বেবী কর্ণ এক ধরনের ভুট্টা। ইহা অত্যন্ত কচি অবস্থায় সবজি, সুপ, সালাদ, নুডুলস এর সাথে অথবা কাঁচা অবস্থায় রান্না ছাড়াই খাওয়া যায়। ভুট্টার মোচা দানা হওয়ার পূর্বেই সবুজ খোসা অপসারণ করে ব্যবহার করতে হয়।
নিম্নে বেবী কর্ণ ভুট্টা চাষ পদ্ধতি বর্ণনা করা হলো-
মাটি:
উঁচু ও মাঝারী উঁচু উর্বর বেলে দোআঁশ মাটি অথবা পানি দাঁড়ায় না এমন এঁটেল মাটিতে বেবী কর্ণ চাষ করা যায়।
জমি তৈরি:
মাটির ‘জো’ থাকা অবস্থায় জমির প্রকারভেদে প্রথমে ৩-৪টি আড়াআড়ি চাষ ও সংগ্রহের উপযোগী বেবী কর্ণ দুটার মোচা মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে নিতে হবে।
জাত:
প্যাসিফিক-১, প্যাসিফিক-৫, প্যাসিফিক-৪২১, প্যাসিফিক-৪২৩, কার্গিল-৭২৯, সিবা, গোল্ডেন বেরী, সাল ডাঙ্গা, সোয়ান-২, সোয়ান-৩, র্যাংজিট, ইত্যাদি।
বপনের সময়:
সারা বছর নেয়ী কর্ণ চাষ করা যায় (বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ়, ও শ্রাবণ মাস ছাড়া)।
বীজের হার:
হেক্টরপ্রতি ২৫-৩০ কেজি।
বীজের বপন পদ্ধতি:
সারি থেকে সারির দূরত্ব ৪০-৫০ সেমি, গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ২০-২৫ সেমি।
সারের পরিমাণ:
সারের নাম | সারের পরিমাণ/হেক্টর |
ইউরিয়া | ২৫০-৩০০ কেজি |
টিএসপি | ১২৫-১৫০ কেজি |
এমপি | ৮০-১০০ কেজি |
জিপসাম (প্রয়োজন বোধে) | ১২৫-১৫০ কেজি |
জিংক সালফেট (প্রয়োজনবোধে) | ৮-১০ কেজি |
সারের প্রয়োগ পদ্ধতি:
জমি তৈরির শেষ পর্যায়ে ইউরিয়া ১/৩ অংশ ও অন্যান্য সারের সবটুকুই জমিতে ছিটিয়ে চাষ দিয়ে মাটির সাথ ভালভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। বাকি ইউরিয়া সমান ২ ভাগ করে চারা গজানার ১৫-২০ দিন এবং ৩৫-৪০ দিনের মাধায় উপরি প্রয়োগ করতে হবে। উর্বরতাভেদে সারের তারতম্য হতে পারে।
আগাছা দমন:
গাছের বয়স এক মাস না হওয়া পর্যন্ত জমি অবশ্যই আগাছামুক্ত রাখতে হবে।
সেচ ও পানি নিষ্কাশন:
রবি মৌসুমে সাধারণত ২ বার সেচের প্রয়োজন হয় এবং ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগের সময় দিলে ভাল হয়। খরিফ মৌসুমে খরা দেখা দিলে সেচ দিতে হবে। খরিফ মৌসুমে অতি বৃষ্টিতে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে।
বেবী কর্ণের পুরুষ ফুল অপসারণ:
পুরুষ ফুল কচি অবস্থায় ফুটে বের হওয়ার পূর্বেই টাসেল ধরে টান দিয়ে অপসারণ করতে হয়।
ফসল সংগ্রহ:
নিচের দিকে মোচার মাথায় যখন সিদ্ধগুলো ২.৫-৩.০ সেমি লম্বা হয় তখন ধারালো চাকু বা কাচি দ্বারা মোচাটি গাছ থেকে কেটে নিতে হবে।
ফলন:
হেক্টরপ্রতি ফলন ৪-৫ টন। গো-খাদ্য হিসেবে (গাছ) ২০-২৫ টন।
জীবন কাল:
গ্রীষ্মকাল: ৫০-৬০ দিন, শীতকাল। ৭০-৮০ দিন।
সংরক্ষণ:
বেবী কর্ণের মোচা গাছ থেকে সংগ্রহ করার পর উপরের আবরণসহ ২-৩ দিন সংরক্ষণ করা যায়। কিন্তু আবরণ অপসারণের পর পলিব্যাগে পুরে নিম্নতাপে ফ্রিজে সংরক্ষণ করলে ১০-১৫ দিন সংরক্ষণ করা যায়। এছাড়া পানি, চিনি, লবণ ও ভিনেগারের দ্রবণে বায়ু রোধক পাত্রে (ক্যানে) বেবী কর্ণ সংরক্ষণ করা হলে মাসের পর মাস ব্যবহার করা যায়। প্রতি ক্যানে ১ কেজি বেবীকর্ণ থাকে।
পশু-পাখি পালন ও চাষাবাদ সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট কৃষি’ (inbangla.net/krisi) এর সাথেই থাকুন।
[সূত্র: বিএআরআই ও বিডব্লিউএমআরআই]