Skip to content

নাশপাতি চাষ পদ্ধতি

নাশপাতি চাষ পদ্ধতি

(১) বাংলাদেশে নাশপাতি চাষ

নাশপাতি মূলত শীতপ্রধান অঞ্চলের ফল। তবে এর কোন কোন প্রজাতি বা জাত অপেক্ষাকৃত উচ্চ তাপমাত্রায়ও জন্মানো যায়।

নাশপাতি
নাশপাতি

এটি বিদেশি ফল হলেও আমাদের বাংলাদেশে কম বেশি সবাই ফলটির সাথে পরিচিত। বিদেশ থেকে প্রতিবছর প্রচুর পরিমাণে নাশপাতি আমদানি করা হয়।

দেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে এ ফলের চাষ করা সম্ভব।

(২) নাশপাতির জাত পরিচিতি

বারি নাশপাতি-১:

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ‘বারি নাশপাতি-১’ নামে নাশপাতির একটি জাত ২০০৩ সালে অবমুক্ত করেছে।

বারি নাশপাতি-১ এর ফল
বারি নাশপাতি-১ এর ফল
  • নিয়মিত ফলদানকারী উচ্চ ফলনশীল জাত।
  • নাশপাতির গাছ খাড়া ও অল্প ঝোপালো।
  • চৈত্র মাসে গাছে ফুল আসে এবং শ্রাবণ-ভাদ্র মাসে ফল আহরণ করা যায়।
  • ফলের গড় ওজন ১৩৫ গ্রাম, আকার ৮.৪০ সেমি ⨉ ৫.৬৩ সেমি।
  • ফল বাদামী রঙের, ফলের উপরিভাগের ত্বক সামান্য খসখসে।
  • শাঁস সাদাটে, খেতে কচকচে ও সুস্বাদু (টিএসএস ১০%)।
  • গাছপ্রতি ফলের সংখ্যা ৬০-৭০টি।
  • জাতটি চট্টগ্রাম ও পার্বত্য জেলাসমূহে চাষ উপযোগী।
  • হেক্টরপ্রতি ফলন ৬-৭ টন।

(২) নাশপাতি চাষ পদ্ধতি বর্ণনা

ক) জলবায়ু ও মাটি

  • সাধারণভাবে নাশপাতিকে শীতপ্রধান অঞ্চলের ফল হিসেবে গণ্য করা হয়। যেকোন ধরনের সুনিষ্কাশিত মাটিতে নাশপাতি চাষ করা যায়। তবে ঊর্বর, সুনিষ্কাশিত দোআঁশ মাটি উত্তম।
  • নাশপাতি চাষের জন্য সূর্যালোক প্রয়োজন। শুষ্ক গরম বায়ু নাশপাতির জন্য ক্ষতিকর।
  • মাটির পিএইচ মান ৫.৫-৭.৫ উত্তম।
  • নাশপাতি গাছ লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে না।

খ) বংশ বিস্তার

  • স্টেম কাটিং বা শাখা কর্তন ও গুটি কলমের মাধ্যমে নাশপাতির বংশ বিস্তার করা যায়।
  • বর্ষাকাল কলম করার উপযুক্ত সময়।
  • এক বছর বয়স্ক পেন্সিল আকৃতির ডাল কলমের জন্য নির্বাচন করা হয়।
  • ছিদ্রযুক্ত পলিথিনে কলম স্থাপন করে নার্সারিতে ঝাঝরী দিয়ে পানি দেয়াসহ প্রয়োজনীয় পরিচর্যা করলে এক বছরের মধ্যে চারা রোপণের উপযোগী হয়।

গ) জমি তৈরি

  1. সুনিষ্কাশিত উঁচু জমি যেখানে কখনই পানি দাঁড়ায় না নাশপাতির জন্য এরকম জমি উত্তম।
  2. পাহাড়ের হালকা ঢালু জমিতে নাশপাতি ভাল জন্মে।
  3. জমি গভীরভাবে চাষ দিয়ে আগাছা ভালভাবে পরিষ্কার করে জমি তৈরি করতে হয়।
  4. চারা রোপণ করার জন্য ৭৫ ⨉ ৭৫ ⨉ ৭৫ সেমি আকারের গর্ত করে প্রতি গর্তে ১৫ কেজি পচা গোবর, ২৫০ গ্রাম টিএসপি, ২০০ গ্রাম এমওপি ও ২০ গ্রাম বরিক এসিড মিশ্রিত করে ১৫/২০ দিন রেখে দিয়ে তারপর চারা লাগাতে হবে।

ঘ) রোপণ ও পরিচর্যা

  • সাধারণত সমতল ভূমিতে বর্গাকার এবং পাহাড়ের ঢালে কন্টুর রোপণ পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়।
  • জুন থেকে অক্টোবর মাস পর্যস্ত নাশপাতির চারা লাগানোর উত্তম সময়। তবে সেচ সুবিধা থাকলে সারা বছরই চারা লাগানো যায়।
  • সারি থেকে সারি এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব ৪ মিটার। এ হিসেবে প্রতি হেক্টর জমিতে ৬২৫টি চারা দরকার হয়।
  • মাদা তৈরি করার পর তাতে ১৫-২০ দিন পর চারা বা কলম লাগাতে হয়।
  • গর্তের ঠিক মাঝখানে চারা লাগাতে হবে তারপর খুঁটি দিয়ে চারাটি বেঁধে দিতে হবে যাতে হেলে না পড়ে।
  • চারা লাগানোর পর চারার গোড়ায় ঝাঝরী দিয়ে পানি দিতে হবে।
  • প্রয়োজনে বেড়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

ঙ) সার প্রয়োগ

বয়স অনুপাতে গাছপ্রতি সারের পরিমাণ:

গাছের বয়সপচা গোবর (কেজি)ইউরিয়া (গ্রাম)টিএসপি (গ্রাম)এমওপি (গ্রাম)বরিক এসিড (গ্রাম)
১-২ বছর১০২০০২৫০২০০২০
৩-৫ বছর১৫৫০০৪০০৪০০৩০
৬-৯ বছর২০৭৫০৫০০৬০০৪০
১০ বছর ও তদুর্ধ্ব৩০১০০০৭৫০৮০০৪০

প্রয়োগ পদ্ধতি:

  1. উল্লিখিত সার সমান দুই ভাগ করে বর্ষার আগে একভাগ ও বর্ষার পর বাকি একভাগ প্রয়োগ করতে হবে।
  2. সার প্রয়োগ করার সময় ঠিক মধ্য দুপুরে গাছের ছায়া গোড়ার চারদিকে যতটুকু জায়গায় বিস্তৃত হয় এবং গাছের গোড়া থেকে ০.৫ থেকে ১.০ মিটার জায়গা খালি রেখে সেই পরিমাণ জায়গায় ছিটিয়ে কোদাল দিয়ে হালকা করে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।
  3. পাহাড়ের ঢাল বেশি হলে ঢালের উপরের দিকে গাছের গোড়া থেকে ৪০ সেমি দূরে ১ মিটার এর মধ্যে চোখা মাথা খুঁটির সাহায্যে গর্ত করে সার প্রয়োগ করে গর্তের মুখ মাটি দিয়ে বন্ধ করে দিতে হবে।
  4. সার প্রয়োগ করার পর প্রয়োজনে সেচ দিতে হবে।

চ) আগাছা দমন

গাছের পর্যাপ্ত বৃদ্ধি ও ফলনের জন্য সবসময় জমি পরিষ্কার বা আগাছামুক্ত রাখতে হবে। বিশেষ করে গাছের গোড়া থেকে চারদিকে ১ মিটার পর্যস্ত জায়গা সবসময় আগাছামুক্ত রাখতে হবে।

ছ) সেচ ও নিষ্কাশন

  • চারা রোপণের পর ঝরনা দিয়ে বেশ কিছু দিন পর্যস্ত সেচ দিতে হয়।
  • সর্বোচ্চ ফলনের জন্য ফুল আসা ও ফলের বিকাশের সময় মাটিতে পর্যাপ্ত আর্দ্রতা থাকা আবশ্যক। এ জন্য খরা মৌসুমে সেচ দেয়া প্রয়োজন।
  • বর্ষাকালে গাছের গোড়ায় যাতে পানি জমতে না পারে সে জন্য নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে।

জ) ডাল ছাঁটাইকরণ

  • গাছের উচ্চতা ৪০-৫০ সেমি হলে ডগা ভেঙ্গে দিতে হবে। পরের বছর পার্শ্ব শাখা ২০-২৫ সেমি রেখে কেটে দিতে হবে।
  • গাছের গোড়ার দিকে জল/শোষক শাখা বের হলে কেটে ফেলতে হবে।
  • গাছ বড় হলে ডালগুলো ভূমির দিকে বাঁকা করে দিলে বেশি ফলন পাওয়া যায়।

ঝ) ডাল নুয়ে দেয়া

নাশপাতির খাড়া ডালে নতুন শাখা ও ফল কম হয়। এ জন্য খাড়া ডাল ওজন অথবা টানার সাহায্যে নুয়ে দিলে প্রচুর সংখ্যক নতুন শাখা গজায়। এতে ফলন ও ফলের গুণগত মান বৃদ্ধি পায়।

ঞ) ফল সংগ্রহ ও ফলন

  • মার্চ-এপ্রিল মাসে গাছে ফুল আসে। জুলাই মাসের শেষ পক্ষে ফল সংগ্রহের উপযুক্ত সময়।
  • ফল অতি সাবধানে সংগ্রহ করা প্রয়োজন যাতে মাটিতে না পড়ে। কারণ আঘাতপ্রাপ্ত ফল সংরক্ষণ করা যায় না।
  • ফল সংগ্রহের পর সংরক্ষণের জন্য ভালভাবে বাছাই করা দরকার যাতে কোনরূপ ত্রুটিযুক্ত ফল না থাকে। তারপর কাগজ বা কাঠের বাক্সে করে বাজারজাত করা উত্তম। এভাবে ১০-১২ দিন পর্যস্ত ফল সংরক্ষণ করা যায়।
  • গাছের বয়স ও আকারভেদে নাশপাতির ফলনে তারতম্য ঘটে। একটি পূর্ণ বয়স্ক গাছ থেকে ২০-৪০ কেজি পর্যস্ত ফল সংগ্রহ করা যায়।

বিভিন্ন উদ্ভিদ, গাছ ও ফসল যেমন- বিভিন্ন শস্য, সবজি, ফুল, ফল ইত্যাদি চাষাবাদ সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট চাষাবাদ’ (inbangla.net/casabad) এর সাথেই থাকুন।

অনুরোধ!! পোষ্ট ভালো লাগলে প্লিজ উপরের শেয়ার আইকনে ক্লিক করে পোষ্টটি শেয়ার করে দিন।

Leave a Reply

nv-author-image

ইন বাংলা নেট চাষাবাদ

বিভিন্ন উদ্ভিদ, গাছ ও ফসল যেমন- বিভিন্ন শস্য, সবজি, ফুল, ফল ইত্যাদি চাষাবাদ সম্পর্কিত যা কিছু বাংলাতে।View Author posts