বাংলাদেশে রাস্তাঘাটে, অলিতে গলিতে প্রতিভার অভাব নেই—বিশেষ করে ক্রিকেটের কথা বললে। ছোটবেলায় আমরা সবাই কোনো না কোনো “সাকিব আল হাসান” বা “তামিম ইকবাল” হতে চেয়েছি। কিন্তু আন্তর্জাতিক মানে গিয়ে যদি দেখি, সাকসেসফুল ক্রিকেটার কয়জন? হয়তো গুনে বলা যায় এক-দুই জনের নাম। ঠিক তেমনি, ফ্রিল্যান্সিং জগতে কেউ কেউ উপার্জন করছে মাসে পাঁচ-দশ লাখ টাকা, কিন্তু এমন মানুষের সংখ্যা কি হাজার পার করছে?
এই লেখায় আমরা জানবো, কেন অধিকাংশ মানুষ ফ্রিল্যান্সিং শুরু করেও সফল হতে পারে না, এবং যারা সফল হয়, তাদের মাঝে কী কী গুণ থাকে।
(১) বাস্তবতা: প্রতিভা আছে, কিন্তু কোয়ালিটি কম

বাংলাদেশে হাজার হাজার তরুণ-তরুণী ফ্রিল্যান্সিং শুরু করছে—Fiverr অ্যাকাউন্ট খুলে, LinkedIn ঘেঁটে, YouTube দেখে স্কিল শেখার চেষ্টা করছে। কিন্তু মাসে ১০-২০ হাজার টাকা উপার্জন করেই থেমে যাচ্ছে অধিকাংশ। আপনি যদি খোঁজ করেন, মাসে ৫-১০ লাখ টাকা আয় করা ফ্রিল্যান্সার বাংলাদেশে কয়জন, হাতে গোনা কিছু নামেই আটকে যাবেন।
ফ্রিল্যান্সিং আয়ের দিক থেকে একটা ‘আনসার্টেইন’ পেশা। আজকে যদি ৩০ হাজার টাকা ইনকাম করেন, কাল সেটা ১০ হাজার বা শূন্যতেও নেমে যেতে পারে। আপনি যদি মাসে মাত্র ২০-৩০ হাজার টাকার রেঞ্জে থাকতে চান, তাহলে হয়তো চাকরি আপনার জন্য বেশি উপযোগী। কিন্তু যদি টার্গেট থাকে ১ লাখ, ৫ লাখ বা ১০ লাখ—তাহলে mindset, skill এবং sustainability—এই তিনটা জায়গায় আপনাকে ভিন্নভাবে ভাবতে হবে।
(২) ফ্রিল্যান্সিং করে সফল হতে চাইলে লাগবে এই ৬টি বৈশিষ্ট্য

ক) ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা
আমি যখন ফ্রিল্যান্সিং শুরু করি, প্রথম ইনকাম করতে লেগেছিল দুই বছর। ওই সময়টা একেবারে টেনশনে কাটিয়েছি—অর্ডার পাবো কি না, ক্যারিয়ারটাই ভুল পথে নিচ্ছি কি না। কিন্তু ওই ঝুঁকি নেওয়ার সাহসটাই আমাকে টিকিয়ে রেখেছে।
আপনি যদি সমস্যাকে বিশ্লেষণ করে সলভ করার মানসিকতা না রাখেন, তাহলে বড় কিছু অর্জন অসম্ভব।
খ) লক্ষ্য পরিবর্তন না করা
অনেকেই একদিন SEO শেখে, দুইদিন পরে ভিডিও এডিটিং—তারপর গ্রাফিক ডিজাইন। একটাতেও দাঁড়াতে পারে না। কারণ, কোনো একটায় গভীরতা তৈরি না হলে আপনি কোনোদিন অর্ডার পাবেন না।
লক্ষ্য ঠিক করুন, সেটায় দীর্ঘ সময় দিন। অর্ডার আসুক বা না আসুক, ধৈর্য ধরে লেগে থাকুন। সেখানেই ব্রেকথ্রু লুকিয়ে থাকে।
গ) কন্টিনিউয়াস লার্নিং এবং নিজের উন্নয়ন
অনলাইন জগতে সবকিছু প্রতিদিন বদলায়। আজকের স্ট্রাটেজি আগামীকাল অচল হতে পারে। আপনি যদি শিখে থেমে যান, তাহলে পিছিয়ে পড়বেন নিশ্চিত।
বই পড়ুন, পডকাস্ট শুনুন, নতুন টুলস ব্যবহার করুন—এই জিনিসগুলোই আপনাকে অন্যদের থেকে এগিয়ে রাখবে।
ঘ) ধৈর্য এবং টিকে থাকার মানসিকতা
আমার গিগ র্যাংক হারানোর পর ৩-৪ মাস কোনো ভালো অর্ডার পাইনি। তখন নিজেকে ধরে রাখা কঠিন ছিল। কিন্তু ধৈর্য ধরে নতুন কৌশল খুঁজে কাজ করায় আবার ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছি।
ধৈর্য না থাকলে হয়তো আজ বলার মতো কিছুই থাকতো না। জীবনের যেকোনো জয়ে ‘টিকে থাকার’ মানসিকতা সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ।
ঙ) বায়ারকে প্রাধান্য দেওয়া
আপনার টার্গেট ইনকাম না হয়ে হওয়া উচিত—বায়ার কীভাবে ইনকাম করবে। আপনি যদি এমনভাবে কাজ করেন, যাতে বায়ার উপকার পায়, তার বিজনেস বাড়ে—তাহলে সেই বায়ার বারবার ফিরে আসবে। আপনাকেই রেফার করবে।
আমি বহুবার এমন বায়ার পেয়েছি, যারা পরবর্তীতে চাকরির অফার দিয়েছে রিমোটলি। এমনটা সম্ভব শুধু তখনই, যখন আপনি বায়ারের সাফল্যে নিজের ভূমিকা রাখেন।
চ) গ্রোথ মাইন্ডসেট
আপনি চিরকাল ক্লায়েন্টের জন্য কাজ করে যেতে পারবেন না। একটা সময় আসবে, যখন আপনাকে ম্যানেজ করতে হবে, টিম বানাতে হবে, স্কেল করতে হবে।
গ্রোথ মাইন্ডসেট না থাকলে, আপনি আজকে ভালো করলেও কাল পিছিয়ে পড়বেন। শেখার ইচ্ছা, নতুন কিছু করার সাহস, আর নিজেকে আপডেট রাখা—এই তিনটাই ক্যারিয়ারে টেকসই সাফল্য আনে।
(৩) শেষ কথা

আপনি যদি ভাবেন ফ্রিল্যান্সিং শুধুই টাকা ইনকামের মাধ্যম—তাহলে ভুল করবেন। এটা একটা লাইফস্টাইল। এটা শিখিয়ে দেয় কীভাবে ঝুঁকি নিতে হয়, কীভাবে নিজেকে প্রমাণ করতে হয়, কীভাবে অন্যকে সাহায্য করতে গিয়ে নিজের জীবন গড়তে হয়।
আজ আপনি হয়তো ২০ হাজার ইনকাম করছেন। কিন্তু যদি এই ছয়টি গুণ—ঝুঁকি নেওয়া, লক্ষ্যে অটল থাকা, ক্রমাগত শেখা, ধৈর্য, ক্রেতাকে গুরুত্ব দেওয়া, আর বৃদ্ধির মানসিকতা—নিজের মধ্যে আনতে পারেন, তাহলে সময়ের ব্যবধানে ১০ লাখ ইনকাম করা মানুষদের কাতারেও নিজেকে দাঁড় করাতে পারবেন।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, আপনি আসলেই চান কি না? আর চাইলে, কতোটা সিরিয়াসলি সেটা নিয়ে কাজ করছেন?
সঠিক পরিকল্পনা আর কঠোর পরিশ্রম দিয়ে আপনিও আন্তর্জাতিক মানের ফ্রিল্যান্সার হতে পারেন। ভালো থাকুন, নিজের স্বপ্নের পেছনে ছুটুন!
অর্থ ও ইনকাম এর সাথে সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট ইনকাম’ (inbangla.net/income) এর সাথেই থাকুন।
[তথ্য সূত্র: Tamal Debnath]
অনুরোধ!! পোষ্ট ভালো লাগলে প্লিজ উপরের শেয়ার আইকনে ক্লিক করে পোষ্টটি শেয়ার করে দিন।