Skip to content

ভাইরাস সৃষ্ট ছোঁয়াচে গরুর রোগ সমূহ

ভাইরাস সৃষ্ট ছোঁয়াচে গরুর রোগ সমূহ ও তার লক্ষণ-প্রতিকার

ভাইরাস কারণে হওয়া ছোঁয়াচে গরুর রোগ সমূহ সাধারনত ৩টি। যেই রোগগুলো ভাইরাসের আক্রমণে সৃষ্টি হয় ও ছোঁয়ার ফলে হয় বা এক পশু থেকে অন্য পশু তে রোগগুলো সংক্রমিত হয়।

এছাড়াও ব্যাকটেরিয়া সৃষ্ট ছোঁয়াচে গরুর রোগ সমূহ নিয়ে আলাদা একটা পর্বে আলোচনা করা হয়েছে, যার লিংক এই পোষ্টের শেষে সংযুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।

তো চলুন জানি ভাইরাস সৃষ্ট ছোঁয়াচে গরুর রোগ সমূহ সম্পর্কে।

ভাইরাস এর অংকিত চিত্র, ভাইরাস সৃষ্ট ছোঁয়াচে গরুর রোগ সমূহ

(১) গরুর রোগ কি কি প্রকারের হয়?

গৃহপালিত পশু গরুর সাধারনত ৫ ধরনের রোগ-ব্যাধি হয়ে থাকে। যেমন-

  1. ছোঁয়াচে বা সংক্রামক রোগ
  2. পরজীবী ঘটিত রোগ
  3. অপুষ্টিজনিত রোগ
  4. পরিপাকতন্ত্রের রোগ
  5. বিপাকীয় রোগ

সংক্রামক রোগ গৃহিপালিত পশুর মারাত্মক সংক্রামক রোগ।

সাধারণত দুধরনের রোগজীবাণু দ্বারা গরুর রোগ সমূহ সংক্রমিত হয়। যেমন-

  1. ভাইরাস জীবাণু দ্বারা সংক্রামিত রোগ
  2. ব্যাকটেরিয়া জীবাণ দ্বারা সংক্রামিত রোগ

(২) ছোঁয়াচে গরুর রোগ সমূহ ছড়ানোর কারণ কি?

পশুর দেহে সংক্রামক রোগের সাধারণত মুখগহ্বর, নাসারন্দ্র চামড়ার ক্ষত,যোনি পথ, মল-মূত্র ত্যাগের রাস্তা, বাটের ছিদ্র, চোখ ইত্যাদির মাধ্যমে প্রবেশ করে।

আক্রান্ত পশু হতে সুস্থ পশুতে রোগজীবাণু ছড়ানোর প্রধান মাধ্যমগুলো হলো-

১। বাতাসের মাধ্যমে।

২। জীবজন্ত ও কীটপতঙ্গ যেমন- কুকুর,বিড়াল, শৃগাল,বেজী,ইদুর, মশা,মাছি ইত্যাদি বিভিন্ন কীটপতঙ্গের মাধ্যমে।

See also  অপুষ্টিজনিত গরু-ছাগলের রোগ এবং ভিটামিনের অভাবজনিত গরু-ছাগলের রোগের লক্ষণ, চিকিৎসা ও প্রতিকার

৩। বিভিন্ন পাখি যেমন- চিল,শকুন,কাক ইত্যাদির মাধ্যমে।

৪। দুষিত পানির মাধ্যমে রোগজীবাণু সুস্থ পশুতে সংক্রামিত হতে পারে।

৫। হাটবাজার হতে ক্রয়কৃত পশু বা পশুজাতদ্রব্যের মাধ্যমে পশুর চামড়া ও লোমের মাধ্যমে রোগজীবাণু সংক্রামিত হতে পারে।

৬। খামারের পরিচর্যাকারীর দ্বারাও রোগজীবাণু ছড়াতে পারে।

৭। যানবাহনের মাধ্যমেও রোগজীবাণু সংক্রামিত হতে পারে।

(৩) ছোঁয়াচে গরুর রোগ সমূহের প্রতিরোধ ব্যবস্থা কি?

সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পশুকে বাঁচানো সম্ভব হয় না।

ভাইরাস জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত পশু অনেক ক্ষেত্রে লক্ষণ প্রকাশ হওয়ার পুর্বেই মারা যায়। চিকিৎসা করার সময় পাওয়া যায় না।

ব্যাকটেরিয়া জীবাণু গঠিত রোগের প্রাথমিক অবস্থায় লক্ষণ দেখা দেওয়ার সাথে সাথে চিকিৎসা করালে ফল পাওয়া যায়।

ছোঁয়াচে গরুর রোগ সমূহের প্রতিরোধ করতে হলে-

১। স্বাস্থ্যসম্মত লালন পালন ব্যবস্থা, নিয়মিত জীবাণুনাশক দিয়ে ঘর ধুয়ে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।

২। বাজার হতে ক্রয় করা বা অন্য স্থান হতে সংগ্রহ করা পশুকে এনেই খামারের সুস্থ পশুর সাথে রাখা যাবে না। পশুকে দু থেকে তিন সপ্তাহ আলাদা ঘরে রেখে সুস্থ প্রমানিত হলে খামারের অন্যান্য পশুর সাথে রাখা যাবে।

৩। প্রতিষেধক টিকা প্রদান-সুস্থ অবস্থায় পশুকে নিয়মিত প্রতিষেধক টিকা দিতে হবে।

৪। আক্রান্ত পশুকে বাজারে বিক্রয় করার জন্য বা অন্য কোথায়ও নেওয়া যাবে না।

৫। অসুস্থ পশুকে সুস্থ্যগুলো হতে আলাদা করে রাখতে হবে।

৬। বাসস্থানে যাতে বন্য জীবজন্ত পাখি আসতে না পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে, তাছাড়া মশা-মাছি, ইদুর ও অন্যান্য কীটপতঙ্গ ধ্বংস করতে হবে।

৭। পশুর খাদ্য সব সময় টাটকা, নির্ভেজাল হতে হবে। সেঁতসেঁতে ছাতাপড়া খাদ্য পশুকে কখনও খেতে দেওয়া উচিৎ নয়।

৮। পশুকে দৈনিক পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি খেতে দিতে হবে। বহিরাগত দর্শকদের খামারে প্রবেশ করতে দেওয়া উচিত হবে না।

See also  ছাগল ও গরুর ভাইরাস জনিত রোগ কি কি? ছাগলের পিপিআর রোগের লক্ষণ ও চিকিৎসা, গরুর ক্ষুরা রোগের চিকিৎসা

৯। খামারে প্রবেশ করতে হলে পা বা জুতার তলা জীবাণুনাশক মিশ্রিত পানিতে ডুবিয়ে নিতে হবে।

১০। সংক্রামক রোগে মৃত পশুকে যেখানে সেখানে না ফেলে সাথে সাথে গভীর গর্ত করে পুঁতে ফেলতে হবে এবং চুন ছিটিয়ে দিতে হবে।

(৪) ছোঁয়াচে গরুর রোগ সমূহ কোনগুলো?

ক) ভাইরাস সৃষ্ট ছোঁয়াচে গরুর কি কি রোগ হয়?

  1. ক্ষুরারোগ (FMD)
  2. গো-বসন্ত (Rinderpest)
  3. জলাতংক- (Rabies)

খ) ব্যাকটেরিয়া সৃষ্ট ছোঁয়াচে গরুর কি কি রোগ হয়?

  1. তড়কা (Anthrax)
  2. গলাফুলা (Haemorrhagic septicaemia)
  3. বাদলা (Black quarter)।
  4. ওলান প্রদাহ (Mastitis)।
  5. বাছুরের নিউমোনিয়া (Calf pneumonia)

এ ছাড়া ও বা ফাংগাস জীবাণু দ্বারাও কিছু রোগ সংঘঠিত হয়ে থাকে।

(৫) ভাইরাস সৃষ্ট গরুর রোগ ও তার প্রতিকার

ক) ক্ষুরারোগ (Foot & Mouth Disease)

জোড়া খুর বিশিষ্ট পশু এ রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। সংস্পর্শ, খাদ্যদ্রব্য,লালা ও অন্যান্য ব্যবহার্য দ্রব্য এবং বাতাসের মাধ্যমে রোগ জীবাণু সুস্থ পশুতে সংক্রমিত হয়ে থাকে।

রোগের লক্ষণ:

  • মুখে, জিহ্বায় ও খুরায় ফোস্কা পড়ে। পরে ফোস্কা ফেটে ঘা হয়।
  • মুখ হতে লালা ঝরে।
  • শরীরের তাপমাত্রা প্রথমে বেড়ে যায়। পরে স্বাভাবিক হতে পারে।
  • অসুস্থ পশু কিছু খেতে পারে না। হাঁটতে পারে না। ফলে কোন কাজই করতে পারে না। পশু দুর্বল হয়ে যায়।
  • গাভীর দুধ কমে যায়।
  • বড় পশু কম মারা যায়। তবে, আক্রান্ত বাছুরকে বাঁচানো যায়।

রোগের প্রতিকার:

অসুস্থ পশুকে সুস্থ পশু থেকে আলাদা করে মুখের ও পায়ের ঘায়ের চিকিৎসা করতে হয়। পশুকে নরম খাদ্য খাওয়াতে হয়। রোগ দেখা দেওয়ার সাথে সাথে সমস্ত পশুকে রোগের টিকা দিতে হয়।

রোগ প্রতিরোধ:

১। নিয়মিত টিকা প্রদান ও

২। পশু চিকিৎসকের পরামর্শমত রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহন।

খ) গো-বসন্ত (Rinderpest)

এটি একটি ভাইরাস জনিত মারাত্মক সংক্রামক রোগ। গরুও মহিষ এ রোগে আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত প্রাণীর সংস্পর্শ, খাদ্যদ্রব্য,লালা ও অন্যান্য ব্যবহার্য দ্রব্য এবং বাতাসের মাধ্যমে রোগ জীবাণু সুস্থ পশুতে সংক্রমিত হয়ে থাকে।

See also  গরু-ছাগলের রোগ কত প্রকার ও কি কি? শ্রেণীবিভাগ

রোগের লক্ষণ:

  • লক্ষণ শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়।
  • মুখে ও খাদ্যনালিতে ঘা হয়।
  • পায়খানা প্রথমে শক্ত হয়, পরে পাতলা হয়।
  • মুখে দুর্গন্ধ হয়, শ্বাসকষ্ট হয়।
  • নাক ও চোখ দিয়ে পানি ঝরে।
  • পশুর খাওয়া বন্ধ হয়ে যায়।
  • আক্রান্ত হওয়ার পর ২৪ ঘন্টা হতে এক সপ্তাহের মধ্যে পশু মারা যায়।

রোগের প্রতিকার:

প্রতিকার অসুস্থ পশুর চিকিৎসা করে লাভ হয় না। তাই রোগ প্রতিরোধের জন্য ব্যাবস্থা নিতে হবে।

রোগ প্রতিরোধ:

১। নিয়মিত টিকা প্রদান ও

২। পশু চিকিৎসকের পরামর্শমত রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়।

গ) জলাতংক (Rabies)

সাধারণত কুকুর,বিড়াল বা বন্য প্রাণীর কামড়ে এ রোগ হয়ে থাকে। আক্রান্ত প্রাণীর লালা সুস্থ প্রাণীর দেহের ক্ষতে লেগে ও রোগ ছড়াতে পারে।

রোগের লক্ষণ:

  • লক্ষণ মুখ দিয়ে লালা ঝরে, আস্তে আস্তে পক্ষাঘাত দেখা দেয়।
  • দেহের পিছনের অংশ অবশ হয়ে যায় এবং কিছুই গিলতে পারেনা।

রোগের প্রতিকার:

প্রতিকার লক্ষণ দেখা দেওয়ার পর চিকিৎসা করে লাভ হয় না। তাই রোগ প্রতিরোধই উত্তম।

রোগ প্রতিরোধ:

১। নিয়মিত টিকা প্রদান ও

২। পশু চিকিৎসকের পরামর্শমত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়।

(৬) ব্যাকটেরিয়া সৃষ্ট গরুর রোগ ও তার প্রতিকার

এখানে পড়ুন: ব্যাকটেরিয়া সৃষ্ট ছোঁয়াচে গরুর কি কি রোগ হয়? উক্ত গরুর রোগ ও তার প্রতিকার

বিভিন্ন গবাদি পশু যেমন- গরু পালন, ছাগল পালন, মহিষ পালন, ভেড়া পালন ইত্যাদি সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট গবাদি’ (inbangla.net/gobadi) এর সাথেই থাকুন।

Leave a Reply

nv-author-image

ইন বাংলা নেট গবাদি

বিভিন্ন গবাদি পশু যেমন- গরু পালন, ছাগল পালন, মহিষ পালন, ভেড়া পালন ইত্যাদি সম্পর্কিত যা কিছু বাংলাতে।View Author posts