Skip to content

গাছ কাটা, কাঠের হিসাব বের করার নিয়ম এবং কাঠ সিজনিং ও সংরক্ষণ পদ্ধতি

গাছ কাটা, কাঠের হিসাব বের করার নিয়ম এবং কাঠ সিজনিং ও সংরক্ষণ পদ্ধতি

(১) গাছ কাটা ও কাঠ সংগ্রহ

চিত্র- গাছ কাটার দৃশ্য
চিত্র- গাছ কাটার দৃশ্য

বৃক্ষ বহুবর্ষজীবী কাষ্ঠবহুল উদ্ভিদ। কাষ্ঠবহুল উদ্ভিদ যার মাটি থেকে সুস্পষ্ট শীর্ষ প্রকটতা বিশিষ্ট একটি একক প্রধান কান্ড অথবা গুঁড়ি থেকে বহুবিভক্ত অপ্রধান শাখা বিকশিত হয় তাকে বৃক্ষ বলে।

কিছু লেখকের মতে পূর্ণ বিকশিত অবস্থায়বৃক্ষের ন্যূনতম উচ্চতা ৩ মিটার থেকে ৬ মিটার হওয়া উচিত। আবার কিছু লেখক গাছের কান্ডের ন্যূনতম ব্যাস নির্ধারণ করেছেন ১০ সেমি।

অন্যান্য কাষ্ঠবহুল বৃক্ষ, যারা এ শর্তগুলো পূরণ করতে পারে না, যেমন- শাখান্বিত প্রধান কান্ড অথবা ছোট আকৃতির গাছকে গুল্ম বলা হয়।

অন্যান্য উদ্ভিদের তুলনায়বৃক্ষ দীর্ঘজীবী হয়, কোন কোন গাছ হাজার বছরও বেঁচে থাকে এবং ১১৫ মিটার পর্যন্ত দীর্ঘ হতে পারে।

অর্থনৈতিক প্রয়োজনে যেমন বৃক্ষ রোপণ করতে হয় তেমনি একই কারণে বৃক্ষ কর্তন করতে হতে পারে। সাধারণত গাছের আবর্তনকাল শেষ হলে গাছ কর্তন করা হয়ে থাকে।

গাছ কাটা ও তা থেকে কাঠ সংগ্রহ করার বিষয় যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য বিভিন্ন পদ্ধতিগত কৌশল জানা দরকার। এখানে আমরা বৃক্ষ কর্তনের সময় ও নিয়মাবলি, তা পরিমাপ পদ্ধতি, বৃক্ষকর্তন ও কাঠ সংরক্ষণের উপযোগিতা সম্পর্কে ধারণা অর্জন করব।

ক) গাছ কাটার সময় বা আবর্তনকাল

পরিপক্ক হওয়ার আগেই বৃক্ষ কর্তন করলে ভালো মানের কাঠ পাওয়া যায় না। বৃক্ষের চারা রোপণ থেকে শুরুকরে যে সময়ে বৃক্ষের বৃদ্ধি সর্বাধিক হয় এবং গাছ পরিপক্কতা লাভ করে ব্যবহার উপযোগী হয়, সে সুনির্দিষ্ট সময়কালকে আবর্তনকাল বা কর্তন সময় বলে।

পড়ুন
চারা গাছ লাগানোর পদ্ধতি/চারা রোপন ও পরিচর্যা

বন ব্যবস্থাপনায় বৃক্ষের আবর্তনকালকে তিন ভাগে বাগ করা হয়ে থাকে। যথা-

  1. দীর্ঘ আবর্তনকাল: জাতীয় কাঠ ও ধীর বর্ধনশীল প্রজাতিসমূহ শুধুমাত্র, কাঠ উৎপাদনের জন্য ৪০-৫০ বছর আবর্তনকালে কাটা হয়। যেমন- মেহগনি, গর্জন, জারুল, শীলকড়ই, সেগুন,জাম, তেলসুর, চাপালিশ, কাঠাল, শাল, ইত্যাদি।
  2. মাঝারি আবর্তনকাল: আংশিক কাঠ প্রদায়ি প্রজাতিসমূহ খুঁটি ও কাঠের উৎপাদনের জন্য ২০-৩০ বছর আবর্তনকালে কাটা হয়। যেমন- চন্দন, শিশু, রেন্ডি, খয়ের কড়ই, গামার, হরতকী, ছাতিয়ান ইত্যাদি।
  3. স্বল্প আবর্তন কাল: যে সব গাছের কাঠ নরম এবং দুত বর্ধনশীল জ্বালানি কাঠ, পশু খাদ্য ও মন্ড উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়, সেসব উদ্ভিদের কর্তন সময় কম হয়। যেমন- বাবলা, কদম, কেওড়া, বাইন, শিমুল, আকাশমনি, তেলিকদম, ঝাউ ইত্যাদি।

খ) বৃক্ষ কর্তনের নিয়মাবলি

  1. গাছ কাটার পূর্বে ডালপালা ছেটে নিয়ে গাছ নিয়ন্ত্রিতভাবে ফেলতে সুবিধা হয়।
  2. যতটা সম্ভব গাছ মাটির কাছাকাছি কাটতে হবে। কারণ গাছের গোড়ার অংশটা বেশি মোটা হয়। এ অংশে কাঠের মানও ভালো থাকে।
  3. গাছ সব সময় করাত দিয়ে কাটতে হবে। এতে কাঠের অপচয় পুরাপুরি রোধ করা সম্ভব। প্রথমে যে দিকে গাছকে ফেরতে হবে সেদিকে করাত দিয়ে কাটতে হবে।
  4. কাটা অংশে খিল বা কাঠের টুকরা ঢুকিয়ে দিয়ে পরবর্তীতে আগের মতোই বিপরীত দিকে করাত দিয়ে কাটতে হবে। এতে গাছ কাঙ্খিত দিকে পড়বে।
  5. কাটা গাছ মাটিতে পড়ার পর খন্ডিত করতে হবে। তবে কী কাজে কাঠ ব্যবহার করা হবে তার ভিত্তিতে পরিমাপ নির্ধারিত করতে হবে।
  6. খন্ডিত গোল অংশকে বলা হয় লগ। এ লগকে করাত কলে নিয়ে গিয়ে ব্যবহার উপযোগী চিরাই কাঠে পরিণত করা হয়। চেরাই কাঠের দৈর্ঘ, প্রস্থ ও পুরুত্ব থাকে। চেরাই কাঠের প্রস্থ ১৫ সে.মি. এর বেশি হলে এবং পুরুত্ব ৪ সে. মি. হলে তাকে বলা হয় তক্তা।
  7. গাছ কাটার সময় যে দিকে গাছ পড়বে প্রথমে কুড়াল দিয়ে মাটির ১০ সে.মি. উপরে সেই দিকে দুই-তৃতীয়াংশ কাটতে হবে। পরবর্তীতে কাটা হবে ঠিক এ কাটার বিপরীত দিকে ১০ সে.মি. উপরে। এভাবে গাছ কাটলে গাছকে সুনির্দিষ্ট দিকে ফেলা সম্ভব হয়। এতে পার্শ্ববর্তী গাছের ক্ষতি কম হয়। কুড়াল/করাত উভয় ব্যবহার করে গাছ কাটা বেশ সুবিধা জনক।
পড়ুন
বাঁশ গাছের বৈশিষ্ট্য এবং বাঁশ গাছ চাষ বা বাঁশ গাছ লাগানোর পদ্ধতি

(২) গোল কাঠ ও তক্তা/চিরাই কাঠের হিসাব বের করার নিয়ম

গোল কাঠ ও চিরাই কাঠের হিসাব বের করার নিয়ম

গাছ কাটার পর যদি সে গাছকে খুঁটি হিসাবে ব্যবহার করা না হয় তবে তা চিরাই করতে হবে এবং তা থেকে প্রয়োজনীয় পরিমাপের কাঠ বের করতে হবে।

ক) গোল কাঠের হিসাব

গোলকাঠের বা লগের সঠিক আয়তন বা ভলিউম নিউটনের সূত্রের সাহায্য বের করতে হয়।

সূত্রটি এরূপ:

গোলকাঠের বা লগের সঠিক আয়তন বা ভলিউম = {০.০৮ x (চিকন প্রান্তের বেড়)² + ৪ x (লগের মাঝখানের বেড়)² + (মোটা প্রান্তের বেড়)² x দৈর্ঘ্য ÷ ৬} ঘন ফুট বা সিএফটি

উদাহরণ:

একটি শালগাছের লগ ৬ ফুট দীর্ঘ। এটির চিকন মাথার বেড় ১.৫০ ফুট, মাঝখানের বেড় ২ ফুট এবং মোটা মাথার বেড় ২.৫ ফুট। লগটির সঠিক আয়তন বা ভলিউম কত সিএফটি?

সমাধান: 

আমরা জানি,

গোলকাঠের বা লগের সঠিক আয়তন বা ভলিউম 

= {০.০৮ x (চিকন মাথার বেড়² + ৪ x মাঝখানের বেড়² + মোটা মাথার বেড়²) x দৈর্ঘ্য ÷ ৬} ঘন ফুট বা সিএফটি

= {০.০৮ x (১.৫² + ৪ x ২² + ২.৫²) x ৬ ÷ ৬} ঘন ফুট বা সিএফটি

= {০.০৮ x (২.২৫ + ৪ x ৪ + ৬.২৫) x ৬ ÷ ৬} ঘন ফুট বা সিএফটি

= {০.০৮ x (২.২৫ + ১৬ + ৬.২৫) x ৬ ÷ ৬} ঘন ফুট বা সিএফটি

= {০.০৮ x ২৪.৫ x ৬ ÷ ৬} ঘন ফুট বা সিএফটি

= {০.০৮ x ২৪.৫ x ১) ঘন ফুট বা সিএফটি

= ১.৯৬ ঘন ফুট বা সিএফটি

অর্থ্যাৎ, উদহরণে বর্ণিত গোল কাঠ ও চিরাই কাঠের পরিমাণ  ১.৯৬ ঘন ফুট বা সিএফটি।

হিসাবের ব্যাখ্যা:

  1. আগে ১ম ব্যাকেট, তারপর ২য় তারপর, ৩য় ব্যাকেটের, তারপর ব্রাকেটের বাহিরের কাজ করতে হয়;
  2. আগে ভাগের কাজ, তারপর গুণ, তারপর বিয়োগ ও তারপর যোগের কাজ করতে হয়;
  3. তাই প্রথমে সূত্র লিখলাম;
  4. তারপর উদাহরণে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী মান বসালাম;
  5. তারপর প্রথম ব্রাকেটের কাজ আগে করতে হয়, তাই প্রথম ব্রাকেটের বর্গগুলোকে ভেঙ্গে নিলাম, তারপার গুণের কাজ আগে করলাম, তারপর যোগের কাজ করলাম, এভাবে প্রথম ব্রাকেটর কাজ শেষ হলো;
  6. তারপরের লাইনে আগে সকল ভাগের কাজ শেষ করলাম; 
  7. তারপর সর্বশেষ গুণের কাজ করার মাধ্যমে হিসাব শেষ হলো।
পড়ুন
বসতবাড়িতে বৃক্ষরোপণের নিয়ম ও পদ্ধতি

খ) তক্তা বা চেরাই কাঠের হিসাব

তক্তা বা চেরাই কাঠের হিসাব বের করা নিয়ম খুবই সহজ। চেরাই কাঠ/তক্তার দৈর্ঘ্য, প্রস্থ এবং পুরুত্ব জানা থাকলে অতি সহজেই এর ভলিউম বা সিএফটি বের করা যায়। একটি পরিমাপ ফিতার সাহায্যে অতি সহজেই এক খন্ড চেরাই কাঠের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও পুরুত্ব মাপা যায়। তারপর সূত্রের সাহায্যে ভলিউম বা সিএফটি নির্ণয় করা যাবে।

তক্তার পরিমাণ নির্ণেয়ের ক্ষেত্রে তক্তার দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা প্রথমে ফিতার সাহায্যে বের করে নিতে হবে। কাঠের পরিমাণ করার জন্য এ ক্ষেত্রে তিন মাত্রিক পরিমাণ নিম্নোক্ত চিত্রানুসারে ফিতার সাহায্যে মেপে নিতে হবে।

সূত্রটি হলো:

তক্তার পরিমাণ/আয়তন =  (দৈর্ঘ্য x প্রস্থ x উচ্চতা) ঘন ফুট/সিএফটি

উদাহরণ:

ধরে নেই একটি,

তক্তার দৈর্ঘ্য  = ৩০ ফুট
তক্তার প্রস্থ = ১০ ফুট
তক্তার উচ্চতা = ১ ফুট

সমাধান:

আমরা জানি,

তক্তার আয়তন = (দৈর্ঘ্য x প্রস্থ x উচ্চতা)

= (৩০ x ১০ x ১) ঘন ফুট/সিএফটি

= ৩০০ ঘন ফুট/সিএফটি

সুতরাং, উদাহরণে বর্ণিত তক্তা বা চেরাই কাঠ ৩০০ সিএফটি।

(৩) কাঠ সিজনিং ও সংরক্ষণ পদ্ধতি

কাঠ সিজনিং ও সংরক্ষণ পদ্ধতি

কাঠ সংরক্ষণ মানুষের জীবন যাত্রার ধরনের উপর নিভরশীল। আসলে সৃজনশীলভাবে কাঠ সংরক্ষণ ও প্রাকৃতিক ভাবে কাঠ প্রক্রিয়াজাতকরণ বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষের জন্য অত্যাবশ্যকীয় ছিল।

যখন কাঠ সিজনিং ও টিটমেন্ট পদ্ধতি ছিলনা তখন মানুষকে কাঠ সংরক্ষণের জন্য অনেক পরিশ্রম করতে হত। প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় আমাদেরকে কাঠ সংরক্ষণের জন্য এখন এত কষ্ট করতে হয় না।

কাঠের স্থায়িত্ব দীর্ঘায়িত করার জন্য কাঠকে ব্যবহার উপযুক্ত করা বা সিজনিং করা হয়।

বাঁশের স্থায়ীত্ব দীর্ঘায়িত করার জন্যও সঠিকভাবে প্রক্রিয়াজাত করার প্রয়োজন হয়। এমতাবস্থায় কাঠ বা বাঁশকে সিজিনিং করে কর্তিত কাঠ বা বাঁশের গুণগতমান ও স্থায়ীত্বকাল বেশ কয়েকগুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা সম্ভব।

এখন আমরা কাঠ সংরক্ষণ পদ্ধতি ও কাঠ সংরক্ষণের উপযোগিতা সম্পর্কে ধারণা অর্জন করতে পারব।

পড়ুন
ঔষধি গাছের ছবি ও নাম

ক) কাঠ সিজনিং ও টিটমেন্ট

ভিজা বা কাঁচা কাঠ থেকে আর্দ্রতা অপসারণ অথবা কাঠ শুষ্ককরণ হল কাঠ সিজনিং ও ট্রিটমেন্ট। সিজনিং বা টেকসইকরণে কাঠের গুণগত মান ও স্থায়িত্ব বৃদ্ধি পায়। উপযুক্ত সিজনিং কাঠের আয়ুষ্কাল বাড়ায় এবং ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ ও অণুজীবের আক্রমণ থেকে কাঠকে বাঁচায়।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রচলিত বিভিন্ন প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম সিজনিংয়ের মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য বায়ু সিজনিং , বাষ্প ও পানি সিজনিং এবং বাষ্পীয়, রাসায়নিক, সৌরভাঁটি ও ভাঁটি দ্বারা শুষ্ককরণ আর বুলটন সিজনিং।

আর্দ্রতা কাঠের অভ্যন্তরে মুক্ত পানি হিসেবে অথবা কোষপ্রাচীরে রাসায়নিকভাবে আবদ্ধ পানি হিসেবে থাকে। আর্দ্রতার পরিমাণ ৩০ শতাংশের বেশি হলে সে কাঠকে সাধারণত কাঁচা কাঠ বলা হয়।

জীবন্ত অবস্থায় বৃক্ষের জন্য পানি অপরিহার্য হলেও কাটার পর কর্তিত বৃক্ষে পানির পরিমাণ যত কম থাকবে কাঠ তত বেশি টিকবে। পানির পরিমাণ যদি কাঠ ওজনের ১২% এ নামিয়ে আনা যায় তাহলে ধরে নিতে হবে কাঠের গুণগত মান সর্বোত্তম হবে।

মূলতঃ সিজনিংকে দুইভাবে করা যায়। যথা-

i) এয়ার ডাইং

চিত্র- এয়ার ডাইং
চিত্র- এয়ার ডাইং
  • বায়ু সিজনিং পদ্ধতিতে কাঠ প্রাকৃতিক বায়ু ও তাপে খোলা জায়গায় বা ছায়ায় দীর্ঘ সময় রেখে দেওয়া হয়। এটি একটি চিরাচরিত পদ্ধতি এবং এতে বাংলাদেশের জলবায়ুতে ২৫ মিলিমিটারের অধিক চওড়া গোলাকার ও চেরাই কাঠ পুরো একটি শীত ঋতুসহ কমপক্ষে এক বছরের জন্য ফেলে রাখতে হয়।
  • পাতলা কাঠ, তক্তা, বোর্ড, জ্বালানি কাঠ সাধারণত কেবল তাড়াতাড়ি শুকানোর জন্য সরাসরি রোদে রাখা হয়।
  • অত্যন্ত টেকসই ও শক্ত কাঠের জন্যই বায়ু সিজনিং লাভজনক, পক্ষান্তরে হালকা কাঠ প্রায়ই ছত্রাক, পোকা ও মোল্ড দ্বারা আক্রান্ত হয় এবং সমানভাবে সিজনিং সম্ভব হয় না।
  • তবে হালকা পাতলা চেরাই করা কাঠ প্রখর রোদে শুকালে কাঠ ফেটে বা বেঁকে যেতে পারে। তাই এগুলোকে মাটি থেকে ৩০- ৪০ সেমি উঁচুতে ছায়ায় স্তরে স্তরে শুকাতে হয়।
পড়ুন
কাঠের হিসাব বের করার নিয়মঃ গোল কাঠ, দাঁড়ানো গাছ ও তক্তা বা চেরাই কাঠের সেফটি হিসাব

ii) কিলন পদ্ধতি

  • কিলন পদ্ধতিতে একটি বড় পাকা বায়ুনিরপেক্ষ কক্ষে কাঠের তক্তার গায়ে না লাগে এবং দুটো তক্তার মধ্যবর্তী স্থান দিয়ে বাতাস চলাচল করতে পারে। অতপর বায়ুনিরপেক্ষ কক্ষে প্রথমে জলীয়বাষ্প প্রবেশ করিয়ে কাঠের পানির পরিমাণ বৃদ্ধি করতে হবে। পরবর্তীতে তাপ প্রয়োগ করে সে কক্ষ থেকেও একই সাথে কাঠ থেকে পানি বের করে নেয়া হয়।
  • সাধারণত বেশি কাঠ একসাথে সিজন করার জন্য কিলন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।
  • এ পদ্ধতিতে কাঠকে তিন সপ্তাহের মধ্যে সিজনিং করে পানির পরিমাণ ১২% এ নামিয়ে আনা যায়। তবে প্রজাতিভেদে সিজনিং এর সময় কম বেশি হতে পারে।

খ) কাঠ সংরক্ষণ

চিত্র- চুবানো পদ্ধতি 
চিত্র- চুবানো পদ্ধতি 
চিত্র- প্রাণরস বিচ্যুতি পদ্ধতি
চিত্র- প্রাণরস বিচ্যুতি পদ্ধতি

রাসায়নিক দ্রব্যাদি প্রয়োগের মাধ্যমে কীটপতঙ্গের আক্রমণ থেকে কাঠ, কাঠজাত দ্রব্যাদি ও আসবাবের কাঠের ক্ষয়, পচন বা ক্ষতি রোধ করা যায়।

কাঠ সাধারণত ছত্রাক (সাদা পচন, বাদামি পচন ও কোমল পচন চত্রাক), কীটপতঙ্গ, (উইপোকা, বিটল, ঘুণপোকা), সামুদ্রিক এক ধরনের ঝিনুক এবং অন্যান্য নানা প্রক্রিয়ায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এমন কোনো একক সংরক্ষক নেই যা সংরক্ষণে সবগুলি চাহিদা মেটাতে পারে।

  • কাঠ সংরক্ষক হতে পারে তৈলজ, তরল বস্তু অথবা একটি মিশ্রণ। ক্রিয়োসোট, পেন্টাক্লোরোফেনল ও তৈলজ জৈবসংরক্ষক একসময় বাংলাদেশে কাঠের খুঁটি, খাম্বা ও রেলওয়ে স্লিপার সংরক্ষণে ব্যবহৃত হতো। আজকাল ক্রিয়োসোট শুধুই রেলওয়ে স্লিপার সংরক্ষণে ব্যবহৃত হচ্ছে।
  • সিসিএ নামের রাসায়নিক দব্যটি সংরক্ষণী হিসাবে আমাদের বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। সিসিএ সংরক্ষণটি ৩টি উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত। এর মধ্যে রয়েছে ক্রোমিক অক্সাইড ৪৭.৫%, কপার অক্সাইড ১৮.৫%, আর্সেনিক পেন্টা অক্সাইড ৩৪। উপাদানগুলো পৃথক পৃথকভাবে কিনেও আনুপাতিক হারে মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরি করা যায়।
  • পানিতে সিসিএ মিশ্রণটি ২.৫% দ্রবণ তৈরি করা হয়। দ্রবণটি বিশেষ চাপ পদ্ধতিতে কাঠের মধ্যে ঢুকানো হয়। প্রতি ঘনফুট কাঠে সাধারণভাবে ০.৪ পাউন্ড সংরক্ষণী প্রয়োগের সুপারিশ করা হয়। এ পদ্ধতিতে কাঠ সংরক্ষণের ৭ দিন পর ব্যবহারযোগ্য হবে।
  • সিসিএ সংরক্ষণী দিয়ে সংরক্ষিত কাঠ পচন প্রতিরোধ করতে পারে। উইপোকার আক্রমণও প্রতিরোধ করতে সক্ষম।
  • এছাড়াও বাংলাদেশে ব্যবহৃত বিভিন্ন পদ্ধতির মধ্যে রয়েছে ধৌতকরণ, প্রলেপন, ছিটানো ও তরলে ডুবানো, ভিজানো, গরম-ঠান্ডা প্রবাহ, ব্যাপনক্রিয়া ও চাপপ্রযোগ।
  • গোটা কাঠের উপর চাপপ্রয়োগ সংরক্ষেকের ভেদ্যতা বা রক্ষণক্ষমতার দিক থেকে সর্বোৎকৃষ্ট এবং বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বাংলাদেশে ব্যবহৃত হয়। এ পদ্ধতিতে কাঠের অভ্যন্তর প্রথমে বায়ুশূণ্য করে সংরক্ষক দ্রবণে চাপ দিয়ে তা কাঠের শূণ্য কোষগুলিতে ভরাট করা হয়।
পড়ুন
গাছ কাটা, কাঠ সংগ্রহ, কাঠ পরিমাপ ও সংরক্ষণের পদ্ধতি

গ) বৃক্ষ কর্তন সংরক্ষণের উপযোগিতা

গাছ লাগানো ও দীর্ঘ মেয়াদি পরিচর্যার মাধ্যমে সেগুলো বড় করে তোলার পিছনে নানা উদ্দেশ্যে থাকে। তবে যে উদ্দেশ্যেই গাছ লাগানো হোক না কেন সুনির্দিষ্ট আবর্তনকাল শেষে পরিপক্কতা লাভ করলে গাছ কর্তন করাই শ্রেয়। কারণ নির্দিষ্ট সময় পরে গাছের কাঠের মান নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাছাড়া অনেক সময় গাছের বাকল ফেটে বা রোগাক্রান্ত হয়ে ধীরে ধীরে কান্ডের অভ্যন্তর ভাগকে ক্ষতিগ্রস্ত করে থাকে। 

তাছাড়া গাছ কখন কাটতে হবে তা নির্ভর করে কয়েকটি বিষয়ের উপর। যেমন-

  • কাঠ দিয়ে কী করা হবে?
  • কোন পরিমাপের কাঠ প্রয়োজন?
  • কী মানের কাঠ প্রয়োজন?
  • এখনই টাকার প্রয়োজন কিনা?
  • গাছ আরও বড় হয়ে পার্শ্ববর্তী এলাকা ডালপালায় ছেয়ে যেতে পারে কিনা?
  • ঝড়ে গাছের ডাল ভেঙে বা গাছ উপড়ে স্থাপনা বা জানমালের ক্ষতির কারণ হতে পারে কিনা? 
  • গাছ কোন বিশেষ রোগে আক্রান্ত হয়েছে কিনা?
  • গাছের আবর্তন কাল শেষ হয়েছে কিনা?

যে কারণেই গাছ কাটা হোক না কেন নির্দিষ্ট নিয়ম কানুন মেনে কাটতে হবে। গাছ ও সঠিক নিয়মে কর্তন এবং খন্ডিত করণের মাধ্যমে অপচয় রোধ করা যায়। আর ব্যবহারের আগে বিজ্ঞান সম্মত সংরক্ষণ ব্যবস্থা গ্রহণ করলে এগুলোকে দীর্ঘস্থায়ী করা যায়। বৃক্ষ সম্পদ আহরণের ক্ষেত্রে কতগুলো নিয়ম অনুসরণ করতে হবে। কোনো বন এলাকায় বছরে কী পরিমাণ কাঠ বৃদ্ধি পায় সব সময় তার চেয়ে কম কাঠ আহরণ করতে হবে। এর ফলে বনজ সম্পদ সংরক্ষিত হয়।

গ) কাঠের পোকা

কাঠের পোকার ক্ষতিসাধন থেকে প্রতিরোধের উপায় হল কাঠে সংরক্ষণমূলক ঔষুধ প্রয়োগ, কীটনাশক, ছিটানো, পালিশ লাগিয়ে ভৌত বাধা সৃষ্টি, কাঠ দ্রুত কেঁটে নিয়ে শুকানো, পানিতে জাগ দেওয়া, কীট প্রতিরোধক কাঠ ব্যবহার ইত্যাদি।

  • ঘুণপোকা শুষ্ক কাঠ আক্রমণ করে। এগুলি শুধু শ্বেতসারপ্রধান কোমলকাঠ ছিদ্র করে এবং কাঠ ময়দার মতো মিহি গুঁড়োয় পরিণত করে।
  • লংহর্ন বিটল (Longhorn beetle) নামের লম্বা অ্যানটিনাবিশিষ্ট কতিপয়পোকা কাঠের ভিতরে ছিদ্র করে এবং এ ছিদ্র করা সুড়ঙ্গগুলি সাধারণত কাঠের গুঁড়োয় ভরে থাকে।
  • কার্পেন্টার বী (Carpenter bee) নামে পরিচিত পোকা বাসা তৈরীর জন্য কাঠে সুড়ঙ্গ বানায়।
  • বেশ কিছু প্রজাতির উইপোকা মাটিতে ফেলে রাখা, গুদামজাত অথবা ব্যবহৃত হচ্ছে এমন কাঠ আক্রমণ করে প্রচুর ক্ষতি করে।
পড়ুন
বৃক্ষ ও বন সংরক্ষণ

প্রিয় পাঠক বন্ধু, উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে আমরা গাছ কাটা, কাঠের হিসাব বের করার নিয়ম এবং কাঠ সিজনিং ও সংরক্ষণ পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে পারলাম।

সঠিক উপায়ে ও উপযুক্ত সময়ে বৃক্ষ কর্তনের ফলে উন্নত মানের কাঠ পাওয়া সম্ভব। বৃক্ষ কর্তনের সময় ও নিয়মাবলি, কাঠ সংরক্ষণ পদ্ধতি, কাঠ পরিমাপ পদ্ধতি ও কাঠ সংরক্ষণের বিভিন্ন কৌশল আমাদের বাস্তবিক জীবনে অতীব প্রয়োজনীয়। গাছের গোড়ার অংশের কাঠ অপেক্ষাকৃত ভাল মানের হয়ে থাকে।

কাঠ টিট্মেন্টের অন্যতম ঊদ্দেশ্য হল কাঠকে পচন ও নষ্টের হাত হতে রক্ষা করা। এক্ষেত্রে সিসিএ রাসায়নিক দ্রবটি আমাদের দেশে অতি পরিচিত। এর মাধ্যমে কাঠকে আপনি ঘুনপোকা, কার্পেন্টার বী, ক্ষতিকর আর্থ্রোপোডা ও কীটপতঙ্গ ইত্যাদি হতে সহজে মুক্ত রেখে দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করতে পারবেন।

কৃষি সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট কৃষি’ (inbangla.net/krisi) এর সাথেই থাকুন।

অনুরোধ!! পোষ্ট ভালো লাগলে প্লিজ উপরের শেয়ার আইকনে ক্লিক করে পোষ্টটি শেয়ার করে দিন।

Leave a Reply

nv-author-image

ইন বাংলা নেট কৃষি

কষি সম্পর্কিত যা কিছু বাংলাতে।View Author posts