ছাগলের ঠান্ডা জ্বর সর্দি হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে সম্পূর্ণ পোষ্টটি পড়ুন, পোষ্টিটা পড়ার পর আশা করি আপনি উপকৃত হবেন ও নতুন কিছু জানতে পারবেন।
চলুন শুরু করা যাক আজকের পোষ্টটি।
(১) ছাগলের ঠান্ডা জ্বর সর্দি হবার কারণসমূহ কি?

⇒ নতুন এবং পুরনো ছাগল খামারী বন্ধুরা কমবেশি আপনার সকলে বলতে পারবেন ছাগলের কমন রোগ ঠান্ডা জ্বর এবং সর্দি যেটা প্রায়সই ফার্মের মধ্যে দেখা যায়। আপনারা একটু মন দিয়ে লক্ষ করবেন যখন আবহাওয়ার পরিবর্তন হচ্ছে একটা সিজন চলে যাচ্ছে এবং নতুন একটা সিজনে আগমন সেই সময় টা কিন্তু ঠাণ্ডা জ্বর এবং সর্দিটা দেখা যায়।
⇒ যে সমস্ত ছাগলের শরীর দুর্বল তাদের তো গরমের দিনেও ঠান্ডা লেগে যায় আর যে সকল নতুন খামারে ছাগল কিনে নিয়েছেন সেই সমস্ত ছাগলের ঠান্ডা লাগা তো একদম কমন।
⇒ ছাগলের সর্দি তো আরো অনেক কারণে দেখা যায় যেমন পরাগরেণু নাকের মধ্যে যদি পরাগরেণু চলে যায় তার থেকে সর্দি হতে পারে।
⇒ এছাড়া ছাগলের ট্রাকেয়া সবা ব্রঞ্চি এর মধ্যে এক ধরনের কৃমি হয় সে কৃমির কারণে কিন্তু সর্দি দেখা যায়।
⇒ এছাড়াও পলিউশন যেমন নাকের মধ্যে যদি ধুলা চলে যায় সেখান থেকেও সর্দি হতে পারে।
⇒ কেমিক্যাল কারণে বলতে এখানে বোঝা যাচ্ছে এমোনিয়া গ্যাস যদি অতিরিক্ত অ্যামোনিয়া গ্যাস হয় তার থেকেই সর্দি দেখা যায় আর এমোনিয়া গ্যাস তৈরি হয় ছাগলের পেশাবের থেকে।
⇒ এছাড়াও কিন্তু এই ঠান্ডা লাগা যেকোনো ভাইরাল ব্যাকটেরিয়াল এবং ফাঙ্গাল এ্যাটাকের কারণে প্রথম শুরুতেই এই সিমটম দেখতে পাওয়া যায়। ছাগলের ঠান্ডা লাগা এবং সর্দি এমনই একটি লক্ষণ যেটা রেসপেরিটরি সিস্টেমের যে কোন রোগের শুরুতে আমরা দেখতে পাই।
⇒ ছাগলের ঠান্ডা লাগা এবং সর্দির চিকিৎসা যদি আমরা প্রথম অবস্থাতে সঠিকভাবে করতে না পারি এখান থেকে হতে পারে কঠিন কঠিন রোগ যেহেতু ছাগলের ঠান্ডা লাগে এবং সর্দি যেকোন রেসপেরিটরি সিস্টেমের কঠিন রোগের প্রথম লক্ষণ সেজন্যই কিন্তু এই প্রথম লক্ষণের তার ট্রিটমেন্ট দেওয়া উচিত।
(২) কেন ছাগলের ঠান্ডা জ্বর হলে প্রথমেই হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা করবেন?
⇒ আমার মতে এই প্রথম লক্ষণে প্রথমে হোমিওপ্যাথি ট্রিটমেন্ট দিলে হয়তো বেটার হবে। এজন্যই রোগের শুরুতে যদি আমরা হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করি তাহলে ঐ যে ভাইরাস হোক বা ব্যাকটেরিয়ার তার বংশ বৃদ্ধি হবে না এবং সেটা সমূলে ধ্বংস হয়ে যাবে।
⇒ এজন্য আমি প্রথমে এলোপ্যাথিতে না বলে এটা হোমিওপ্যাথিতে সবাইকে চিকিৎসা করতে বলি। এতে আপনাদের অনেক টাকা খরচ বেঁচে যাবে এবং হোমিওপ্যাথি মেডিসিন এর পর আপনাদের একটা কনফিডেন্স চলে আসবে।
⇒ অনেকে হয়তো ভাবেন হোমিওপ্যাথি মেডিসিন এর দাম কম পরিমাণে খুব কম দিতে কাজ হবে কিনা মনের মধ্যে একটা ডাউট থাকে। তাদের জন্যই বলছি যদি প্রথমে লক্ষণে আপনারা যদি এই হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা দিয়ে থাকেন যখন সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন তখন আস্তে আস্তে আপনার কনফিডেন্স আসবে এবং হোমিওপ্যাথিতে অনেক বড় বড় রোগের চিকিৎসা করার সাহস পাবেন।
⇒ আবার অনেকে ভাবেন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা খুব সোজা কিন্তু এটা কখনো ভাববেন না চিকিৎসার মধ্যে দেখা যায় যে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় অনেক বড় কঠিন। এর কারণ হোমিওপ্যাথিতে একটা মেডিসিন দিয়ে যেমন একশটা রোগ সারানো যায় তেমন একশটা রোগের মেডিসিন কিন্তু একটাই।
⇒ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় রোগের লক্ষণগুলি যদি সঠিকভাবে নির্ণয় করতে পারেন এবং সঠিক যদি মেডিসিন নির্ণয় করতে পারেন তো অবশ্যই খুব তাড়াতাড়ি আপনার সেই সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারবে হোমিওপ্যাথি মেডিসিন।
(৩) ছাগলের ঠান্ডা জ্বর সর্দি এর ১ম ধাপে কোন লক্ষণগুলো দেখা যায়?
⇒ ছাগলের প্রথম সিমটম ঠান্ডা লেগে যাবে।
⇒ ছাগল শরীরটাকে একটু ঘুরিয়ে নেবে নেবে সে মনমরা হয়ে এক সাইডে গিয়ে দাঁড়াবে।
⇒ শরীরের লোম খাড়া খাড়া হবে।
⇒ স্বাভাবিকের তুলনায় খাওয়া-দাওয়া টা কমিয়ে দেবে।
⇒ নাক যে পাতলা আবরণেী পর্দার থাকে তার মধ্যে হালকা ব্যথা হবে।
⇒ ছাগলের বারবার হাঁছি আসতে পারে।
⇒ নাক ভিজে ভিজে থাকবে যেহেতু তার মিউকস মেমব্রেন বা আবরণী পর্দার মধ্যে সুজন।
⇒ শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় একটু বেড়ে যেতে পারে বা হালকা জ্বর হতে পারে।
⇒ কোনো কোনো ক্ষেত্রে আরেকটি সিমটম দেখা যায় সেটা হচ্ছে চোখ দিয়ে হালকা হালকা জল পড়তে পারে।
(৪) ছাগলের ঠান্ডা জ্বর সর্দি এর ২ম ধাপে কোন লক্ষণগুলো দেখা যায়?
⇒ ছাগলের সর্দিটা বেড়ে যাবে।
⇒ হাঁছি বেশি বেশি পড়বে সঙ্গে কাশি যুক্ত হবে।
⇒ শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় অনেকটাই বেড়ে যাবে মানে শরীরের মধ্যে জ্বর চলে আসবে।
⇒ খাবার দেওয়ার আগের তুলনায় অনেকটাই কমিয়ে দেবে খাবে না বললেই চলে।
(৫) ছাগলের ঠান্ডা জ্বর সর্দি এর ৩য় ধাপে কোন লক্ষণগুলো দেখা যায়?
⇒ দ্বিতীয় ধাপের থেকে প্রত্যেকটা লক্ষণই বেশি বেশি করে হয়ে যাবে।
⇒ ছাগলের ট্রাকেয়া বা ব্রঞ্চি মধ্যে যে সর্দি ইনফেকশন সেটা কিন্তু ধীরে ধীরে তার লাঞ্চের মধ্যে চলে যাবে যখনই লাঞ্চের মধ্যে চলে যাবে শুরু হয়ে যাবে নিউমোনিয়া
⇒ আর যখনই এই নিউমোনিয়া শুরু হবে তার শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট হবে।
⇒ খাওয়ার দাওয়াত আরো বেশি কমিয়ে দেবে জ্বরের মাত্রা আরো বেশি অধিক হয়ে।
⇒ ছাগলের সর্দিটা অনর্গল পড়তে থাকবে মুখ দিয়ে।
⇒ মুখ দিয়ে শ্বাস প্রশ্বাস নিতে থাকবে মুখে ফেনা চলে আসবে এইভাবে কিন্তু ধীরে ধীরে ইনফেকশন বেড়েই চলে যায়।
⇒ ছাগলের মুখের মধ্যে ঘা হয়ে যায় দেখবেন নিউমোনিয়া হলে মুখের ভিতর ঘা হয়ে যায়।
⇒ এরপরে আস্তে আস্তে যে ধাপগুলো এগিয়ে আসবে এতেই পাতলা পায়খানা শুরু হয়ে যাবে অর্থাৎ তার ডাইজেস্টিভ সিস্টেম এর মধ্যে কিন্তু একটা প্রভাব পড়বে বা ডাইজেস্টিভ সিস্টেমও ভাইরাস বা ব্যাকটিরিয়া গুলি কবজা করে নেবে।
⇒ যখন ছাগলের এই ডাইরিয়া যুক্ত হয়ে যাবে শরীর আরো বেশি দুর্বল হবে কারণ রক্তের মধ্যে যে জল থাকে সেটা কিন্তু রুমেনের মধ্যে চলে আসে এবং পাতলা পায়খানা হয়ে বাইরে বেরিয়ে যায়।
⇒ তখন শরীরে জলের অভাব ঘটবে আর রক্তের জল যখন রুমেনে চলে আসবে রক্ত রং হয়ে যাবে গাঢ়। ঠিকঠাকভাবে রক্ত চলাচল করতে পারবে না। আর অক্সিজেনের সাপ্লাইয়ের ঠিকঠাক করতে পারবে না।
⇒ যে সমস্ত ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার জন্ম নিয়েছিল সেই ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আরো বেশি বংশবৃদ্ধি করবে কেননা সে সময় শরীরের ইমিউনিটি এতটাই দুর্বল হয়ে পড়ে তাদেরকে বাধা দেওয়ার মত আর কেউ থাকবে না।
⇒ আর এইটাই কিন্তু লাস্ট স্টেপ এর পরে কিন্তু সেই প্রাণী তার মৃত্যু ঘটতে পারে।
আশা করি বন্ধুরা বুঝতে পেরেছেন যে সাধারন একটা সর্দি থেকে কিভাবে ধাপে ধাপে এগিয়ে গিয়ে বড় কোন রোগের আকার নিল এবং সেখান থেকে শুরু হয়ে যেতে পারে মহামারী এজন্যই কিন্তু যে কোন রোগের ট্রিটমেন্ট শুরুতেই দেওয়া উচিত।
(৬) ছাগলের ঠান্ডা জ্বর সর্দি এর হোমিওপ্যাথিক ট্রিটমেন্ট কোন মেডিসিন কত পরিমাণে কতবার দেওয়া হবে?

⇒ প্রথম অবস্থায় ছাগলের ঠান্ডা লাগা এবং সর্দিতে প্রথমে আমরা কিন্তু ”একোনাইট” ব্যবহার করতে পারি। এটি হোমিওপ্যাথিতে একটি কমন মেডিসিন শুরুতেই ”একোনাইট” থার্টি এবং টুহানড্রেড পটেনসিতে সারা দিনে চারবার একটা কুঁড়ি কেজি ছাগলকে ৪ ও ৪ ড্রপ করে দিতে পারবেন।
⇒ এর থেকে ছাগলের একটু বেশি খারাপ হলে ব্যবহার করতে পারবেন ”ব্রায়োনিয়া” থার্টি এবং টুহানড্রেড পটেনসিতে যেটি একই নিয়মে ৪ ও ৪ ড্রপ করে সারা দিনে তিনবার।
⇒ আর যদি ঠান্ডা খাবার জল খাওয়ার কারনে এই সমস্যা শুরু হয় সে ক্ষেত্রে আপনারা ”আর্সেনিকাম এলবাম“ থার্টি এবং টুহানড্রেড সারা দিনে চারবার একই নিয়মে ব্যবহার করতে পারবেন।
⇒ আর যখন দেখবেন যে ভিতর কফ জমে গেছে সেটা বের হচ্ছে না তার শ্বাসের প্রবলেম হচ্ছে এই ধরনের সিমটম এর ক্ষেত্রে আপনারা ”রাসস্টক্স” ঐ একই থার্টি এবং টুহানড্রেড ব্যবহার করতে পারবেন। সারা দিনে তিনবার ৪ ও ৪ ড্রপ করে।
⇒ সকাল বেলায় খালি পেটে মেডিসিন খাওয়ার আধা ঘন্টার মধ্যে কোনরকম জল বা খাবার দেওয়া যাবে না এছাড়া সারা দিন আরও দুবার এবং রাত্রে খাবার দাবার করে যখন ছাগলকে ঘরে ঢুকাবেন আধাঘন্টা পরে এই মেডিসিনটা প্রয়োগ করবেন।
⇒ হোমিওপ্যাথি মেডিসিন দেওয়ার আগে আগে মেডিসিনের বোতলটাকে ঝাকিয়ে নেবেন এরপর এই ড্গুরপলো তার জীভের মধ্যে দেবেন জীহব্বার মধ্যে দিলে সেটা খুব তাড়াতাড়ি কাজ করে।
⇒ হোমিও মেডিসিন কিনতে গেলে ভালো কোম্পানির মেডিসিন নেওয়ার চেষ্টা করবেন হোমিওপ্যাথি ট্রিটমেন্টকে এর জন্য কঠিন বলা হয় যদি রোগের সঠিক সিমটম না মেডিসিন দেন তাহলে কিন্তু কাজ হবে না কারণ এখানে একটা রোগের চারটা মেডিসিন বললাম কিন্তু প্রত্যেকটারই আলাদা আলাদা সিমটম অনুযায়ী প্রয়োগ করতে হয়। দেখা যাচ্ছে প্রথম সিমটমই যদি আপনি ”আর্সেনিকাম অ্যালবাম” দেন বা ”রাসস্টক্স” দেন তাহলে কিন্তু কাজ হবেনা।
⇒ প্রথমে যে সিমটম গুলো দেখা যাচ্ছে সেই সিমটম অনুযায়ী মেডিসিন প্রয়োগ করতে হবে হোমিওপ্যাথিতে যে রোগ সারে সেই মেডিসিন দিয়ে কিন্তু রোগের শুরু হয় অর্থাৎ কোন একটা সুস্থ ছাগলকে যদি আমরা এখন ”এ্যাকোনাইট” দেই সে ক্ষেত্রে একোনাইট এর কি কি সিমটম গুলো আছে সেগুলো ঐ ছাগলের মধ্যে চলে আসবে। আবার সেই সিমটম গুলো ”এ্যাকোনাইট” প্রয়োগেই কিন্তু সেরে যাবে হোমিওপ্যাথিতে বলা হয় বিষ দিয়ে কিন্তু বিষ নামানো যায়
⇒ যদি সঠিক সিমটম দেখে আপনার মেডিসিন প্রয়োগ করেন দুই টাকার মধ্যে কিন্তু আপনার এই ধরনের সমস্যা গুলি থেকে মুক্তি দেবে হোমিওপ্যাথি মেডিসিন।
বিঃদ্রঃ যে কোন মেডিসিন প্রয়োগের পূর্বে ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন নিন।
বন্ধুরা কেমন লাগলো আমাদের আজকের এই আলোচনাটি যদি ভালো লাগে অবশ্যই কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাবেন এবং অবশ্যই আমাদের ফেসবুক পেইজ এ লাইক করতে ভুলবেন না।
আজকের মতো এখানেই বিদায় নিচ্ছি আবার আসবো ফিরে পরবর্তীতে নতুন বিষয় নিয়ে, নতুন টপিকের, নতুন কোন চিকিৎসা সম্বন্ধীয় আলোচনা নিয়ে। সবাই ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন।
বিভিন্ন গবাদি পশু যেমন- গরু পালন, ছাগল পালন, মহিষ পালন, ভেড়া পালন ইত্যাদি সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট গবাদি’ (inbangla.net/gobadi) এর সাথেই থাকুন।