Skip to content
কুকুর কামড়ালে করণীয়
আলোচ্য বিষয়:

কুকুর কামড়ানো আমাদের দৈনন্দিন জীবনে একটি পরিচিত ঘটনা। বিশেষ করে ভারত ও বাংলাদেশের মতো দেশে, যেখানে রাস্তায় স্ট্রিট ডগের সংখ্যা অনেক, সেখানে এই ঘটনা প্রায়ই ঘটে। কিন্তু এই সাধারণ ঘটনাটি যদি সঠিকভাবে মোকাবিলা না করা হয়, তবে এটি জলাতঙ্ক বা র‍্যাবিসের মতো মারাত্মক রোগের কারণ হতে পারে।

কুকুর কামড়ানোর ফলে জলাতঙ্কে আক্রান্ত হলে মৃত্যুর হার প্রায় ১০০%, এবং এটি এমন একটি রোগ যার কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই, যদি জলাতঙ্ক (Rabies) রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়, মৃত্যু নিশ্চিত। তাই “কুকুর কামড়ালে করণীয়” বিষয়ে সঠিক তথ্য জানা এবং তা প্রয়োগ করা আমাদের জীবন বাঁচাতে পারে।

এই ব্লগে আমরা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব কুকুর কামড়ালে করণীয় কি, কুকুরের কামড়ের ইনজেকশন কখন, কখন টিকা নেওয়া দরকার নেই, জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ প্রভৃতি সম্পর্কে।

(১) জলাতঙ্ক কী এবং এটি কেন এত ভয়ানক?

জলাতঙ্ক কী এবং এটি কেন এত ভয়ানক

জলাতঙ্ক একটি ভাইরাসজনিত রোগ, যা র‍্যাবিস ভাইরাসের কারণে হয়। এই ভাইরাস সাধারণত আক্রান্ত প্রাণীর লালার মাধ্যমে ছড়ায়। যখন কোনো কুকুর, বিড়াল, শেয়াল, বাদুড়, বা বানর কামড়ায় বা আঁচড়ে এবং তাদের লালা ক্ষতস্থানের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে, তখন এই ভাইরাস স্নায়ুতন্ত্রে পৌঁছে মস্তিষ্কে আক্রমণ করে। একবার জলাতঙ্কের ক্লিনিক্যাল লক্ষণ (যেমন জলের প্রতি ভয়, গলায় স্প্যাজম, শ্বাসকষ্ট) প্রকাশ পেলে, পৃথিবীর কোনো ডাক্তার বা ওষুধ এই রোগীকে বাঁচাতে পারে না।

ভারতে প্রতি বছর ২০,০০০-এর বেশি মানুষ জলাতঙ্কে মারা যায়, যার মধ্যে অনেকেই শিশু। বিশ্বে জলাতঙ্কে মৃত্যুর হারে ভারত দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে, আফ্রিকার কঙ্গোর পরে। তুলনা করলে, করোনা মহামারীতে মৃত্যুর হার ছিল ১% বা তারও কম, কিন্তু জলাতঙ্কে এটি ১০০%। এই পরিসংখ্যানই বোঝায় যে, কুকুর কামড়ানোকে হালকাভাবে নেওয়া যায় না।

⏳ জলাতঙ্কের ইনকিউবেশন পিরিয়ড:

জলাতঙ্কের ভাইরাস শরীরে প্রবেশের পর লক্ষণ দেখাতে সময় নেয়। এই সময়কে ইনকিউবেশন পিরিয়ড বলা হয়। সাধারণত এটি ১৫ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে হয়, গড়ে ২৮ দিন। তবে কিছু ক্ষেত্রে এটি ১ থেকে ৪ বছর পর্যন্তও লাগতে পারে। এই সময়ের মধ্যে টিকা নিলে জলাতঙ্ক প্রতিরোধ করা সম্ভব। তাই কামড়ের পর যত দ্রুত সম্ভব ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।

(২) জলাতঙ্ক কোন প্রাণীর কামড়ে হয়, কোন প্রাণী থেকে হয়না?

জলাতঙ্ক কোন প্রাণীর কামড়ে হয়, কোন প্রাণী থেকে হয়না

ক) যেসব প্রাণীর কামড়ে জলাতঙ্ক হয়

জলাতঙ্ক সাধারণত ৫টি প্রাণীর মাধ্যমে ছড়ায়, যারা আমাদের চারপাশে থাকে-

  1. কুকুর: সবচেয়ে সাধারণ কারণ।
  2. বিড়াল: পোষা বা বন্য বিড়ালও জলাতঙ্ক ছড়াতে পারে।
  3. শেয়াল: গ্রামাঞ্চলে বেশি দেখা যায়।
  4. বাদুড়: শহরেও এদের থেকে সংক্রমণের ঝুঁকি আছে।
  5. বানর: বানরের কামড়েও জলাতঙ্ক হতে পারে।

খ) যেসব প্রাণীর কামড়ে জলাতঙ্ক হয়না

  • ছুঁচো বা ইঁদুর: এদের কামড়ে জলাতঙ্ক হয় না, তাই এ ব্যাপারে নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন।
  • গবাদি পশু: গরু, ছাগল, ভেড়ার মতো প্রাণী থেকে সাধারণত জলাতঙ্ক ছড়ায় না। তবে যদি আক্রান্ত গবাদি পশু কামড়ায় এবং ক্ষত করে, তবে ঝুঁকি থাকতে পারে।

গ) জলাতঙ্ক আক্রান্ত দুধ-মাংস খাওয়া নিয়ে বিভ্রান্তি

অনেকে ভাবেন জলাতঙ্ক আক্রান্ত প্রাণীর দুধ বা মাংস খেলে জলাতঙ্ক হতে পারে। কিন্তু এটি সত্য নয়। জলাতঙ্কের ভাইরাস ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রায় ২ মিনিটের মধ্যে মরে যায়। তাই দুধ ফুটিয়ে বা মাংস ভালোভাবে রান্না করে খেলে কোনো ঝুঁকি নেই। তবুও সতর্কতার জন্য আক্রান্ত প্রাণীর খাবার এড়িয়ে চলাই ভালো।

(৩) কুকুর কামড়ালে করণীয় কি? প্রাথমিক চিকিৎসা

কুকুর কামড়ালে করণীয় কি, প্রাথমিক চিকিৎসা

কুকুর কামড়ালে প্রথমেই আতঙ্কিত না হয়ে শান্তভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) কুকুরের কামড়কে তিনটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করেছে। আপনার পরিস্থিতি কোনটাতে পড়ে, তার উপর নির্ভর করবে আপনার করণীয়।

ক) ক্যাটাগরি-১: শুধু চাটা বা স্পর্শ

বর্ণনা: কুকুর শরীরে চেটেছে, লালা লেগেছে, বা শরীরে ঘষেছে, কিন্তু কোনো ক্ষত বা রক্তপাত হয়নি।

করণীয়:

  1. যে স্থানে লালা লেগেছে, সেটি সাবান ও প্রবাহমান পানি দিয়ে কমপক্ষে ১৫ মিনিট ধুয়ে ফেলুন।
  2. এন্টিসেপটিক সলিউশন (যেমন, বেটাডিন বা স্যাভলন) লাগান।
  3. এই ক্ষেত্রে জলাতঙ্কের টিকার প্রয়োজন নেই। তবে কুকুরটি অস্বাভাবিক আচরণ করলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

খ) ক্যাটাগরি-২: আঁচড় বা হালকা কামড়

বর্ণনা: কুকুর আঁচড়েছে বা হালকা কামড়েছে, দাগ বা ক্ষত আছে, কিন্তু রক্ত বেরোয়নি।

করণীয়:

  1. ক্ষতস্থানটি সাবান ও প্রবাহমান পানি দিয়ে ১৫ মিনিট ধুয়ে পরিষ্কার করুন। সাবান ভাইরাসকে ধ্বংস করতে সাহায্য করে।
  2. এন্টিসেপটিক লাগান।
  3. নিকটস্থ হাসপাতালে গিয়ে জলাতঙ্কের টিকা নিন। সাধারণত ৫ ডোজ টিকা দেওয়া হয় (০, ৩, ৭, ১৪, ২৮ দিনে)।
  4. কুকুরটিকে ১০ দিন পর্যবেক্ষণ করুন। যদি ১০ দিনের মধ্যে কুকুর মারা যায় বা অস্বাভাবিক আচরণ করে, তবে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।

গ) ক্যাটাগরি-৩: গভীর কামড় বা রক্তপাত

বর্ণনা: কুকুর গভীরভাবে কামড়েছে, রক্ত বেরিয়েছে, বা মাংস তুলে নিয়েছে। মাথা, গলা, বুক, কাঁধের কাছে কামড়ও এই ক্যাটাগরিতে পড়ে।

করণীয়:

  1. ক্ষতস্থানটি সাবান ও পানি দিয়ে ১৫ মিনিট ধুয়ে ফেলুন। চাপ দিয়ে ধোয়ার চেষ্টা করবেন না, কারণ এতে ভাইরাস গভীরে যেতে পারে।
  2. এন্টিসেপটিক লাগান।
  3. জলাতঙ্কের ৫ ডোজ টিকা নিন (০, ৩, ৭, ১৪, ২৮ দিনে)।
  4. হিউম্যান র‍্যাবিস ইমিউনোগ্লোবিন (HRIG) ইনজেকশন নিন। এটি ক্ষতস্থানের চারপাশে দেওয়া হয় এবং সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে পাওয়া যায়।
  5. টিটেনাস টিকা নিন, যদি আগে ৫ বছরের মধ্যে না নেওয়া থাকে।
  6. ডাক্তারের পরামর্শে এন্টিবায়োটিক নিন, যাতে ক্ষত থেকে অন্য সংক্রমণ না হয়।
  7. কুকুরটিকে ১০ দিন পর্যবেক্ষণ করুন।

(৪) কেন মাথা-গলার কামড় বেশি বিপজ্জনক?

মাথা, গলা, বা উপরের শরীরে কামড়ালে জলাতঙ্কের ঝুঁকি বেশি কারণ এই অংশগুলো মস্তিষ্কের কাছাকাছি। ভাইরাস স্নায়ু ধরে মস্তিষ্কে পৌঁছতে কম সময় নেয়। তাই এই ক্ষেত্রে শুধু টিকা নয়, ইমিউনোগ্লোবিনও জরুরি।

(৫) জলাতঙ্কের টিকা কীভাবে নেবেন?

জলাতঙ্কের টিকা কীভাবে নেবেন

জলাতঙ্কের টিকা দুইভাবে দেওয়া হয়। যথা-

  1. ইন্ট্রামাসকুলার (IM): কাঁধের ডেলটয়েড পেশিতে ৫ ডোজ দেওয়া হয়—০, ৩, ৭, ১৪, ২৮ দিনে। শিশুদের ক্ষেত্রে উরুতে দেওয়া যায়।
  2. ইন্ট্রাডার্মাল (ID): ত্বকের নিচে দেওয়া হয়। এটি কম খরচে এবং কার্যকর, তবে সব জায়গায় পাওয়া যায় না।

কামড়ের দিনকে “ডে ০” ধরে টিকা শুরু করতে হবে। প্রথম ৫ দিনের মধ্যে টিকা শুরু করা সবচেয়ে ভালো। গর্ভবতী মহিলারাও এই টিকা নিতে পারেন, কারণ আধুনিক টিকা নিরাপদ এবং শিশুর ক্ষতি করে না।

(৬) আগে কুকুর কামড়ানোর টিকা নিয়েছি, আবার কামড়ালে কী করব?

  • ৩ মাসের মধ্যে আবার কামড়ালে: টিকার প্রয়োজন নেই, কারণ শরীরে ইমিউনিটি থাকে।
  • ৩ মাস থেকে ৫ বছরের মধ্যে: ৩ ডোজ টিকা নিন (০, ৩, ৭ দিনে)।
  • ৫ বছর পর বা পুরো ডোজ না নেওয়া থাকলে: পুরো ৫ ডোজ আবার নিতে হবে।

(৭) জলাতঙ্কের লক্ষণ কী?

জলাতঙ্কের লক্ষণ কী

জলাতঙ্কের লক্ষণ চারটি ধাপে প্রকাশ পায়। যথা-

  1. প্রাথমিক ধাপ: জ্বর, গা ব্যথা, কাশি, ক্ষতস্থানে চুলকানি বা জ্বালা।
  2. দ্বিতীয় ধাপ: ভাইরাস স্নায়ু ধরে মস্তিষ্কের দিকে যায়। জ্বর, অস্থিরতা, ক্লান্তি দেখা দেয়।
  3. তৃতীয় ধাপ: জল বা তরল দেখলে ভয়, গলায় স্প্যাজম, শ্বাসকষ্ট। এটি জিনোট্রপিক ভাইরাল এনসেফালাইটিসের লক্ষণ।
  4. চূড়ান্ত ধাপ: কোমা, শ্বাসকষ্ট, এবং মৃত্যু।

এই লক্ষণ একবার প্রকাশ পেলে বাঁচার কোনো উপায় নেই। তবে টিকা এই ধাপে পৌঁছানোর আগেই ভাইরাসকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়।

(৮) জলাতঙ্ক থেকে বেঁচে ফেরার একমাত্র উদাহরণ

পৃথিবীতে জলাতঙ্কের লক্ষণ প্রকাশের পর বেঁচে ফেরার একমাত্র ঘটনা হলো জিনা গিসে ফ্রেটোর। ২০০৪ সালে আমেরিকায় ১৩ বছর বয়সে তিনি বাদুড়ের আঁচড়ে আক্রান্ত হন। প্রথমে পরিবার এটিকে গুরুত্ব দেয়নি। ৭ দিন পর লক্ষণ দেখা দিলে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ডাক্তাররা “মিলওয়াকি প্রোটোকল” নামে একটি পরীক্ষামূলক চিকিৎসা প্রয়োগ করেন। এতে তাকে কৃত্রিম কোমায় রেখে অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ দেওয়া হয়। ৭৫ দিন হাসপাতালে থাকার পর তিনি সুস্থ হয়ে ফিরেন। এটি বিরলতম ঘটনা, এবং এই পদ্ধতি সবার ক্ষেত্রে কার্যকর নয়।

(৯) কীভাবে জলাতঙ্ক প্রতিরোধ করবেন?

জলাতঙ্ক প্রতিরোধে সচেতনতা ও সতর্কতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখানে কিছু পরামর্শ দেওয়া হলো-

  1. পোষা প্রাণীকে ভ্যাকসিনেট করুন: কুকুর ও বিড়ালকে নিয়মিত ভেটেরিনারি ডাক্তারের কাছে টিকা দিন।
  2. বাচ্চাদের সচেতন করুন: স্ট্রিট ডগের সঙ্গে খেলতে বা ঢিল ছুঁড়তে মানা করুন। কামড়ালে বাড়িতে জানাতে বলুন। ভারতে জলাতঙ্কে মৃত্যুর ৫০% শিশু, কারণ তারা লুকিয়ে ফেলে।
  3. স্ট্রিট ডগ এডপ্ট করুন: বিদেশি ব্রিডের পরিবর্তে দেশি কুকুর পুষে ভ্যাকসিনেট করুন। এতে স্ট্রিট ডগের সংখ্যা কমবে এবং তারা আপনার প্রতি অনুগত থাকবে।
  4. আশপাশের মানুষের প্রতি সংবেদনশীল হোন: পোষা কুকুর যদি অপরিচিতদের আক্রমণ করে, তবে তাকে বেঁধে রাখুন।

(১০) শেষ কথা

কুকুর কামড়ালে করণীয় সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান আমাদের জীবন বাঁচাতে পারে। ক্ষত ধোয়া, টিকা নেওয়া, এবং ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলা—এই সহজ পদক্ষেপগুলো জলাতঙ্কের ঝুঁকি শূন্যে নামিয়ে আনতে পারে। পাশাপাশি, আমাদের পোষা প্রাণী ও স্ট্রিট ডগের প্রতি দায়িত্বশীল হতে হবে। সচেতনতা ও মানবিকতার মাধ্যমে আমরা একটি নিরাপদ সমাজ গড়ে তুলতে পারি। সবাইকে সুস্থ ও নিরাপদ থাকার আহ্বান জানিয়ে এই ব্লগ শেষ করছি।

ডিসক্লেইমার: এই ব্লগে প্রদত্ত তথ্য শুধুমাত্র সাধারণ জ্ঞান ও সচেতনতার উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছে। আমরা কোনো চিকিৎসক বা স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ নই। কুকুরের কামড় বা জলাতঙ্ক সংক্রান্ত যেকোনো পরিস্থিতিতে সঠিক চিকিৎসা ও নির্দেশনার জন্য অবশ্যই নিকটস্থ হাসপাতালে বা একজন যোগ্য ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন। এখানে দেওয়া তথ্য কোনো পেশাদার চিকিৎসা পরামর্শের বিকল্প নয়। আপনার ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য তথ্য শেয়ার করবেন না।

মানব শরীর ও স্বাস্থ্য সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট স্বাস্থ্য’ (inbangla.net/sastho) এর সাথেই থাকুন।

অনুরোধ!! পোষ্ট ভালো লাগলে প্লিজ উপরের শেয়ার আইকনে ক্লিক করে পোষ্টটি শেয়ার করে দিন।

Leave a Reply

nv-author-image

ইন বাংলা নেট স্বাস্থ্য

মানব শরীর ও স্বাস্থ্য সম্পর্কিত যা কিছু বাংলাতে।View Author posts