Skip to content

গরুর খামার করে লস ১০টি কারণ ও গরুর খামার তৈরি করার চ্যালেঞ্জসমূহ

গরুর খামার করে লস ১০টি কারণ ও গরুর খামার তৈরি করার চ্যালেঞ্জসমূহ

২০২১ সালে হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে গরুর সংখ্যা প্রায় ২৩.২০ মিলিয়ন। আমাদের দেশে পালিত অধিকাংশ গাভী অনুন্নত ও কম উৎপাদনশীল। তাই আমাদের খামারীরা গরুর খামার করে লস এর কবলে পড়েন। পূর্বে এদেশের লোকসংখ্যা ছিল কম চারণভূমি ছিল প্রচুর। তখন সনাতন পদ্ধিতে গরুর খামার তৈরি ও দেশী গাভী পালন করে দুধ ও মাংসের চাহিদা মেটানো সম্ভব ছিল।কিন্তু বর্তমানে বর্ধিত জনসংখ্যার আমিষজাতীয় খাদ্যের চাহিদা মেটানো দূরূহ হয়ে পড়েছে। সেজন্য দেশী গাভী সংকরায়নের মাধ্যমে উন্নত জাতের গাভী উদ্ধাবন করা হয়েছে।

আমাদের বাংলাদেশে বর্তমানে যেসব গাভী পাওয়া যায় তা হলো- দেশী গাভী, রেড চিটাগাং, পাবনা, মুন্সিগঞ্জ, লোকাল শাহীওয়াল ক্রস, লোকাল ফ্রিজিয়ান ক্রস, লোকাল সিন্ধি ক্রস এবং লোকাল জার্সি ক্রস।

কৃষি নির্ভর অর্থনীতির বাংলাদেশে বিগত প্রায় দুই দশক ধরে প্রাণীজ খাতগুলো যেমন পোস্ট্রি, মৎস্য এবং ডেইরী খাতসমূহ খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছে। প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ সমৃদ্ধ এ খাতসমূহের সাথে প্রায় ১ কোটির উপরে মানুষ প্রত্যক্ষভাবে এবং আরো ৫০ লক্ষ মানুষ পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত।

আর্থিক ঝুঁকি, গরুর খামার করে লস

ছাগল ও গরুর খামার খাতের সাথে জড়িত জনগোষ্ঠীর উপরই নির্ভর করছে এ দেশের ১৬ কোটি মানুষের দৈনন্দিন আমিষ পুরণের মহান দায়িত্ব। বর্তমানে কৃষি, শিল্প এবং খাদ্য উৎপাদন ছাড়াও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন ও আত্নকর্মসংস্থানে প্রাণিসম্পদ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলছে। আমাদের দেশের প্রাণিসম্পদের মধ্যে গাভী পালন অন্যতম।

(১) গরুর খামার তৈরি করার চ্যালেঞ্জসমূহ

১। উন্নত জাতের গাভী পালন একটি শ্রমসাধ্য ও আধুনিক ব্যবস্থাপনা নির্ভর। উন্নত জাতের গাভী পালনের মাধ্যমে খামারীদের আয় উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি করা সম্ভব তা প্রমাণিত।

দেশী গাভীর তুলনায় উন্নত জাতের গাভী পালন তুলনামূলক ব্যয়সাপেক্ষ। তাই সফলভাবে এটি ব্যবস্থাপনা করতে না পারলে খামারীদের ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

See also  গরুর পাতাকৃমির ঔষধের নাম? ভেড়ার পাতাকৃমির ঔষধের নাম?

২। দুধ উৎপাদনের জন্য গাভীকে সবুজ ঘাস সরবরাহ করতে হয়। কিন্তু আমাদের দেশে ৯০ শতাংশ খামারীর ১২ মাস সবুজ ঘাস সরবরাহ করার ব্যবস্থা নেই। তারা প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত কাঁচা ঘাসের উপর নির্ভরশীল।

দিন দিন কাচা ঘাস উৎপাদিত জমির পরিমান (আবদী ও অনাবাদী জমি) কমে যাচ্ছে। যা সময়মত এবং সারা বছরব্যাপী কাচা ঘাস প্রাপ্তির অন্তরায়।

৩। গবাদি প্রাণী লালন পালনের ক্ষেত্রে মোট খরচের শতকরা ৭০ ভাগই খাদ্যের জন্য ব্যয় হয়। এই ৭০ভাগ খরচের বেশির ভাগ ব্যয় গাভীর জন্যে দানাদার খাদ্য ক্রয়ে ব্যয় হয়ে থাকে।

আর এই দানাদার খাদ্যের দাম দিন দিন বেড়েই চলছে। যা উন্নত জাতের গাভী পালনে ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান সমস্যা।

৪। আমাদের দেশের গাভীর উৎপাদনশীলতা (দুধ উৎপাদন) তুলনামূলকভাবে কম যা লাভজনকভাবে গাভী পালনের মাধ্যমে অধিক দুধ উৎপাদনের একটি অন্তরায়।

৫। খামারীরা সবসময় গাভীর ওজন পরিমাপ করে না বা করতে চায় না। কিন্তু উন্নত জাতের গাভীকে তার শরীরের ওজন অনুপাতে খাদ্য সরবরাহ করতে হয়।

খাদ্যের মধ্যে এক তৃতীয়াংশ হবে দানাদার খাদ্য এবং দুই তৃতীয়াংশ হবে সবুজ ঘাস। গাভীকে তার শরীরের ওজন অনুযায়ী যথেষ্ট পরিমাণ খাদ্য না দিলে গাভীর স্বাস্থ্য খারাপ হবে, দুধ উৎপাদন কমে যাবে, ওজন কমে যাবে, বাচ্চা দেয়ার জন্য সহজে গরম হবে না এবং বিভিন্ন রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত হবে।

৬। গাভী হচ্ছে দৈনিক আয় প্রদানকারী প্রাণী। আমাদের দেশের ৯৫ শতাংশ খামারী আয়-ব্যয়ের হিসাব লিপিবদ্ধ করে রাখে না।

আয়-ব্যয়ের হিসাব লিপিবদ্ধ না রাখলে খামারী বুঝতে পারবে না তার কি পরিমান লাভ ক্ষতি হচ্ছে। তাই প্রতিদিনের হিসাব অব্যশ্য প্রতিদিন করে রাখতেই হবে।

৭। সুস্থ ও স্বাস্থ্যসম্মত গাভী পালন এবং দুধ উৎপাদনের জন্য নিয়মিত টিকা, কৃমিনাশক খাওয়ানো ও কৃত্রিম প্রজননের জন্য উন্নতমানের সীমেন প্রয়োজন। সময়মত টিকা ও ভালোমানের সীমেন প্রাপ্তি খামারীদের জন্যে একটি চ্যালেঞ্জ।

See also  গরুর ভিটামিন ইনজেকশন

(২) গরুর খামার করে লস হবার ১০টি কারণ

১। স্বাস্থ্যসম্মত আদর্শ গোয়াল ঘর না থাকা।

২। স্বাস্থ্যসম্মতভাবে দুধ দোহন ও বাজারজাতকরণ না করা।

৩। খড় ও ঘাস সহজপাচ্য ভাবে পরিবেশন না করা।

৪। গাভী নির্বাচন বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান না থাকা।

৫। খামারীদের আধুনিক ব্যবস্থাপনায় গাভী পালনে জ্ঞান ও দক্ষতার অভাব।

৬। কাচা ঘাস সংরক্ষণের প্রক্রিয়া সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান না থাকা।

৭। সুষম খাদ্য প্রস্তুত প্রণালী সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারনা না থাকা।

৮। গবাদীপশু বিভিন্ন রোগ-বালাইয়ে প্রায়শই আক্রান্ত হওয়া।

৯। নিয়মিত গাভী টিকা প্রদান না করা এবং কৃমিনাশক না খাওয়ানো।

১০। জাত উন্নয়নের জন্যে কৃত্রিম প্রজনন না করা।

বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম জনবহুল, কৃষিপ্রধান ও দরিদ্র দেশ। দেশ দরিদ্র হলেও এর বিভিন্ন খাত এখনও সম্ভাবনাময়। গাভী পালন তেমনি একটি সম্ভাবনাময় খাত।

কৃষি নির্ভর এই দেশের কৃষি উৎপাদনে বিভিন্ন গবাদি প্রাণীর সংগে গাভীও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। আমাদের দেশে পালিত অধিকাংশ গাভীই দেশী জাতের। এদের উৎপাদন আশানুরুপ নয়।

চাহিদার তুলনায় অন্যান্য খাদ্যের মত আমাদের দেশে দুধ ও মাংসের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। দুধ আমিষের একটি মূল্যবান উৎস। শিশু- কিশোর, যুবক, বৃদ্ধ ও রোগী সবার জন্য দুধ। পুষ্টিকর খাদ্য।

শুধুমাত্র শিশু খাদ্য হিসাবে আমাদের দেশে প্রতি বছর বিপুল পরিমান দুধের চাহিদা রয়েছে। প্রতি বছর কয়েকশত কোটি টাকার কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করে দুধ আমদানি করতে হচ্ছে। গাভী পালনে প্রত্যক্ষভাবে যেমন দুধ পাওয়া যায় তেমনি পরোক্ষভাবে পাওয়া যায় মাংস এবং সৃষ্টি হয় নতুন নতুন উদ্যোক্তা ও কর্মসংস্থানের।

বাংলাদেশের ৮৫ হাজার গ্রামের বিপুল জনসংখ্যা যাদের সামর্থ্য ও সুযোগ আছে তারা যদি নিজের প্রয়োজনে বাড়িতে ২-৩ টি উন্নত জাতের গাভী পালন করে তাহলে এই সমস্যা সমাধান করা সম্ভব।

See also  ১২ টি ভেজাল গরু চেনার উপায়ঃ কোরবানির গরু কেনার আগে ও কুরবানির গরু কেনা সময় লক্ষ্যণীয় বিষয় জেনে রাখুন

বিভিন্ন গবাদি পশু যেমন- গরু পালন, ছাগল পালন, মহিষ পালন, ভেড়া পালন ইত্যাদি সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট গবাদি পশু’ (inbangla.net/gobadi) এর সাথেই থাকুন।

Tags:

Leave a Reply

nv-author-image

ইন বাংলা নেট গবাদি

বিভিন্ন গবাদি পশু যেমন- গরু পালন, ছাগল পালন, মহিষ পালন, ভেড়া পালন ইত্যাদি সম্পর্কিত যা কিছু বাংলাতে।View Author posts