প্রিয় খামারি বন্ধু আমরা অবত আছি যে জৈব পদার্থের মাধ্যমে মাটিতে অণুজীব টিকিয়ে রেখে মাটির উর্বরতা বাড়াতে কম্পোস্ট সারের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই এই কম্পোস্ট সার তৈরির পদ্ধতি বা সঠিক পদ্ধতেতে মান সম্মত জৈব সার তৈরি করার নিয়ম জানা থাকা আমাদের কৃষির সাথে সম্পর্কিত ব্যক্তিদের জন্য অতীব জরুরি।
তাই চলুন সঠিক উপায়ে মান সম্মত কম্পোস্ট সার তৈরির পদ্ধতি বা জৈব সার তৈরি করার নিয়মসমূহ জেনে নিই-
(১) কম্পোস্ট সার কি?
কম্পোস্ট হচ্ছে উদ্ভিদ বা উদ্ভিদের অংশবিশেষ, জীবজন্তুর বিষ্ঠা ও মূত্র, প্রাণিজাত পচনশীল উচ্ছিষ্টাংশ এবং নানা প্রকার আবর্জনা নির্দিষ্ট অনুপাত ও পদ্ধতিতে পচিয়ে তৈরি করা একপ্রকার উন্নতমানের জৈব সার।
তুলনামূলকভাবে কম খরচে এই সার তৈরি করা যায়। কম্পোস্টের উপাদানসমূহ হচ্ছে জৈব পদার্থ যা মাটির প্রাণ। উদাহরণস্বরূপ মানুষের জন্য দুধ যেমন একটি আদর্শ খাবার, গাছের জন্য কম্পোস্টও একটি আদর্শ খাবার।
(২) কম্পোস্ট সার কেন প্রয়োজন?
- মাটির ভৌত ও রাসায়নিক অবস্থার উন্নয়ন সাধিত হয়।
- মাটির পানি ধারণ ক্ষমতা ও বাতাস চলাচল কয়েকগুণ বৃদ্ধি পায়।
- উদ্ভিদ সহজে মূলের বিস্তার করতে পারে।
- মাটির তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত হয়।
- মাটির বিষাক্ততা দূর হয়।
- অণুজীবের কার্যাবলি কয়েকগুণ বৃদ্ধি পায় ফলে মাটিতে প্রাপ্ত খাদ্য উপাদানগুলো সহজলভ্য হয়।
- সবজির গুণগতমান বৃদ্ধি পায় এবং উদ্ভিদের সঠিক বৃদ্ধির মাধ্যমে ফলন বৃদ্ধি পায়।
(৩) কম্পোস্ট সার তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ
- উদ্ভিজ্জ ও প্রাণির পরিত্যক্ত অংশ, গোবর, হাঁস-মুরগির বিষ্ঠা ইত্যাদি পদার্থ যা পচনশীল।
- প্রতিদিনের গৃহস্থালির আবর্জনা, ডিমের খোসা, ছাই, মাটি।
- ইউরিয়া এবং টিএসপি সার।
- বাঁশের খুঁটি, বাঁশের তৈরি বেড়া ও পলিথিন।
- কোদাল, খন্তা, রশি, ঝুড়ি/টুকরি ইত্যাদি।
(৪) কম্পোস্ট সার তৈরির পদ্ধতি বা জৈব সার তৈরি করার নিয়ম
- বাড়ির যে স্থানটিতে বর্ষাকালে সাধারণত পানি জমে না এরকম উঁচু স্থান বেছে নিতে হবে। বড় গাছের নিচে ছায়াযুক্ত স্থান হলে উত্তম।
- একটি দুই স্তর বিশিষ্ট কম্পোস্ট গর্তের আকার হবে দৈর্ঘ্য ৬ ফুট, গ্রন্থ ৩ ফুট এবং গভীরতা ২ ফুট।
- গর্তের চারিদিকে কিছুটা মাটি উঁচু করে বাঁধ বেঁধে দিতে হবে। যাতে গর্ভে বৃষ্টির পানি প্রবেশ করতে না পারে।
- গর্তের মধ্যে কম্পোস্ট উপাদানগুলো নিচের ‘কম্পোস্ট উপাদান সাজানোর স্তর’ নিয়মে সাজাতে হবে।
- সর্বশেষ স্তর তৈরি হয়ে গেলে উপরের অংশে মাটির আন্তর দিয়ে কিছুটা ঢিবির মতো উঁচু করতে হয় যাতে পানি প্রবেশ করতে না পারে।
- কম্পোস্ট গর্তে যাতে বায়ু প্রবেশ করতে পারে সেজন্য গর্তের মাঝ বরাবর একটি বাঁশের খুঁটি পুঁতে দিতে হয় যাতে খুঁটি নাড়াচাড়া করলে তার মধ্যে বাতাস প্রবেশ করতে পারে।
- একটি কম্পোস্ট পিট ঠিকমতো পচতে দেড় থেকে ২ মাস সময় লাগে। ২৫-৩০ দিন পর সবগুলো স্তরকে ওলটপালট করে মিশিয়ে দিতে হয়।
- পচনের পর যখন কম্পোস্ট পদার্থ গাঢ় বাদামি রং ধারণ করবে এবং দেখতে মাটির মতো ভূসভুসে মনে হবে, তখন বুঝতে হবে কম্পোস্ট ব্যবহারের উপযুক্ত হয়েছে।
(৫) কম্পোস্ট উপাদান সাজানোর স্তর
- প্রথমেই আবর্জনা, খড়, লতাপাতা, তরিতরকারির উচ্ছিষ্টাংশ, কচুরিপানা প্রভৃতি দিয়ে ৯ ইঞ্চি পরিমাণ গর্ত ভরাট করতে হবে। কচুরিপানা বেশি লম্বা হলে তা ছোট ছোট করে কেটে ব্যবহার করতে হবে।
- সম্ভব হলে আবর্জনার উপরে ১ মুঠো ইউরিয়া ছিটিয়ে দিতে হবে।
- অতঃপর কাঁচা গোবর ২ ইঞ্চি পরিমাণ আবর্জনার উপর বিছিয়ে দিতে হবে।
- এরপর কয়েক মুঠো ডিমের খোসা, শামুক/ঝিনুক চূর্ণ ইত্যাদি ছড়িয়ে দিতে হবে।
- অতঃপর ১ কেজি পরিমাণ ছাই ছিটিয়ে দিতে হবে।
- সবশেষে বাগানের উপরিস্তরের মাটি দিয়ে ১ ইঞ্চি পরিমাণ আস্তরণ দিতে হবে।
- এভাবে মোট ১ ফুট পরিমাণ এক স্তর বিশিষ্ট কম্পোস্ট সাজানো হয়ে গেল। অনুরূপভাবে পরপর ২-৩ স্তর কম্পোস্ট তৈরি করা যায়।
(৬) কম্পোস্ট তৈরিতে লক্ষণীয়
- কম্পোস্টের মধ্যে কোনো অপচনশীল দ্রব্য যেমন- পলিথিন, প্লাস্টিক, কাচ, বাঁশপাতা ইত্যাদি থাকবে না।
- প্রচণ্ড রোদ লাগানো যাবে না এবং লক্ষ রাখতে হবে গালা যেন অতিরিক্ত শুকিয়ে না যায়। যদি অতিরিক্ত শুকিয়ে যায়, তাহলে ছিদ্রপথে পানি বা গো-চনা ঢেলে গাদাকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে।
- কম্পোস্ট তৈরির জন্য ব্যবহৃত উপকরণগুলো যেন কোনো সময় পানির সংস্পর্শে না আসে, সংস্পর্শে এলে এর খাদ্য উপাদান দ্রুত কমে যাবে।
- কম্পোস্ট তৈরির উপকরণটি শুকনা হলে কিছু পানি দিতে হবে।
- ভালোভাবে পচানোর পর কম্পোস্ট ব্যবহার করতে হবে। তৈরি হবার পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব জমিতে ব্যবহার করতে হবে।
আমরা কম্পোস্ট সার তৈরির পদ্ধতি বা জৈব সার তৈরি করার নিয়মসমূহ জানলাম পরবর্তী আলোনাতে আমরা ভার্মি কম্পোস্ট প্রস্তুত প্রণালী সম্পর্কে জানব। আমাদের ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন, সকল প্রকার কৃীষ বিষয়ক তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করনি, ধন্যবাদ।
বিভিন্ন উদ্ভিদ, গাছ ও ফসল যেমন- বিভিন্ন শস্য, সবজি, ফুল, ফল ইত্যাদি চাষাবাদ সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট চাষাবাদ’ (inbangla.net/casabad) এর সাথেই থাকুন।