(১) বাক্য কাকে বলে?

নিম্নে বাক্যের সংজ্ঞা তুলে ধরা হলো-
বাক্য কাকে বলে: এক বা একাধিক পদ একত্রিত হয়ে যখন বক্তার মনের ভাব সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ করে, তখন তাকে বাক্য বলে।
অথবা বলা যায়,
বাক্য কাকে বলে: যে সুবিন্যস্ত পদসমষ্টি দ্বারা কোনো বিষয়ে বক্তার মনোভাব সম্পূর্ণরুপে প্রকাশিত হয়, তাকে বাক্য বলে।
অথবা বলা যায়,
বাক্য কাকে বলে: কিছু শব্দ যখন একটি নির্দিষ্ট নিয়মে সাজানো হয় এবং সেই শব্দগুলো একটি সম্পূর্ণ অর্থ প্রকাশ করে, তখন তাকে বাক্য বলা হয়।
অথবা বলা যায়,
বাক্য কাকে বলে: বাক্য হলো একাধিক শব্দের সংগঠিত ও সুশৃঙ্খল সমষ্টি, যা সম্পূর্ণ অর্থ প্রকাশ করে।
অথবা বলা যায়,
বাক্য কাকে বলে: বাংলা ভাষায় বাক্য হলো একটি বা একাধিক শব্দের এমন সুশৃঙ্খল ও অর্থবোধক বিন্যাস, যা একটি পূর্ণাঙ্গ মনের ভাব প্রকাশ করে।
অথবা বলা যায়,
বাক্য কাকে বলে: বাক্য হলো একাধিক শব্দের অর্থপূর্ণ সমন্বয়, যা একটি সম্পূর্ণ ভাব প্রকাশ করে।
অথবা বলা যায়,
বাক্য কাকে বলে: বাক্য হলো অর্থপূর্ণ ও সঠিকভাবে গঠিত শব্দসমষ্টি।
অথবা বলা যায়,
বাক্য কাকে বলে: বাক্য হলো শব্দ বা শব্দগুচ্ছের এমন একটি সমষ্টি, যা একটি সম্পূর্ণ অর্থ প্রকাশ করে এবং যার মাধ্যমে কোনো ভাব, চিন্তা বা অনুভূতি স্পষ্টভাবে বোঝানো যায়। সাধারণত একটি বাক্যে একটি কর্তা (Subject) এবং একটি ক্রিয়া (Verb) থাকে, যা একটি পূর্ণাঙ্গ ধারণা বা বক্তব্য তৈরি করে।
অথবা বলা যায়,
বাক্য কাকে বলে: বাক্য হলো এমন একটি শব্দ বা শব্দসমষ্টি, যা একটি সম্পূর্ণ অর্থ প্রকাশ করে। অর্থাৎ, যখন আমরা কিছু শব্দ একসঙ্গে ব্যবহার করি এবং তা দিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ ধারণা বা বক্তব্য বোঝাতে পারি, তখন তাকে বাক্য বলা হয়। বাক্যের মাধ্যমে আমরা আমাদের মনের ভাব প্রকাশ করি, প্রশ্ন করি, আদেশ দিই বা অনুরোধ করি।
উদাহরণ:
“আকাশ নীল।”
(এখানেও একটি সম্পূর্ণ অর্থ প্রকাশ পাচ্ছে।)
“আমি বই পড়ি।”
(এটি একটি সম্পূর্ণ বাক্য, যেখানে “আমি” কর্তা এবং “পড়ি” ক্রিয়া।)
“আমি ভাত খাই।”
(একটি বাক্য, যা একটি সম্পূর্ণ অর্থ প্রকাশ করে।)
“সে স্কুলে যায়।”
(এই বাক্যে তিনটি শব্দ আছে— “সে”, “স্কুলে”, “যায়”, এবং একত্রে তারা একটি সম্পূর্ণ অর্থ প্রকাশ করছে।)
“আমি স্কুলে যাই।” “আকাশ খুব সুন্দর।”
(এই দুটি বাক্যই একটি সম্পূর্ণ অর্থ বহন করে। প্রথম বাক্যটি একটি কাজের কথা বলছে, আর দ্বিতীয়টি একটি বর্ণনা দিচ্ছে।)
বাংলা ভাষায় বাক্যের শ্রেণীবিভাগ প্রধানত দুটি ভিত্তিতে করা হয়। গঠন অনুসারে এবং অর্থ অনুসারে। নিচে এই দুই ভিত্তিতে বাক্যের শ্রেণীবিভাগ করা হলো।
(২) গঠন অনুসারে বাক্যের শ্রেণীবিভাগ
গঠন অনুসারে বাংলা ভাষায় বাক্যকে প্রধানত ৩টি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়। যথা-
- সরল বাক্য
- জটিল বাক্য
- যৌগিক বাক্য
ক) সরল বাক্য কাকে বলে?
সরল বাক্য হলো এমন বাক্য, যাতে একটিমাত্র প্রধান খণ্ড থাকে এবং কোনো অধীন খণ্ড থাকে না। এটি সাধারণত সহজ ও সংক্ষিপ্ত হয়।
অর্থাৎ, যে বাক্যে একটি মাত্র কর্তা এবং একটি মাত্র সসীম ক্রিয়া থাকে, তাকে সরল বাক্য বলে।
উদাহরণ:
“সে গান গায়।” “আমি ভাত খাই।”
(এই বাক্যগুলোতে একটি মাত্র কর্তা ও একটি মাত্র ক্রিয়া আছে, এবং এরা একটি সম্পূর্ণ অর্থ প্রকাশ করে।)
খ) জটিল বাক্য কাকে বলে?
জটিল বাক্যে একটি প্রধান খণ্ড এবং এক বা একাধিক অধীন খণ্ড থাকে। অধীন খণ্ড প্রধান খণ্ডের উপর নির্ভরশীল হয় এবং সাধারণত “যে”, “যখন”, “কারণ”, “যদি” ইত্যাদি যোজক শব্দ দিয়ে যুক্ত থাকে।
অর্থাৎ, যে বাক্যে একটি প্রধান খণ্ড (Principal Clause) এবং এক বা একাধিক অধীন খণ্ড (Subordinate Clause) থাকে, তাকে জটিল বাক্য বলে।
উদাহরণ:
“যে ছেলেটি বই পড়ছিল, সে আমার ভাই।”
(এখানে “যে ছেলেটি বই পড়ছিল” হলো অধীন খণ্ড, আর “সে আমার ভাই” হলো প্রধান খণ্ড।)
গ) যৌগিক বাক্য কাকে বলে?
যৌগিক বাক্যে দুটি বা তার বেশি প্রধান খণ্ড থাকে, যেগুলো “এবং”, “কিন্তু”, “অথবা” ইত্যাদি যোজক শব্দ দিয়ে যুক্ত থাকে। এই খণ্ডগুলো একে অপরের উপর নির্ভরশীল নয়। প্রতিটি খণ্ডই স্বাধীনভাবে পূর্ণাঙ্গ অর্থ প্রকাশ করতে পারে।
অর্থাৎ, যে বাক্যে দুই বা ততোধিক প্রধান খণ্ড (Independent Clause) সংযোজক (যেমন- আর, কিন্তু, অথবা) দিয়ে যুক্ত থাকে, তাকে যৌগিক বাক্য বলে।
উদাহরণ:
“আমি যেতে চাই, কিন্তু সময় নেই।”
(এখানে “আমি যেতে চাই” এবং “সময় নেই” দুটি প্রধান খণ্ড, যা “কিন্তু” দিয়ে যুক্ত।)
(৩) অর্থ অনুসারে বাক্যের শ্রেণীবিভাগ

অর্থ ও উদ্দেশ্য অনুসারেও বাক্যকে ৬টি শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। এগুলো হলো-
- বিবৃতিমূলক বাক্য: যে বাক্যে কোনো বিষয়ে বিবৃতি বা তথ্য দেওয়া হয়, তাকে বিবৃতিমূলক বাক্য বলে।
যেমন- “সূর্য পূর্বদিকে ওঠে।” - প্রশ্নবোধক বাক্য: যে বাক্যে কোনো প্রশ্ন করা হয়, তাকে প্রশ্নবোধক বাক্য বলে। এর শেষে প্রশ্নবোধক চিহ্ন (?) ব্যবহৃত হয়।
যেমন- “তুমি কোথায় যাচ্ছ?” - আদেশমূলক বাক্য: যে বাক্যে আদেশ, নিষেধ, উপদেশ বা অনুরোধ প্রকাশ করা হয়, তাকে আদেশমূলক বাক্য বলে।
যেমন- “দরজা বন্ধ করো।” - বিস্ময়সূচক বাক্য: যে বাক্যে আনন্দ, বিস্ময়, দুঃখ বা উত্তেজনার মতো আবেগ প্রকাশ পায়, তাকে বিস্ময়বোধক বাক্য বলে। এর শেষে বিস্ময়বোধক চিহ্ন (!) থাকে।
যেমন- “কী সুন্দর ফুল!” - ইচ্ছাসূচক বাক্য: যে বাক্যে কোনো ইচ্ছা, আশীর্বাদ বা প্রার্থনা প্রকাশ করা হয়, তাকে ইচ্ছামূলক বাক্য বলে।
যেমন- “তোমার মঙ্গল হোক।”
(৪) বাক্যের গঠন
বাক্যের গঠন বোঝার জন্য আমাদের জানতে হবে এর প্রধান উপাদানগুলো।
একটি বাক্য সাধারণত ২টি প্রধান অংশ নিয়ে গঠিত হয়। যথা-
- কর্তা (Subject): যে বা যার সম্পর্কে কিছু বলা হয়।
- বিধেয় (Predicate): কর্তা সম্পর্কে যা বলা হয়।
উদাহরণ:
“রাহিম (কর্তা) বই পড়ে (বিধেয়)।”
(এখানে “রাহিম” হলো কর্তা, যার সম্পর্কে বলা হচ্ছে, আর “বই পড়ে” হলো বিধেয়, যা কর্তার কাজ বা অবস্থা বোঝাচ্ছে।)
তবে বাংলা ভাষায় সব সময় কর্তা ও বিধেয় স্পষ্টভাবে উল্লেখ না থাকলেও বাক্য সম্পূর্ণ অর্থ প্রকাশ করতে পারে।
উদাহরণ:
“বৃষ্টি হচ্ছে।”
(এখানে কর্তা (“বৃষ্টি”) উল্লেখ আছে, কিন্তু বাক্যটি খুবই সংক্ষিপ্ত।)
এক বা একাধিক পদ একত্রিত হয়ে যখন বক্তার মনের ভাব সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ করে, তখন তাকে বাক্য বলে।
সহজ ভাষায় বলতে গেলে, কিছু শব্দ যখন একটি নির্দিষ্ট নিয়মে সাজানো হয় এবং সেই শব্দগুলো একটি সম্পূর্ণ অর্থ প্রকাশ করে, তখন তাকে বাক্য বলা হয়।
একটি সার্থক বাক্য গঠনের জন্য ৩টি গুণ থাকা আবশ্যক। যথা-
- আকাঙ্ক্ষা: বাক্যের অর্থ পরিষ্কারভাবে বোঝার জন্য এক পদের পর অন্য পদ শোনার যে ইচ্ছা, তা-ই আকাঙ্ক্ষা। বাক্য শেষ হওয়ার পরও যদি আরও কিছু শোনার আগ্রহ থাকে, তবে সেটি সার্থক বাক্য নয়।
- আসত্তি: বাক্যের অর্থ সংগতি রক্ষার জন্য সুশৃঙ্খল পদ বিন্যাসই আসত্তি। বাক্যের পদগুলো এলোমেলোভাবে সাজানো থাকলে তা বাক্য হিসেবে গণ্য হবে না।
- যোগ্যতা: বাক্যস্থিত পদগুলোর অর্থগত ও ভাবগত মিলনবন্ধনের যোগ্যতা থাকতে হবে। অর্থাৎ, বাক্যের শব্দগুলোর মধ্যে সঙ্গতি থাকতে হবে এবং তা বাস্তবসম্মত হতে হবে।
উদাহরণ:
“ছেলেটি বিদ্যালয়ে যায়।”
(এখানে বক্তার মনের ভাব সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ পেয়েছে)
“আমি ভাত।”
(এটি বাক্য নয়, কারণ এখানে আকাঙ্ক্ষা রয়েছে)
“যাব আমি কাল বাজারে।”
(এটি বাক্য নয়, কারণ এখানে পদের সঠিক বিন্যাস বা আসত্তি নেই)
“মাছ আকাশে উড়ে।”
(এটি বাক্য নয়, কারণ এখানে যোগ্যতার অভাব রয়েছে)
(৫) বাক্যের গুরুত্ব
বাক্য ছাড়া ভাষা অচল। আমরা যখন কথা বলি বা লিখি, তখন শব্দগুলোকে বাক্যে গঠন না করলে আমাদের বক্তব্য পরিষ্কার হয় না।
বাক্যের মাধ্যমে আমরা-
- আমাদের চিন্তা স্পষ্টভাবে প্রকাশ করতে পারি।
- অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারি।
- জটিল ধারণাকে সহজে বোঝাতে পারি।
যেমন- যদি আমরা শুধু বলি “বই”, “পড়া”, “আমি”, তাহলে কেউ বুঝতে পারবে না আমরা কী বলতে চাই। কিন্তু যখন বলি “আমি বই পড়ি”, তখন অর্থ পূর্ণ হয়।
বাক্য হলো ভাষার প্রাণ। এটি শুধু শব্দের সমষ্টি নয়, বরং আমাদের মনের ভাবকে জীবন্ত করে তোলার একটি মাধ্যম। বাংলা ভাষায় বাক্যের গঠন, প্রকার ও ব্যবহার বোঝা গেলে আমরা আরও সুন্দরভাবে নিজেদের প্রকাশ করতে পারি। তাই বাক্য গঠনের নিয়মকানুন শিখে আমাদের ভাষাকে আরও সমৃদ্ধ করা উচিত।
বন্ধুরা, আজকের মত এখানেই শেষ করছি। বাক্য সম্পর্কে আপনার আরও কোনো প্রশ্ন জানার বা মতামত থাকলে কমেন্ট বক্সে জানাতে ভুলবেন না!
শিক্ষা ও লেখাপড়া সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট লেখাপড়া’ (inbangla.net/lekhapora) এর সাথেই থাকুন।
অনুরোধ!! পোষ্ট ভালো লাগলে প্লিজ উপরের শেয়ার আইকনে ক্লিক করে পোষ্টটি শেয়ার করে দিন।