Skip to content

 

গরু মোটাতাজাকরণ পদ্ধতি ও নিয়মনীতি (বিস্তারিত বর্ণনা)

গরু মোটাতাজাকরণ পদ্ধতি
আলোচ্য বিষয়:

(১) গরু মোটাতাজাকরণ কী?

⇒ অধিক মাংস উৎপাদনের জন্য ২ থেকে ৩ বছর বয়সের শীর্ণকায় গরুকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় খাদ্য সরবরাহ করে হৃষ্টপুষ্ট গরুতে রূপান্তরিত করাকে গরু মোটাতাজাকরণ বলে।

⇒ এই গরু মোটাতাজাকরণ প্রকল্পগুলো বিভিন্ন বয়সী হতে পারে। যেমন ৩ বা ৪ মাস মেয়াদি। নির্ভর করছে খামারি কেনা গরুটি কি রকম মোটা করে কি দামে বিক্রি করবেন। দাম বেশি চাইলে প্রকল্প মেয়াদ দীর্ঘ হবে এবং কম চাইরে প্রকল্প মেয়াদ স্বল্প হবে। তবে অনেকেই ঈদের বাজারকে চিন্তা করে তার ৪/৫ মাস আগে থেকে প্রকল্প শুরু করেন।

(২) গরু মোটাতাজাকরণ এর গুরত্ব কী?

⇒ দারিদ্রতা হ্রাসকরণ।

⇒ অল্প সময়ে কম পুঁজিতে অধিক মুনাফা অর্জন।

⇒ অল্প সময়ের মধ্যে লাভসহ মূলধন ফেরত পাওয়া।

⇒ স্বল্পমেয়াদি প্রযুক্তি হওয়ার কারণে পশু মৃত্যুর হার কম।

⇒ কৃষিকার্য হতে উৎপাদিত উপজাত পশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে সহজেই মাংস উৎপাদন করা।

⇒ প্রাণীজ আমিষের ঘাটতি পূরণ।

⇒ বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে আয় বৃদ্ধি করা প্রভৃতি।

⇒ প্রতিটি পরিবার কিংবা ব্যক্তির একক বা একমুখী রোজগারে সংসার চালানো অনেক কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই অনেকেই বাড়তি একটা কিছু করতে চায়, কিন্তু সুযোগ হয় না কিংবা হলেও কি করবে, তা খুঁজে পায় না। বাংলাদেশে গরুর মাংস খুব জনপ্রিয় এবং চাহিদাও প্রচুর। তাছাড়া মুসলমাদের ধমীয় উৎসব কুরবানীর সময় অনেক গরু জবাই করা হয়। সূতরাং গরু মোটাতাজাকরন বাংলাদেশের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ন এবং একটি লাভজনক ব্যবসা।

(৩) গরু মোটাতাজাকরণ এর সঠিক সময় কখন?

⇒ বয়সের উপর ভিত্তি করে সাধারণত ৩ থেকে ৪ মাসের মধ্যে গরু মোটাতাজাকরণ করা যায়। অনেক সময় ৫ থেকে ৬ মাসও সময় লাগতে পারে।

⇒ গরু মোটাতাজাকরণের জন্য সুবিধাজনক সময় হচ্ছে বর্ষা এবং শরৎকাল যখন প্রচুর পরিমাণ কাঁচাঘাস পাওয়া যায়।

⇒ চাহিদার উপর ভিত্তি করে কোরবানী ঈদের ৫ থেকে ৬ মাস পূর্ব থেকে গরুকে উন্নত খাদ্য ও ব্যবস্থাপনা দিয়ে মোটাতাজাকরণ লাভজনক।

(৪) গ্রোথ হরমোনের ব্যবহার ছাড়া গরু মোটাতাজাকরণ করা যায় কি?

কোনোভাবেই ইনজেকশন বা কোনো গ্রোথ হরমোন ব্যবহার করে গবাদিপশু মোটাতাজাকরণের উদ্যোগ নেওয়া যাবে না। এন্টিবায়োটিকের ব্যবহার ছাড়াও স্বাভাবিক ও জৈব পদ্ধতিতেই গরু মোটাতাজাকরণ সম্ভব। এজন্য দরকার শুধু কিছু নিয়ম-কানুন মেনে চলা।

কোনো গ্রোথ হরমোন ব্যবহার ছাড়াই যেভাবে গবাদিপশুর বেশি মাংস নিশ্চিত করা যায়, সে সম্পর্কে ইতিমধ্যই আমাদের এই ওয়েবসাইটে বিস্তারিত আলোকপাত করা হয়েছে।

(৫) গরু মোটাতাজাকরণ ট্যাবলেট বা গরু মোটাতাজাকরণ ইনজেকশন এর ব্যবহার করলে কি হয়?

⇒ সবাইকে মনে রাখতে হবে গবাদিপশু মোটাতাজা করতে ৪-৫ মাস সময় লাগে। হঠাৎ করে স্টেরয়েড খাইয়ে গরু মোটাতাজা করা যায়। তবে কাজটি অনৈতিক, নিষিদ্ধ এবং ঝুঁকিপূর্ণ।

⇒ স্টেরয়েডের ব্যবহারের কারণে খামারেই গরুর মৃত্যু ঘটে এমন নজির প্রচুর আছে।

⇒ স্টেরয়েড প্রাণীর স্বাভাবিক মেটাবলিজমকে অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়ে দেয়। ফলে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অংগ যেমন লিভার, লাং, হৃদপি- এসব স্বাভাবিক নিয়মে কাজ করে না।

See also  গরু মোটাতাজাকরণ ইউরিয়ার ব্যবহার ইউ এম এস

⇒ অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় স্টেরয়েড খাওয়ানো গরু হাইপারটেনশনে বেশি মারা যায়।

⇒ এ ছাড়া স্টেরয়েড মানব দেহের জন্যও যথেষ্ট ক্ষতিকর। সুতরাং মোটাতাজাকরণ প্রক্রিয়ার কোথাও স্টেরয়েডের প্রয়োজন হয় না। যদি তা স্বাভাবিক সময় এবং নিয়ম জেনে করা হয়। তবে মোটাতাজাকরণের সময় চিকিৎসকরা সহনীয় মাত্রায় ভিটামিন, মিনারেল ব্যবহার করেন। যা প্রাণীর জন্যও ক্ষতিকর নয়, মানুষের জন্যও ক্ষতিকর নয়।

গরু মোটাতাজাকরন প্রদ্ধতি এর ধারাবহিকভাবে যে সকল বিষয়গুলো সম্পন্ন করতে হবে গবাদিপশু মোটাতাজা করার পদ্ধতিগুলো হচ্ছে নিচে বিস্তারিত আলোকপাত করা হলো

(৬) গরু মোটাতাজাকরণ এর বাসস্থানের কাঠামো কেমন হবে?

⇒ গরুর বাসস্থান তৈরির জন্য খোলামেলা উঁচু জায়গায় গরুর ঘর তৈরি।

⇒ একটি গরুর জন্য মাপ হতে হবে কমপক্ষে ১০-১২ বর্গফুট।

⇒ ভিটায় ১ ফুট মাটি উঁচু করে এর ওপর ১ ফুট বালু দিয়ে ইট বিছিয়ে মেঝে মসৃণ করার জন্য সিমেন্ট, বালু ও ইটের গুঁড়া দিতে হবে।

⇒ গরুর সামনের দিকে চাড়ি এবং পেছনের দিকে বর্জ্য নিষ্কাশনের জন্য নালা তৈরি করতে হবে।

⇒ বাঁশের খুঁটি দিয়ে বেঁধে ওপরে ধারি অথবা খড় ও পলিথিন দিয়ে চালা দিতে হবে, ঘরের পাশে নিরাপদ পানির ব্যবস্থা করা দরকার।

⇒ পাশাপাশি দাঁড়ানো গরুকে বাঁশ দিয়ে আলাদা করতে হবে যাতে একে অন্যকে গুঁতা মারতে না পারে।ঘরের চারপাশ চটের পর্দার ব্যবস্থা রাখতে হবে, যাতে অতি বৃষ্টি ও অতি ঠান্ডার সময় ব্যবহার করা যায়।

⇒ গোয়ালঘরের কাছে একটি স্যালো টিউবওয়েল অথবা ডিপটিউবওয়েল স্থাপন করা দরকার।কারণ মোটাতাজাকরণে গবাদিপশুকে পরিমিত পানি, দানাদার খাবার মিশ্রণ, ইউরিয়া মিশ্রিত স্ট্র এসব প্রস্তুত করতে পর্যাপ্ত পানির সংস্থান থাকতে হয়।

⇒ মোটাতাজাকরণের পশুকে দু-তিন দিন পরপর পানির স্প্রে করে শরীর ধুইয়ে দিলে ত্বক মসৃণ হয়।

(৭) গরু মোটাতাজাকরণ এর স্থান নির্বাচন কেমন হবে?

⇒ গরু রাখার স্থান নির্বাচনে নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর দিকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে

⇒ শুষ্ক ও উঁচু জায়গা হতে হবে, যাতে খামার প্রাঙ্গণে পানি না জমে থাকে।

⇒ খোলামেলা ও প্রচুর আলো বাতাসের সুযোগ থাকতে হবে।

⇒ খামারে কাঁচামাল সরবরাহ ও উৎপাদিত দ্রব্যাদি বাজারজাতকরণের জন্য যোগাযোগ সুবিধা থাকতে হবে।

⇒ পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহের সুষ্ঠু ব্যবস্থা থাকতে হবে;

⇒ সুষ্ঠ পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা থাকতে হবে।

(৮) গরু মোটাতাজাকরণ এর গরু নির্বাচন করবেন কিভাবে?

⇒ বিদেশি গরুর জন্য উন্নত খাদ্য ও ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন।

⇒ বয়স্ক গরু মোটাতাজাকরণের জন্য খুব বেশি উপযোগী নয়। গরু সাধারণত ষাড় হওয়া ভালো। ষাড় গরুর মাংসের মূল্য এবং চাহিদা বেশি।

⇒ বড় আকারের একটি কংকালসার গরুর গায়ে বেশ মাংস উৎপন্ন করা যায়।

⇒ গরু নির্বাচনের সময় খেয়াল রাখবেন প্রাণীটির দেহের কাঠামো যেন একটু বড় হয়। যেমন লম্বা এবং উচ্চতা এ দুটো বিষয়ই খেয়াল রাখতে হয়।

⇒ দেশীয় গরু মোটাতাজাকরণ অলাভজনক।

⇒ ২ থেকে ২.৫ বছরের গরুর শারীরিক বৃদ্ধি ও গঠন মোটাতাজাকরণের জন্য বেশি ভাল।

⇒ এঁড়ে বাছুরের দৈহিক বৃদ্ধির হার বকনা বাছুরের চেয়ে বেশি হয়ে থাকে।

⇒ বাছুরের বুক চওড়া ও ভরাট হবে।

⇒ পেট চ্যাপ্টা ও বুকের সাথে সমান্তরাল হবে।

⇒ মাথা ছোট ও কপাল প্রশস্ত হবে।

⇒ চোখ উজ্জ্বল ও ভেজা ভেজা হবে।

⇒ পা খাটো প্রকৃতির ও হাড়ের জোড়াগুলো স্ফীত হবে।

⇒ পাজর প্রশস্ত ও বিস্ত্রিত হবে।

⇒ শিরদাড়া সোজা হতে হবে।

⇒ দেহ হবে বর্গাকার।

⇒ গায়ের চামড়া হবে ঢিলা ( দুই আঙ্গুল দিয়ে ধরে টান দিয়ে দেখতে হবে)।

⇒ শরীরের হাড়গুলো আনুপাতিকহারে মোটা, মাথাটা চওড়া, ঘাড় চওড়া এবং খাটো।

See also  গরু মোটাতাজাকরণ পদ্ধতি (সংক্ষিপ্ত ধারণা)

⇒ পাগুলো খাটো এবং সোজাসুজিভাবে শরীরের সাথে যুক্ত।

⇒ পিছনের অংশ ও পিঠ চওড়া এবং লোম খাটে ও মিলানো।

⇒ গরু অপুষ্ট ও দূর্বল কিন্তু রোগা নয়।

(১০) পশু ক্রয় এর সময় কি কি বিষয় মাথায় রাখতে হবে?

⇒ প্রাণী ক্রয়ের সময় অবশ্যই খেয়াল রাখবেন প্রাণীটির বাহ্যত কোনো সংক্রামক রোগ আছে কি নেই।

⇒ দেখবেন ক্ষুরারোগ’ আছে কি নেই। কারণ ক্ষুরারোগ প্রাণীর জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। অল্প বয়স্ক রুগ্ন পশুতে ক্ষুরারোগ থাকলে তা পশুর মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ায়।

⇒ ক্ষুরার ক্ষত দেখবেন, প্রাণীটি অস্থির কিনা তা দেখবেন, চোখ লাল এবং ছলছল করছে কিনা সেটাও দেখবেন। যদি এসব লক্ষণ দেখেন তবে বুঝবেন প্রাণীটির ক্ষুরারোগ থাকতে পারে।

⇒ পশু পাতলা পায়খানা করছে কিনা।

⇒ রক্ত আমাশয় আছে কিনা।

⇒ সংক্রামক রোগ আছে এমন প্রাণী ক্রয় করা যাবে না। প্রাণী ক্রয়ের পর পর ক্ষুরা, তড়কা এবং গলাফুলা রোগের টিকা দেয়া বাঞ্ছনীয়।

⇒ প্রয়োজন হলে পশু ক্রয় করার পর তার গোবর পরীক্ষা করান। দেখা যাবে সেখানে প্রচুর কৃমির ডিম পাওয়া যাবে, এছাড়া পশুটি  লম্বা সময় পুষ্টিহীনতার কারণে তার পরিপাকতন্ত্রের কার্যক্রম দুর্বল থাকতে পারে।

⇒ দীর্ঘদিন পশু অপুষ্টিতে ভুগলে তার ক্ষুধামন্দা দেখা দেয়। ডাক্তার মল পরীক্ষার ওপর ভিত্তি করে কৃমির ওষুধ দেন। পেটে কোনো জীবাণু সংক্রামণ থাকলে সেখানে শুধু পেটে অথবা পরিপাকতন্ত্রে কাজ করে এমন অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা করেন। এতে পাতলা পায়খানা চলে যায়। যদি আমাশয় থাকে, সেক্ষেত্রে মেট্রোনিডাজল গ্রুপের যে কোনো ভালো ওষুধ দিয়ে তা দূর করেন।

⇒ পশু হাড্ডি কংকালসার এসব যতো সমস্যাই থাক এগুলো সবকিছু নিরাময় করে মোটাতাজাকরণকে লাভজনক করা যায়। খাদ্য হজমটি ভালোভাবে হলে প্রাণীর স্বাস্থ্য ভালো হতে বাধ্য।

(১১) মোটাজাতকরণের গরু কেনার পর প্রথম লক্ষণীয় বিষয় কি?

⇒ গরুর শরীরে কোনো ক্ষত থাকলে সে স্থানে ডেটল বা স্যাভলন দিয়ে ধুয়ে পরিস্কার করে নেগোভোন মলম লাগিয়ে প্রয়োজনে ব্যাণ্ডেজ করে রাখতে হবে, যাতে ক্ষত স্থানে মশা-মাছি কিংবা ময়লা জমতে না পারে।

⇒ ক্ষত গভীর হলে তা না শুকানো পর্যন্ত আবার পরিস্কার করে মাঝে মধ্যেই মলম ব্যবহার করতে হবে।

⇒ ক্ষত সেরে যাওয়ার পর গরুর গায়ের সেসব পরজীবী যেমন-উকুন, আঠালি, সিঁদুর পোকা ইত্যাদি মুক্ত করতে হবে।

নিয়মাবলী:

  1. একটি গরুর জন্য নিউসিডল বা এনোসটোল পাউডার ১০ কেজি পানিতে ২.৫ চা চামচ মিশাতে হবে।
  2. তারপর বাসতি থেকে কিছুটা দূরে ফাঁকা জায়গায় নিয়ে প্রথমে ভালোভাবে নাক-মুখ বেঁধে কান, চোখ, মুখ ছাড়া শরীরের সর্বত্র ওষুধ মিশ্রিত পানিতে ভিজিয়ে কানের ভেতর, চোখের চতুপারর্শ্বে, নাক, মুখ লেজের গোড়া, শরীরের সঙ্গে পায়ের সংযোগস্থলসহ সকল সংকীর্ণ জায়গায় লাগাতে হবে।
  3. ওধুষ লাগিয়ে ২০-২৫ মিনিট অপেক্ষা করার পরে পরিস্কার পানি দ্বারা শরীরের সর্বত্র ভালোভাবে ধুয়ে ওষুধমুক্ত করতে হবে।
  4. ওষুধ লাগানোর ২/১ দিন পর যদি দেখা যায় ভালোভাবে বাহিত্যক পরজীবী মুক্ত হয়নি তবে ১৫ দিন পরে আবার একই নিয়মে ওষুধ লাগাতে হবে।

সর্তকতা:

  • যে ব্যক্তি ঔষুধ লাগাবেন, তিনি গরুর শরীরের ক্ষতস্থান সম্পর্কে সচেতন থাকবেন, কারণ এই ঔষুধ বিষ জাতীয়।
  • গরুর শরীরে ক্ষতস্থানকে (যদি ভালোভাবে না শুকিয়ে তাকে) এড়িয়ে ঔষদ প্রয়োগ করতে হবে।
  • গরুকে ঔষুধ প্রয়োগের পর ভালোভাবে গোসল করিয়ে উক্ত স্থান থেকে কিছুটা দূরে নিয়ে মুখের বাঁধন খুলতে হবে কারণ গরু স্বভাবত ঔষুধ লাগা ঘাস বা পানি খেয়ে বিষক্রিয়া ঘটাতে পারে।

(১২) মোটাতাজাকরণ গরুর কৃমি মুক্ত করবেন কিভাবে?

পশু ডাক্তারের নির্দেশনা মত কৃমির ঔষধ ব্যবহার করতে হবে। গরু সংগ্রহের পর পরই পালের সব গরুকে একসাথে কৃমিমুক্ত করা উচিত। তবে প্রতি ৭৫ কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ১ টি করে এনডেক্স বা এন্টিওয়ার্ম টাবলেট ব্যবহার  করা যেতে পারে।

See also  গরু মোটাতাজাকরণে ইউরিয়া ও খড় প্রক্রিয়াজাতকরণের নিয়ম, ইউরিয়ার মোলাসেস স্ট্র তৈরির নিয়ম এবং ইউরিয়া মোলাসেস ব্লক তৈরির নিয়ম

গোল কৃমি:

  • মেনাফেক্স পাউডার ১ প্যাকেট ১টি গরুর জন্য অথবা নেমাফেক্স বড়ি ৩টি বড়ি একটি পূর্ণ বয়স্ক গরুর জন্য, ২টি বড়ি মাঝারি ও ছোট বাছুরের জন্য অথবা কোপেন পাউডার ১টি প্যাকেট একটি গরুর জন্য অথবা রিনটাল পাউডার ৭.৫ মি গ্রাম প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের জন্য।
  • রিনটাল পাউডার ব্যবহার করা সবচেয়ে ভাল কারণ এই ঔষুধে ছোট বড় মাঝারি সব ধরনের কৃমি মারা যায়। গোল কৃমির ঔষুধ খাওয়ানোর পরে সবল গরু ৩ দিন এবং অন্যান্য গরুর ক্ষেত্রে ৭দিন অপেক্ষা করে তবে পাতা কৃমির ঔষুধ প্রয়োগ করতে হবে।

কলিজা বা পাতা কৃমি:

  • চামড়ার নিচে টোডাক্স ইনজেকশন করতে হবে।
  • মাত্রা সাধারণভাবে ২/৩ সিসি প্রাপ্তবয়স্ক গরুর জন্য।
  • এই ঔষুধ প্রয়োগের ৩ দন অপেক্ষা করার পরে ইউরিয়া মিশ্রিত খাবার খাওয়ানো আরম্ভ করতে হবে।
  • টোডাক্স ইনজেকশন ৭ দিন পর পর ২ বার দিতে হবে এবং তখন খাবার বন্ধ করার কোনো প্রয়োজন নাই।

(১৩) গরুর টিকা বা ভ্যাকসিন প্রদান

পূর্ব থেকে টিকা না দেওয়া থাকলে খামারে আনার পরপরই সবগুলো গরুকে তড়কা, বাদলা এবং ক্ষুরা রোগের টিকা দিতে হবে। এ ব্যপারে নিকটস্থ পশু হাসপাতলে যোগাযোগ করতে হবে।

(১৪) গরুর দৈহিক ওজন নির্ণয়

⇒ মোটাতাজাকরন প্রক্রিয়ায় গরুকে দৈহিক ওজন নির্ণয় গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কেননা গরুর খাদ্য সরবরাহ,ঔষধ সরবরাহ ইত্যাদি কাজগুলো করতে হয় দৈহিক ওজনের ভিত্তিতে।

⇒ গরুর ওজন নির্নয়ের জন্য গরুকে সমান্তরাল জায়গায় দাড় করাতে হবে

⇒ ফিতা দ্বারা দৈর্ঘ্য ও বুকের বেড়ের মাপ নিতে হবে।

⇒ এই মাপ সূত্রে বসালে গরুর ওজন পাওয়া যাবে। দৈর্ঘ্য × বুকের বেড় (ফুট) × বুকের বেড় (ফুট) = ওজন পার কিলোগ্রাম।

(১৫) গরু মোটাতাজাকরণ এ রোগ প্রতিরোধ করণীয় কি?

⇒ প্রতিদিন নিয়মিতভাবে পশুর গা ধোয়াতে হবে।

⇒ গো-শালা ও পার্শ্ববর্তী স্থান সর্বদা পরিস্কার রাখতে হবে।

⇒ নিয়মিতভাবে গরুকে কৃমিনাশক ট্যাবলেট খাওয়াতে হবে।

⇒ বাসস্থান সর্বদা পরিস্কার রাখতে হবে।

⇒ স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পরিমিত পরিমাণে পানি ও সুষম খাদ্য প্রদান করতে হবে।

⇒ রোগাক্রান্ত পশুকে অবশ্যই পৃথক করে রাখতে হবে

⇒ খাবার পাত্র পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।

⇒ খামারের সার্বিক জৈব নিরাপত্তা রক্ষা করতে হবে।

⇒ পশু জটিল রোগে আক্রান্ত হলে পশুচিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

(১৬) মোটাতাজাকরণ গরু বাজারজাতকরণ

মোটাতাজাকরণ গরু লাভজনকভাবে সঠিক সময়ে ভালো মূল্যে বাজারজাতকরণের ব্যবস্থা গ্রহণ হচ্ছে আরেকটি উল্লেখ্যযোগ্য বিষয়।

বাংলাদেশে মাংসের জন্য বিক্রয়যোগ্য গবাদিপশুর বাজার মূল্যেও মৌসুমভিত্তিক হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে। কাজেই একজন প্রতিপালককে গরু মোটাতাজাকরণের জন্য অবশ্যই গরুর ক্রয় মূল্য যখন কম থাকে তখন গরু ক্রয় করে বিক্রয় মূল্যের ঊর্ধ্বগতির সময়ে বিক্রয়ের ব্যবস্থা নিতে হবে।

সাধারণত কোরবানির ঈদের সময় গরুর মূল্য অত্যধিক থাকে এবং এর পরের মাসেই বাজার দর হ্রাস পায়। তাই এখন গরু মোটাতাজাকরণের উপযুক্ত সময়। স্বল্প সময়ে অধিক লাভবান হওয়ার সহজ এবং সুবিধাজনক উপায়ের মধ্যে গরু মোটাতাজাকরণ একটি অত্যন্ত যুগোপযোগী পদ্ধতি।


প্রিয় খামারি বন্ধু, উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে আমরা বিস্তারিতভাবে গরু মোটাতাজাকরণ পদ্ধতিগুলো সম্পর্কে জানলাম।

আমাদের দেশে গবাদিপশু মোটাতাজাকরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কারণ আমাদের মাংসের চাহিদা প্রচুর, উৎপাদন কম। এছাড়া গবাদিপশু মোটাতাজাকরণের সাথে কর্মসংস্থান, গোবর উৎপাদন, চামড়া উৎপাদন, পরিবেশ উন্নয়ন এসব নানা কিছু জড়িত। একটি কথা তো সর্বজন স্বীকৃত যে প্রতি বছর কোরবানি ঈদের সময় এদেশে প্রায় ৪০-৫০ লাখ গরু, ছাগল, মহিষ, ভেড়া কোরবানি করতে হয়। এ সংখ্যার ৭০% গরু। সুতরাং কোরবানি উপলক্ষে গরিষ্টসংখ্যক গবাদিপশু মোটাতাজা করতে হয়।

উপরে বর্নিত গরু মোটাতাজাকরণ পদ্ধতি অনুযায়ী পালন করলে ৯০ থেকে ১২০ দিনের মধ্যেই গরু মোটাতাজাকরন করে বাজারজাত করা সম্ভব। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে আমাদের দেশের কৃষকরা যদি ওই পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজাকরণ করতে পারে তাহলে প্রতি বছর কোরবানি ঈদের সময় গরু আমদানি কমানো সম্ভব হবে এবং এর ফলে দেশ আর্থিকভাবে বিরাট সফলতা লাভ করতে সক্ষম হবে।

বিভিন্ন গবাদি পশু যেমন- গরু পালন, ছাগল পালন, মহিষ পালন, ভেড়া পালন ইত্যাদি সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট গবাদি পশু’ (inbangla.net/gobadi) এর সাথেই থাকুন।

Leave a Reply

nv-author-image

ইন বাংলা নেট গবাদি

বিভিন্ন গবাদি পশু যেমন- গরু পালন, ছাগল পালন, মহিষ পালন, ভেড়া পালন ইত্যাদি সম্পর্কিত যা কিছু বাংলাতে।View Author posts