বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম জনবহুল, কৃষিপ্রধান ও দরিদ্র দেশ। দেশ দরিদ্র হলেও এর বিভিন্ন খাত এখনও সম্ভাবনাময়। গাভীর উন্নত জাত পালন তেমনি একটি সম্ভাবনাময় খাত।
কৃষি নির্ভর এই দেশের কৃষি উৎপাদনে বিভিন্ন গবাদি প্রাণীর সংগে গাভীও গুরুত্তপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। আমাদের দেশে পালিত অধিকাংশ গাভীই দেশী জাতের, এদের উৎপাদন আশানুরুপ নয়। চাহিদার তুলনায় অন্যান্য খাদ্যের মত আমাদের দেশে দুধ ও মাংসের যথেষ্ট অভাব রয়েছে।

(১) গরুর উন্নত জাত নির্বাচন
► আমাদের দেশে অধিক পরিমাণে দুধ উৎপন্ন করে এমন গরুর জাত হিসাবে শাহীওয়াল, সিন্ধি, হলেস্টইন ফ্রিজিয়ান সংকর জাতর গরু পরিচিত।
► দেশী জাতর ম‽ধ্য শাহজাদপুর, পাবনা, মুন্সিগঞ্ছ, মাদারিপুর এবং চট্টগ্রাম এলাকায় গরু দেশের অন্যান্য এলাকার গরু অপেক্ষা উন্নত ও দুধ বেশী দেয়।
(২) খাঁটি জাতর শাহিওয়াল গরুর বৈশিষ্ট্য
► শাহিওয়াল গরুর দেহর রং হালকা লাল বা বাদামী রঙের।
► এদের কুঁজ কিছুটা উঁচু এবং গল কম্বল বড় ও ঝুলানো হয়। নাভীও বেশ ঝুলানো থাকে।
► এ জাতর গরুর মাথা খাটো, শিং ছোটো, কপাল ও দুই শিং এর মধ্যবর্তী স্থান উঁচু হয়।
► এ জাতর একটি গাভীর ওজন ৪০০-৫০০ কেজি হয়ে থাকে।
► একটি গাভী বছরে ৩০০ দিন পর্যন্ত দুধ দিয়ে থাকে।
► প্রতি গাভী হতে প্রতিদিন সর্বোচ্চ ১০ লিটার দুধ পাওয়া যায়।
► এ জাতর বকনা ২-২.৫ বছর বয়সে প্রথম প্রজনন উপযুক্ত হয়।
(৩) খাঁটি জাতর সিন্ধি গরুর বৈশিষ্ট্য
► সিন্ধি গাভীর গায়ের রং গাঢ় কাল‽চ হলুদ বা গাঢ় বাদামী হয়।
► এদের কুঁজ কিছুটা উঁচু এবং গল কম্বল বড় ও ঝুলানো হয়।
► এ জাতর গরুর শিং মোটা, খাটো এবং পিছনেরর দিকে বাঁকানো থাকে।
► এ জাতর একটি গাভীর ওজন ৩০০-৪০০ কেজি হয়ে থাকে।
► গাভীর ওলান বেশ বড় হয়। একটি গাভী বছরে ২৮০-৩০০ দিন দুধ দেয় এবং বার্ষিক দুধ উৎপাদন ২০০০-৩০০০ লিটার।
► এ জাতর বকনা ২-২.৫ বছর বয়সে প্রথম প্রজনন উপযুক্ত হয়।
(৪) খাঁটি জাতর ফ্রিজিয়ান গরুর বৈশিষ্ট্য
► ফ্রিজিয়ান জাতর গরু আকারে অনেক বড় হয়।
► এদের কূঁজ উঁচু হয় না।
► এদের গায়ের রং সাধারণত সাদা-কালো মিশানো হয়।
► এ জাতর একটি ষাঁ‽ড়র ওজন ৮০০-৯০০ কেজি এবং গাভীর ওজন ৫০০-৬০০ কেজি, এমনকি আরও বেশী হয়ে থাকে। এ জাতর গরু থেকে মাংসও বেশী পাওয়া যায়।
► এ জাতর গাভী অনেক বেশী দুধ দেয়, একটি গাভী দিনে ২৫ লিটার পর্যন্ত দুধ দেয় এবং বাচ্চা দেয়ার পর থেকে পরবর্তী বাচ্চা প্রদান পর্যন্ত একটানা দুধ দিয়ে থাকে।
► এ জাতর বকনা অল্প বয়সে অর্থাৎ প্রায় ২.৫ বছর বয়সে প্রথম বাচ্চা দেয় এবং প্রতি বছর বাচ্চা দেয়।
(৫) সংকর জাতর গরুর বৈশিষ্ট্য
► আমাদের দেশে প্রায় বেশীর ভাগই গরুই দেশী জাতর।
► দেশী জাতর গরু থেকে দুধ ও মাংস উৎপাদন পাওয়া যায় কম, কিšদ এদের কাজ করার ক্ষমতা তুলনামূলক বেশী।
► বিদেশী উন্নত জাতর গাভী হতে অনেক বেশী দুধ পাওয়া যায়। কিšদ এসব বিদেশী জাতর গাভী আমাদের দেশের জলবায়ু ও আবহাওয়ায় এবং গ্রামীণ ব্যবস্থাপনায় পালন উপযোগী নয়।
► আমাদের দেশে তাই বিদেশী ও দেশী জাতর সংমিশ্রণে সংকর জাতর গরু পালনের উপর অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়।
► সংকর জাতর গাভী আমাদের দেশের জলবায়ু ও আবহাওয়ায় এবং গ্রামীণ ব্যবস্থাপনায় উপযোগী।
(৬) ভাল দুগ্ধবতী গাভীর বৈশিষ্ট্য
► দেহের সম্মুখভাগ হালকা ও পেছনের অংশ ভারি হবে এবং শরীরের গঠন ঢিলে-ঢালা হবে, চামড়া পাতলা হবে, দেহ অপ্রয়োজনীয় চর্বি থাকবে না।
► ওলান বড় হবে এবং দেহর সাথে সুন্দরভাবে লেগে থাকবে। ওলানের গঠন সুন্দর এবং বাঁটগুলো একই আকারের এবং সুন্দরভাবে একই দূরত্বে সাজানো থাকবে। ওলানের গঠন দেখে দুধ উৎপাদন সম্পর্কে ধারণা করা যাবে।
► দুধের শিরাগু‽লা মোটা ও স্পষ্ট হবে এবং নাভির দু’পাশ দিয়ে আঁকাবাঁকাভাবে ছড়িয়ে থাকবে।
► দুধের শিরাগুলো ওলানেও স্পষ্টভাবে দেখা যাবে।
► উন্নত জাতর গাভী প্রতিবছর বাচ্চা দেয়।
দুধ আমিষের একটি মূল্যবান উৎস। শিশু- কিশোর, যুবক, বৃদ্ধ ও রোগী সবার জন্য দুধ পুষ্টিকর খাদ্য। শুধুমাত্র শিশু খাদ্য হিসাবে আমাদের দেশে প্রতি বছর বিপুল পরিমান দুধের চাহিদা রয়েছে। প্রতি বছর কয়েকশত কোটি টাকার কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করে দুধ আমদানি করতে হচ্ছে।
গাভী পালনে প্রত্যক্ষভাবে যেমন দুধ পাওয়া যায় তেমনি পরোক্ষভাবে পাওয়া যায় মাংস এবং সৃষ্টি হয় নতুন নতুন উদ্যোক্তা ও কর্মসংস্থানের। ৮৫ হাজার গ্রামের বিপুল জনসংখ্যা যাদের সামর্থ্য ও সুযোগ আছে তারা যদি নিজের প্রয়োজনে বাড়িতে ২-৩ টি উন্নত জাতের গাভী পালন করে তাহলে এই সমস্যা সমাধান করা সম্ভব।
বিভিন্ন গবাদি পশু যেমন- গরু পালন, ছাগল পালন, মহিষ পালন, ভেড়া পালন ইত্যাদি সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট গবাদি পশু’ (inbangla.net/gobadi) এর সাথেই থাকুন।