বিলাতি গাব একটি বৃক্ষজাতীয় উদ্ভিদ। গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলের সুন্দর ও সুস্বাদু ফলগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম।
বাংলাদেশে কুষ্টিয়া, যশোর, ফরিদপুর, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, পিরোজপুর এবং পাহাড়ী এলাকায় বিলাতী গাব গাছ দেখা যায়।

বিলাতি গাবের গাছ মাঝারী থেকে উঁচু বৃক্ষ, ফল গোলাকার।
বিলাতি গাব অনেকেই যত্ন সহকারে লাগিয়ে থাকেন। ফল হিসেবে দেশের সব এলাকায় এটি সমভাবে পরিচিত নয়। এর স্বাদ গন্ধ ও পুষ্টিমান সম্পর্কে সর্বমহলে ধারণার অভাব থাকায় সম্ভাবনাময় এ ফলটি তেমন বিস্তার লাভ করেনি।
বিলাতি গাবের ত্বক রেশমী লোমে আবৃত, রং বাদামী থেকে উজ্জ্বল লাল। ফলের শাঁস সাদাটে, আঠালো ও সুস্বাদু। পুরুষ ও স্ত্রী ফুল আলাদা গাছে হয়।
(১) বিলাতি গাবের জাত ও বৈশিষ্ট্য
ক) বারি বিলাতি গাব-১
দেশিয় জার্মপ্লাজম সংগ্রহ করে দীর্ঘদিন পরীক্ষা নিরীক্ষার পর বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ‘বারি বিলাতি গাব-১’ নামক জাতটি নির্বাচন করা হয়। সারা দেশে চাষাবাদের জন্য ২০১১ সালে জাতটি অনুমোদন করা হয়।

- নিয়মিত ফলদানকারী উচ্চ ফলনশীল জাত।
- গাছ খাড়া, চির সবুজ ও অত্যধিক ঝোপালো।
- মাঘ-ফাল্গুন মাসে গাছে ফুল আসে এবং শ্রাবণ-ভাদ্র মাসে ফল আহরণ উপযোগী হয়।
- গাছপ্রতি ৩৭২টি ফল ধরে যার ওজন ১২১ কেজি।
- ফল বড় (৩২৫ গ্রাম), গোলাকার ও আকর্ষণীয় উজ্জ্বল লাল বর্ণের।
- ফলের শাঁস ধূসর বর্ণের, আঠালো, সুগন্ধযুক্ত এবং মিষ্টি (টিএসএস ১৫%)।
- ফলপ্রতি ৩-৪টি বীজ থাকে, বীজ ছোট, খোসা পাতলা, খাদ্যোপযোগী অংশ ৭২%।
- হেক্টরপ্রতি ফলন ৩০-৩৫ টন।
- দেশের সব এলাকায় চাষযোগ্য।
(২) বিলাতি গাব চাষের পদ্ধতি
ক) জলবায়ু ও মাটি
গ্রীষ্ম ও অব-গ্রীষ্ম মন্ডলের উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়া বিলাতি গাব চাষের জন্য উপযোগী।
প্রায় সব ধরনের মাটিতে বিলাতি গাব গাছ সহজেই হতে পারে, তবে ঊর্বর মাটিতে বিলাতি গাব ভাল হয়। অনুর্বর মাটিতেও বিলাতি গাব ভাল ফলন দিতে সক্ষম।
বিলাতি গাব গাছ অত্যন্ত কষ্ট সহিষ্ণু এবং অনেকটা বিনা যত্নেই ভাল ফলন দিয়ে থাকে। এরা যেমন খরা সহ্য করতে পারে তেমনি গোড়ায় দীর্ঘদিন পানি জমে থাকলেও ক্ষতিগ্রস্ত হয় না।
খ) বংশ বিস্তার
- বীজের মাধ্যমে সাধারণত বিলাতি গাবের বংশ বিস্তার করা হয়ে থাকে।
- বীজাবরণ বেশ শক্ত বিধায় পরিপক্ক ফল থেকে বীজ সংগ্রহ করে ২৪-৩০ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে নিলে অঙ্কুরোদ্গম ত্বরান্বিত হয়।
- বীজ দ্বারা বংশ বিস্তার করা হলে মাতৃ গাছের গুণাগুণ অক্ষুণ্ণ থকে না বিধায় অযৌন পদ্ধতিতে বংশ বিস্তার করা উত্তম।
- অঙ্গজ উপায়ে গুটি কলম এবং এক বছর বয়স্ক বিলাতি গাবের চারার উপর ভিনিয়ার/ক্লেফট পদ্ধতিতে সহজেই বিলাতি গাবের কলম করা যায়।
- বৈশাখ থেকে আষাঢ় মাস কলম করার উপযুক্ত সময়।
গ) রোপণ পদ্ধতি
সমতল ভূমিতে বর্গাকার বা ষড়ভুজ প্রণালীতে লাগানো যেতে পারে। কিন্তু উঁচু নিচু পাহাড়ে কন্টুর রোপণ প্রণালী অনুসরণ করতে হবে। মে থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত বিলাতি গাবের চারা রোপণ করা যায়।
ঘ) মাদা তৈরি
- চারা রোপণের ১৫-২০ দিন পূর্বে উভয় দিকে ৬.০ মিটার দূরত্বে ১ ⨉ ১ ⨉ ১ মিটার মাপের গর্ত করতে হবে।
- প্রতি গর্তে ১৫-২০ কেজি কম্পোস্ট বা পচা গোবর, ৩-৫ কেজি ছাই, ২০০ গ্রাম টিএসপি এবং ২৫০ গ্রাম এমওপি সার প্রয়োগ করে গর্তের উপরের মাটির সাথে ভালভাবে মিশিয়ে গর্ত ভরাট করতে হবে।
- গর্ত ভরাট করার ১০-১৫ দিন পর চারা রোপণ করতে হবে।
ঙ) রোপণ পদ্ধতি
- এক বছর বয়সী সুস্থ, সবল ও রোগমুক্ত চারা/কলম রোপণের জন্য নির্বাচন করতে হবে।
- গর্তে সার প্রয়োগের ১০-১৫ দিন পর নির্বাচিত চারা/কলমটি গর্তের মাঝখানে সোজাভাবে লাগিয়ে তারপর চারদিকে মাটি দিয়ে চারার গোড়ায় মাটি সামান্য চেপে দিতে হবে।
- রোপণের পরপর খুঁটি দিয়ে চারা/কলমটি খুটির সাথে বেঁধে দিতে হবে। অতঃপর প্রয়োজনমতো পানি ও বেড়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
চ) সার প্রয়োগ
প্রতিটি গাছের জন্য সারের পরিমাণ নিম্নরূপ হবে।
সবটুকু সার তিন ভাগ করে বৈশাখন্ডজ্যৈষ্ঠ ও ভাদ্র-আশ্বিন ও মাঘ-ফাল্গুন মাসে প্রয়োগ করতে হবে।
প্রতিবার সার দেওয়ার পর প্রয়োজনে পানি দিতে হবে।
সার | গাছের বয়স ১-৩ বছর | গাছের বয়স ৪-৭ বছর | গাছের বয়স ৮-১০ বছর | গাছের বয়স ১০ বছর এর উর্ধ্বে |
গোবর/কম্পোস্ট সার (কেজি) | ১০-১৫ | ১৫-২০ | ২০-২৫ | ২৫-৩০ |
ইউরিয়া (গ্রাম) | ২০০-৩০০ | ৩০০-৪৫০ | ৫০০-৮০০ | ১০০০ |
টিএসপি (গ্রাম) | ১৫০-২০০ | ২০০-৩০০ | ৩০০-৪০০ | ৫০০ |
এমওপি (গ্রাম) | ১৫০-২০০ | ১৫০-২০০ | ৩০০-৪০০ | ৫০০ |
ছ) সেচ প্রয়োগ
চারা রোপণের প্রথমদিকে প্রয়োজনমতো সেচ দেয়া দরকার। খরা বা শুকনো মৌসুমে পানি সেচ দিলে ফল ঝরা কমে, ফলন বৃদ্ধি পায় এবং ফলের আকার ও অন্যান্য গুণাগুণ ভাল হয়।
জ) ডাল ছাঁটাইকরণ
চারা অবস্থায় গাছকে সুন্দর কাঠামো দেয়ার জন্য অপ্রয়োজনীয় ডালপালা ছাঁটাই করে রাখতে হবে। ছাঁটাইয়ের মাধ্যমে গাছের মরা, রোগাক্রান্ত ও পোকামাকড় আক্রান্ত ডালপালা কেটে পরিষ্কার করতে হবে।
ঝ) ফল সংগ্রহ
- শীতের শেষে গাছে ফুল আসে এবং বর্ষার শেষভাগে শ্রাবণ-ভাদ্র মাসে ফল পাকে।
- ফল পূর্ণতা প্রাপ্তির সাথে সাথে হালকা লাল থেকে উজ্জ্বল বর্ণ ধারণ করে।
- পরিপক্ক ফল হাত দিয়ে কিংবা জালিযুক্ত বাঁশের কোটা দিয়ে সংগ্রহ করতে হয়।
বিভিন্ন উদ্ভিদ, গাছ ও ফসল যেমন- বিভিন্ন শস্য, সবজি, ফুল, ফল ইত্যাদি চাষাবাদ সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট চাষাবাদ’ (inbangla.net/casabad) এর সাথেই থাকুন।