Skip to content

 

চেঙ্গিস খান কে ছিলেন? চেঙ্গিস খানের ইতিহাস ও চেঙ্গিস খানের মৃত্যু

চেঙ্গিস খান কে ছিলেন, চেঙ্গিস খানের ইতিহাস ও চেঙ্গিস খানের মৃত্যু

(১) চেঙ্গিস খান কে ছিলেন?

চেঙ্গিস খান কে ছিলেন: চেঙ্গিজ খান হলেন মঙ্গোল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা ও জাতির জনক। রণকৌশল, ধ্বংসযজ্ঞ ও ক্ষমতার অভূতপূর্ব মিশ্রে গড়া এক অভিনব চরিত্র চেঙ্গিস খান। এক সাধারন গোত্রপতি থেকে তিনি হয়েছিলেন অতি নির্মম রক্ত পিপাসু সাম্রাজ্যের মালিক। পৃথিবীর যুদ্ধের ইতিহাসে তিনি হলেন সবচেয়ে সফল সেনাপতি, পূর্ব থেকে পশ্চিমের সভ্যতাকে এক করেছিলেন তিনি। ততকালিৎ পৃথিবীর মোন জনসংখ্যার ১১% মানুষকে হত্যা করা হয় তার নেতৃত্বে।

এখানে আমরা পৃথিবীর সর্ববৃহৎ সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা চেঙ্গিস খান সম্পর্কে।

(২) সহজ ও সংক্ষেপে চেঙ্গিস খানের ইতিহাস

ইতিহাস সৃষ্টিকারী দাপটে যোদ্ধা চেঙ্গিস খানের জন্ম মঙ্গলিয়ার তৃণচারণ ভূমিতে, ধারণা করা হয় ১১৬২ সালে চেঙ্গিস খান উত্তর মঙ্গলিয়ার খেনতি পর্বমালার নিকটবর্তী দেলুন বলদাখ নামক স্থানে বর্গীজিং বংশে জন্মগ্রহণ করেন।

এক তাতার প্রধানের নামানুসারে বাল্যকালে তার নাম রাখা হয় তেমুজিন। চেঙ্গিস খানের পিতা ইয়েসুগেই মঙ্গোলিয়ানদের স্থানীয় দলনেতা হিসেবে বেশ কিছু সময় দায়িত্ব পালন করেন।

সে সময় লক্ষ লক্ষ বর্গমাইল ইউরেশিয়ান স্তেপ অঞ্চল বিভিন্ন গোত্র দল ও উপদলের মাঝে বিভক্ত ছিল। সেসবের মধ্যে তাতার, টার্কিক এবং মঙ্গল গোত্র ছিল অন্যতম। চেঙ্গিস খানের জন্মের সময় স্তেপ ভূমিতে ছিল তাতারদের একক আধিপত্য। চেঙ্গিসদের গোত্রের সাথে তাতারদের ঘোর শত্রুতা ছিল।

চেঙ্গিস খানের বয়স যখন নয় বছর তখন শত্রুরা তার পিতাকে বিষ প্রয়োগ করে হত্যা করে। চেঙ্গিস খানের পিতার মৃত্যুর পর তার গোত্রের লোকজন অপ্রাপ্তবয়স্ক চেঙ্গিস খানের নেতৃত্বকে অস্বীকার করে অন্যত্র চলে যেতে শুরু করে। এরপর দীর্ঘদিন তার মায়ের সাথে যাযাবর জীবন যাপন করেন তিনি। এই বিপদ সংকুল সময়েই মূলত চেঙ্গিস খান তার জীবনের সবচেয়ে কঠিন শিক্ষাগুলো লাভ করে। প্রতিকূলতার মধ্যেই যুদ্ধবিদ্যা রপ্ত করার মাধ্যমে বিখ্যাত যোদ্ধা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে শুরু করে তেমুজিন।

১১৭৮ সালের ১৬ বছর বয়সে অঙ্গীরাত গোষ্ঠীর বোর্তে নামের এক নারীকে বিয়ে করেন তেমুজিন। ঘটনাক্রমে তৎকালীন সময়ের সবচেয়ে শক্তিশালী মঙ্গল গোত্র অতর্কিত হামলা চালিয়ে তেমুজিনের লোকদের হত্যার পাশাপাশি তার স্ত্রীকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। চেঙ্গিস খানের উত্থানের সাথে তার স্ত্রীর অপহরণের ঘটনার নাটকীয় যোগসূত্র রয়েছে।

হামলার শিকার হবার পর তেমুজিন তার আপন ভাই জুমুখা কে নিয়ে তাদের পিতার তুঘরুল খানের শরণাপন্ন হয়। তখন তেমুজিন জুমুখা ও তুঘরুল খানের সহযোগিতায় তার স্ত্রী বোর্তকে উদ্ধার করেন, বোর্তেকে উদ্ধারের ঘটনার মধ্য দিয়ে চেঙ্গিস খান চুমুখা ও তুঘরুলের মধ্যকার ঐক্য অত্যন্ত সুদৃঢ় হয়ে ওঠে, এই সম্পর্কই পরবর্তীতে চেঙ্গিস খানকে শক্তিশালী হতে সাহায্য করেছিল।

এই ঘটনার পরবর্তীতে খুব শিঘ্রই চেঙ্গিস খান মিত্র দল তৈরি করেন। এ সময় তিনি যোদ্ধা হিসেবে খ্যাতি অর্জন করলে তার অনুসারীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পেতে থাকে, সেনাবাহিনীর আকার বৃদ্ধির সাথে সাথে উচ্চাভিলাসী চেঙ্গিস খান বৃহৎ সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রস্তুতি গ্রহণ শুরু করেন, সেই সাথে তিনি অন্যান্য মঙ্গল গোষ্ঠীদের সাথে মৈত্রী সম্পর্ক স্থাপন করেন। চেঙ্গিস খান একক আধিপত্য সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে শত্রুগত্রিয় প্রধানদের হত্যা করার পাশাপাশি জীবিত সদস্যদের কে নিজের গোষ্ঠীর সাথে একীভূত করেন।

তৎকালীন মঙ্গলদের রীতি অনুযায়ী অভিজাত বংশের লোকেরা সেনাবাহিনীর উচ্চপদে আসেন হত, কিন্তু চেঙ্গিস খান সেনাবাহিনীর উচ্চ পদের জন্য বংশ পরিচয়ের চেয়ে যোগ্যতাকে প্রাধান্য দিতে শুরু করে।

সে সময় পর্যন্ত চেঙ্গিস খানের গোত্রে সে ও তার ভাই একত্রে গোত্রপ্রধানের দায়িত্ব পালন করত। কিন্তু আধিপত্য প্রতিষ্ঠার প্রশ্নে এবং তেমুজিনের মঙ্গল রীতি বিরুদ্ধ কাজে তার ভাই জামুখার সাথে বিরোধ দেখা দেয়। ১২০৫ সালে মঙ্গোলিয়ান স্তেপ ২ শিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়ে, একদিকের নেতৃত্বে তেমুজিন ওরফে চেঙ্গিস খান ও অন্যদিকে তার ভাই জামুখা।

চেঙ্গিল খানের দুর্দান্ত রণ কৌশলে জামুখার বাহিনী পরাজিত হয়, পরবর্তীতে জামুখার লোকেরাই তাকে চেঙ্গিস খানের হাতের সোপর্দ করে, কিন্তু তেমুজিন তার ভাইকে হত্যা না করে পুনরায় একসাথে কাজ করার আহ্বান জানাই, কিন্তু জামুখা তার নিজের ইচ্ছাতেই মঙ্গল রীতি অনুযায়ী মেরুদন্ড ভেঙে স্বেচ্ছামৃত্যুবরণ করে। আর যেসব সৈনিক চেঙ্গিস খানের কাছে পুরস্কৃত হবার আসায় জামুখার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল তাদের পরিণতি হয় খুবই ভয়ঙ্কর, চেঙ্গিস খান তাদের সবাইকে বিশ্বাসঘাতকতার অপরাধে ফুটন্ত পানিতে সিদ্ধ করে হত্যার আদেশ দেয়।

জামুখাকে পরাজিত করার পর মঙ্গলিয়ার বাকি গোত্রগুলো একে একে চেঙ্গিস খানের বশ্যতা মেনে নিতে থাকে। ১২০৫ সালে মধ্যই তিনি তার সকল প্রতিদ্বন্দ্বীদের হটিয়ে এককভাবে সমগ্র মঙ্গলীয়ার অধিপতি হিসেবে অধিষ্ঠিত হন। এ সময় তিনি সমগ্র রাজ্যের প্রতিনিধিদের নিয়ে এক সভা আহবান করেন, এই সভার মধ্য দিয়ে আধুনিক মঙ্গোলিয়ার আদলে নতুন এক রাষ্ট্র গঠন করা হয়। ১২০৫ সালের এই সভাতে তেমুজিনকে চেঙ্গিস খান উপাধি দেয়া হয়, চেঙ্গিস খান অর্থ রাজাদের রাজা।

১২০৬ থেকে ১২২৭ সাল পর্যন্ত এই একুশ বছর ছিল চেঙ্গিস খানের নেতৃত্বে মঙ্গল সাম্রাজ্যের স্বর্ণযুগ। এসময় চেঙ্গিস খান মঙ্গল সাম্রাজ্যের বিস্তারের লক্ষ্যে অভিযান শুরু করে। তার প্রথম অভিযান তিনি চিত থেক যুদ্ধ বিদ্যা ও কূটনীতির মৌলিক কিছু শিক্ষা লাভ করেন। ১২১১ সালে চীন অভিযানের প্রথমেই তিনি জিন রাজবংশকে পরাজিত করেন, এরপর ১২১৫ সালে চীনের জিয়া সাম্রাজ্য এবং ১২২০ সালে পারস্যর প্রবল প্রতাপশালী খোয়ারিজমীয় সাম্রাজ্য তার পদানত হয়। এদিকে আফগানিস্থান হয়ে ভারতের পাঞ্জাব পর্যন্ত মঙ্গলবাহিনী চলে এসেছিল। এছাড়াও ককেশাস ও কৃষ্ণ সাগরের আশেপাশের অঞ্চলগুলোও ধীরে ধীরে চেঙ্গিস খানের মঙ্গল সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। এমনকি চিরকাল অজেয় রাশিয়া জয় করতেও মঙ্গল বাহিনীর খুব একটা বেগ পেতে হয়নি।

তৎকালিত সময় চেঙ্গিস খানের নেতৃত্বে মঙ্গলরা যে সমস্ত অঞ্চল জয় করেছিল তা থেকে আধুনিক কালে প্রায় বিশটিরও বেশি রাষ্ট্রের উদ্ভব হয়। এর মধ্য দিয়ে চেঙ্গিস খান পূর্ব এবং পশ্চিম সভ্যতাকে একত্রিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। চেঙ্গিস খান আলেকজান্ডার দি গ্রেট এর চেয়ে চার গুণ বেশি রাজ্য জয় করেন এবং তার সম্রাজ্য রোমান সম্রাজ্যের দিগুনেরও বড় ছিল।

চেঙ্গিস খান তার রণ কৌশল, সাহস আর বুদ্ধিমত্তার জন্য ইতিহাসের পাতায় যেমন বিখ্যাত তেমনি তার রাজ্য জয় করার পদ্ধতির জন্য কুখ্যাত হিসেবেও পরিচিত। নারী পুরুষ শিশুসহ প্রায় সবাই এই মঙ্গলবাহিনীর বর্বরতার শিকার হতো। বেইজিং, সমরখন্দের মত জনবহুল শহরগুলো মঙ্গলবাহিনীর পাশবিকতায় ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত হয়েছিল। ধারণা করা হয় চেঙ্গিস খানের বিভিন্ন অভিযানে প্রায় চার কোটির মতো সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছিল, যা তৎকালীন পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় ১১ শতাংশ।

(৩) চেঙ্গিস খানের মৃত্যু

চেঙ্গিস খানের মৃত্যু: ১২২৫ সালে জাপান সাগর থেকে কাশপিয়ান সাগর পর্যন্ত বিশাল সাম্রাজ্য জয় করে মঙ্গোলীয়ায় ফেরত আসেন চেঙ্গিস খান। এর দুই বছরের মাথায় ১২২৭ সালে ঘোড়া থেকে পড়ে দেহের অভ্যন্তরে গুরুতর আঘাত প্রাপ্ত হয় চেঙ্গিস খান, পরবর্তীতে ১২২৭ সালের ১৮ই আগস্ট চেঙ্গিস খান মৃত্যুবরণ করেন।

চেঙ্গিস খান নৃসংশতা ইতিহাসের সবচেয়ে কুখ্যাত হিসেবে পরিগণিত হলেও তার সাহস, বুদ্ধিমত্তা ও রণকৌশল মঙ্গোলিয়দের আজও গর্তি করে। সমগ্র মঙ্গোলিয়া কে একত্রিত করার জন্য চেঙ্গিস খানকে মঙ্গল জাতির পিতা বলা হয়ে থাকে।

চেঙ্গিস খানের নেতৃত্বে মঙ্গল বাহিনী ভেদ করেছিল তৎকালীন সময়ের সবচেয়ে কঠোর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা চীনের মহাপ্রাচীর। মানবপ্রকৌশলের এক অনন্য নিদর্শন হলো চীনের এই মহাপ্রাচীর। এ প্রচীর বিশ্বে সবচেয়ে দীর্ঘ মানব সৃষ্ট স্থাপনা। চীনের মহা প্রাচীরের সম্মিলিত দৈর্ঘ্য পৃথিবীর বিষুবরেখার দৈর্ঘ্যের অর্ধেকেরও বেশি।

[সূত্র: Kikenokivabe YouTube]

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net

Quality information to the point!View Author posts

You cannot copy content of this page