Skip to content

ঈদের তাকবীর কখন দিতে হয়? বাংলা উচ্চারণসহ নিয়ম বর্ণনা

ঈদের তাকবীর কখন দিতে হয়, বাংলা উচ্চারণসহ নিয়ম বর্ণনা

“তাকবীর” শব্দটি আরবি “কাব্বারা” থেকে এসেছে, যার অর্থ মহান বা বড় করা। ইসলামী পরিভাষায় তাকবীর হলো আল্লাহর মহত্ত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করা।

ঈদ মুসলিম উম্মাহর জন্য আনন্দ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশের একটি বিশেষ উৎসব। ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা—এই দুটি ঈদের সঙ্গে জড়িয়ে আছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমল, যার মধ্যে অন্যতম হলো “তাকবীর”। ঈদের তাকবীর আল্লাহর মহিমা ঘোষণা এবং তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের একটি সুন্দর মাধ্যম। এই লেখায় আমরা ঈদের তাকবীর কখন দিতে হয়? ঈদের তাকবীর বাংলা উচ্চারণ, তাকবীর দেওয়ার নিয়ম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

(১) ঈদের তাকবীর কখন দিতে হয়?

ঈদের তাকবীর কখন দিতে হয়: ঈদের তাকবীর সাধারণত ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহার সময় নির্দিষ্ট মুহূর্তে দেওয়া হয়।

রোজার ঈদ বা ঈদুল ফিতরের ক্ষেত্রে- তাকবীর শুরু হয় চাঁদ দেখার পর থেকে, অর্থাৎ রমজানের শেষ দিন সন্ধ্যায় (চাঁদ রাতে), এবং চলতে থাকে ঈদের নামাজের আগ পর্যন্ত। ঈদের দিন সকালে, নামাজের জন্য মসজিদে যাওয়ার পথে এবং নামাজের আগে পর্যন্ত তাকবীর পড়া হয়। তবে নামাজ শুরু হয়ে গেলে তাকবীর বন্ধ হয়ে যায়।

কুরবানির ঈদ বা ঈদুল আযহার ক্ষেত্রে- তাকবীর শুরু হয় আরাফার দিন (৯ জিলহজ) ফজরের নামাজের পর থেকে এবং চলতে থাকে ১৩ জিলহজ পর্যন্ত আসরের নামাজের সময় পর্যন্ত। এই সময়ে প্রতিটি ফরজ নামাজের পর তাকবীর পড়া সুন্নাহ।

“আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ।” বলে ঈদের তাকবীর দিতে হয়।

পড়ুন
ঈদের নামাজের নিয়ম, নিয়ত ও পদ্ধতি

ঈদের তাকবীর উচ্চস্বরে পড়া মুস্তাহাব, বিশেষ করে পুরুষদের জন্য, তবে মহিলারা নিচু স্বরে পড়তে পারেন।

(২) ঈদের তাকবীর বাংলা উচ্চারণ

ঈদের তাকবীর বাংলা উচ্চারণ

ঈদের তাকবীর বাংলা উচ্চারণ হলো- “আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ।”

ঈদের তাকবীর বাংলা অর্থ হলো- “আল্লাহ সবচেয়ে বড়, আল্লাহ সবচেয়ে বড়, আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, আল্লাহ সবচেয়ে বড়, আল্লাহ সবচেয়ে বড়, এবং সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।”

এই তাকবীরের মাধ্যমে মুসলিমরা আল্লাহর একত্ব ও মহানত্ব প্রকাশ করে এবং তাঁর দেওয়া নিয়ামতের জন্য শুকরিয়া আদায় করে।

(৩) দুই ঈদের তাকবীর দেওয়ার সময় কি একই?

না, ঈদের তাকবীর পড়ার সময় ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহার জন্য ভিন্ন। নিচে এটি বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা হলো-

ক) ঈদুল ফিতর বা রোজার ঈদের তাকবীর

  • সময়: ঈদুল ফিতরের তাকবীর শুরু হয় চাঁদ দেখার পর থেকে, অর্থাৎ রমজানের শেষ দিন সন্ধ্যায় (চাঁদ রাতে)। এটি চলতে থাকে ঈদের দিন সকালে নামাজের জন্য মসজিদে যাওয়া পর্যন্ত।
  • নিয়ম: ঈদের দিন সকালে ঘর থেকে বের হয়ে মসজিদে যাওয়ার পথে, রাস্তায়, এবং নামাজের জন্য অপেক্ষার সময় উচ্চস্বরে তাকবীর পড়া মুস্তাহাব।
  • কখন বন্ধ হয়: ঈদের নামাজ শুরু হলে তাকবীর পড়া বন্ধ হয়ে যায়। ইমাম যখন নামাজের জন্য তাকবীরাতুল ইহরাম (নামাজ শুরুর তাকবীর) বলেন, তখন থেকে এই তাকবীর আর পড়া হয় না।

খ) ঈদুল আযহার তাকবীর

  • সময়: ঈদুল আযহার তাকবীর শুরু হয় ৯ জিলহজ (আরাফার দিন) ফজরের নামাজের পর থেকে। এটি চলতে থাকে ১৩ জিলহজ পর্যন্ত আসরের নামাজের সময় পর্যন্ত। এই তাকবীরকে “তাকবীরে তাশরীক” বলা হয়।
  • নিয়ম: প্রতিটি ফরজ নামাজের পর একবার তাকবীর পড়া সুন্নাহ। এছাড়া এই দিনগুলোতে সব সময় উচ্চস্বরে তাকবীর পড়া যায়, বিশেষ করে পুরুষদের জন্য।
  • বিশেষত্ব: ঈদুল আযহার তাকবীর দীর্ঘ সময় ধরে পড়া হয় কারণ এটি হজের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং আল্লাহর প্রতি কোরবানির মাধ্যমে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের অংশ।
    পড়ুন
    Eid Mubarak Wishes: ঈদের শুভেচ্ছা বার্তা

    (৪) ঈদের তাকবীর পড়ার নিয়ম

    1. উচ্চস্বরে পড়া: পুরুষদের জন্য তাকবীর উচ্চস্বরে পড়া মুস্তাহাব, যাতে আল্লাহর মহিমা প্রকাশ পায় এবং অন্যরা শুনে উৎসাহিত হয়। মহিলারা নিচু স্বরে পড়তে পারেন।
    2. স্থান: ঘরে, রাস্তায়, মসজিদে—যেকোনো জায়গায় তাকবীর পড়া যায়। বিশেষ করে ঈদুল ফিতরে মসজিদে যাওয়ার পথে এবং ঈদুল আযহায় নামাজের পর এটি বেশি পড়া হয়।
    3. মনোযোগ: তাকবীর পড়ার সময় মনে মনে আল্লাহর প্রতি শ্রদ্ধা ও ভক্তি রাখা উচিত। এটি কেবল মুখের কথা নয়, বরং হৃদয়ের আমলও।

    (৫) ঈদের তাকবীর দেওয়ার তাৎপর্য

    • আল্লাহর মহিমা প্রকাশ: তাকবীরের মাধ্যমে মুসলিমরা ঘোষণা করে যে আল্লাহ সবকিছুর ঊর্ধ্বে এবং তিনিই একমাত্র প্রশংসার যোগ্য।
    • কৃতজ্ঞতা: ঈদুল ফিতরে রমজানের সিয়াম পালনের জন্য এবং ঈদুল আযহায় কোরবানির মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য তাকবীর শুকরিয়ার অংশ।
    • ঐক্য: উচ্চস্বরে তাকবীর পড়ার মাধ্যমে মুসলিম সম্প্রদায় একত্রে আল্লাহর প্রশংসা করে, যা ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ববোধ জাগায়।
    • আধ্যাত্মিক উন্নতি: তাকবীর মনকে শান্ত করে এবং আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ককে আরও গভীর করে।

    (৬) ঈদের তাকবীরের ইতিহাস

    তাকবীর পড়ার প্রথা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর যুগ থেকে চলে আসছে।

    হাদিসে উল্লেখ আছে, রাসূল (সা.) ও তাঁর সাহাবারা ঈদের সময় তাকবীর পড়তেন।

    ইবনে উমার (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি ঈদের দিন মসজিদে যাওয়ার পথে উচ্চস্বরে তাকবীর পড়তেন। এটি একটি সুন্নাহ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যা আজও মুসলিমরা পালন করে।


    পবিত্র ইসলাম ধর্ম সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট ইসলাম’ (inbangla.net/islam) এর সাথেই থাকুন।

    অনুরোধ!! পোষ্ট ভালো লাগলে প্লিজ উপরের শেয়ার আইকনে ক্লিক করে পোষ্টটি শেয়ার করে দিন।

    Leave a Reply

    nv-author-image

    ইন বাংলা নেট ইসলাম

    পবিত্র ইসলাম ধর্ম সম্পর্কিত যা কিছু বাংলাতে।View Author posts