুনরুত্থানকারী;
৬৪. (আল-জামিউ) অর্থ- একত্রকরণকারী;
- তারপর তিনি সকলকে পুনরায় সৃষ্টি করবেন। তিনি পুনঃসৃষ্টিকারী শিংগায় দ্বিতীয় ফুঁৎকার দেয়ার পর সকলে পুনরায় জীবন লাভ করবে।
- তারপর তিনি সকলের পুনরুত্থান ঘটাবেন। তিনি পুনরুত্থানকারী।
- পুনরুত্থান পূর্বক তিনি সকলকে হাশরের ময়দানে হিসাব-নিকাশের জন্য একত্রিত করবেন। তিনি একত্রকরণকারী।
(আল্লাহর ৯৯ নাম বাংলা অর্থ সহ)
৬৫. (আল-হাসীবু) অর্থ- হিসাব গ্রহণকারী;
৬৬. (আল-মুত্সী) অর্থ- পুংখানুপুংখ হিসাব গ্রহণকারী;
- কিয়ামতের ময়দানে সকলকে একত্রিত করে তিনি সকলের হিসাব গ্রহণ করবেন। তিনি হিসাব গ্রহণকারী।
- এই হিসাব হবে পুংখানুপুংখ রূপে। সে হিসাবে থাকবেনা বিন্দুমাত্র ত্রুটি। কেননা তিনি পুংখানুপুংখ হিসাব গ্রহণকারী। আল-মুন্সী-এর আর এক অর্থ হলো জগতের সৃষ্টিসমূহের যাবতীয় গণনা ও পরিমিতির ব্যাপারে তিনি সম্যক জ্ঞানী। তাঁর জ্ঞানের আওতা থেকে ক্ষুদ্র-বৃহৎ কোন কিছুই বহির্ভূত নয়।
৬৭. (আশ্-শাহীদু) অর্থ- প্রত্যক্ষকারী;
- সবকিছুর পুংখানুপুংখ হিসাব নেয়ার জন্য সবকিছুর যাহের বাতেন প্রত্যক্ষ করা আবশ্যক এবং এজন্য তার সর্বত্র হাযির নাযির থাকা আবশ্যক আল্লাহ্ তা’আলা সর্বত্র হাযির নাযির এবং তিনি সবকিছুর প্রত্যক্ষকারী। (কেউ কেউ বলেছেন যাহিরী বিষয় জাননেওয়ালাকে আশ-শাহীদু বলে এবং বাতিনী বিষয় জাননেওয়ালাকে খাবীরু বলে।)
৬৮. (আর্ রাকীবু) অর্থ- পর্যবেক্ষণকারী;
- তিনি শুধু প্রত্যক্ষ করেননা বরং ভালভাবে পুংখানুপুংখ প্রত্যক্ষ করেন অর্থাৎ, পর্যবেক্ষণ করেন। তিনি পর্যবেক্ষণকারী।
৬৯. (আল-হাকামু) অর্থ- মীমাংসাকারী;
৭০. (আল-আদলু) অর্থ- ন্যায়নিষ্ঠ;
৭১. আল-মুকসিতু) অর্থ- ন্যায়পরায়ণ;
- হিসাব গ্রহণ পূর্বক তিনি ভাল-মন্দ, ন্যায়-অন্যায় সবকিছুর মীমাংসা করবেন। তিনি হলোেন মীমাংসাকারী।
- আল্লাহর মীমাংসা অত্যন্ত ন্যায়নিষ্ঠতার সাথে হবে। তিনি ন্যায়নিষ্ঠ ও ন্যায়পরায়ণ।
৭২. (আশ্ শাকূরু) অর্থ- গুণগ্রাহী;
- তাঁর ন্যায্য বিচারে যে নেককার ও ভাল সাব্যস্ত হবে, তিনি তাকে পুরস্কৃত করবেন। তিনি গুণগ্রাহী। তিনি গুণের মূল্যায়ন করবেন। দুনিয়াতেও তিনি নেক কাজের কিছু পুরস্কার ও বদকাজের কিছু শাস্তি দিয়ে থাকেন। তবে পূর্ণ পুরস্কার ও পুর্ণাঙ্গ শাস্তি দিবেন পরকালে।
৭৩. (আল-ওয়ালিয়্যু) অর্থ- সাহায্যকারী, বন্ধু, অভিভাবক;
- আখেরাতে আল্লাহ্ তা’আলা মুমিনদেরকে শান্তি দান করবেন এবং সাহায্য করবেন। তিনি সাহায্যকারী অভিভাবক অর্থাৎ, মুমিনদের সাহায্যকারী ও মুমিনদের অভিভাবক। দুনিয়াতেও আল্লাহ্ তা’আলা মুমিনদের অভিভাবক।
৭৪. (যুল জালালি ওয়াল ইক্রাম) অর্থ- আযমত ও জালালের অধিকারী, একরাম করনেওয়ালা;
- তিনি আযমত ও জালালের অধিকারী অর্থাৎ, তিনি মহিমাময়। তাঁর আযমত ও জালালের সামনে যারা আনুগত্য প্রদর্শন করে এবং তাঁর এতায়াত করে, তিনি তাদের সম্মানিত ও পুরস্কৃত করবেন কারণ তিনি মহানুভব, একরাম করনেওয়ালা।
৭৫. (আল-ওয়াদূদু) অর্থ- প্রেমময়;
- নেককার লোক এবং নেক কাজকে তিনি ভালবাসেন। এ অর্থে তিনি প্রেমময়।
৭৬. (আল-মুকাদ্দিমু) অর্থ- অগ্রবর্তীকারী;
৭৭. (আল-মুআখিরু) অর্থ- পশ্চাদবর্তীকারী;
- যারা আল্লাহ্ দোস্ত তাদেরকে তিনি অগ্রবর্তী করে দেন, তিনি অগ্রবর্তীকারী। আর যারা তাঁর দুশমন, তাদেরকে তিনি পশ্চাদবর্তী করে দেন। তিনি পশ্চাদবর্তীকারী।
৭৮. (আল-মুন্তাকিমু) অর্থ- শাস্তিদাতা;
- নেককার, দোস্ত ও আপন লোকদেরকে তিনি পুরস্কার দান করবেন। পক্ষান্তরে যে বদকার সাব্যস্ত হবে, তাকে তিনি শাস্তি প্রদান করবেন। তিনি হলোেন শাস্তিদাতা।
৭৯. (আস্ সাবূরু) অর্থ- ধৈর্যশীল;
৮০. (আল-হালীমু) অর্থ- সহিষ্ণু;
- আল্লাহ্ তা’আলা পাপের কারণে শাস্তিদাতা। তবে দুনিয়াতে তিনি সব পাপের কারণে শাস্তি দেননা। কারণ তিনি ধৈর্যশীল ও সহিষ্ণু ৷ ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার মধ্যে পার্থক্য হলো ধৈর্যগুণ যখন নিয়মিত অভ্যাসে পরিণত হয়, তখন সেটাকে সহিষ্ণুতা বলে আখ্যায়িত করা হয়।
৮১. (আল-‘আফুউ) অর্থ- ক্ষমাকারী;
৮২. (আল-গাফ্ফারু) অর্থ- পরম ক্ষমাশীল;
৮৩. (আল-গাফূরু) অর্থ- পরম ক্ষমাকারী;
- আখেরাতে যারা শাস্তি পাওয়ার যোগ্য, তাদের অনেককে আল্লাহ্তা ‘আলা ক্ষমা করে দিবেন। আল্লাহ্ তা’আলা ক্ষমাশীল। ক্ষমার গুণ আল্লাহ তায়ালার অত্যন্ত বেশী। তিনি পরম ক্ষমাশীল। শির্ক ব্যতীত আর সব ধরনের পাপ যার জন্য ইচ্ছা তিনি ক্ষমা করবেন বলে কুরআনে ঘোষণা দিয়েছেন।
৮৪. (আত্-তাওয়াবু) অর্থ- তওবা কবূলকারী;
৮৫. (আল-মুজীবু) অর্থ- কবূলকারী;
- ক্ষমা পাওয়ার জন্য আল্লাহ্ তা’আলা তওবার নিয়ম করে রেখেছেন। কেউ তওবা করলে আল্লাহ্ তা’আলা তার তওবা কবুল করেন। তিনি তওবা কবূলকারী।
- শুধু তওবা নয় যে কোন বিষয়ে দোয়া করলে আল্লাহ্ তা’আলা তার দোয়া কবূল করেন। তিনি কবূলকারী (আল-মুজীবু)।
৮৬. (আর রহীমু) অর্থ- অতি দয়ালু;
৮৭. (আর রহমানু) অর্থ- অত্যন্ত দয়াময়;
- সবকিছু আল্লাহর দয়ায় সংঘটিত হয়, কোন কিছু আল্লাহর উপর জরূরী নয়। আল্লাহর উপর কোন কিছু ওয়াজিব বা অবশ্যকরণীয় বলা হলোে আল্লাহর এখতিয়ার রহিত হওয়া অবধারিত হয়ে যায়।
৮৮. (আর্-রাউফু) অর্থ- সীমাহীন দয়ালু;
- রহমত ও দয়াগুণ তাঁর মধ্যে সীমাহীন। তিনি সীমাহীন দয়ালু।
৮৯. (আল-কুদ্দূসু) অর্থ- পবিত্র;
- আল্লাহ্ তা’আলার সত্তা, তাঁর গুণাবলী ও যাবতীয় কর্ম দোষত্রুটি মুক্ত। তিনি সব ধরনের দোষত্রুটি থেকে পবিত্র।
৯০. (আল-জালীলু) অর্থ- পূর্ণাঙ্গ মহিমাময় ;
- দোষত্রুটি থেকে পবিত্রতা, অনপেক্ষ হওয়ার পরম স্তরে তিনি উন্নীত তিনি পূর্ণাঙ্গ মহিমাময়।
৯১. (আল-মাজীদু) অর্থ- গৌরবময়;
- আল্লাহ্ তা’আলার সত্তা, তার গুণাবলী ও কর্ম দোষত্রুটিযুক্ত তো নয়ই বরং আল্লাহর সত্তা, তাঁর গুণাবলী ও যাবতীয় কর্মে তিনি বুযুর্গীর অধিকারী অর্থাৎ, গৌরবময়।
৯২. (আল-মুতাকাব্বিরু) অর্থ- সুউচ্চ, সমুচ্চ গৌরবময়তার অধিকারী;
- আল্লাহ তাআলা তাঁর বুযুর্গী ও গৌরবময়তায় অত্যন্ত উঁচু স্তরে উন্নীত। তিনি সমুচ্চ মর্যাদার অধিকারী, সুউচ্চ, সুমহান।
৯৩. (আল-মুতা’আলী) অর্থ- সর্বোচ্চ মর্যাদাবান;
- আল্লাহ্ তা’আলা আলীশান, অর্থাৎ, তিনি তাঁর বুযুগী ও গৌরবময়তায় এমন উঁচু মর্যাদার স্তরে উন্নীত, যে পর্যন্ত কারও পৌঁছা সম্ভব নয়।
৯৪. (আল-মাজীদু) অর্থ- এককতম মহান;
- আল্লাহ্ তা’আলা তাঁর সত্তা, গুণাবলী ও কর্মের বুযুর্গী এবং গৌরবময়তায় একক। এ ক্ষেত্রে অন্য কেউ তাঁর শরীক নেই। তিনি আল-মাজিদু।
৯৫. (আস্ সমাদু) অর্থ- অনপেক্ষ;
- আল্লাহ্ তাঁর সত্তা, কর্ম ও গুণাবলী কোন ক্ষেত্রেই কারও মুখাপেক্ষী নন বরং তিনি অনপেক্ষ। কোন ব্যাপারেই তিনি কারও মুখাপেক্ষী নন। বরং অন্য সকলে তাঁর মুখাপেক্ষী।
৯৬. (আল-হামীদু) অর্থ- প্রশংসিত;
- আল্লাহ তা’আলা তাঁর সত্তা, গুণাবলী ও কর্মের প্রেক্ষিতে প্রশংসাহা। অর্থাৎ, তিনি তাঁর সত্তা, গুণাবলী ও কর্মে এমন বুযুর্গী বা গৌরবময়তার অধিকারী, যার প্রেক্ষিতে তিনি প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য।
৯৭. (আল-কাবীরু) অর্থ- সর্বাধিক বড়ত্বের অধিকারী;
- আল্লাহ্ তাআলা সর্বাধিক বড়ত্বের অধিকারী; যার চেয়ে বড় কারও কল্পনা করা যায় না।
৯৮. (আল-আলিয়্যু) অর্থ- সর্বোচ্চ মর্যাদাবান;
- আল্লাহ্ তাআলা সর্বোচ্চ মর্যাদাবান। যার উপর আর কারও মর্যাদা হতে পারে না।
৯৯. (আল-আযীমু) অর্থ- সর্বোচ্চ মাহারের অধিকারী;
আল্লাহ্ তাআলা সর্বোচ্চ মাহারের অধিকারী; যার মাহারের স্তরে কারও পক্ষে,পৌঁছা সম্ভব নয়। পবিত্র কুরআন ও হাদীসে এ ছাড়া আল্লাহ্ তা’আলার আরও কিছু গুণবাচক নামের উল্লেখ পাওয়া যায়। যেমন- (আর রব্বু) অর্থ- প্রতিপালক; (আল মুন্ইমু) অর্থ- নিয়ামত দানকারী; (আল্ মু’তী) অর্থ- দাতা; (আস্ সাদিকু) অর্থ- সত্যবাদী; (আস্ সাত্তারু) অর্থ- গোপনকারী।
আল্লাহর ৯৯টি গুণবাচক নাম বা আল-আছমাউল হুছনা-র যথাযথ বাংলা অনুবাদ হয়না। এখানে যে আল্লাহর ৯৯ নাম বাংলা অর্থ দেয়া হয়েছে তা ইংগিত মাত্র। আল-আছমাউল হুছনার মধ্য থেকে কিছু সংখ্যক গুণাবলী আল্লাহর জন্য সত্তাগত, অনাদি-অনন্ত ব্যাপক ও অসীম। আর মানুষের জন্য এগুলো আল্লাহ্ প্রদত্ত অস্থায়ী ও সীমিত।
কুরআনের বিভিন্ন স্থানে আল্লাহর কতক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের উল্লেখ রয়েছে। যেমন- হাত, মুখমন্ডল, চক্ষু। এগুলোর তাৎপর্য সম্বন্ধে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের অভিমত এই যে, আল্লাহ তা’আলার জাত (সত্তা) ও ছিফাত (গুণাবলী) সম্পর্কে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বলেছেন, তার উপর ঈমান রাখতে হবে। আল্লাহর এসব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আমাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মত নয়, আল্লাহ যেমন তাঁর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গও তাঁর শান উপযোগী। এর চেয়ে বিস্তারিত আমাদের জানা নেই।
আল্লাহর ৯৯ নাম বাংলা অর্থ সহ, আল্লাহর ৯৯ নাম বাংলায় অর্থসহ আল্লাহর ৯৯ নাম, অর্থ সহ আল্লাহর ৯৯টি নাম। শীর্ষক পোষ্টটি এখানেই সমাপ্ত, কথা আবার পরবর্তী কোন আলোচনায়, এই পোষ্টটির মাঝে টাইপিং এর কারণে কোন অক্ষর বা শব্দে ভুল থাকলে ক্ষমা প্রার্থী, কোন শাব্দিক ভুল পরিলক্ষিত হলোে কমেন্ট করে জানিয়ে দিবেন, আমরা সংশোধন করে দিব। ধন্যবাদ।
পবিত্র ইসলাম ধর্ম সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট ইসলাম’ (inbangla.net/islam) এর সাথেই থাকুন।
[সূত্র: মাওলানা মুহাম্মদ হেমায়েত উদ্দীন]