Skip to content
ছোলা চাষ পদ্ধতি

(১) ছোলা চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য

ক) মাটি

এঁটেল ও এঁটেল দোআঁশ মাটিতে ছোলা ভালো জন্মে।

খ) শস্য পরিক্রমা

বাংলাদেশে প্রধানতঃ

আউশ/পাট → পতিত → ছোলা

রোপা → আউশ → রোপা আমন → ছোলা

আমন → ছোলা → পতিত

ইত্যাদি ফসল ধারায় ছোলার চাষ হয়ে থাকে।

এছাড়া একক ফসলের পাশাপাশি মিশ্র বা সাথী ফসল অথবা আন্তঃফসল হিসেবে তিসি, ধনিয়া, বার্লি, গম, ইক্ষু বা ভুট্টার সাথে ছোলা চাষ করে লাভবান হওয়া যায়।

গ) জমি তৈরি

২-৩ টি আড়াআড়ি চাষ ও মই দিয়ে জমি গভীর করে ভালোভাবে চাষ করতে হবে। জমিতে বেশি বড় ঢেলা না থাকে সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। তবে ছোলা চাষের জন্য মাটি একেবারে ঝুরঝুর করা যাবে না।

ঘ) বপন পদ্ধতি

  • ছিটিয়ে ও সারি করে বীজ বপন করা যায়। সারি করে বপন করলে গাছ পর্যবেক্ষণ, বাছাই এবং মাঠের অন্তর্বর্তীকালীন পরিচর্যা সহজ হয়।
  • সারিতে বপনের ক্ষেত্রে সারি থেকে সারির দূরত্ব ৪০-৫০ সেমি বা ১৬-২০ ইঞ্চি রাখতে হবে এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ১০-১২ সেমি।

ঙ) বীজের হার

বীজের হার ৩৫ কেজি/হেক্টর, ছিটিয়ে বপনের ক্ষেত্রে বীজের পরিমাণ কিছু বেশি অর্থাৎ ৪০ কেজি/হেক্টর দিতে হয়।

পড়ুন
ছোলার উচ্চ ফলনশীল জাত

চ) বীজ শোধন

  • ডাল জাতীয় ফসল বীজ বপনের পূর্বে শোধন করলে মাটি ও বীজ বাহিত অনেক জীবাণুর আক্রমণ হতে রক্ষা পাওয়া যায়।
  • তাই বীজ বপনের পুর্বে অবশ্যই প্রোভেক্স-২০০ ডব্লিউ পি (কার্বোজিন+থিরাম) ২.৫-৩.০ গ্রাম হারে প্রতি কেজি বীজে মিশিয়ে শোধন করলে শুরুতে গোড়া পচা রোগের প্রকোপ কমে যায়।

ছ) সারের পরিমাণ ও প্রয়োগ পদ্ধতি

নিম্নরূপ হারে সার ব্যবহার করতে হবে।

সারের নামসারের পরিমাণ/হেক্টর (কেজি)সারের পরিমাণ/বিঘা (কেজি)
টিএসপি৮০-৯০১১-১২
এমওপি৪০-৪৫৫-৬
জিপসাম৪০-৪৫৫-৬
জিপসাম৫০-৫৫৭-৮
বোরন (প্রয়োজনবোধে)৭-১০১-১.৫

বি: দ্র: জমি খুব ঊর্বর হলে ছোলা চাষে সার প্রয়োগের প্রয়োজন নেই।

জ) বপন সময়

  • নভেম্বর ৩য় সপ্তাহ থেকে ডিসেম্বর ১ম সপ্তাহ উত্তম সময়।
  • তবে বরেন্দ্র অঞ্চলের জন্য কার্তিক মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে শেষ সপ্তাহে (অক্টোবর শেষ সপ্তাহ থেকে নভেম্বরের ২য় সপ্তাহ) বীজ বপন করতে হবে।

ঝ) রগিং

জাতের বিশুদ্ধতা সংরক্ষণের জন্য মূল গাছের সাথে সামঞ্জস্য নয় এরুপ অবাঞ্চিত গাছ বৃদ্ধির কয়েক পর্যায়ে (যেমন- সজিব বৃদ্ধি পর্যায়ে, ফুল আসার সময় ও পরিপক্কতার সময়) সমূলে উপড়িয়ে ফেলতে হবে।

ঞ) অন্তর্বর্তীকালীন পরিচর্যা

ছোলার ফসল ও ছোলার দানা
ছোলার ফসল ও ছোলার দানা
  • বপনের ৩০-৩৫ দিনের মধ্যে একবার আগাছা দমন করা প্রয়োজন। অতি বৃষ্টির ফলে যাতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি না হয় সে জন্য অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
  • জমিতে পর্যাপ্ত রস না থাকলে বপনের পর হাল্কা সেচ দিতে হবে। বরেন্দ্র অঞ্চলে
  • গাছ গজানোর ২৫-৩০ দিনে মধ্যে ১ বার হালকা সেচ দিলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। তবে এসময় বৃষ্টি হলে সার, সেচ দেওয়ার কোন প্রয়োজন নেই।
  • সেচ বা বৃষ্টির পানি জমি হতে বের হওয়ার জন্য পর্যাপ্ত নালা থাকা আবশ্যক।

ট) ফসল সংগ্রহ

গাছের ফল যখন শুষ্ক খড়ের মত রং দেখা যাবে তখন অর্থাৎ চৈত্রের প্রথম সপ্তাহ থেকে মধ্য-চৈত্র (মধ্যমার্চের শেষ) এর মধ্যে ফসল সংগ্রহ করতে হবে।

পড়ুন
ছোলার উচ্চ ফলনশীল জাত

(২) ছোলা চাষে পোকা ও রোদ দমন ব্যবস্থাপনা

ক) ছোলার উইল্ট রোগ দমন

ফিউজেরিয়াম অক্সিসপোরাম নামক ছত্রাক দ্বারা এ রোগ হয়। সাধারণত মাটির তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে ও যথেষ্ট পরিমাণ আর্দ্রতা থাকলে এ রোগের ব্যাপকতা বৃদ্ধি পায়।

ছোলার উইল্ট রোগ
ছোলার উইল্ট রোগ
ছোলার ঢলে পড়া রোগ
ছোলার ঢলে পড়া রোগ

লক্ষণ:

  • চারা অবস্থায় এ রোগে আক্রান্ত গাছ মারা যায় এবং পাতার রঙের কোন পরিবর্তন হয় না।
  • আক্রান্ত গাছের পাতা হলুদ হয়ে যায়, ঢলে পড়ে ও শুকিয়ে যায়।
  • লম্বালম্বিভাবে কাটলে কান্ডের মাঝখানের অংশ কালো দেখা যায়।

প্রতিকার:

  1. বীজ শোধক ঔষধ দিয়ে বপনের পূর্বে বীজ শোধন করলে ছোলার উইল্ট রোগ দমন করা যায়, প্রোভেক্স-২০০ ডব্লিউ পি প্রতি কেজি বীজের জন্য ২.৫-৩.০ গ্রাম হারে মিশিয়ে বীজ শোধন করতে হবে।
  2. মাঠে ঢলে পড়া রোগ দেখা দিলে কার্বেন্ডাজিম (অটোস্টিন ডি এফ অথবা নোইন) এবং প্রোভেক্স-২০০ ডব্লিউ পি ১ গ্রাম হারে প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে বিকালে গাছের গোড়ায় ভালোভাবে স্প্রে করতে হবে।
  3. রোগ প্রতিরোধী জাত, যেমন- বারি ছোলা-৫, বারি ছোলা-৯, বারি ছোলা-১০ এবং বারি ছোলা-১১ এর চাষ করতে হবে।
  4. ফসলের পরিত্যক্ত অংশ পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
  5. পর্যাপ্ত পরিমাণে জৈব সার ব্যবহার করতে হবে।
  6. ঢলে পড়া রোগ দেখা দিলে আক্রান্ত জমিতে পরবর্তী বৎসর ছোলা না বুনে দুই বা তিন বৎসরের জন্য শস্য পর্যায় অনুসরণ করা প্রয়োজন।

খ) গোড়া পচা রোগ দমন

স্কে্লরোশিয়াম রলফসি নামক ছত্রাক দ্বারা এ রোগ হয়। চারা গাছে এ রোগ বেশি দেখা যায়।

লক্ষণ:

  • আক্রান্ত গাছ হলদে হয়ে যায় এবং শিকড় ও কান্ডের সংযোগ স্থলে কালো দাগ পড়ে।
  • গাছ টান দিলে সহজেই উঠে আসে।
  • আক্রান্ত স্থানে গাছের গোড়ায় ছত্রাকের জালিকা ও সরিষার দানার মত স্কে্লরোশিয়া গুটি দেখা যায়।

প্রতিকার:

  1. প্রোভেক্স-২০০ ডব্লিউ পি প্রতি কেজি বীজের জন্য ২.৫-৩.০ গ্রাম হারে মিশিয়ে বীজ শোধন করতে হবে মাঠে ঢলে পড়া রোগ দেখা দিলে কার্বেন্ডাজিম অটোস্টিন এবং প্রোভেক্স-২০০ ডব্লিউ পি ১ গ্রাম হারে প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে বিকালে গাছের গোড়ায় ভালোভাবে স্প্রে করতে হবে।
  2. ফসলের পরিত্যক্ত অংশ পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
  3. রোগ সহনশীল জাত, যেমন- বারি ছোলা-৫, বারি ছোলা-৯ এবং বারি ছোলা-১০ এর চাষ করতে হবে।
  4. সুষম হারে সার প্রয়োগ করতে হবে।
  5. ফসলের পরিত্যক্ত অংশ পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
পড়ুন
ছোলার উচ্চ ফলনশীল জাত

গ) ছোলার বট্রাইটিস গ্রে মোল্ড রোগ প্রতিকার

বট্রাইটিস প্রজাতির ছত্রাক দ্বারা এ রোগ ঘটে থাকে। ছোলার বৃদ্ধি অবস্থায় কিংবা ফল আসার শুরুতেই এ রোগের আক্রমণ লক্ষ্য করা যায়।

ফুল আসার পর থেকে ফল পাকার পূর্ব পর্যন্ত যেকোন সময়ে ভারি বৃষ্টি হলে, বাতাসে আর্দ্রতা শতকরা ৯৫ ভাগ বা বেশি থাকলে এবং জমিতে গাছ বেশি ঘন হলে এ রোগের ব্যাপকতা লাভ করে।

ছোলার বট্রাইটিস গ্রে মোল্ড রোগ
ছোলার বট্রাইটিস গ্রে মোল্ড রোগ

লক্ষণ:

  • এ রোগের লক্ষণ কান্ড, পাতা, ফুল ও ফলে প্রকাশ পায়।
  • আক্রমণের ৫-৭ দিনের মধ্যেই গাছের ভিতরের পাতাগুলো হলুদ রং ধারণ করে।
  • অনুকূল আবহাওয়া চলতে থাকলে আক্রান্ত হলুদ পাতাগুলো ক্রমশ: শুকিয়ে যেতে থাকে।
  • শুকনো পাতা বিশিষ্ট এ রোগ আক্রান্ত গাছ রোদ্রোজ্জ্বল দুপুরে ঝাকুনি দিলে আক্রান্ত পাতার স্পোর ধুলার মত উড়তে থাকে।
  • আক্রান্ত স্থানে ধূসর রঙের ছত্রাকের উপস্থিতি দেখা যায়।
  • ফলের মধ্যে আক্রান্ত হলে সাদা বর্ণের মাইসেলিয়াম দেখা যায় এবং আক্রান্ত ফলগুলো পরিপুষ্ট না হওয়ার কারণে বীজগুলো কুচ্কানো আকৃতির হয়।

প্রতিকার:

  1. গাছ ঘন হয়ে থাকলে পাতলা করে দিতে হবে।
  2. ফসলের পরিত্যক্ত অংশ পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
  3. অ্যাক্রোবেট এম জেড ২ এমএল প্রতি লিটার পানিতে অথবা অটোস্টিন ২.০ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ৭-১০ দিন অন্তর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।
  4. রোগ প্রতিরোধী জাত বারি ছোলা-১০ অথবা বারি ছোলা-১১ এর চাষ করতে হবে।
  5. অটোস্টিন অথবা থিরাম প্রতি কেজি বীজে ২.৫-৩.০ গ্রাম হারে মিশিয়ে শোধন করতে হবে।

ঘ) ছোলার ফলছেদক পোকা ব্যবস্থাপনা

ফলছেদক পোকার আক্রমণে অনুকূল আবহাওয়ায় ছোলার ফলন শতকরা ৮০ ভাগেরও বেশি কমে যেতে পারে।

লক্ষণ:

  • ছোলার গাছে ফুল আসা শুরু করলে পোকার স্ত্রী মথ পাতায় ২-৬টি করে ডিম পাড়ে। ডিম থেকে কীড় বের হয়ে পাতা, ডগা ও ফুল খেয়ে থাকে।
  • গাছে ফল ধরা শুরু করলে ফলের ভিতর ছিদ্র করে ঢুকে বর্ধনশীল বীজ খেয়ে ফেলে।
পড়ুন
ছোলার উচ্চ ফলনশীল জাত

এদের মারাত্মক আক্রমণে ফলন দারুনভাবে ব্যহত হতে পারে।

ফলছেদক পোকার আক্রমণ নিয়ন্ত্রণ:

  1. উপযুক্ত সময়ে (নভেম্বরের মাঝামাঝী) এবং সঠিক হারে বীজ বপন করতে হবে।
  2. ক্ষেতে পতঙ্গভূক পাখি বসার ব্যবস্থা করার জন্য বাঁশের কঞ্চি/গাছের ডালপালা পুঁতে দেয়া যেতে পারে।
  3. ছোলার মধ্যে আন্তঃফসল যেমন- ধনিয়া, গম, সরিষা, তিসি ইত্যাদি ফসলের চাষ করে পোকার আক্রমণ কমানো যেতে পারে।
  4. আক্রমণ মারাত্মক হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে থায়ামিথক্সাম+ক্লোরানট্রানিলিপ্রোল এর মিশ্রণ কীটনাশক (যেমন- ভিরতাকো ৪০ ডব্লিউ জি বা অন্য নামের) প্রতি লিটার পানিতে ০.১৫ গ্রাম হারে মিশিয়ে ৭-১০ দিন পরপর স্প্রে করতে হবে।

বিভিন্ন উদ্ভিদ, গাছ ও ফসল যেমন- বিভিন্ন শস্য, সবজি, ফুল, ফল ইত্যাদি চাষাবাদ সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট চাষাবাদ’ (inbangla.net/casabad) এর সাথেই থাকুন।

অনুরোধ!! পোষ্ট ভালো লাগলে প্লিজ উপরের শেয়ার আইকনে ক্লিক করে পোষ্টটি শেয়ার করে দিন।

Leave a Reply

nv-author-image

ইন বাংলা নেট চাষাবাদ

বিভিন্ন উদ্ভিদ, গাছ ও ফসল যেমন- বিভিন্ন শস্য, সবজি, ফুল, ফল ইত্যাদি চাষাবাদ সম্পর্কিত যা কিছু বাংলাতে।View Author posts