গরু মোটাতাজাকরণ এ ইউরিয়া মোলাসেস এর ব্যবহার ছাড়া গবাদিপশু মোটাতাজাকরণ এবং উৎপাদন দুই ক্ষেত্রেই কাঁচা ঘাসের সংকট আছে। এ সংকট মোকাবিলায় আমরা ইউরিয়া মোলাসেস স্ট্র কে ঘাসের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করত পারি। তবে এর পরিমাণ দিনে ৩-৪ কেজির ঊর্ধ্বে হওয়া যাবে না। খড় প্রক্রিয়াজাত করে ইউরিয়া খাওয়ানো সহজ, ব্যয় কম এবং ফল ভালো আসে।
(১) গরু মোটাতাজাকরণ ইউরিয়ার ব্যবহার এর ক্ষেত্রে কি কি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে?

⇒ এক বছরের নিচে গরুকে ইউরিয়া খাওয়ানো যাবে না।
⇒ কখনও মাত্রাতিরিক্ত ইউরিয়া খাওয়ানো যাবে না
⇒ গর্ভাবস্থায় ইউরিয়া খাওয়ানো যাবে না।
⇒ অসুস্থ গরুকে ইউরিয়া খাওয়ানো যাবে না
⇒ তবে দূর্বল গরুকে পরিমাণের চেয়ে কম খাওয়ানো যেতে পারে।
⇒ ইউরিয়া খাওয়ানোর প্রাথমিক অবস্থা (৭ দিন পর্যন্ত পশুকে ঠান্ডা ছায়াযুক্ত স্থানে বেঁধে রাখতে হবে এবং ঠান্ডা পানি দিয়ে নিয়মিত গোসল করাতে হবে। প্রকল্প মেয়াদ তিন মাস, শুরু হবে ইউরিয়া মিশ্রিত খাবার প্রদানের দিন থেকে।
⇒ এই খবার খাওয়ানো শুরুর ১০-১৫ দিন পর হেমাটোপিন বিএস (১০এমএল) ইনজেকশন মাংসপেশীতে প্রয়োগ করলে মোটাতাজা করণ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়।
(২) ইউরিয়া মোলাসেস তৈরির পদ্ধতি কি?
ইউরিয়া মোলাসেস তৈরির পদ্ধতির ধাপগুলো হলো-


- ১০ কেজি শুকনো খড় টুকরো টুকরো কাটুন;
- ৫ লিটার পানি একটি বালতিতে রাখুন;
- এ ৫ লিটার পানির মধ্যে ২.৫ কেজি (আড়াই কেজি) চিটাগুড় মিশান;
- চিটাগুড় মিশ্রিত হলে এর সাথে ২৫০ গ্রাম (এক পোয়া) ইউরিয়া মেশান;
- এখন ইউরিয়া এবং চিটাগুড় মিশ্রিত পানির দ্রবণটি ১০ কেজি খড়ের সাথে ভালোভাবে মেশান;
ব্যাস, ইউরিয়া মোলাসেস তৈরি হয়ে গেলো।
তাছাড়াও বিভিন্ন রকমের ইউরিয়া মোলাসেস ব্লক ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন-


- ৩৯ ভাগ চিটাগুড়
- ২০ ভাগ গমের ভূসি
- ২০ ভাগ ধানের কুঁড়া
- ১০ ভাগ ইউরিয়া
- ৬ ভাগ চুন
- ৫ ভাগ লবণে
উপরোক্ত উপাদানগুলোর র মিশ্রণ তিরি করে বিভিন্ন আকারে সাঁচ ব্যবহার কের ইউরিয়া মোলাসেস ব্লক তৈরি করা যায়।
(৩) খড়ের সাথে মিশিয়ে ইউরিয়া খাওয়ানোর নিয়ম কি?
⇒ খড় প্রক্রিয়াজাতকরণ ১০ কেজি খড় ১০ কেজি পানি এবং ৫০০ গ্রাম ইউরিয়া বায়ুরোধী বড় বাঁশের ডোল পাত্রবিশেষ বা ইটের তৈরি হাউজে ৭-১০ দিন আবদ্ধ বায়ুরোধী অবস্থায় রেখে দিতে হবে।
⇒ তারপর ঐ খড় বের করে রৌদ্রে শুকিয়ে নিতে হবে যেন ইউরিয়া তীব্র গন্ধ কিছুটা কমে আসে।
⇒ এই খড় গরু প্রথমে না খেলে কিছুটা চিড়াগুড় মিশিয়ে দেয়া যেতে পারে ২০০-৫০০ গ্রাম পরিমাণ।
⇒ গরুকে প্রথমে দৈনিক ৫ গ্রাম থেকে শুরু করে ৫০-৬০ গ্রাম ইউরিয়া খাওয়ানো যায়। ছোট গরুর ক্ষেত্রে ৩০-৪০ গ্রামের বেশী দৈনিক খাওয়ানো উচিত নয়।
⇒ ৩-৪ কেজির বেশি ইউরিয়া মিশ্রিত খর খাওয়ালে গরুতে ইউরিয়া বিষক্রিয়া দেখা দিতে পারে। কারণ একটি গরু মিশ্রিত উপকরণের সাথে দৈনিক গড়ে ৫০-৬০ গ্রাম ইউরিয়া শরীরবৃত্তির কাজে ব্যবহার করতে পারে। এর বেশি ইউরিয়া খাওয়ালে পশুতে বিষক্রিয়া হয়।
⇒ খড় প্রতিদিন প্রতিটি গরুকে ৩ থেকে ৪ কেজি পরিমাণ খাওয়াবেন। ৩ থেকে ৪ কেজির বেশি ইউএমএস এক দিনে একটি গরুকে খাওয়ানো যাবে না।
(৪) ইউরিয়া ব্যবহার করে বিভিন্ন ওজনের গরুর খাবার তালিকা
গরুর দানাদার খাদ্যে ইউরিয়া ব্যবহার করে বিভিন্ন ওজনের গরুর খাবার তালিকা দেওয়া হলো-
খাদ্য তালিকায় আরও যা রাখবেন তা হচ্ছে গরু প্রতি প্রতিদিন ৫-৬ কেজি কাঁচাঘাস ঘাস খাওয়াতে হবে।
দানাদার খাদ্য হিসেবে বিভিন্ন প্রকার ডালের ভুসি ২-৩ কেজি মিশ্রণ করবেন এর সাথে ২-৩ কেজি চালের কুঁড় এবং গমের ভুসির মিশ্রণ করবেন। এ হারে মিশ্রিত দানাদার খাদ্য প্রতিদিন প্রতিটি গরুকে খাওয়াতে হবে। গবাদিপশু মোটাতাজাকরণে প্রতিটি গরুকে এভাবে খাওয়াতে হবে।
গবাদিপশু মোটাতাজাকরণে প্রতিটি গরুকে দিনে ২৫০ গ্রাম সরিষার খৈল খাওয়ালে গরুর ত্বক মসৃণ হয় এবং স্বাভাবিকভাবে চর্বির বৃদ্ধি ঘটে। এ ছাড়া ভাতের মাড়, চাল ধোয়া পানি, সবজির অবশিষ্ট অংশ, ফলমূলের ছোবড়া গবাদিপশুকে খাওয়ান, পশুর বৃদ্ধি খুব দ্রুত হবে।
১০০ কেজি দানাদার খাদ্যে তালিকা:
- গম ভাঙা/গমের ভূসি-৪০ কেজি।
- চালের কুঁড়া-২৩.৫ কেজি।
- খেসারি বা যেকোনো ডালের ভূসি-১৫ কেজি।
- তিলের খৈল/সরিষার খৈল-২০ কেজি; লবণ-১.৫ কেজি।
১০০ কেজি দৈহিক ওজনের গরুর খাবার তালিকা:
- ধানের খড় = ২ কেজি
- সবুজ ঘাস = ২ কেজি (ঘাস না থাকলে খড় ব্যবহার করতে হবে
- দানদার খাদ্যে মিশ্রন = ১.২-২.৫ কেজি
- ইউরিয়া = ৩৫ গ্রাম (নিয়মানুযায়ী)
- চিটাগুড়া = ২০০-৪০০ গ্রাম
- লবণ = ২৫ গ্রাম
দানাদার খাদ্যের সাথে লবন, ইউরিয়া, চিটাগুড় এক সাথে মিশিয়ে দিনে ২ বার দিতে হবে। ধানের খড় এবং কাঁচা ঘাস ছোট ছোট করে কেটে এক সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ালে ভালো ফল পাওয়া যায়।
১৫০ কেজি ওজনের গরুর খাবার তালিকা:
- খড় = ৩ কেজি
- কাঁচা ঘাস = ৫-৬ কেজি
- দানাদার খাদ্যের মিশ্রন = ১.৫-২ কেজি
- চিটাগুড় = ৫০০ গ্রাম
- ইউরিয়া = ৪৫ গ্রাম (নিয়মানুয়ায়ী)
- লবন = ৩৫ গ্রাম
১৫০–২০০ কেজি ওজনের গরুর খাবার তালিকা:
- ধানের খড় = ৪ কেজি
- কাঁচা ঘাস = ৫-৬ কেজি
- দানাদার খাদ্যের মিশ্রন = ১.৫-২ কেজি
- চিটাগুড় = ৫০০ গ্রাম
- ইউরিয়া = ৪৫ গ্রাম (নিয়মানুযায়ী)
- লবন = ৩৫ গ্রাম
মোটাতাজা করনের গরুকে সর্বক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ আঁশ জাতীয় খাবার (খড়, কাঁচা ঘাস) এবং বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে হবে।
(৫) গরু মোটাতাজাকরণের একটি সুষম খাদ্যের পরিমাণ
গরু মোটাতাজাকরণের একটি সুষম খাদ্যের পরিমাণের নমুনা নিচে দেওয়া হলো-
খাদ্যে মোট খরচের প্রায় ৬০ থেকে ৭০ ভাগ ব্যয় হয়। তাই স্থানীয়ভাবে প্রাপ্ত খাদ্য দ্বারা খরচ কমানো সম্ভব।
1. শুকনো খড়: দুই বছরের গরুর জন্য দৈহিক ওজনের শতকরা ৩ ভাগ এবং এর অধিক বয়সের গরুর জন্য শতকরা ২ ভাগ শুকনো খড় ২ থেকে ৩ ইঞ্চি করে কেটে একরাত লালীগুড়/চিটাগুড় মিশ্রিত পানিতে ভিজিয়ে প্রতিদিন সরবরাহ করতে হবে। পানিঃচিটাগুড় = ২০ঃ১।
2. কাঁচাঘাস: প্রতিদিন ৬ থেকে ৮ কেজি তাজা ঘাস বা শস্যজাতীয় তাজা উদ্ভিদের উপজাত দ্রব্য যেমন- নেপিয়ার, পারা, জার্মান, দেশজ মাটি কালাই, খেসারি, দুর্বা ইত্যাদি সরবরাহ করতে হবে।
3. দানাদার খাদ্য: প্রতিদিন কমপক্ষে ১ থেকে ২ কেজি দানাদার খাদ্য সরবরাহ করতে হবে।
প্রিয় খামারি বন্ধু, উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে আমরা গরু মোটাতাজাকরণ ইউরিয়ার ব্যবহার ইউ এম এস তৈরি ও এর প্রয়োগ সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জানলাম।
বিভিন্ন গবাদি পশু যেমন- গরু পালন, ছাগল পালন, মহিষ পালন, ভেড়া পালন ইত্যাদি সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট গবাদি পশু’ (inbangla.net/gobadi) এর সাথেই থাকুন।