Skip to content

 

পুইশাক চাষ পদ্ধতি
আলোচ্য বিষয়:

পুইশাক বাংলাদেশের পাতা জাতীয় সবজির মধ্যে অন্যতম ৷ পুইশাক খরিফ মৌসুমের প্রধান সবজি হিসাবে সমাদৃত শাক।

এ শাকে প্রচুর পরিমান ক্যালসিয়াম, আয়রন এবং ক্যারোটিন রয়েছে। এ ছাড়াও এটি আশ জাতীয় সবজির মধ্যে অন্যতম বিধায় কোলন ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়ক।

এ জনপ্রিয় শাকের পাতা, ডাটা এবং বীজ ভাজি, ভর্তা ও মাছের সাথে রান্না করে খাওয়া যায়।

পুঁইশাক বছরের যে কোন সময় (তীব্র শীত ছাড়া) চাষ করা যায় তবে মার্চ-এপ্রিল মাসে বীজ বপন বা চারা রোপনের উপযুক্ত সময়।

বপন বা চারা রোপনের পর প্রায় পরবর্তী সাত আট মাস যাবৎ সংগ্রহ করে খাওয়া যায়। দীর্ঘ সময় পর্যায়ক্রমিক সংগ্রহ করা যায় বলে বসতবাড়ীতে এর চাষ খুব সমাদৃত।

(১) পুইশাকের জাতসমূহ ও তাদের বৈশিষ্ট্য

ক) বারি পুইশাক-১

বারি পুঁইশাক-১
বারি পুঁইশাক-১
  • চারা অবস্থায় পুরো গাছটাই সবুজ থাকে।
  • বয়স বাড়ার সাথে সাথে কাণ্ড এবং পাতার শিরা হালকা বেগুনী বর্ণের হয়।
  • পাতা বড়, নরম ও সবুজ বর্ণের হয়।
  • অধিক শাখা-প্রশাখা যুক্ত, ঘন ঘন সংগ্রহোপযোগী উচ্চ ফলনশীল জাত।
  • খরিফ মৌসুমে বাংলাদেশের সর্বত্র চাষের উপযোগী। চৈত্র-ভাদ্র মাসে রোপণ করা যায়।
  • বপন থেকে সংগ্রহ পর্যন্ত জীবনকাল ৫০-৯০ দিন।
  • ফলন ৪৫-৫০ টন/হেক্টর।
  • এ জাতটি আংশিক ছায়া ও লবণাক্ততা প্রতিরোধী।

খ) বারি পুইশাক-২

এই জাতটি স্থানীয়ভাবে সংগৃহীত এবং নির্বাচনের মাধ্যমে উদ্ভাবিত।

বারি পুঁইশাক-২
বারি পুঁইশাক-২
  • চারা অবস্থায় পুরো গাছ সবুজ রঙের থাকে।
  • পাতা বড়, নরম ও সবুজ বর্ণের হয়।
  • মধ্যম শাখা-প্রশাখাযুক্ত, কাণ্ডটি (শাখা) বেশ মোটা ও মাংসল এবং ঘন ঘন পাতা সংগ্রহপযোগী উচ্চ ফলনশীল জাত।
  • খরিফ মৌসুমে বাংলাদেশের সর্বত্র চাষের উপযোগী। চৈত্র-ভাদ্র মাসে সরাসরি বীজ বপন ও চারা উত্তোলনের মাধ্যমে চাষ করা যায়।
  • বপন থেকে সংগ্রহ পর্যন্ত জীবনকাল ৬০-৯০ দিন।
  • ফলন ৫৮-৬০ টন/হেক্টর।
  • জাতটি আংশিক ছায়া ও লবণাক্ততা প্রতিরোধী।
  • পাতসহ কাণ্ড কেটে ভক্ষণ ও বাজারে বিক্রি করা যায়।

(২) পুইশাক চাষ পদ্ধতি ধারাবাহিক ও কবস্তারিত বর্ণনা

ক) মাটি ও জলবায়ু

  • সব ধরনের মাটিতেই পুঁইশাক জন্মে তবে সুনিস্কাশিত দোঁ-আশ ও বেলে দোঁয়াশ মাটি ভাল ফলনের জন্য উপযুক্ত।
  • ফসলের অঙ্গজ বৃদ্ধি ও প্রজনন পর্যায়ের জন্য তাপমাত্রা যথেষ্ট প্রভাব ফেলে। এ সবজির অঙ্গজ বৃদ্ধির জন্য উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু প্রয়োজন। আবার প্রজনন ধাপের জন্য নিম্ন তাপমাত্রা সম্বলিত জলবায়ু অত্যাবশ্যক।
  • কারণ পুঁইশাক যখনই বপন করা হউক না কেন শীতের প্রভাব না পেলে পুস্পায়ন ঘটে না। তাই নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে ফুল আসতে দেখা যায়।

খ) জাত নির্বাচন

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনষ্টিটিউট এর সবজি বিজ্ঞানীগণ নিরলস প্রচেষ্টার মাধ্যমে পুঁইশাকের দুটি জাত উদ্ভাবন করেছেন। এ জাত দুটি বারি পুঁইশাক ১ (চিত্রা) এবং বারি পুঁইশাক ২ নামে যথাক্রমে ১৯৯৯ ও ২০০৫ সালে জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক অনুমোদন পুর্বক দেশের সর্বত্র চাষের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। জাত দুইটির বৈশিষ্ট ও চাষ পদ্ধতি নিম্নে উল্লেখ করা হলো।

  • বারি পুঁই শাক-১ (চিত্রা): চারা অবস্থায় পুরো গাছটাই সবুজ। বয়ো:বৃদ্ধির সাথে সাথে কান্ড এবং পাতার শিরা হালকা বেগুনী বর্ন ধারন করে। পাতা মধ্যম আকারের, নরম ও সবুজ বর্ণের হয়। অধিক প্রশাখা যুক্ত, ঘন ঘন সংগ্রহপোযোগী উচ্চফলনশীল জাত।
  • বারি পুঁইশাক-২: চারা অবস্থায় সবুজ থাকে। বয়ো:বৃদ্ধির সাথে সাথে কান্ড কিছুটা বেগুনী হয়। বারি পুঁই শাক -১ এর চেয়ে পাতা প্রসস্ত ও পুরু এবং কান্ডও তুলনামুলক ভাবে মোটা। বার বার কান্ড ও পাতা সংগ্রহোপোযোগী উচ্চফলনশীল জাত।
See also  গীমাকলমি শাকের জাত ও চাষ পদ্ধতি

গ) জীবন কাল

  • একক গাছ সংগ্রহের ক্ষেত্রে বপন থেকে ৩৫-৪০ দিন (সরাসরি মাঠে বপনকৃত)।
  • ঘন ঘন কান্ড কর্তন পূর্বক সংগ্রহের ক্ষেত্রে (মাচায়) বপন থেকে ৭০-১৮০ দিন।
  • ঘন ঘন কান্ড কর্তন পূর্বক সংগ্রহের ক্ষেত্রে (বেডে/মাঠে) বপন থেকে ৫০-১৬০ দিন।
  • বীজ উৎপাদনের ক্ষেত্রে বপন থেকে ১৯০-২১০ দিন।

ঘ) বীজ বপনের সময়

সবজি উৎপাদনের জন্য ফেব্রুয়ারী থেকে মে মাস পর্যন্ত এবং বীজ উৎপাদনের জন্য মে-জুন মাসে বীজ বপন করা যায়।

ঙ) বীজের হার

চারা তৈরির ক্ষেত্রে ২.০-২.৫ কেজি/হেক্টর এবং সরাসরি বপন পদ্ধতিতে ৩.০-৩.৫ কেজি/হেক্টর।

চ) চারা উৎপাদন

  • চারা-বীজ তলায় বা পলিব্যাগে তৈরি করে নেয়া যায়। তবে বাণিজ্যিক ভাবে চারা উৎপাদনের জন্য বীজতলায় চারা তৈরি করে নেয়া উত্তম।
  • এ ক্ষেত্রে ১.০ মিটার প্রশস্থ এবং ৩.০ মিটার লম্বা বেডে বীজ থেকে বীজ ও সারি থেকে সারিতে ৫.০ সেঃ মিঃ দূরত্বে দুটি করে বীজ বপন করতে হয়।
  • পলিব্যাগে চারা করলে ৬ সে.মি. × ৭ সে.মি. সাইজের পলিব্যাগে ২ টি করে বীজ ১ ইি (২.৫ সে.মি.) গভীরে বপন করতে হয় (সাধারণতঃ ১০০ বর্গ মিটার বীজ তলার চারা ১ হেক্টর জমিতে রোপণ করা যায়)।
  • উল্লেখ্য যে, চারা উৎপাদনের সময় নিয়মিত পানি সেচ দিতে হবে। বীজতলার মাটি শক্ত হয়ে গেলে মাটির চটা ভেঙ্গে দিতে হবে তাতে চারা মরে যাওয়ার বা রোগ হওয়ার প্রবণতা হ্রাস পাবে।
  • চারার বয়স যখন ২০-২৫ দিন হয় তখন মূল জমিতে চারা রোপণ করা যায় বা মাচায় উৎপাদনের জন্য মাদায় রোপন করা যায়।

ছ) জমি তৈরী

  • জমি খুব ভালভাবে চাষও মই দিয়ে তৈরি করতে হবে। মাটি ও জমির প্রকার ভেদে গভীর ভাবে ৪-৬ টি চাষ ও মই দেয়ার প্রয়োজন হতে পারে।
  • শেষ চাষের সময় অনুমোদিত মাত্রার সার প্রয়োগের পর বীজ বপন/চারা রোপনের জন্য বেড তৈরী করতে হবে যা নিম্নরূপ।

জ) সার প্রয়োগের পরিমাণ

সারের নামপরিমান/হেক্টর
গোবর১০-১২ টন
ইউরিয়া১৬৫-১৮৫ কেজি
টিএসপি১১০-১২০ কেজি
এমওপি১১০-১২০ কেজি

ঝ) সার প্রয়োগ পদ্ধতি

  • জমি প্রস্তুতের সময় অর্ধেক গোবর সার প্রয়োগ করতে হবে। বাকি অর্ধেক গোবর এবং সম্পুর্ণ টিএসপি সার গর্তে প্রয়োগ করতে হবে।
  • একক গাছ সংগ্রহের ক্ষেত্রে ইউরিয়া ও এমওপি সার সমান ২ ভাগে ভাগ করে চারা লাগানোর ৭-১০ দিন পর ১ম কিস্তি এবং ২৫ দিন পর ২য় কিস্তি প্রয়োগ করতে হবে।
  • ঘন ঘন কান্ড কর্তন পূর্বক সংগ্রহের ক্ষেত্রে প্রত্যেকবার ডগা কর্তনের পর পরিমানমত ইউরিয়া ও এমওপি সার প্রয়োগ করতে হবে।
  • আর যদি মাচায় চাষ করে ৭-৮ মাস ব্যাপী ফসল সংগ্রহ করা হয় সে ক্ষেত্রে প্রতিবারই ডগা কাটার পর অল্প পরিমান ইউরিয়া ও এমপি সার প্রয়োগ করতে হবে।

(পুঁই শাকের ডগা প্রথমবার কর্তনের পর (রোপন বা চারা লাগানোর ৩০-৩৫ দিন পর) ১৫-২০ দিন পরপর ৭-৮ বার সংগ্রহ করা যায়।)

ঞ) সরাসরি বীজ বপন/চারা রোপনের জন্য বেড তৈরী

বেডের প্রস্থ:১ মিটার
দৈর্ঘ্য:জমির দৈর্ঘ্য অনুযায়ী
উচ্চতা:১০-১৫ সেমি
নালার প্রস্থ:৩০ সেমি
গভীরতা:২০ সেমি
বীজ বপন/রোপণ দূরত্ব:সারি থেকে সারি: ৪৫ সেমি এবং গাছ থেকে গাছ: ৩০-৪৫ সেমি
প্রতি বেডে সারি সংখ্যা:২ টি
বীজ বপনের গভীরতা:২ সেমি
চারা রোপনের গভীরতা:৩ সেমি
প্রতি গর্তে বীজের সংখ্যা:২ টি
শেষে গর্তে চারার সংখ্যা:১ টি (সূস্থ সবল চারা)
  • যেহেতু পুঁই শাকের বীজ সরাসরি বপন অথবা ২৫-৩০ দিনের চারা রোপন করা সম্ভব বলে উপরোক্ত বর্ণনা ও নকশা অনুযায়ী বপন/রোপন করা সম্ভব।
  • আবার একক গাছ উৎপাদন পদ্ধতির সবজি উৎপাদনের ক্ষেত্রে বেডে সারি থেকে সারি এবং গাছ থেকে গাছের দুরত্ব ১৫ সেমি রেখে বীজ সরাসরি বপন করা হয়। এক্ষেত্রে গাছ ১৫ সেমি থেকে ২২ সে.মি. লম্বা হলেই মূলসহ গাছ উঠিয়ে বাজারজাত করা যায়।
  • অন্যদিকে অনেক ক্ষেত্রেই কোথাও কোথাও পূঁইশাক মাচাতে চাষের প্রবনতা লক্ষ্য করা যায়। যেখানে মূলত এ শাকের পাতা ও বীজ সবজি হিসেবে ব্যবহার করে থাকে।
See also  বারি চীনাশাক ও বাটিশাক চাষ পদ্ধতি

ট) সেচ প্রয়োগ

  • বেড ও নালা পদ্ধতিতে পূঁইশাকের জমিতে সেচ দেয়া সুবিধাজনক।
  • বীজ গজানোর পর থেকে ১০ দিন পর পর সেচ দেয়া উচিৎ।
  • যদি খরার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায় তাহলে নিয়মিত ভাবে ৭-১০ দিন পর পর সেচ দিতে হয়। না হলে পূঁইশাকের পাতা আঁশ যুক্ত হয়ে যায় ফলে গুনগতমান, ফলন ও বাজার মূল্য কমতে থাকে।

ঠ) আগাছা দমন গাছের গোড়ায় মাটি দেয়া ও ডগা কাটা

  • প্রয়োজন ও সময়মত আগাছা দমন করা আবশ্যক এবং প্রয়োজনে গাছের গোড়ায় মাটি দিতে হবে।
  • সারের উপরি প্রয়োগ, আগাছা দমন, গাছের গোড়ায় মাটি দেয়ার কাজ করা যেতে পারে।
  • ঘন ঘন ডগা সংগ্রহের ক্ষেত্রে পুঁইশাকের ডগা অবশ্যই কেটে (Pincing) দিতে হবে।
  • রোপন বা চারা লাগানোর পরগাছ যখন ২৫-৩০ সেঃ মিঃ লম্বা হয় তখন গাছের মাথার দিক থেকে ডগা কেটে দিলে গাছের শাখা প্রশাখা বেশী হয়। পূই শাক মাচায় তুলে দিলে মাচা ১.৫ মিটার উচু করলেই চলবে। তবে বীজ উৎপাদন করতে চাইলে নিচের পুরানো পাতাগুলি অবশ্যই কেটে ফেলতে হবে।
  • পরিশেষে বেশী ফলন পাওয়ার জন্য ফসল কাটার পর অনুমোদিত মাত্রায় ইউরিয়া এবং এমপি সার উপরি প্রয়োগ করে একটি হালকা সেচ দিতে হবে।

ড) ফসল সংগ্রহ

  • শাঁক হিসেবে সংগ্রহের জন্য ১০-১২ টি পাতাসহ কচি ডগা প্রথমবার কর্তনের ১৫-২০ দিন পর পর কেটে অথবা ৩০-৩৫ দিন বয়সের সম্পূর্ণ গাছ সংগ্রহ করা যেতে পারে।
  • ফলন: ৫০-৬০ টন/হেক্টর
পুইশাক চাষের পদ্ধতি

(৩) পুইশাক চাষে অনিষ্টকারী পোকামাকড়, রোগ বালাই এবং দমন ব্যবস্থাপনা

পূঁইশাকে তেমন উল্লেখযোগ্য পোকা মাকড়ের আক্রমণ ও রোগ বালাই লক্ষ্য করা যায় না। তবে পাতায় দাগ পড়া রোগ (Cercospora leaf spot) ও কান্ড গোড়া পচা রোগের আক্রমণ দেখা যেতে পারে।

প্রথমোক্ত রোগে পাতায় দাগ পঢ়ে ফলে শাকের গুনগত মান ও বাজার মূল্য কমে যায়। আর শেষোক্ত রোগের কারণে পূঁইশাকের গোড়া পচে যায় ফলে গাছ মরে যেতে পারে।

ক) পুঁই শাকের পাতার দাগ (Cercospora leaf spot) রোগ

দাগ রোগ দ্বারা আক্রান্ত পুঁইশাকের পাতা
দাগ রোগ দ্বারা আক্রান্ত পুঁইশাকের পাতা

রোগের কারন:

Cercospora beticola ছত্রাক।

রোগের লক্ষণ:

  • পাতায় গোলাকার থেকে ডিম্বাকার দাগ পড়ে। দাগের প্রান্তরেখা পারপল থেকে বাদামী বর্ণের বা লালচে রঙের হয়। দাগের মাঝখানটা ধুসর বর্ণের হয়। শেষে দাগের স্থানে পাতায় ছিদ্র বা গর্ত তৈরি হয়।
  • এ রোগের কারনে পাতা বিবর্ণ হয়ে পড়ে, পাতার গঠন নষ্ট হয়ে যায়। ফলে গাছ দূর্বল হয়ে পড়ে এবং সালোকসংশ্লেষন বাধাগ্রস্ত হয়।
  • অনেক সময় আক্রান্ত পাতা বৃদ্ধি না পেয়ে গাছ থেকে খষে পড়ে এবং ফসলের ফলন মাারাত্বকভাবে বিঘ্নিত হয় এবং বাজারমূল্য কমে যায়।

রোগের উপযোগী পরিবেশ:

  • Cercospora জীবাণুটি মাটি ও বীজ বাহিত।
  • এ জীবাণুটি ফসলের অবশিষ্টাংশ এবং মাটিতে এক বছর বেঁচে থাকে। স্পোরগুলো বায়ু দ্বারা এক গাছ থেকে আরেক গাছে, এক যায়গা থেকে আরেক যায়গায় ছড়িয়ে পড়ে।
  • দীর্ঘক্ষন বৃষ্টি হলে, উচ্চ আদ্রতা এবং উচ্চ তাপমাত্রা (২৫ থেকে ৩৫ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড) থাকলে রোগের দ্রুত বিস্তার ঘটে।

রোগ দমন ব্যাবস্থাপনা:

  1. রোগাক্রান্ত ফসলের অবশিষ্টাংশ পুড়িয়ে ফেলা এবং আগাছাসহ বিকল্প পোষক উদ্ভিদকে ধ্বংস করে ফেল।
  2. নিবন্ধিত অথবা রোগমুক্ত গাছ থেবে বীজ সংগ্রহ করে ব্যবহার করা।
  3. বীজ ৫০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রর গরম পানিতে ২০ মিনিট ডুবিয়ে শোধন করা বা কার্বান্ডিজম গ্রুপের ছত্রাকনাশক যেমন অটোষ্টিন বা নোইন এর ২ গ্রাম প্রতিলিটার পানিতে দ্রবীভুত করে সে দ্রবনে বীজ ৩০-৪০ মিনিট ভিজিয়ে শোধন করা।
  4. যে সব ফসল এ ছত্রাক দ্বারা আক্রান্ত হয় না সেসব ফসলের (Chenopodiaceae গোত্র বহির্ভূত) সাথে ২-৩ বছর পর্যন্ত পুঁই শাকের শস্য পর্যায অবলম্বন করা।
  5. ফসলে সেচ দেওয়ার পরে খেয়াল রাখতে হবে যেমন গাছের পাতা যেন দীর্ঘক্ষন বিশেষ করে সারারাত্র ভেজা না থাকে। দিনের পূর্বাহ্নে সেচ কার্য নম্পন্ন করা যাতে রৌদ্রের তাপে গাছের পাতার পানি শুকিয়ে যায়।
See also  পালং শাক চাষের পদ্ধতি

খ) কান্ড গোড়া পচা রোগ

রোগের কারন:

Sclerotium rolfsii ছত্রাক।

রোগের লক্ষণ:

  • মাটির (ভূপৃষ্ঠের) সাথে লেগে থাকা অংশে বা মাটির কাছাকাছি চারার বা গাছের কান্ডে প্রথমে ক্ষুদ্রাকৃতি পানি ভেজা দাগ পড়ে। দাগটি লেশনে পরিনত হয়ে কান্ডের চারিদিক বেষ্টন করে ফেলে।
  • আক্রান্ত স্থানের কোষ/টিস্যু পঁচে যায়। পরবর্তীতে গাছটি ঢলে পড়ে এবং মারা যায়। পঁচা স্থানে মাইসেলিয়াম ও স্কে্লরোশিয়া জন্মে।

রোগের উপযোগী পরিবেশ:

  • জীবাণুটি ও রোগের বিস্তারে তাপমাত্রা ও আদ্রতা (moisture) গুরূত্বপূণ ভূমিকা রাখে। জীবাণুটি ও রোগের বিস্তারের জন্য আদর্শ তাপমাত্রা হচ্ছে ২৭ ডিগ্রি থেকে ৩৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড।
  • স্যাতসেতে মাটিতে জীবণিুটির হাইফার বৃদ্ধি ও স্কে্লরোশিয়ার অঙ্কুরোদগম সহজে ঘটে। উচ্চ বায়ুমন্ডলীয় আদ্রতা (Humidity) (৮০-৯০%) রোগটির বিস্তারে উত্তম সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
  • মাটি স্যাতসেতে হলে ও উচ্চ বায়ুমন্ডলীয় আদ্রতা বিরাজ করলে ২৭-৩০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় পোষক দেহে জীবাণুটির অনুপ্রবেশ ও সংক্রমন অতি সহজে এবং দ্রুত ঘটে।
  • প্রতিকূল পরিবেশে ছত্রাকটি আক্রান্ত গাছ বা ফসল অবশিণ্টাংশে স্কে্লরোশিয়া বা মাইসেলিঢাম এর মাধ্যমে বেঁচে থাকে। মাটিতে স্কে্লরোশিয়া ৩-৪ বছর পর্যন্ত জীবিত থাকে।

রোগ দমন ব্যাবস্থাপনা:

  1. জমি গভীরভাবে এবং উত্তমরূপে চাষ করতে হবে। মাটির ২০-৩০ সে.মি. গভীরে স্কে্লরোশিয়া ৩০-৪৫ দিনের বেশী বাঁচতে পারে না।
  2. প্রতি হেক্টরে ২.০-২.৫ টন হারে চুন প্রয়োগের মাধ্যমে মাটির পিএইচ ৬.৫ তে রাখতে হবে; এ পিএইচ মাত্রায় ছত্রাকের দ্রুত বৃদ্ধি ঘটতে পারে না।
  3. রোগ দেখা দেওয়া মাত্র আক্রান্ত গাছ শিকড়সহ তুলে ধ্বংশ করে ফেলতে হবে।
  4. ফসল সংগ্রহের পর রোগাক্রান্ত ফসলের অবশিষ্টাংশ পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
  5. পানি নিষ্কাশনের ভালো ব্যবস্থা থাকতে হবে।
  6. রোগের লক্ষণ দেখা দিলে নোইন বা অটোস্টিন প্রতি লিটার পানির সাথে ২ গ্রাম মিশিয়ে ৭-১০ দিন পর পর ২-৩ বার মাটিসহ গাছের গোড়া ভিজিয়ে দিতে হবে।

গ) পাতা খেকো ক্যাটারপিলার:

লক্ষন:

ক্যাটারপিলার পাতা খেয়ে ছিদ্র করে ফেলে। পাতার ক্লোরোফিল নষ্ট হয় এবং গাছের সালোকসংশ্লেষন ক্ষমতা কমে যায়। ফলে গাছের ফলন কমে যায়।

দমন ব্যাবস্থাপনা:

  1. পোকার লার্ভাসহ আক্রান্ত পাতা হাত দ্বারা তুলে লার্ভা ও পূর্ণবয়স্ক পোকা মেরে ফেলতে হগবে।
  2. আক্রমন বেশী হলে সেভিন ৮০ ডব্লিউপি (কার্বারিল) এর ২ গ্রাম প্রতিলিটার পানিতে মিশিয়ে ১৫ দিন অস্তর অন্তর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে। ম্যালাথিয়ন কীটনাশক ২ মি.লি. প্রতিলিটার পানিতে মিশিয়ে ১৫ দিন অস্তর ২-৩ বার স্প্রে করে এ পোকা দমন করা যায়।

(৫) বীজ উৎপাদন সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করার নিয়ম

ক) বীজ উৎপাদন

  1. পূঁইশাক একটি খাটো দিবসের উদ্ভিদ। আমাদের বাংলাদেশে নভেম্বর মাসে ফুল ও ফল ধারা শুরু হয়।
  2. পূঁইশাক যেহেতু একটি অতি মাত্রায় পরপরাগায়িত সবজি ফসল তাই জাতের বংশগত বৈশিষ্ট অপরিবর্তিত রাখতে অবশ্যই ভিত্তি বীজের জনা ৫০০ মিটার আর প্রজনন বীজের জন্য ১০০০ মিটার পৃথকীকরণ দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।
  3. পাশাপাশি বীজ ফসলের জন্য ভালভাবে নিচের পুরানো পাতাগুলি ছেটে দিয়ে যথাযথ সেচ দিতে হবে ও ছত্রাক নাশক অটোস্টিন (২ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে) স্প্রে করতে হবে।
  4. বীজ উৎপাদনের জন্য পুঁইশাকের চারা অক্টোবর মাসে লাগাতে হয়। এ বীজের ফসলে সবজির উদ্দেশ্যে লাগানো ফসলের (একক গাছ সংগ্রহের ক্ষেত্রে) মতই সারের মাত্রা ও প্রয়োগ বিধী অনুসরন করতে হবে।
  5. সবজির উদ্দেশ্যে লাগানো ফসল থেকেও বীজ সংগ্রহ করা যেতে পারে। তখন সেপ্টেম্বর মাসের পর ডগা সংগ্রহ থেকে বিরত খাকতে হবে এবং বীজ ফসলের জণ্য অতিরিক্ত টিএসপি ও এমওপি সারের প্রতিটি ২০ কেজি/হেক্টর এবং বোরিক এসিড ১০ কেজি/হেক্টর হারে প্রয়োগ করতে হবে।

খ) বীজ সংগ্রহ ও সংরক্ষণ

  1. গাঢ় কালচে খয়েরী রং এর ফল সংগ্রহ করা হয়। তখন এর শাখাগুলি হলুদাভ রং ধারন করে এবং শুকিয়ে আসতে থাকে।
  2. বীজ সহ প্রায় ৪০-৪৫ সেমি লম্বা শাখা কেটে সংগ্রহ করে হাত দ্বারা ঘষা দিয়ে এর উপরোস্থ রসালো পিচ্ছিল আবরণ সরাতে হবে।
  3. সাধারণতঃ ১২-১৫ দিন বিরতিতে ৬-৭ বার একটি গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করা যেতে পারে।
  4. অতঃপর বীজগুলো থ্রেসিং ফ্লোরে ত্রিপলের উপর বিছিয়ে ভালভাবে রোদ্রে শুকিয়ে এবং ধুলাবালি ও গাছের বিভিন্ন অংশ পরিস্কার করে ১০% আর্দ্রতায় বায়ুরোধী পাত্রে অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা স্থানে সংরক্ষণ করতে হবে।
  5. বীজ উৎপাদনের যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করলে প্রতি হেক্টরে ৭০০-৮০০ কেজি বীজ এমনকী ১.৫ টন পর্যন্ত সংগ্রহ করা সম্ভব।

[সূত্র: বিএআরআই]

Leave a Reply

nv-author-image

ইন বাংলা নেট কৃষি

পশু-পাখি পালন ও চাষাবাদ সম্পর্কিত যা কিছু বাংলাতে।View Author posts