Skip to content

নামাজের নিষিদ্ধ সময়

নামাজের নিষিদ্ধ সময়

ইসলাম সময় ব্যবস্থাপনার ওপর অত্যন্ত গুরুত্বারোপ করে। ইসলামে অনেক ইবাদাত ও আনুষ্ঠানিকতা রয়েছে যা সরাসরি সময়ের সাথে সম্পর্কিত এবং সেগুলো নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যেই পালন করতে হয়। ইসলামের অন্যতম মৌলিক ভিত্তি এবং অপরিহার্য ইবাদাত-সালাত আদায়ের জন্যও সুনির্দিষ্ট সময়সীমা রয়েছে, এত কিছু নামাজের নিষিদ্ধ সময়ও উল্লেখ করা হয়েছে।

মহানবি (সা.) এর হাদিসে পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ আদায়ের উত্তম সময় সম্পর্কে যেমন নির্দেশনা রয়েছে তেমনি সালাতের নিষিদ্ধ সময় সম্পর্কেও নির্দেশনা রয়েছে।

একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের অবশ্যই জেনে রাখা জরুরি নামাজের নিষিদ্ধ সময়সমূহ কয়টি ও তা কখন, কোন সময় নামাজ পড়া হারাম, আল্লাহর রাসূল (সা.) দিনের কোন কোন সময়ে নামাজ পড়া নিষেধ করে গেছেন।

চলুন জেনে নেওয়া যাক।

(১) নামাজের নিষিদ্ধ সময়সমূহ কয়টি ও তা কখন?

কোন সময় নামাজ পড়া হারাম? দিনের কোন কোন সময় নামাজ পড়া নিষেধ নিচে তার তালিকা দেওয়া হলো।

সালাতের নিষিদ্ধ সময় ৩টি। যথা-

  1. ঠিক সূর্যোদয়ের সময়: যতক্ষণ না সূর্যো পুরোপুরি উঁচু হয়ে যায়।
  2. ঠিক দ্বিপ্রহরের সময়: সূর্য মধ্যাকাশে অবস্থানের সময় থেকে শুরু করে তা পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়া পর্যন্ত। 
  3. সূর্যাস্তের সময়: সূর্য অস্ত যাওয়ার পূর্ব মুহূর্তে তা হলুদাভ হওয়া থেকে শুরু করে যতক্ষণ না তা পুরোপুরি অস্ত যায়।
See also
ওযু করার নিয়ম

এ তিনটি সময়গুলোতে সাধারণত সালাত আদায় করা নিষেধ। জানাজার নামাজ এবং মৃতকে দাফন করাও নিষেধ।

এ নিষিদ্ধ সময় প্রসঙ্গে সাহাবি উকবা ইবনে আমের জুহানী (রা.) বলেন,

“তিনটি সময়ে রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদেরকে সালাত আদায় করতে এবং মৃতদের দাফন করতে নিষেধ করতেন। সূর্য উদয়ের সময়; যতক্ষণ না তা পুরোপুরি উঁচু হয়ে যায়। সূর্য মধ্যাকাশে অবস্থানের সময় থেকে শুরু করে তা পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়া পর্যন্ত। এবং সূর্য অস্ত যাওয়ার পূর্ব মুহূর্তে তা হলুদাভ হওয়া থেকে শুরু করে যতক্ষণ না তা পুরোপুরি অস্ত যায়।”

(বুখারি ও মুসলিম)

মহানবী সা. বলেন,

“আসরের নামাজের পর সূর্য না ডোবা পর্যন্ত আর কোনও নামাজ নেই। ফজরের নামাজের পর সূর্য না ওঠা পর্যন্ত আর কোন নামাজ নেই।”

(বুখারি ও মুসলিম)

(২) নামাজের নিষিদ্ধ সময় সমূহের বিস্তারিত ব্যাখ্যা

নিম্নে কোন সময় নামাজ পড়া হারাম, দিনের কোন কোন সময় নামাজ পড়া নিষেধ সেগুলোর বিস্তারিত বর্ণা করা হলো-

মাওলানা ইউসুফ লুধিয়ানাভী (রহ.) বলেন, এ তিন সময়ে নামাজ তো দূরের কথা এমনকি তিলাওয়াতে সেজদাহ করাও নিষেধ। জানাজার নামাজ এবং মৃতকে দাফন করাও নিষেধ। তবে মৃতকে তাড়াতাড়ি দাফন করার প্রয়োজন হলে জানাজা পড়িয়ে দাফন করার অনুমতি আছে কিন্তু তা মাকরুহ হবে।

ক) ঠিক সূর্যোদয়ের সময়

সুবহে সাদিক হলো শেষ রাতে পূর্ব আকাশে লম্বা আকৃতির যে আলোর রেখার আভাস দেখা যায়। তা দেখা যাওয়ার পর থেকে সূর্য ওঠার বেশ কয়েক মিনিট আগেই ফজরের নামাজ পড়া শেষ করতে হয়।

See also
সাহু সিজদার নিয়ম, সাহু সিজদা কখন দিতে হয়? রাকাত সংখ্যা ও নামাজে ভুল হলে করণীয়

সূর্য উঠার শুরু থেকে হলুদ আলো পুরোপুরি দূর না হওয়া পর্যন্ত সময়টুকুতে সব ধরনের নামাজ পড়া নিষেধ। এক্ষেত্রে ফকিহরা গবেষণা করে দেখেছেন সূর্য উঠার পর হলুদ আলো দূর হতে ১৫-২০ মিনিট সময় লাগে।

অর্থ্যাৎ নামাজের সময়সূচির স্থায়ী ক্যালেন্ডার বা আবহাওয়া অফিস যদি বলে, সকাল ছয়টায় সূর্য উঠবে, তার মানে ৬টা বেজে ১৫-২০ মিনিট পর্যন্ত সব ধরনের নামাজ থেকে বিরত থাকতে হবে।

খ) ঠিক দ্বিপ্রহরের সময়

সূর্য যখন ঠিক মাথার ওপরে থাকে তখনও সব ধরনের নামাজ এবং সেজদা করা নিষেধ। আরবি ভাষায় এ সময়কে ‘জাওয়াল’ বলে।

যখন সূর্য একটু হেলে পড়বে তখন জোহরের ওয়াক্ত শুরু হয়। এ সময় সব ধরনের নামাজ এবং সেজদা করা জায়েজ।

সূর্য মাথার ওপর থেকে হেলে পড়তে বেশি সময় লাগে না। ফকিহরা সতর্কতাবশত সূর্য মাথার ওপরে উঠার পাঁচ মিনিট আগে এবং পাঁচ মিনিট পর পর্যন্ত নামাজ থেকে বিরত থাকতে বলেছেন।

গ) সূর্যাস্তের সময়

সূর্য যখন হলুদ বর্ণ ধারণ করে ডুবতে শুরু করে তখন থেকে সম্পূর্ণ সূর্য ডুব না যাওয়া পর্যন্ত সব ধরনের নামাজ পড়া নিষেধ।

কেউ যদি কারণবশত আসর নামাজ পড়তে ভুলে যায়, তাহলে সূর্য ডুবতে শুরু করার আগে আগে আসরের নামাজের নিয়ত বাঁধলে আর এর মধ্যে সূর্য ডোবা শুরু হয়ে গেলে নামাজ আদায় হয়ে যাবে কিন্তু তা মাকরূহ হবে।

সূর্য সম্পর্ণ ডুবে যাওয়ার সাথে সাথে মাগরিবের নামাজের ওয়াক্ত শুরু হয়।

See also
সালাত শব্দের অর্থ কী, কাকে বলে? সালাতের গুরুত্ব

(৩) নিষিদ্ধ সময়ে নামাজ পড়লে কি হয়?

নামাজের নিষিদ্ধ সময়ে অর্থ্যাৎ সূর্য যখন ওঠে, যখন মাথার ওপর ওঠে এবং যখন ডুবে যায়- এ তিন সময় সূর্য পূজারিরা সূর্যকে সেজদাহ করে। তখন কেউ যদি নামাজ পড়ে তাহলে তাকেও সূর্য পূজারি মনে হতে পারে। এ জন্য এ সময় সব ধরনের নামাজ পড়া এবং সেজদাহ করা ইসলামী শরিয়ত মাকরুহে তাহরিমি তথা নিষেধ মনে করে।

শয়তানের পূজার সঙ্গে যেন সাদৃশ না হয়ে যায়, এই কারণেই রাসুল (সা.) এই সময়গুলোতে নামাজ পড়া থেকে সতর্ক করেছেন। 

নামাজ ইসলামের মূল ভিত্তি। নামাজ ইসলামের দ্বিতীয় স্তম্ভ। ইমান গ্রহণের পরই নামাজের স্থান। মুমিন ও কাফেরের মাঝে বড় পার্থক্য নামাজ। তাই আল্লাহ তায়ালা যেন আমাদের যথা সময়ে নামাজ আদানের তৌফিক দান করেন, এই কামনাই আকের আলোচনা এখানেই ইত টানছি। জাযাকাল্লাহ খায়ের।

Queries discussed: নামাজের নিষিদ্ধ সময় কয়টি, নামাজের নিষিদ্ধ সময় কখন, কোন সময়ে নামাজ পড়া নিষেধ, দিনের কোন কোন সময়ে নামাজ পড়া নিষেধ, নিষিদ্ধ সময়ে নামাজ পড়লে কি হয়।

পবিত্র ইসলাম ধর্ম সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট ইসলাম’ (inbangla.net/islam) এর সাথেই থাকুন।

Leave a Reply

nv-author-image

ইন বাংলা নেট ইসলাম

পবিত্র ইসলাম ধর্ম সম্পর্কিত যা কিছু বাংলাতে।View Author posts