(১) ছাগলের বাসস্থান বা ছাগলের ঘর নির্মানে বিবেচ্য বিষয়সমূহ
- ছাগলের বাসগৃহ শুদ্ধ ও উঁচু স্থানে নির্মান করা দরকার।
- ঘরে আলো-বাতাস ঢোকার ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন।
- ঘরের মেঝে সব সময় শু ও পরিষ্কার রাখার ব্যবস্থা করা উচিৎ।
- ছাগলের ঘর পূর্ব পশ্চিমে লা লি দক্ষিণ দিক খোলা থাকলে ভাল।
(২) ছাগলের খামারে কয়টি ঘর থাকা প্রয়োজন?
ছাগল খামারে যে সকল ঘর থাকা প্রয়োজন তা হলো-
- প্রজনন উপযোগী ও দুগ্ধবতী ছাগলের ঘর, ব্রুডিং পেন।
- বাচ্চা ছাগলের ঘর (দুধ ছাড়ানো পর্যন্ত)।
- মাংস উৎপাদনকারী ছাগলের ঘর (২-৩ মাস বয়স হতে প্রাপ্ত বয়স্ক)।
- পাঠা ছাগলের ঘর (৩ মাস বয়স হতে সার্ভিসকালীন সময়)।
- গর্ভবতী ছাগলের ঘর।
- আইসোলেশন শেড (অসুস্থ ছাগলের জন্য)।
- কোয়ারেন্টাইন শেড (নতুন ক্রয়কৃত ছাগলের জন্য-ক্রয়ের পর ২ সস্তাহ পর্যন্ত)।
- দানাদার খাদ্য রাখার ঘর।
- সবুজ ঘাস ও রাফেজ জাতীয় খাদ্য রাখার ঘর।
(৩) ছাগলের ঘর তৈরির নিয়ম
- শুষ্ক, উচুঁ, জল জমে না এমন স্থানে স্থাপন করা উচিত।
- পূর্ব পশ্চিমে লম্বালম্বি, দক্ষিণ দিক খোলা এমন করতে হবে। এক্ষেত্রে কাঠাঁল, ইপিল ইপিল, কাসাভা ইত্যাদি গাছ লাগানো যেতে পারে।
- এছাড়া জল নিষ্কাশনের জন্য উত্তম ব্যবস্থা আছে এমন স্থানকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
- ছাগল ঠাসাঠাসি অবস্থায় বাস করতে পছন্দ করে না। এরা মুক্ত আলো বাতাস এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন স্থানে থাকতে পছন্দ করে।
- এক জোড়া ছাগলের জন্য ৫ ফুট লম্বা, ১.৫ ফুট চওড়া এবং ৬ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট খোয়াঁড় প্রয়োজন।
- প্রতিটি পূর্ণ বয়স্ক ছাগলের জন্য গড়ে ১০-১৪ বর্গ ফুট এবং বাড়ন্ত বাচ্চার জন্য ৩-৮ বর্গ ফুট জায়গা প্রয়োজন।
- ছাগলের ঘর ছন, গোলপাতা, খড়, টিন বা ইট নির্মিত হতে পারে। তবে ঘরের ভিতর বাঁশ বা কাঠের মাচা প্রস্তুত করে তার উপর ছাগল রাখা উচিত।
- মাচার উচ্চতা ১ মিটার (৩.৩৩ ফুট) এবং মাচা থেকে ছাদের উচ্চতা ৬-৮ ফুট হবে। মল-মূত্র নিষ্কাষনের গোবর ও চনা সুবিধার্থে বাঁশের চটা বা কাঠের মাঝে ১ সেঃমিঃ ফাঁক লাখতে হবে।
- মেঝে মাটির হলে সেখানে পর্যাপ্ত বালি দিতে হবে। বৃষ্টি যেন সরাসরি ঘরের ভিতর প্রবেশ না করতে পারে সে জন্য ছাগলের ঘরের চালা ১-১.৫ মিঃ (৩-৩.৫ ফুট) ঝুলিয়ে দেয়া প্রয়োজন।
- শীতকালে রাতের বেলায় মাচার উপরের দেয়ালকে চট দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। পাঠাঁর জন্য অনুরূপভাবে পর্যাপ্ত আলো বাতাস ও মল-মূত্র নিষ্কাষনের উত্তম সুবিধাযুক্ত পৃথক খোয়াড় তৈরি করতে হবে।
- শীতকালে মাচার উপর ১.৫ ইঞ্চি পুরু খড় বিছিয়ে তার উপর ছাগল রাখতে হবে। প্রতিদিন ভালোভাবে পরিষ্কার করে রৌদ্রে শুকিয়ে পুনরায় বিছাতে হবে।
(৪) সতর্কতা
একথা মনে রাখা প্রয়োজন যে মুক্তভাবে ছাগল প্রতিপালনের তুলনায় আবদ্ধ অবস্থায় ছাগল পালন অনেক বেশি ঝুকিপূর্ণ। এ ব্যবস্থায় বৈজ্ঞানিক চিন্তা-ভাবনা ও প্রযুক্তির সমন্নয় না ঘটালে খামারীকে বিস্তর সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এটা একটি বাস্তব উপলদ্ধি।
এজন্য ছাগলের সুখ-সাচ্ছন্দ্য ও স্বাস্থ্যর প্রতি খামারীকে স্বতন্ত্র ভাবে দৃষ্টি দিতে হবে। ছাগলের খামারে রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটলে মারাত্মক ক্ষতি হয়ে থাকে। তাই বিভিন্ন রোগ দমনের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া অত্যন্ত জরুরি। তা না হলে খামার থেকে লাভের আশা করা যায় না।
খামারে ছাগল আনার পর থেকে প্রতিদিনই প্রতিটা ছাগলের স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিতে হবে। প্রথম পাঁচ দিন সকাল ও বিকালে দুবার থার্মোমিটার দিয়ে ছাগলের দেহের তাপমাত্রা পরীক্ষা করতে হবে।
হঠাৎ কোনো রোগ দেখা মাত্রই পশু চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে। তীব্র শীতের সময় ছাগী বা বাচ্চাদের গায়ে চট পেঁচিয়ে দেয়া যেতে পারে। মাচার নিচ এবং ঘর প্রতিদিন সকালে পরিষ্কার করতে হবে এবং কর্মসূচি অনুযায়ী জীবাণুনাশের ব্যবস্থা নিতে হবে।
বিভিন্ন গবাদি পশু যেমন- গরু পালন, ছাগল পালন, মহিষ পালন, ভেড়া পালন ইত্যাদি সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট গবাদি পশু’ (inbangla.net/gobadi) এর সাথেই থাকুন।
অনুরোধ!! পোষ্ট ভালো লাগলে প্লিজ উপরের শেয়ার আইকনে ক্লিক করে পোষ্টটি শেয়ার করে দিন।