বন্ধুরা, ইন বাংলা নেট ব্লগের আজকের এই পোষ্টটিতে আমরা পদ কাকে বলে? পদ কত প্রকার ও কি কি? কোন পদকে কত ভাগে ভাগ করা যায়? উদাহরণসহ পদের শ্রেণীবিভাগগুলো জানব।
প্রথমেই জানব-
(১) পদ কাকে বলে?
পদ কাকে বলে: বাক্যে ব্যবহৃত বিভক্তযুক্ত শব্দ ও ধাতুকে পদ বলে। এক কথায় বলা যায়, বাক্যে ব্যবহৃত প্রত্যকটি শব্দই একেকটি পদ। যেমন- মানুষ, তাঁরা, জন্য, আকাশ ইত্যাদি।
আরও সহজে বললে, অর্থযুক্ত বাক্যের প্রতিটি শব্দকেই পদ বলে। যেমন- রহিম আমাকে চেনেন। এখানে রহিম বিশেষ্য পদ। আমাকে সর্বনাম পদ এবং চেনেন হলো ক্রিয়াপদ।
(২) পদ কত প্রকার ও কি কি?

পদ কত প্রকার ও কি কি: পদ প্রধানত ২ প্রকার। যথা-
১। সব্যয় পদ: যে পদ পুরুষ বচন লিঙ্গ বিভক্তি ভেদে পরিবর্তনীয় তাকে সব্যয় পদ বলে। অথবা যে পদগুলির পদান্তর সম্ভব সেগুলিকেই সব্যয় পদ বলে।
২। অব্যয় পদ: যে পদের কোনো ব্যয় নেই , তাকে অব্যয় পদ বলে। যেমন : এবং, ও, বা, অথবা, নতুবা, যেহেতু, কিন্তু, অথচ ইত্যাদি।
সব্যয় পদ আবার ৪ প্রকার। যথা-
১। বিশেষ্য: যে পদের দ্বারা নাম বোঝায়, তাকে বিশেষ্য পদ বলে। যেমন : শ্যামল, পাখি, ঝাঁক, ডাল, সৎ।
২। বিশেষণ: যে সকল পদ বিশেষ্য বা সর্বনামে র দোষ, গুণ সংখ্যা, পরিমাপ ইত্যাদি বোঝায়, তাদেরকে বিশেষণ পদ বলে। যেমন : ভাল, মন্দ, দশ, কেজি, সের, মহৎ, বৃহৎ ইত্যাদি।
৩। সর্বনাম: যে পদ বিশেষ্যের পরিবর্তে বসে , তাকে সর্বনাম পদ বলে। যেমন : আমি, তুমি, সে, তিনি, যিনি ইত্যাদি।
৪। ক্রিয়া: কোনো কিছু করার জন্য যে পদ ব্যবহৃত হয়, তাকে ক্রিয়া পদ বলে। যেমন : লেখা , পড়া, শোনা, দেখা, বসা ইত্যাদি।
(৩) বিশেষ্য পদ
ক) বিশেষ্য পদ কি?
বাক্যমধ্যে ব্যবহৃত যে সমস্ত পদ দ্বারা কোন ব্যাক্তি, বস্তু,স্থান, জাতি, কাল, ভাব ইত্যাদি নাম বোঝানো হয়, তাদের বিশেষ্য পদ বলে। ইফাদ, ঢাকা, নদী,গীতাঞ্জলি, চাল ইত্যাদি।
খ) বিশেষ্য পদের শ্রেনীবিভাগ
বিশেষ্য পদকে ৬ ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
- সংজ্ঞাবাচক বিশেষ্য পদ – কলকাতা, সুভাষ, নজরুল, গঙ্গা, বাইবেল, রামায়ণ।
- বস্তুবাচক বিশেষ্য পদ – মাটি, কাগজ, জল, দুধ, চিনি, সোনা, রূপা।
- জাতিবাচক বিশেষ্য পদ – বাঙালি, হিন্দু, বৌদ্ধ, মুসলমান।
- সমষ্টিবাচক বিশেষ্য পদ – সভা, জনতা, সমিতি, বাহিনী, দল।
- গুণবাচক বিশেষ্য পদ – সততা, সাধুতা, মহত্ব, দয়া, শৈশব।
- ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য পদ – দর্শন, ভোজন, শয়ন, গমন।
(৪) বিশেষণ পদ
ক) বিশেষণ পদ কি?
যে পদ দ্বারা বিশেষ্য, সর্বনাম ও ক্রিয়াপদের দোষ, গুণ,অবস্থা, সংখ্যা,পরিমাণ ইত্যাদি প্রকাশ করে, তাকে বিশেষণ পদ বলে। যেমন- নীল আকাশ। দক্ষ কারিগর। বেলে মাটি।
খ) বিশেষণ পদের শ্রেনীবিভাগ
বিশেষণ পদকে ৫ ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন-
- বিশেষ্যের বিশেষণ – অনেক, প্রচুর, ভালো, মন্দ প্রভৃতি।
- সর্বনামের বিশেষণ – সে খুব চালাক। তিনি বড়ো হত।
- বিশেষণের বিশেষণ – খুব গরম, খুব ঠান্ডা, বড়ো ভালো।
- অব্যয়ের বিশেষণ – ঠিক ওপরে, শতাধিক, শত ধিক, ঠিক নীচে।
- ক্রিয়ার বিশেষণ – তাড়াতাড়ি দ্রুত হাঁটে, আমরা এখন খেলব।
(৫) সর্বনাম পদ
ক) সর্বনাম পদ কি?
বিশেষ্যের পরিবর্তে যে শব্দ ব্যবহৃত হয় তাকে সর্বনাম পদ বলে। যেমন- আমি, আমরা, ঐ, কেহ, অন্য, পর, আমি, তুমি, সে, তিনি, যিনি ইত্যাদি।
খ) সর্বনাম পদের শ্রেনীবিভাগ
সর্বনাম পদ সমূহকে নিম্নলিখিত ১০টি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
- ব্যক্তি বা পুরুষবাচক – তুমি, তোমরা সে, আমি, আমরা, তিনি, তারা, তাঁরা, এ, এরা।
- আত্মবাচক – স্বয়ং, নিজে, খোদ, আপনি।
- সামীপ্যবাচক – এ, এই, ইহাৱা, ইনি ইত্যাদি।
- দূরত্ববাচক – ঐ, ঐসব, সব।
- সাকল্যবাচক – সব, সকল, সমুদয়, তাবৎ।
- প্রশ্নবাচক – কি, কী, কে, কিসে, কোন, কার, কাহার।
- অনির্দিষ্টভাজ্ঞাপক – কেউ, কোন, কিছু, কেহ।
- ব্যতিহারিক – আপনা আপনি নিজে নিজে পরস্পর ইত্যাদি।
- সংযোগজ্ঞাপক – যে, যিনি, যাঁরা, যারা, যাহারা ইত্যাদি।
- অন্যাদিবাচক – অন্য, অপর, পর ইত্যাদি।
(৬) ক্রিয়া পদ
ক) ক্রিয়া পদ কি?
যার দ্বারা কোন কার্য সম্পাদন করা বোঝায়, তাকে ক্রিয়া বলে। যেমন- খাই, যাই,খান ইত্যাদি।
খ) ক্রিয়া পদের শ্রেনীবিভাগ
ক্রিয়া পদকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যেতে পারে।
আমাদের ভাব প্রকাশের দিক থেকে ক্রিয়া পদকে ২ ভাগে বিভক্ত করা যায়। যথা-
- সমাপিকা ক্রিয়া: যে সব ক্রিয়া পদের দ্বারা সম্পূর্ণরূপে মনের ভাব প্রকাশিত বা উল্লেখিত হয়, তাকে সমাপিকা ক্রিয়া বলে। যেমন – আমি ভাত খাই। সে স্কুলে যায়।
- অসমাপিকা ক্রিয়া: যে ক্রিয়াপদের দ্বারা মনের ভাব সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ পায় না, তাকে অসমাপিকা ক্রিয়া বলে। যেমন – কমলা স্কুল থেকে ফিরে খেলতে গেল। টুম্পা সকাল বেলা পড়তে বসল। ওপরের দুটি বাক্যে ‘ফিরে’ এবং ‘পড়তে’ ক্রিয়াপদ দুটির দ্বারা মনের ভাব সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ পায় না, তাই এই দুটি অসমাপিকা ক্রিয়া।
সমাপিকা ও অসমাপিকা ক্রিয়া ছাড়াও বিবিধ অর্থে ক্রিয়াকে ৬টি শ্রেনীতে বিভক্ত করা যায়। যেমন-
- সকর্মক ক্রিয়া
- অকর্মক ক্রিয়া
- দ্বিকর্মক ক্রিয়া
- প্রযোজক ক্রিয়া
- যৌগিক ক্রিয়া
- মিশ্র ক্রিয়া
(৭) অব্যয় পদ
ক) অব্যয় পদ কি
ন + ব্যয় = অব্যয়। যার ব্যয় বা পরিবর্তন হয় না, অর্থাৎ, যা অপরিবর্তনীয় শব্দ তাই অব্যয়।
যে পদ সর্বদা অপরিবর্তনীয় থেকে কখনো বাক্যের শোভাবর্ধন করে,কখনো একাধিক পদের, বাক্যাংশের বা বাক্যের সংযোগ বা বিয়োগ সম্বদ্ধ ঘটায়, তাকে অব্যয় পদ বলে। যেমন- আর, আবার, ও, এবং,কিন্তু ইত্যাদি।
খ) অব্যয় পদের শ্রেণীবিভাগ
অব্যয় পদ প্রধানত ৩ ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
- পদান্বয়ী অব্যয়
- অনন্বয়ী অব্যয়
- বাক্যান্বয়ী বা সমুচ্চয়ী অব্যয়
i) পদান্বয়ী অব্যয়
যে অব্যয় পদ বাক্যের মধ্যে ব্যবহৃত হয়ে এক পদের সঙ্গে অন্য পদকে সংযুক্ত করে, তাকে পদান্বয়ী অব্যয় বলে। যেমন- দুঃখ ছাড়া সুখ লাভ হয় না। তরুণ ও সুরেন আজ ক্রিকেট খেলবে। বাড়িতে আপনার কিন্তু আসা চাই।
ওপরে উল্লেখিত বাক্য তিনটিতে ছাড়া, ও, কিন্তু এই অব্যয় গুলি বাক্যের মধ্যে বসে একটি পদের সঙ্গে অন্য একটি পদকে যুক্ত করেছে। অতএব এগুলো পদান্বয়ী অব্যয়।
ii) অনন্বয়ী অব্যয়
যে অব্যয় পদের সঙ্গে বাক্যের অন্যান্য পদের কোনো সম্বন্ধ থাকে না, তাকে অনন্বয়ী অব্যয় বলে। যেমন- বাহ! কী সুন্দর দৃশ্য! হায়! আমার কপালে কি এই ছিল। মা আমাকে আশীর্বাদ করো।
এখানে বাহ, হায়, মা—এই তিনটি পদ বাক্যের বাইরে বসে প্রশংসা, খেদ, সম্বোধন ইত্যাদি বুঝিয়েছে। এই পদগুলির দ্বারা মনের বিশেষ ভাব প্রকাশ পেয়েছে। কিন্তু সবকটি ক্ষেত্রেই মূল বাক্যের সঙ্গে এদের কোনো সম্বন্ধ নেই।
iii) বাক্যান্বয়ী বা সমুচ্চয়ী অব্যয়
যে অব্যয়, বাক্যে অন্বয় বা সম্বন্ধ তৈরি করে তাদের বাক্যান্বয়ী অব্যয় বলে।
বাক্যাম্বয়ী অব্যয় ৬ শ্রেণিতে বিভক্ত করা যায়। যথা-
- সংযোজক অব্যয়
- বিয়োজক অব্যয়
- সংকোচক অব্যয়
- হেতুবাচক অব্যয়
- সিদ্ধান্তবাচক অব্যয়
- নিত্য সম্বন্ধীয় অব্যয়
এই ছিল পদ কাকে বলে? পদ কত প্রকার ও কি কি? উদাহরণসহ পদের শ্রেণীবিভাগ এর বিস্তারিত বর্ণনা। পোষ্টটি থেকে আপনি উপকৃত হলে অবশ্যই কমেন্ট করে জনাবেন এবং আপনার অন্যন্যা সহপাঠী ও বন্ধুদের সাথে পোষ্টটি শেয়ার করে দিবেন। ধন্যবাদ।
শিক্ষা ও লেখাপড়া সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট শিক্ষা’ (inbangla.net/sikkha) এর সাথেই থাকুন।