প্রিয় পাঠক, ইন বাংলা নেট ব্লগে অপনাকে স্বাগত! আজকে জ্বর সম্পর্কেত প্রায় জিঙ্গাসিত কিছু প্রশ্ন, যেমন- জ্বর মুখ তেতো, জ্বর হলে মুখ তেতো হয় কেন? জ্বর মুখ তিতা, জ্বরে মুখ তেতো হলে করণীয়, জ্বরে মুখ তিতা, জরে মুখ তিতা, জ্বর আসলে মুখ তিতা হয় কেন? মুখ তেতো হলে করণীয়, জ্বর হলে মুখের স্বাদ তেতো লাগে কেন? জ্বরে মুখ তিতা হলে করণীয়, জ্বরে মুখ তিতা হলে করনীয়, মুখ তেতো হয় কেন? মুখে তেতো ভাব, মুখ তেতো লাগে কেন? জ্বর হলে মুখ তিতা হয় কেন? মুখ তেতো হওয়ার কারণ কি? প্রভৃতির প্রশ্নের উত্তর এই পোষ্টটির মাধ্যমে সংক্ষিপ্ত ও সহজেোবে তুলে ধরার চেষ্টা করব।
চলুন জেনে নিই-
(১) জ্বর হলে মুখ তিতা হয় কেন মুখ তেতো হওয়ার কারণগুলো কি কি?
জ্বরের কারনে অতিরিক্ত তাপমাত্রা আমাদের মস্তিষ্কের ‘ট্রান্সলেটর এলাকা’-কে আক্রমণ করে যার মধ্যে স্বাদগ্রহণকারী এলাকাও রয়েছে। যদিও আমাদের স্বাদ গ্রহণের রিসিপটর গুলো স্নায়ুর মাধ্যমে সঠিক তথ্যই পৌঁছায় তবুও আমাদের মস্তিষ্ক তা ভিন্নভাবে গ্রহণ করে, যার ফলে আমাদের তিক্ততা অনুভূত হয়।
আমাদের মগজের ভেতর রয়েছে ‘হাইপোথ্যালামাস’, যার আবার বিশেষ একটা অংশ শরীরের তাপনিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে। রোগজীবাণুর সংক্রমণের ফলে কখনো কখনো জীবাণুদের শরীরে তৈরি হওয়া টক্সিন বা বিষাক্ত রাসায়নিক, শরীরের ওই তাপনিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রকে বিগড়ে দেয়।
হাইপোথ্যালামাসে তখন পাইরোজেন উদ্দীপ্ত হয়, এসব টক্সিন এর বিরুদ্ধে যুদ্ধের হাতিয়ার হিসেবে তৈরি করে নানা রকম রাসায়নিক পদার্থ। এর মধ্যে কিছু পদার্থ যেমন, ইন্টারলিউকিন, প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন এগুলো শরীরের তাপমাত্রা বাড়ায়। এজন্যে এগুলোকে বলে পাইরোজেন বা জ্বর উৎপাদক। এই পাইরোজোন ক্ষরনের ফলে শরীরের ভিতর তাপ উৎপাদনের হার বেড়ে যায়, মূখে তিতো তিতো লাগে, শরীর থেকে তাপ বেরিয়ে যাবার হার যায় কমে। ফলে গা গরম হয়ে ওঠে। এটাকেই জ্বরের অবস্থা বা জ্বর বলে।
আসলে মুখের স্বাদ আর ঘ্রাণের ভিতরে একটা সম্পর্ক আছে।
চিবানোর সময়, আমাদের খাবারের সুবাস আমাদের অনুনাসিক অঞ্চল দিয়ে ভ্রমণ করে। চুলের কোষগুলি আমাদের মগজে গন্ধ সম্পর্কিত তথ্য বহন করে।
কিন্তু যখন আমাদের সর্দি হয়, তখন আমাদের নাকের শ্লেষ্মার কারণে আমরা গন্ধ পেতে পারি না, এবং তাই আমাদের মস্তিষ্ক আমরা যে খাবারগুলি খাচ্ছি তার স্বাদ সম্পর্কে আমাদের বলতে পারছে না। ফলস্বরূপ আমরা অনুভব করি যে আমাদের খাবারের স্বাদ মিশ্রিত হয়েছে এবং আমরা যখন অসুস্থ থাকি তখন কিছুই অনুভব করি না।
এছাড়াও জলবিয়োজন (Dehydration) এর জন্যও স্বাদের পরিবর্তন আসতে পারে।
অনেক সময় ওষুধ (antibiotic) খেয়েও স্বাদের পরিবর্তন আসে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া তে।
এক্ষেত্রে স্বাদ তেতো হওয়ার জন্য দায়ী সাইটোকাইন্স সংক্রান্ত একটি ব্যাখ্যা রয়েছে। তা হলো-
আমাদের জ্বর হইছে। এর মানে হলো , শরীরে ‘সাইটোকাইনস্ ‘ এর সংখ্যা বৃদ্ধি পাইছে।
সাইটোকাইনস হলো এক ধরনের প্রটিন, যে বা যারা আমাদের প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করে।
তো TNF (Tumor Necrosis Factor) নামের একধরনের সাইটোকাইনস আছে। জ্বরের সময় এরা রিলিজ হয়। এই TNF এর কারনেই আমরা জ্বরের সময় তেতো স্বাদ অনুভব করি।
TNF কিভাবে তেতো স্বাদের জন্য দায়ী?
আমাদের স্বাদগ্রন্থির কারনেই আমরা খাবারের স্বাদ অনুভব করে থাকি। TNF শুধু তেতো স্বাদের জন্য দ্বায়ী গ্রন্থীগুলোকে অল্পতেই স্টিমুলেট করে। ফলে, যা-ই খাই পৃথিবীটা তিতাময় লাগে :
তাছাড়া, TNF আমাদের ব্রেইন সেল/সিগনালকেও এফেক্ট করতে পারে। এরকম ক্ষেত্রে, সব ধরনের স্বাদ ব্রেনে গিয়ে তিতায় কনভার্ট হয়ে যায়।
আশা করি সবাই বুঝতে পেরেছেন যে আমাদের জ্বর হলে মুখ কেন দিতে হয়।
আসলে আমাদের মুখ ঠিকই থাকে কিন্তু মস্তিষ্কের কিছু কার্যক্রমের কারণে আমাদের মুখ তিতা তিতা লাগে।
(২) জ্বর হয়ে মুখ তিতা হলে করণীয় কি?
- যদি আপনাদের জ্বর হয় তাহলে সব সময় লেবু খান এতে করে আপনার মুখের তিতা অনেকটাই চলে যাবে
- জ্বর হলে আমরা না খেয়ে থাকি এরকম ভুল কেউ করবেন না
- বেঁচে থাকতে আমাদের খাদ্যের প্রয়োজন হয় যখন জ্বর আসলে আমরা খাদ্য খাওয়া একদম বন্ধ করে দেই তখন আমাদের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা কমে যায় কারণ খাদ্যই আমাদের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে।
- আর যখন আমরা খাদ্য খাওয়া বন্ধ করে দেই তখনই প্রকৃত ক্ষমতা কমে যায়।
- আপনার জ্বর আসলে কিছুটা হলে খাবার চেষ্টা করুন।
- লেবু খোসা সহ খাবেন তাহলে মুখের তিতা তিতা ভাব চলে যাবে।
- এবং প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।
- ভুল করে এন্টিবায়োটিক ব্যবহার থেকে বিরতি থাকুন।
(৩) জ্বরের পর দ্রুত মুখের স্বাদ ফিরিয়ে আনতে কিছু করণীয়
- লবঙ্গ আর দারুচিনি গুঁড়া করে সেই গুঁড়া ১ চামচ করে মুখে রাখুন। মুখের তিতকুটে ভাব কেটে যাবে। মুখে শুধু লবঙ্গ রেখে চিবালেও উপকার পাওয়া যাবে।
- এক গ্লাস পানিতে ১ চামচ লবণ দিয়ে কুলিকুচি করতে পারেন। এতে মুখের ব্যাকরেটিয়া মরে গিয়ে তিতকুটে ভাব কেটে যাবে।
- মুখের স্বাদ ফেরাতে পুদিনা পাতা অত্যন্ত কার্যকর। মুখে দু’ একটা পুদিনা পাতা রেখে দেখুন, মুখের তিতা ভাব কমে যাবে।
- জ্বরের পর লেবু জাতীয় ফল যেমন শরীরের জন্য উপকারী, তেমনই মুখের স্বাদ ফেরাতেও অত্যন্ত কার্যকরী। জ্বরের পর মুখের রুচি ফেরাতে জাম্বুরা, মোসাম্বি, কমলা জাতীয় ফল খেতে পারেন।
- জ্বরের পর দিনে অন্তত ৭ থেকে ৮ গ্লাস পানি পান করুন। পানি পাকস্থলী থেকে টক্সিক অ্যাসিড পরিষ্কার করে মুখ আর জিভের তিতকুটে ভাব কাটাতে সাহায্য করে।
- মুখের তিতকুটে ভাব কাটাতে সবার আগে মুখের ভিতরে জমে থাকা ব্যাকটেরিয়া দূর করা প্রয়োজন। তাই জ্বরের পর দিনে অন্তত ২ বার ভাল করে দাঁত মাজুন।এতে জিভ আর মাড়ি পরিষ্কার থাকবে।
- বেকিং সোডা মুখের ব্যাকটেরিয়া দূর করতে অত্যন্ত কার্যকর। টুথপেস্টের সঙ্গে সামান্য বেকিং সোডা মিশিয়ে সেটা দিয়ে দাঁত মাজুন।অথবা সামান্য পরিমাণে বেকিং সোডা আধা গ্লাস পানিতে গুলিয়ে সেই পানি দিয়ে কুলকুচিও করতে পারেন। এতেও উপকার পাওয়া যাবে।
মানব শরীর ও স্বাস্থ্য সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট স্বাস্থ্য’ (inbangla.net/sastho) এর সাথেই থাকুন।