Skip to content

গাভীর গর্ভধারণ সমস্যাঃ গাভীর বন্ধ্যাত্ব ও প্রতিকার

গাভীর গর্ভধারণ সমস্যাঃ গাভীর বন্ধ্যাত্ব ও প্রতিকার

বাচ্চা উৎপাদনের অক্ষমতাকে বন্ধ্যাত্ব বা অনুর্বরতা বলে। বিভিন্ন কারণে বকনা/গাভীর বন্ধ্যাত্ব বা অনুর্বরতা দেখা  যেতে পারে।

গাভীর গর্ভধারণ সমস্যা, গাভীর বন্ধ্যাত্ব ও প্রতিকার

গাভীর অনুর্বরতা ও সাময়িক বন্ধ্যাত্ব অর্থ্যাৎ গাভীর গর্ভধারণ সমস্যা দেখা দিলে করণীয় কি সে বিষয়ে আমাদের দেশের অনেক গরু পালনকারীরাই জানেন না। গরু পালন বর্তমান সময়ে আমাদের দেশে একটি লাভজনক পেশা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। গরু পালনে লাভবান হওয়ার জন্য বাচ্চা উৎপাদনের কোন বিকল্প নেই। তবে অনেক সময় অনুর্বরতা ও সাময়িক বন্ধ্যাত্ব দেখা দেওয়ার কারণে বাচ্চা উৎপাদন ব্যাহত হয়। আজকে চলুন জেনে নেই গাভীর গর্ভধারণ সমস্যা গাভীর অনুর্বরতা ও সাময়িক বন্ধ্যাত্ব দেখা দিলে করণীয় সম্পর্কে।

ইন বাংলা নেট ব্লগ এর আজকের এই পোষ্টে আমরা আলোচনা করব- গাভীর গর্ভধারণ সমস্যার বা বন্ধ্যাত্বের কারণগুলো কি কি? গাভীর গর্ভধারণ সমস্যা বা গাভীর বন্ধ্যাত্বের লক্ষণ সমূহ। বন্ধ্যাত্ব গাভীর গর্ভধারণ সমস্যা প্রতিকারের উপায়। গাভীর অনুর্বরতা ও সাময়িক বন্ধ্যাত্ব দেখা দিলে করণীয় কি? অনুর্বরতা ও সাময়িক বন্ধ্যাত্ব হওয়ার কারণ কি? গাভীর গর্ভধারণ সমস্যা বা বন্ধ্যাত্ব প্রতিরোধে যা করতে হবে।

(১) গাভীর গর্ভধারণ সমস্যার বা বন্ধ্যাত্বের কারণগুলো কি কি?

১। শারীরিক গঠন জনিত কারণ

শরীরের অনেক জন্মগত বা বংশগত ত্রুটিজনিত কারণে বন্ধ্যাত্ব বা অনুর্বরতা হতে পারে, যেমন- ডিম্বাশয়, সার্ভিক্স ইত্যাদির অস্বাভাবিকতা।

২। দূর্ঘটনা জনিত কারণ

প্রজনন তন্ত্রে যে কোন ধরনের আঘাতের ফলে অথবা জরায়ুর বহির্গমন, যোনীর বহির্গমন ইত্যাদির কারণে  গাভী বন্ধ্যাত্ব বা অনুর্বর হতে পারে।

৩। শরীরবৃত্তীয় কারণ

বিভিন্ন হরমোনের অভাব ও অনিয়মিত ক্ষরণের ফলে গাভীর গাভীর গর্ভধারণ সমস্যা দেখা দেয়। যেমন ফলিকুলার স্টিমুলেটিং হরমোন, লিউটিনাইজিং হরমোন, প্রোজেষ্টেরন হরমোন ইত্যাদি। এছাড়াও  ডিম্বাশয়ের বিভিন্ন রোগ যেমন- পারসিস্টেন্ট করপাস লিউটিয়াম, সিষ্ট, ফলিকুলার এট্রফি ইত্যাদি।

See also  পারিবারিক দুধের গাভীর খামার পরিকল্পনা

৪। পুষ্টিগত কারণ

সুষম খাদ্যের অভাবে বকনা/গাভীর বন্ধ্যাত্ব বা অনুর্বরতা দেখা যায়। যেমন- ভিটামিন-এ, ডি, ই ও খনিজ  পদার্থের মধ্যে ফসফরাস, কপার, কোবাল্ট ইত্যাদির অভাব। সবুজ/কাঁচা ঘাস না খাওয়ালেও গাভীর গর্ভধারণ সমস্যা হতে পারে।

৫। মনস্তাত্বিক কারণ

ভয় স্নায়ুবিক উত্তেজনার ফলে প্রাণির গর্ভধারণ বিঘ্নিত হতে পারে ও গাভীর গর্ভধারণ সমস্যা সৃষ্টি হতে পরে। বিশেষ করে বকনার ক্ষেত্রে প্রজনন  ভিতি বা অস্থিরতা অথবা মাত্রাতিরিক্ত উত্তেজনার কারণে বকনা/গাভীর বন্ধ্যাত্ব বা অনুর্বরতা দেখা দিতে পারে।

৬। রোগ জনিত কারণ

বিভিন্ন সংক্রামক যৌন রোগ যেমন- ব্রুসেলোসিস, ট্রাইকোমোনিয়াসিস, ভিব্রিওসিস, লেপটোসপাইরোসিস  ইত্যাদি অথবা প্রজননতন্ত্রের অন্যান্য রোগ যেমন- মেট্রাইটিস, সার্ভিসাইটিস, পায়োমেট্রা, সালফিনজাইটিস  ইত্যাদির কারণে গাভীর গর্ভধারণ সমস্যা বা বকনা/গাভী বন্ধ্যাত্ব বা অনুর্বর হতে পারে। এ সমস্ত রোগ প্রজনন ষাঁড় থেকেও  বকনা/গাভীতে সংক্রামিত হতে পারে।

৭। বংশগত কারণ

অনেক সময় বংশগত কারণে গাভীর গর্ভধারণ সমস্যা অর্থ্যাৎ প্রাণীর বন্ধ্যাত্ব বা অনুর্বরতা দেখা যায়।

৮। ত্রুটিপূর্ণ ব্যবস্থ্যাপনা

লালন-পালন ও ব্যবস্থ্যাপনায় ত্রুটির কারণে বন্ধ্যাত্ব বা অনুর্বরতা দেখা দিতে পারে। যেমন- অযত্ন-অবহেলা, ক্রটিপূর্ণ বাসস্থ্যান, অপর্যাপ্ত খাদ্য, সবুজ/কাঁচা ঘাস না দিলে, অনিয়মিত দুধ দোহান, প্রসবকালীন অবহেলা  ইত্যাদি। অদক্ষ হাতে/অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কৃত্রিম প্রজনন বা বাচ্চা প্রসব করানোর ফলে গাভীর জরায়ু সংক্রামিত হয়ে গাভীর গর্ভধারণ সমস্যা অর্থ্যাৎ বন্ধ্যাত্ব বা অনুর্বরতা দেখা দিতে পারে।

৯। অন্যান্য কারণ

বিভিন্ন বিষয় যেমন- প্রাণির বয়স, ঋতু, তাপমাত্রা, আলো ইত্যাদি প্রাণির উর্বরতার উপর প্রভাব বিস্তার  করে। সাধারণত: ৪ বছর বয়স পর্যন্ত গাভীর উর্বরতা বৃদ্ধি পেতে থাকে ও ৬ বছর পর্যন্ত তা বিরাজমান  থাকে। কিন্তু ৬ বছর পর থেকে উর্বরতা হ্রাস পেতে থাকে।

(২) গাভীর গর্ভধারণ সমস্যা বা গাভীর বন্ধ্যাত্বের লক্ষণ

গাভীর গর্ভধারণ সমস্যা বা গাভীর বন্ধ্যাত্বের লক্ষণসমূহ হলো-

১। বাচ্চা প্রসবের ৯০-১০০ দিনের মধ্যে গাভী গরম না হওয়া।

See also  উন্নত জাতের গাভী চেনার উপায় বা গাভীর বৈশিষ্ট্য

২। সব সময় গরম থাকা বা অনিয়মিতভাবে গরম হওয়া।

৩। ১৫ দিনের কম সময় বা ২৮ দিনের বেশি সময় পর পর গরম হওয়া।

৪। দীর্ঘদিন অর্থাৎ এক বছর বা অধিক সময়কাল গরম না হওয়া।

৫। স্ত্রী প্রজনন তন্ত্র থেকে ঘোলা, পুজ বা রক্ত মিশ্রিত মিউকাস নির্গত হওয়া।

৬। গর্ভপাত হওয়া।

৭। তিন বারের অধিক প্রজননের পরও গর্ভধারণ না করা।

৮। গর্ভফুল না পড়া, জরায়ুর বহির্গমন ইত্যাদি।

(৩) গাভীর গর্ভধারণ সমস্যা বা বন্ধ্যাত্ব প্রতিকারের উপায়

গাভীর গর্ভধারণ সমস্যা বা বন্ধ্যাত্ব প্রতিকারে জন্য-

১। স্বাস্বাস্থ্যকরব্যবস্থ্যাপনায় গাভী পালন করতে হবে।

২। গাভীকে সুষম খাদ্য ও সবুজ ঘাস খাওয়াতে হবে।

৩। সঠিকভাবে গাভীর গরমকাল নির্ধারণ করে সময়মত প্রজননের ব্যবস্থ্যা করতে হবে।

৪। প্রজনন তন্ত্রে কোন অসুখ থাকলে সময়মত তার চিকিৎসার ব্যবস্থ্যা করতে হবে।

৫। প্রসবের সময় সঠিক যত্ন নিতে হবে।

৬। প্রসবের পর ৬০-৯০ দিন পর গাভীকে পুনরায় প্রজনন করাতে হবে।

(৪) গাভীর অনুর্বরতা ও সাময়িক বন্ধ্যাত্ব দেখা দিলে করণীয়

খামারে পালন করা গরুতে বিভিন্ন কারণে অনুর্বরতা ও সাময়িক বন্ধ্যাত্ব অর্থ্যাৎ গাভীর গর্ভধারণ সমস্যা দেখা দেয়। এমন সমস্যা দেখা দিলে যা করতে হবে সেগুলো নিচে দেওয়া হল-

অনুর্বরতা ও সাময়িক বন্ধ্যাত্ব হওয়ার কারণ-

১। গাভীর শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ও পুষ্টির সংকট দেখা দিলে অর্থাৎ গরুর শরীরে কোন কারণে পুষ্টিহীনতা দেখা দিলে।

২। গাভীর জরায়ুতে জীবাণুর সংক্রমণ দেখা দিলেও অনেক সময় সেই গাভীর বন্ধ্যাত্ব দেখা দিতে পারে।

৩। কোন কারণে গাভীর শরীর থেকে হরমোন ক্ষরণের অসমতা ও অনিয়ম দেখা দিলে গাভীর বন্ধ্যাত্ব দেখা দিতে পারে।

৪। যথাসময়ে গাভিকে সঠিক স্থানে সিমেন দিতে না পারলে কিংবা সিমেন প্রদানকারী অদক্ষ হলেও গাভীর বন্ধ্যাত্ব দেখা দিতে পারে।

See also  গরুর কৃমি রোগ বা গরুর কৃমি কত প্রকার? গরুর পরজীবী রোগ কি কি? গরুর গায়ে পোকা, গরুর গায়ে উকুন, আঁঠালি, মাছি

৫। গাভীর ঋতু চক্র সঠিকভাবে নির্ণয় করতে না পারলেও অনেক সময় বন্ধ্যাত্ব দেখা দিতে পারে।

গাভীর গর্ভধারণ সমস্যা বা বন্ধ্যাত্ব প্রতিরোধে যা করতে হবে-

১। গাভীর বন্ধ্যাত্ব বা গাভীর গর্ভধারণ সমস্যা দেখা দিলে এই সমস্যা সমাধানে প্রথমেই সঠিক কারণ খুঁজে বের করতে হবে। কারণ খুঁজে বের করার পর সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

২। গাভীর পুষ্টিহীনতা হলে প্রয়োজনীয় সুষম খাদ্য যেমন- ফসফরাস, কোবাল্ট, কপার ইত্যাদি প্রদান করতে হবে। এছাড়াও প্রতিদিন ২৫০ গ্রাম শুটকি, মাছের গুড়া ও চিটা গুড় এক সাথে মিশিয়ে খাওয়ালে উপকার হয়।

৩। গাভী বার বার গরম হলে সোডিয়াম কার্বনেটের ১% সলুশন দিয়ে জননতন্ত্র ধুয়ে দিতে হবে।

৪। গাভীর জরায়ুতে জীবাণুর সংক্রমন দেখা দিলে জীবানুনাশক দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে দিতে হবে এবং পেসারি দিতে হবে।


প্রিয় খামারি বন্ধুরা, আজকের মত এখানেই বিরতি, দেখা হবে পরবর্তী কোন আলোচনায়। যে সকল পাঠক আমাদের ব্লগে নতুন যদি পশুদের বিভিন্ন রকম রোগ তাদের চিকিৎসা এবং মেডিসিন সম্পর্কে আরও জানতে চান তারা ইন বাংলা নেট ওয়েবসাইটে নিয়মিত ভিজিট করবেন এবং আমাদের ইউটিউব চ্যানেলটিকেও সাবস্ক্রাইব ও আমাদের ফেসবুক পেজটিতে একটি লাইক দিয়ে রাখবেন রাখবেন। তাহলে নতুন কোন পোষ্ট করা হলে তা সহজেই বুঝতে পারবেন।

সকলে ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন এবং খামারিয়ান এর সাথেই থাকুন।

বিভিন্ন গবাদি পশু যেমন- গরু পালন, ছাগল পালন, মহিষ পালন, ভেড়া পালন ইত্যাদি সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট গবাদি পশু’ (inbangla.net/gobadi) এর সাথেই থাকুন।

Leave a Reply

nv-author-image

ইন বাংলা নেট গবাদি

বিভিন্ন গবাদি পশু যেমন- গরু পালন, ছাগল পালন, মহিষ পালন, ভেড়া পালন ইত্যাদি সম্পর্কিত যা কিছু বাংলাতে।View Author posts