প্রিয় পাঠক বন্ধুরা, আপনারা অনেকেই প্রসাব পায়খানার দোয়া ও প্রসাব পায়খানার আদব, টয়লেটে প্রবেশ ও বের হওয়ার দোয়া বা ইস্তেঞ্জায় প্রবেশের দোয়া জনাতে চান। তাদের উদ্দেশ্য আমার আজকের এই পোষ্টটি লেখা।
প্রসাব পায়খানার দোয়া:
টয়লেটে প্রবেশ করার দোয়া হলো- ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল খুবুছি ওয়াল খাবায়িছ।’
টয়লেটে থেকে বের হওয়ার দোয়া হলো- ‘আল হামদু লিল্লাহিল্লাজি আজহাবা আন্নির আজা ওয়া আফানি।’

ইসলামের বিধি-বিধান মানবজীবনের সব ক্ষেত্রে পরিব্যাপ্ত, এর থেকে বাদ যায়নি প্রস্রাব-পায়খানার মতো একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়ও।
রাসুলুল্লাহন (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘আমি তোমাদের জন্য পিতার মতো, আমি তোমাদের সব কিছু শিক্ষা দিয়ে থাকিতোমরা প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গেলে কেবলাকে সামনে বা পেছনে দিয়ে বসবে না, ডান হাত দিয়ে শৌচকার্য সম্পাদন করবে না।’ (আবু দাউদ)
তিনি তিনটি ঢিলা ব্যবহারের নির্দেশ দিতেন এবং গোবর ও হাড্ডি দ্বারা ঢিলা করা থেকে বারণ করতেন।
উল্লিখিত হাদিসে বর্ণিত নির্দেশনা ছাড়াও প্রস্রাব-পায়খানার নির্দিষ্ট আদব এবং শিষ্টাচার রয়েছে, প্রত্যেকের মুসলিমের উচিত এগুলোর প্রতি যত্নবান হওয়া।
এবার চলুন আমরা এই প্রসাব পায়খানার দোয়া ও আদব/টয়লেটে প্রবেশ ও বের হওয়ার দোয়া সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানব।
(১) প্রসাব পায়খানার আদব ও টয়লেটে প্রবেশ করার দোয়া
১। ইস্তেনজা খানায় (পেশাব/পায়খানায়) প্রবেশের পূর্বে মাথা ঢেকে নেয়া মোস্তাহাব। টুপি বা কোন কিছু দ্বারা মাথা ঢাকার সময় বিসমিল্লাহ বলে নিবে।
২। জুতা/স্যান্ডেল পরিধান পূর্বক পেশাব/পায়খানার (ইস্তেনজা) করা। জুতা/স্যান্ডেল পরিধান করার সময় বিসমিল্লাহ বলে নিবে।
৩। প্রথমে ডান পায়ের জুতা/স্যান্ডেল পরবে।
৪। নামাযের কাপড় ব্যতীত অন্য কাপড়ে পেশাব/পায়খানার (ইস্তেনজা) করা উত্তম। অন্যথায় নাপাকী থেকে খুব সতর্ক থাকতে হবে।
৫। বিসমিল্লাহসহ ইস্তেনজা খানায় (প্রসাব/পায়খানায়) প্রবেশের দোয়া পড়া। খোলা স্থান হলোে কাপড় উঁচু করার সময় দোয়া পড়তে হয়। আর মনে না থাকলে প্রবেশের পর বা কাপড় উঠানোর পর মনে মনে দোয়া পড়া যায়, মুখে উচ্চারণ করে নয়। আল্লাহ, আল্লাহর রাসূলের নাম, ফেরেশ্তার নাম বা কুরআনের কিছু লিখিত বস্তু নিয়ে এস্তেনজায় যাওয়া মাকরূহ। অনুরূপ এগুলো উচ্চারণ করাও নিষিদ্ধ।
৬। বিসমিল্লাহ সহ ইস্তেঞ্জায় প্রবেশের প্রসাব পায়খানার দোয়াটি নিম্নে দেওয়া হলো।
হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম টয়লেটে প্রবেশের সময় বলতেন-
اَللهُمَّ إِنّيْ أَعًوْذُ بِكَ مِنَ الْخُبْثِ وَ الْخَبَائِثِ
উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল খুবুছি ওয়াল খাবায়িছ।’
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি আপনার কাছে পুরুষ ও নারী শয়তানের অনিষ্ট তথা ক্ষতি থেকে আশ্রয় চাই।’
(বুখারি)
অন্য বর্ণনায় এসেছে-
হজরত আলি ইবনু আবি তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, টয়লেটে ঢুকার সময় জিনের চোখ ও আদম সন্তানের গোপনীয় অঙ্গসমূহের মধ্যে অন্তরাল সৃষ্টি করতে চাইলে; বলতে হবে-
بِسْمِ اللهِ
উচ্চারণ: ‘বিসমিল্লাহি।’
অর্থ: আল্লাহর নামে।
৭। প্রথমে বাম পা দিয়ে এস্তেনজায় (প্রসাব খানা/পায়খানায়) প্রবেশ করা।
৮। বসার সময় পা দানিতে প্রথমে ডান পা রাখবে এবং নামার সময় প্রথম বাম পা নামাবে।
৯। প্রয়োজনের অতিরিক্ত সতর না খোলা। (এর সহজ উপায় হলো বসতে বসতে কাপড় উঠানো। দাঁড়ানো অবস্থাতেই সতর না খোলা)
১০। বসে ইস্তেনজা (প্রসাব /পায়খানা) করা।
১১। বাম পায়ে ভর করে বসাই আদব।
১২। উভয় পায়ের মাঝে বেশ ফাঁক রেখে বসা আদব।
১৩। কেবলার দিকে মুখ বা পিঠ করে না বসা। এমনিভাবে সূর্যের দিকে মুখ করে, বায়ূর বিপরীতে, চলার পথে, কবরস্থানে, ছায়াদার বা ফলদার গাছের নীচে, প্রবাহিত নদী নালায়, বদ্ধ পানিতে, বা মানুষ বসতে পারে এমন ঘাসের উপর ইস্তেনজা (প্রসাব /পায়খানা) না করা। নজরকে সংযত রাখা অর্থাৎ, যৌনাঙ্গের দিকে, মল মূত্রের দিকে, এমনিভাবে আকাশের দিকে নজর না দেয়া এবং এদিক সেদিক বেশী না তাকানো ৷
১৪। মলমূত্রের উপর থুথু, কফ, শিকনি না ফেলা।
১৫। ডান হাত দিয়ে যৌনাঙ্গ স্পর্শ না করা।
১৬। ঢিলা-কুলুখ অথবা টিস্যু ব্যবহার করা।
১৭। বাম হাত দিয়ে ঢিলা/কুলুখ ব্যবহার করবে।
১৮। পায়খানার পর তিন বার ঢিলা/কুলুখ ব্যবহার করা মোস্তাহাব।
১৯। পেশাবের পর ঢিলা/কুলুখ নিয়ে হাটা চলা করে, কিম্বা কাশি দিয়ে বা নড়াচড়া করে, কিম্বা অভ্যাস অনুযায়ী যে কোন ভাবে পেশাবের কতরা বন্ধ হয়েছে এরূপ নিশ্চিত হতে হবে। মহিলাদের জন্য এটার প্রয়োজন নেই।
২০। প্রথম ঢিলা/কুলুখ পেছনের দিক থেকে সামনের দিকে, দ্বিতীয়টি সামনের দিক থেকে পেছনের দিকে, তৃতীয়টা পেছন দিক থেকে সামনের দিকে- এ নিয়মে ঢিলা কুলুখ ব্যবহার করা অধিক পবিত্রতার অনুকূল। আর যদি অন্ডকোষ ঝুলানো থাকে তাহলো প্রথমটা সামনের দিক থেকে আরম্ভ করা। মহিলাগণ সর্বদা প্রথমটা সামনের দিক থেকে শুরু করবে।
২১। পানি ব্যবহারের পূর্বে হাতের কবজি পর্যন্ত ধৌত করা। এক হাদীসের বর্ণনার ভিত্তিতে এ স্থলে উভয় হাত ধৌত করার একটি মতও পাওয়া যায়।
২২। তারপর পানি দ্বারা ধৌত করা সুন্নাত, নাপাকী এক দেরহামের (হাতের তালুর নীচ স্থান সমপরিমাণ বিস্তৃত) বেশী পরিমাণ স্থান ছড়িয়ে পড়লে পানি দ্বারা এস্তেনজা (প্রসাব /পায়খানা) করা ওয়াজিব।
২৩। পানি ব্যবহার করার সময় প্রথমে বাম হাতের মধ্যমা আঙ্গুল-এর পেট দ্বারা মর্দন করা, তারপর অনামিকাসহ প্রয়োজনে আরও দুই এক আঙ্গুল ব্যবহার করা। মহিলাগণ প্রথমেই দুই আঙ্গুল (মধ্যমা ও অনামিকা) ব্যবহার করবে।
২৪। রোযা অবস্থায় না হলোে পেছনের রাস্তা খুব ঢিলা করে বসে পানি ব্যবহার করা।
২৫। দুর্গন্ধ সম্পূর্ণ দূর না হওয়া পর্যন্ত পরিষ্কার করতে থাকবে।
২৬। প্রথমে পেছনের রাস্তা তারপর সামনের রাস্তা ধৌত করা। দুই রাস্তার মধ্যখানের স্থানটুকুও মধ্যমা বা কনিষ্ঠ আঙ্গুল দ্বারা মর্দন করে ধৌত করা।
২৭। সৌচ কার্যের পর মাটি বা সাবান ইত্যাদি দ্বারা পুনরায় হাত পরিষ্কার করে নেয়া উত্তম।
২৮। রোযা অবস্থায় হলোে সতর্কতার জন্য ওঠার পূর্বে কাপড় (বা এ জাতীয় কিছু) ব্যবহার করে কিংবা বাম হাত দ্বারা বার বার ঘষে পেছনের রাস্তার পানি মুছে ফেলা উচিৎ। আর যাদের রোগের কারণে মলদ্বার বের হয়ে যায় তাদের জন্য জরুরী। রোযাদার না হলোেও এরূপ করা মোস্তাহাব।
২৯। যথা সম্ভব দ্রুত এস্তেনজা সেরে বের হয়ে আসা।
৩০। বের হওয়ার সময় প্রথমে ডান পা বের করা সুন্নাত।
৩১। বের হয়ে নিম্নোক্ত দোয়া পড়বে:
৩২। প্রথমে বাম পায়ের জুতা/স্যান্ডেল খোলা সুন্নাত।
(২) টয়লেট থেকে বের হওয়ার দোয়া
হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম টয়লেট থেকে বের হওয়ার সময় বলতেন-
ﻏُﻔْﺮَﺍﻧَﻚَ
উচ্চারণ: ‘গোফরানাকা।’
অর্থ: (হে আল্লাহ!) আপনার কাছে ক্ষমা চাই।’
(বুখারি, আদাবুল মুফরাদ)
এভাবেও দোয়া করা যেতে পারে-
غُفْرَانَكَ الْحَمْدُ لِلهِ الَّذِيْ اَذْهَبَ عَنِّيْ الْاَذَى وَعَافَانِيْ
উচ্চারণ: ‘গোফরানাকা আলহামদুলিল্লাহিল্লাজি আজহাবা আন্নিল আজা ওয়া আফানি।’
অর্থ: ‘(হে আল্লাহ!) আপনার কাছে ক্ষমা চাই। সব প্রশংসা ওই আল্লাহর জন্য; যিনি ক্ষতি ও কষ্টকর জিনিস থেকে আমাকে মুক্তি দিয়েছেন।’
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, টয়লেটে প্রবেশের আগে এবং টয়লেট থেকে বের হওয়ার পরে হাদিসে উল্লেখিত দোয়ার মাধ্যমে দুষ্ট পুরুষ ও নারী জিনের বদ-নজর থেকে হেফাজত থাকা। টয়লেটের পর কষ্টদায়ক অবস্থা থেকে মুক্ত হওয়ার কারণে মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা ও শুকরিয়া আদায় করা।
(৩) প্রসাব পায়খানার দোয়া পড়ার কারণ কি?
পায়খানা-প্রস্রাবের স্থান টয়লেট হলোো নাপাকি বা ময়লা আবর্জনা ত্যাগের জায়গা। আর এ টয়লেটে দুষ্ট ও বদ জিনদের বাসস্থান।
কোনো ব্যক্তি যখন টয়লেটে প্রস্রাব-পায়খানা করতে প্রবেশ করে আর দোয়া না পড়ে, তবে এসব দুষ্ট ও বদ জিন মানুষের মোস্ট সেনসিটিভ অরগ্যান (লজ্জাস্থান) নিয়ে খেলা করে।
আর যারা প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণে টয়লেটে প্রবেশ করার আগে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনায় হাদিসে বর্ণিত দোয়া পড়ে, তবে দুষ্ট ও বদ জিন তাদের দেখতে পায় না।
এ কারণেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মতে মুহাম্মাদিকে টয়লেটে প্রবেশের আগে সব সময় আল্লাহর কাছে দুষ্ট ও বদ জিনের আক্রমণ থেকে আশ্রয় চাওয়ার তাগিদ দিয়েছেন। তিনি নিজেও এর ওপর আমল করতেন।
(৪) প্রসাব পায়খানার আদব সম্পর্কিত কিছু হাদীসের অংশ বিশেষ এর অনুবাদ
১। টয়লেটে ঢুকার আগে ও পরে দোয়া আদায় করা এবং দুষ্ট জিনের আক্রমণ থেকে আশ্রয় চাওয়া। (বুখারী)
২। এমন স্থানে প্রস্রাব-পায়খানা করবে, যেখানে বসলে মানুষ দেখে না, আওয়াজ শোনে না এবং দুর্গন্ধ মানুষের নাকে আসে না, (তিরমিজি, আবু দাউদ)
৩। টয়লেটে ঢুকার আগে দোয়া পড়ে বাম পা দিয়ে টয়লেটে প্রবেশ করা। (আবু দাউদ)
৪। প্রস্রাব-পায়খানার জন্য নরম বা উঁচু স্থান বেছে নেওয়া উচিত, যাতে এর ছিটা শরীরে না লাগে, (আবু দাউদ)
৫। টয়লেটে যেতে মাথা ঢেকে রাখা। (বায়হাকি)
৬। পায়খানায় প্রবেশের সময় এই দোয়া পাঠ করা- ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল খুবসি ওয়াল খাবাইস’। যার অর্থ- ‘হে আল্লাহ! আমি নর ও নারী শয়তান থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাই।’ (বুখারি)
৭। খালি পায়ে টয়লেটে না যাওয়া। জুতা এবং স্যান্ডেল নিয়ে টয়লেটে যাওয়া। (কানজুল উম্মাল)
৮। কিবলার দিকে মুখ বা কিবলাকে পিছন করে না বসা। (বুখারী)
৯। বাঁ পা দিয়ে প্রবেশ করা ও ডান পা দিয়ে বের হওয়া। (নাসায়ি শরিফ)
১০। প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়ার সময় নিজের বাঁ পায়ের ওপর ভর দিয়ে বসা, এটি কষ্টদায়ক বস্তু দ্রুত নিঃসরণে সহায়ক, (আস সুনানুল কুবরা লিল বাইহাকি)
১১। টয়লেটে গিয়ে বসার ঠিক আগে কাপড় খুলা। দাঁড়িয়ে প্রস্রাব না করা। (নাসাই, তিরমিযী)
১২। প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণের সময় মাথা ডেকে রাখা। (আস সুনানুল কুবরা লিল বাইহাকি)
১৩। প্রস্রাব এবং অপরিষ্কার পানি থেকে নিজেকে সাবধানে রাখা। (বুখারী)
১৪। মাটির গর্তে প্রস্রাব না করা, কেননা ভেতরে সাপ-বিচ্ছু থাকলে ক্ষতি হতে পারে অথবা ক্ষতি করতে পারে। (আবু দাউদ)
১৫। প্রস্রাব পাায়খানা করার পর ঢিলা কুলুখ বা টয়লেট পেপার ব্যবহার করা। (বায়হাকি)
১৬। রাস্তা বা কবরস্থানে প্রস্রাব-পায়খানা না করা। (মুসলিম শরিফ)
১৭। বাম হাত দিয়ে কুলুখ এবং পানি ব্যবহার করা। (বুখারী)
১৮। ছায়াময় স্থানে প্রস্রাব না করা, যেখানে মানুষ বিশ্রাম নেয়, (আবু দাউদ)
১৯। প্রস্রাব করার জন্য একটি নরম জায়গা খুঁজুন যেখান থেকে প্রস্রাব শরীরে বা কাপড়ে না আসে। (আবু দাউদ)
২০। ফলবিশিষ্ট বৃক্ষের নিচে প্রস্রাব-পায়খানা না করা, (আবু দাউদ)
২১। ঢিলা-কুলুখ ব্যবহারের পর পানি ব্যবহার করুন। (ইবনে খুযাইমা)
২২। প্রস্রাব-পায়খানার সময় বিনা প্রয়োজনে কথা বলা মাকরুহ বা ইসলামের দৃষ্টিতে অপছন্দীয় কাজ। (আবু দাউদ)
২৩। ডান পা দিয়ে টয়লেট থেকে বের হওয়া। (আবু দাউদ)
২৪। অক্ষমতা, অসুস্থতা ও সীমাবদ্ধতা না থাকলে দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করা মাকরুহ, (তিরমিজি)। তবে সীমাবদ্ধতা থাকলে তা বৈধ, কেননা দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করার মাধ্যমে প্রস্রাবের ছিটা গায়ে লাগার সম্ভাবনা থাকে। আর এটি দৃষ্টিকটু, পাশাপাশি তা রোগের কারণ বলে উল্লেখ করেছেন চিকিৎসকরা।
২৫। প্রবল বাতাসের দিকে মুখ করে প্রস্রাব না করা। (আবু দাউদ)
২৬। প্রস্রাব-পায়খানার সময় শব্দ করে কোরআন পাঠ ও জিকির করা মাকরুহ, (মুসলিম)
২৭। অজু ও গোসলের জায়গায় বা স্থির পানিতে প্রস্রাব করবেন না। (মুসলিম)
২৮। আবদ্ধ কম পানিতে প্রস্রাব-পায়খানা করা মাকরুহ। (মুসলিম)
২৯। প্রস্রাব করার সময় কথা না বলা। (মুসনাদ আহমদ)
৩০। আবদ্ধ বেশি পানি বা প্রবহমান পানিতে প্রস্রাব-পায়খানা করা অনুচিত। (মুসলিম)
৩১। হাড়, কয়লা, কাগজ, গাছের কাঁচা পাতা, খাবার, শুকনো গোবর দ্বারা ঢিলা-কুলুখ না করা। (তিরমিযি)
৩২। কোনো অপারগতা ছাড়া প্রস্রাব-পায়খানা থেকে ডান হাতে পবিত্রতা অর্জন করা মাকরুহ। (মুসনাদে আহমাদ)
৩৩। প্রস্রাব-পায়খানা সেরে ডান পা দিয়ে বের হয়ে এই দোয়া পাঠ করা- ‘আল হামদু লিল্লাহিল্লাজি আজহাবা আন্নির আজা ওয়া আফানি।’ যার অর্থ- সব প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আমার কাছ থেকে কষ্টদায়ক বস্তু বের করে দিয়েছেন এবং আমাকে নিরাপদ করেছেন, (ইবনে মাজাহ)
বন্ধুরা উপরোক্ত আলোচনা মাধ্যমে আমরা আমরা প্রসাব পায়খানার দোয়া ও আদব/টয়লেটে প্রবেশ ও বের হওয়ার দোয়া সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানলাম এবং শিখলাতে পারলাম।
মানুষের সুস্থ থাকার জন্য স্বাভাবিকভাবে নিয়মিত প্রস্রাব-পায়খানা হওয়া অত্যন্ত জরুরি। প্রস্রাব-পায়খানা করার এ প্রক্রিয়া মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে সৃষ্টজীবের জন্য এক অনন্য নেয়ামত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ সময়ের দোয়া পড়ার কারণ ও করণীয় বর্ণনা করেছেন। কীভাবে টয়লেট ব্যবহার করতে হবে, সেসব নিয়ে ইসলামের শিষ্টাচার তুলে ধরেছেন।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে প্রসাব পায়খানার দোয়া ও প্রসাব পায়খানার আদব সম্পর্কি হাদিসের দিকনির্দেশনা মেনে দোয়া পড়ার তাওফিক দান করুন। হাদিসের উপর আমল কারার তাওফিক দান করুন। আমিন।
[সূত্র: মাওলানা মুহাম্মদ হেমায়েত উদ্দীন]