Skip to content
ফ্রিল্যান্সিংয়ের সুবিধা ও অসুবিধা
আলোচ্য বিষয়:

জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে ক্যারিয়ার পছন্দ একটি। আমরা যখন কোনো পেশা বেছে নিই, তখন শুধু অর্থ উপার্জনই নয়, বরং আমাদের ব্যক্তিত্ব, দক্ষতা এবং জীবনযাত্রার মানও এর উপর নির্ভর করে।

ফ্রিল্যান্সিং আজকাল একটি জনপ্রিয় ক্যারিয়ার অপশন, কিন্তু এটি সবার জন্য নয়। এই বিস্তারিত আলোচনাটিতে আমরা ফ্রিল্যান্সিংয়ের সুবিধা ও অসুবিধা নিয়ে আলোচনা করব, যাতে আপনি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

(১) ফ্রিল্যান্সিং কী এবং কেন এটি আলাদা?

ফ্রিল্যান্সিং কী এবং কেন এটি আলাদা

ফ্রিল্যান্সিং হলো এমন একটি পেশা, যেখানে আপনি নিজের ইচ্ছামতো কাজ বেছে নিতে পারেন এবং বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের ক্লায়েন্টের সঙ্গে কাজ করতে পারেন। এটি ঐতিহ্যবাহী চাকরির মতো নয়, যেখানে আপনি একটি নির্দিষ্ট সময়সূচি ও বেতনের মধ্যে আবদ্ধ থাকেন। তবে এই স্বাধীনতার সঙ্গে আসে কিছু চ্যালেঞ্জও। চলুন, প্রথমে অসুবিধাগুলো দিয়ে শুরু করি, তারপর সুবিধাগুলো নিয়ে আলোচনা করব।

(২) ফ্রিল্যান্সিংয়ের অসুবিধাসমূহ

ফ্রিল্যান্সিংয়ের অসুবিধাসমূহ

ক) শুরুটা অত্যন্ত কঠিন: ধৈর্য্যের পরীক্ষা

  • প্রথম অর্ডার পেতে ২ বছর পর্যন্ত লেগে যেতে পারে (অনেকের অভিজ্ঞতা)।
  • এই সময়ে টাকা-পয়সার অভাব, পরিবারের চাপ, মানসিক হতাশা কাজ করতে পারে।

“আমি টানা ২ বছর কোনো আয় ছাড়াই কাজ করেছি, বারবার ব্যর্থ হয়েছি, শিখেছি এবং শেষ পর্যন্ত প্রথম অর্ডার পেয়েছি।”

খ) ২৪/৭ কাজের চাপ: স্বাধীনতা নয়, পরাধীনতা

  • ক্লায়েন্টরা যেকোনো সময় (রাত ৩টায়ও) মেসেজ দিতে পারে।
  • প্রজেক্ট ডেলিভারির চাপ, সময়মতো কাজ জমা দেওয়ার স্ট্রেস।

“আমি ভোর ৫টায় ঘুমাতে যেতাম, সাড়ে ৫টায় নতুন ক্লায়েন্টের মেসেজ পেয়ে আবার কাজ শুরু করতাম।”

গ) অনিশ্চত আয় (অস্থিরতা)

  • এক মাসে ৫ লাখ, পরের মাসে ১ লাখ, এই উঠানামা সহ্য করতে হবে।
  • কোনো মাসে প্রজেক্ট না পেলে আয় শূন্য হয়ে যেতে পারে।

“ফ্রিল্যান্সিংয়ে বেতন নেই, আপনি কাজ করলেই আয়, না করলে আয় নেই।”

ঘ) দীর্ঘমেয়াদি সময় বিনিয়োগ

  • সত্যিকারের সফল হতে ৫-৭ বছর লাগতে পারে
  • এই সময়ে আপনাকে অবিরাম শিখতে হবে, স্কিল ডেভেলপ করতে হবে

“লোকেরা শুধু আমার সফলতা দেখে, কিন্তু পেছনের ৫ বছরের সংগ্রাম কেউ দেখে না।”

ঙ) আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা

  • আপনি শুধু বাংলাদেশের নয়, পুরো বিশ্বের ফ্রিল্যান্সারদের সাথে প্রতিযোগিতা করছেন, কাজ পাবার জন্য।
  • স্কিল এবং কোয়ালিটিতে টপ লেভেলে না থাকলে অর্ডার পাওয়া কঠিন।
পড়ুন
ফ্রিল্যান্সিং করে সফল হবার ৬টি টিপস

(৩) ফ্রিল্যান্সিংয়ের সুবিধাসমূহ

ফ্রিল্যান্সিংয়ের সুবিধাসমূহ

ক) অসাধারণ আয়ের সম্ভাবনা

  • চাকরির তুলনায় অনেক কম সময়ে বেশি আয় সম্ভব।
  • ২০-২৫ বছর বয়সে মাসে ২ লাখ টাকা আয় করা কোনো চাকরিতে সম্ভব নয়, যেটা ফ্রিালান্সিং-এ একন অনেক উদাহরণ আছে।

“আমার প্রথম মাসের আয় ছিল ৯৮ হাজার, দ্বিতীয় মাসে ১.৯২ লাখ, তৃতীয় মাসে ২ লাখেরও বেশি।”

খ) দীর্ঘমেয়াদে প্রকৃত স্বাধীনতা

  • শুরুতে কঠোর পরিশ্রমের পর টিম তৈরি করে স্বাধীন হওয়া যায়।
  • একটা ভালো পজিশনে যাবার পরে, নিজের টিম তৈরির পরে, চাকরির মতো ৯-৫ এর বাঁধাধরা নিয়ম নেই। বেশির ভাগ কাজ টিম সম্পন্ন করবে, তাই তখন নিজের স্বাধীন ও সুবিধামত কাজ করা যায়, যা চাকরিতে সম্ভব না।

“আমি এখন নিজের ১০+ জনের টিম করে নিয়েছি, বিকেলে ক্রিকেট খেলি, পর্যাপ্ত ঘুমাই, ৮০% কাজ তারাই করে।”

গ) একাধিক আয়ের উৎস তৈরি

ফ্রিল্যান্সিং শিখলে অন্যান্য ডিজিটাল ইনকামের দরজা খুলে যায়। যেমন-

  • ইউটিউব চ্যানেল থেকৈ আয়
  • ব্লগিং/এফিলিয়েট মার্কেটিং
  • ডিজিটাল প্রোডাক্ট বিক্রয় (কোর্স, ইবুক ইত্যাদি)

ফ্রিল্যান্সিং পাশাপাশি এমন সাইড ইনকামের পথ এমনিতেই তৈরি হয়ে যায়।

ঘ) গ্লোবাল এক্সপোজার ও স্কিল ডেভেলপমেন্ট

  • বিভিন্ন দেশের ক্লায়েন্টদের সাথে কাজ করে অভিজ্ঞতা বৃদ্ধি।
  • নতুন নতুন টেকনোলজি শেখার সুযোগ।

“ফ্রিল্যান্সিং আমাকে শিখিয়েছে কিভাবে ব্যবসা চলে, মার্কেটিং করতে হয়।”

ঙ) স্থান ও সময়ের স্বাধীনতা

  • বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে কাজ করা সম্ভব।
  • প্রথাগত অফিসের বিষাক্ত রাজনীতি থেকে মুক্তি।

(৪) ফ্রিল্যান্সিং করে সফল হওয়ার মূলমন্ত্র

ফ্রিল্যান্সিং করে সফল হওয়ার মূলমন্ত্র

ক) ধৈর্য্য ও অধ্যবসায়

  • ব্যর্থতাকে শিক্ষায় পরিণত করুন।

“প্রথম ২ বছর কোনো আয় না থাকলেও আমি লেগে ছিলাম।”

খ) ক্রমাগত শেখা

  • প্রতিদিন নতুন কিছু শিখুন, মার্কেট ডিমান্ড অনুযায়ী স্কিল আপডেট করুন।

গ) টিম বিল্ডিং

  • একা কাজ করে সীমিত আয়, টিম তৈরি করে আয় বাড়ান।

“আমার টিম এখন আমার হয়ে ৮০% কাজ করে দেয়।”

ঘ) ফাইন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট

  • আয়ের উঠানামা মোকাবেলায় সেভিংস জরুরি।
  • ইনকামের একটি অংশ বিনিয়োগ করুন (রিয়েল এস্টেট, স্টক মার্কেট ইত্যাদি)।
পড়ুন
ফ্রিল্যান্সিং করে সফল হবার ৬টি টিপস

ঙ) ব্যালেন্সড লাইফস্টাইল

  • কাজের পাশাপাশি স্বাস্থ্য, পরিবার ও বিশ্রামের সময় দিন।

“আমি এখন কাজের পাশাপাশি প্রতিদিন ক্রিকেট খেলি।”

(৫) ফ্রিল্যান্সিং আপনার জন্য কিনা—তা মূল্যায়ন করুন

ফ্রিল্যান্সিং আপনার জন্য কিনা—তা মূল্যায়ন করুন

ফ্রিল্যান্সিং-এ সফলতা আপনার দক্ষতা, ধৈর্য এবং পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে। যাদের তাড়াতাড়ি ইনকাম দরকার বা পরিবারের ওপর নির্ভরশীলতা আছে, তাদের জন্য এটি কঠিন হতে পারে। কিন্তু যারা সময় দিতে পারেন, শিখতে চান এবং কঠোর পরিশ্রমে ভয় পান না, তাদের জন্য এটি একটি স্বপ্ন পূরণের পথ হতে পারে।

এটি একটি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার মঞ্চ। আপনার দক্ষতা বিশ্বমানের হতে হবে। প্রথম ৫-৭ বছর কঠিন হলেও, তারপর আপনি এমন একটি জায়গায় পৌঁছাতে পারেন, যেখানে আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য ও জীবনের নিয়ন্ত্রণ দুটোই থাকবে।

হ্যাঁ, ফ্রিল্যান্সিং আপনার জন্য, যদি আপনি-

✅ কমপক্ষে ২-৩ বছর ধৈর্য্য ধরে কাজ করতে প্রস্তুত।
✅ অনিশ্চিত আয় নিয়ে চিন্তিত না।
✅ স্ব-শৃঙ্খলাবদ্ধ এবং স্ব-মোটিভেটেড।
✅ ক্রমাগত শিখতে ইচ্ছুক।

না, ফ্রিল্যান্সিং আপনার জন্য নয়, যদি আপনি-

❌ স্থির বেতন ও চাকরির নিরাপত্তা চান।
❌ অনির্দিষ্ট সময় ও দীর্ঘমেয়াদি সংগ্রাম করতে রাজি নন।
❌ নিজে থেকে ইনিশিয়েটিভ নিতে পারেন না।

(৬) শেষ কথাঃ ফ্রিল্যান্সিংয়ের সত্যিকারের বাস্তবতা

ফ্রিল্যান্সিংয়ের সত্যিকারের বাস্তবতা

ফ্রিল্যান্সিং কোনো “দ্রুত কোটিপতি হওয়ার স্কিম” নয়।

এটি একটি পেশা যেখানে-

  • প্রথম ২-৩ বছর: কঠোর পরিশ্রম, সামান্য আয়।
  • পরের ৩-৫ বছর: স্থিতিশীল আয়, টিম তৈরি।
  • ৫+ বছর পর: প্রকৃত স্বাধীনতা ও আর্থিক সচ্ছলতা।

“আমি যখন ফ্রিল্যান্সিং শুরু করি, তখন কেউ বিশ্বাস করেনি। আজ আমি আমার বাড়ির তিন তলা ভাড়া দিই, ইউটিউব চালাই, টিম পরিচালনা করি— এই স্বাধীনতা চাকরিতে সম্ভব নয়। কিন্তু এর পেছনে আছে ৫ বছরের রাতজাগা, অসংখ্য ব্যর্থতা এবং অদম্য ইচ্ছাশক্তি।”


প্রিয় বন্ধু, উপরোক্ত আলোচনাটি থেকে নিশ্চয় ফ্রিল্যান্সিংয়ের সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কে একটা স্পষ্ট ধরণা পেয়েছেন।

পড়ুন
ফ্রিল্যান্সিং করে সফল হবার ৬টি টিপস

অবশ্যই, ফ্রিল্যান্সিং একটি সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র। এখানে শেখার কোনো শেষ নেই। আপনি যত শিখবেন, তত নতুন পথ খুঁজে পাবেন। কিন্তু এই পথে হাঁটতে গেলে কঠোর পরিশ্রম, ধৈর্য এবং সময় দিতে হবে।

এখন, নিজের সামর্থ্য ও পরিস্থিতি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিন। যদি মনে হয় এটি আপনার জন্য, তাহলে শুরু করে দিন। কে জানে, হয়তো কয়েক বছর পর আপনিও আপনার স্বপ্নের জীবন গড়ে তুলবেন!

ভালো থাকুন, নতুন কিছু শিখুন এবং নিজের পথ নিজে বেছে নিন।

অর্থ ও ইনকাম এর সাথে সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট ইনকাম’ (inbangla.net/income) এর সাথেই থাকুন।

[তথ্য সূত্র: Tamal Debnath]

অনুরোধ!! পোষ্ট ভালো লাগলে প্লিজ উপরের শেয়ার আইকনে ক্লিক করে পোষ্টটি শেয়ার করে দিন।

Leave a Reply

nv-author-image

ইন বাংলা নেট ইনকাম

অর্থ ও ইনকাম এর সাথে সম্পর্কিত যা কিছু বাংলাতে।View Author posts