Skip to content

মাসকলাই ডাল চাষ পদ্ধতি

মাসকলাই ডাল চাষ পদ্ধতি

মাসকলাই ডাল এর ইংরেজি হলো- Urad bean বা black gram (mashhkalai)। মাসকলাই ডাল এর বৈজ্ঞানিক নাম হলো- Vigna mungo।

বাংলাদেশের অনেক ডাল ফসলের চাষ হয়। ২০২০ সালে তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশে ডালের মধ্য মধ্যে মাসকালাই এর স্থান চতুর্থ। বাংলাদেশে মোট ডাল ফসলের ৯-১১% মাসকালাই থেকে আসে। বাংলা দেশের উত্তর ও উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে বিশেষ করে চাঁপাইনবাবগঞ্জে এ ডাল ফসলের চাষ বেশি হয়ে থাকে।

মাসকলাই ডাল চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা

মাসকালাই খরা সহিষ্ণু ফসল হওয়ায় উচ্চ তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে। এ ফসলের কাঁচা গাছ গোখাদ্য ও সবুজ সার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এখানে আমরা মাসকলাই ডাল চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করব।

(১) জমি নির্বাচন

পানি জমে থাকে না এমন সুনিষ্কাশিত দোঁআশ মাটি মাসকালাই চাষের জন্য উপযোগী। নিচু থেকে উচু সব ধরনের জমিতেই মাসকালাই চাষ করা যায়।

(২) জলবায়ু

মাসকালাই উচ্চ জলবায়ু পছন্দ করে। 

(৩) জাত

মাসকালাই এর উফশী (উচ্চ ফলনশীল) ও স্থানীয়, জাত রয়েছে। যেসব হলো- 

  • উফসী জাত: শরৎ, হেমন্ত, পান্থ, বিনামাস-১, বিনামাস-২; 
  • স্থানীয় জাত: সাধুহাটি, রাজশাহী।

(৪) জমি তৈরি

মাসকালাই চাষের জন্য মসৃণ ও মিহিভাবে জমি তৈরির দরকার হয় না। মাটির প্রকারভেদে ২-৩ টি আড়াআড়ি চাষ ও মই দিয়ে জমি সমান করে তৈরি করতে হয়।

(৫) বীজহার

বীজ বা ডালের উদ্দেশ্য ছিটিয়ে বুনলে প্রতি শতকে ১৪০-১৬০ গ্রাম এবং সারিতে বুনলে ১০০-১২০ গ্রাম বীজ প্রয়োজন হয়। আবার গোখাদ্য বা সবুজ সারের উদ্দেশ্যে বীজ ছিটিয়ে বুনতে হয় এবং এক্ষেত্রে প্রতি শতকে ২০০-২৪০ গ্রাম বীজ দরকার হয়।

পড়ুন
মাসকলাই চাষের, জাত, সময় ও পদ্ধতিসমূহ

(৬) বীজ বপনের সময়

ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ থেকে মধ্য সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মাসকালাই বীজ বপন করা যায়।

  • বীজ বপন পদ্ধতি মাসকালাইয়ের বীজ সারিতে বা ছিটিয়ে বপন করা যায়। তবে ডাল বা বীজের জন্য সারিতে বপন করাই উত্তম।
  • সারিতে বপন করার ক্ষেত্রে সারি থেকে সারির দূরত্ব ৩০ সে.মি এবং বীজ থেকে বীজের দূরত্ব ১০ সে.মি রাখতে হয়।
  • সারিতে বপন করার ক্ষেত্রে বীজগুলো ২-৩ সে.মি গভীর পুতে দিতে হয়।
  • ছিটানো পদ্ধতিতে শেষ চাষের সময় বীজগুলো ছিটিয়ে দিয়ে মই দিয়ে বীজ ঢেকে দিতে হয়।

(৭) বীজ শোধন

বীজবাহিত বিভিন্ন রোগ দমনার্থে বীজ শোধন করে নিয়ে বপন করতে হয়। 

(৮) সার ব্যবস্থাপনা

মাসকালাই চাষে প্রতি শতকে ১৬০-১৮০ গ্রাম ইউরিয়া, ৩৪০-৩৮০ গ্রাম টিএসপি, ১২০-১৬০ গ্রাম এমওপি এবং ১৬-২০ গ্রাম অনুবীজ সার প্রয়োগ করতে হয়।

(৯) সার প্রয়োগের নিয়মাবলি

মাসকলাইয়ের জমি তৈরির শেষ চাষের সময় সব সার প্রয়োগ করতে হয়। অণুবীজ বা জীবাণুসারে প্রয়োগ করা হলে ইউরিয়া সার দেয়ার প্রয়োজন পড়ে না। প্রতি কেজি মাসকালাই বীজের জন্য ৮০ গ্রাম হারে অণুবীজ বা জীবাণুসার দরকার হয়।

(১০) আন্তঃপরিচর্যা

মাসকলাই ডাল চাষে নিম্নোক্ত পরিচর্যাগুলো করতে হয়-

i) মাসকালাইয়ের চারা গজানোর পর আগাছা জন্মালে ১৫-২০ দিন পর নিড়ানি দিয়ে আগাছা পরিষ্কার করে দিতে হবে। 

ii) বৃষ্টি বা অন্য কোন কারণে জলাবদ্ধতা দেখা দিলে নালা কেটে বা অন্য কোন উপায়ে পানি নিকাশের ব্যবস্থা করতে হবে। 

iii) বীজ বপনের পর প্রয়োজনে হালকা সেচ দিতে হবে।

iv) সেচের পর মাটির জো অবস্থায় উপরের শক্ত স্তর ভেঙ্গে দিতে হবে।

v) মাসকালাই ফসলে পোকা ও রোগের উপদ্রব দেখা গেলে তা দমনের ব্যবস্থা নিতে হবে। 

(১১) পোকা ব্যবস্থাপনা

ক) বিছা পোকা

এ পোকার কীড়া/লার্ভা মাসকালাই ফসলের পাতা খেয়ে জালিকার মত করে ফেলে। এতে ফলন মারাত্মকভাবে কমে যায়।

পড়ুন
মাসকলাই চাষ পদ্ধতি

এ পোকার কীড়াগুলো দলবদ্ধভাবে আক্রমন করে বিধায় হাত দ্বারা সংগ্রহ করে তা মেরে ফেলতে হবে। আক্রমনের তীব্রতা বেশি হলে সাইলারমেথ্রিন ইসি এক লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

খ) পালস্ বিটল

গুদামজাত মাসকালাই বীজ পালস্বিটলের পূর্ণবয়স্ক পোকা ও কীড়া উভয়ের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে থাকে। এ পোকা বীজের খোসা ছিদ্র করে ভিতরে ঢুকে শাঁস খায় ফলে বীজদানা হালকা হয়ে যায়। এতে বীজের অঙ্গুরোদগম ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায় এবং খাওয়ার অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে।

গুদামজাত করার আগে মাসকালাই বীজ ভালোভাবে শুকিয়ে নিতে হয় যাতে বীজদানায় আদ্রতা ১২% এর নিচে থাকে। অনুমোদিত মাত্রার ম্যালাথিয়ন বা সেভিন গুড়া মিশিয়ে এ পোকার আক্রমন প্রতিরোধ করা যায়।

(১২) রোগ ব্যবস্থাপনা 

ক) পাতার দাগ রোগ

আক্রান্ত পাতার উপর ছোট ছোট লালচে বাদামি গোলাকৃতি হতে ডিম্বাকৃতির দাগ পড়ে থাকে। আক্রান্ত স্থানের কোষসমূহ শুকিয়ে গিয়ে পাতা ছিদ্র হয়ে যায়। আক্রমনের তীব্রতা বেশি হলে পুরো পাতা ঝলসে যায়।

সারকোস্পোরা নামক ছত্রাক দ্বারা এ রোগ হয়ে থাকে। ফসলের পরিত্যক্ত অংশ, বায়ু ও বৃষ্টির মাধ্যমে এ রোগ ছড়িয়ে থাকে। উচ্চ তাপ ও বেশি আর্দ্রতায় এ রোগ দ্রুত বিস্তারলাভ করে।

রোগ প্রতিরোধী জাতের মাসকালাই যেমন- শরৎ, হেমন্ত, পান্থ চাষ করে এ রোগ পরিহার করে চলা সম্ভব। আক্রমন দেখা দিলে অনুমোদিত মাত্রায় ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করতে হয়।

খ) পাউডারি মিলডিউ রোগ

পাতার উপরের পৃষ্ঠে পাউডারের মতো আবরণ দেখা যায়। স্পর্শ করলে তা পাউডারের গুড়ার মতো মনে হয়। ওইডিয়াম প্রজাতির ছত্রাক এ রোগের কারণ। গাছের পরিত্যক্ত অংশ, বীজ ও বায়ুর মাধ্যমে এ রোগ ছড়িয়ে থাকে। সাধারণত শুষ্ক মৌসুমে এ রোগের প্রকোপ বেশি পরিলক্ষিত হয়।

এ পাউডারি মিলডিউ রোগের প্রতিকারের জন্য-

i) বিকল্প পোষাক ও গাছের পরিত্যক্ত অংশ পুড়িয়ে ফেলতে হবে।

পড়ুন
মাসকলাই এর জাত

ii) রোগমুক্ত বীজ বপন করতে হবে,

iii) ছত্রাকনাশক দ্বারা বীজ শোধন করে নিয়ে বপন করতে হবে ও

iv) রোগের আক্রমন দেখা গেলে টিল্ট বা থিওভিট নামক ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করতে হবে।

গ) হলদে মোজাইক ভাইরাস

প্রথমে কচি পাতা আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত পাতার উপর হলদে সবুজ দাগ পড়ে। এতে দূর থেকে আক্রান্ত ফসল হলদে মনে হয়। মোজাইক ভাইরাস দ্বারা এ রোগ হয়। আক্রান্ত বীজ ও বায়ুর মাধ্যমে এ রোগ বিস্তার লাভ করে। সাদা মাছি এ রোগের বাহক হিসেবে কাজ করে থাকে। 

এ রোগ প্রতিকারের জন্য- 

i) রোগমুক্ত বীজ বপন করতে হবে,

ii) আক্রান্ত গাছ তুলে পুড়িয়ে ফেলতে হবে,

iii) শস্য পর্যায় অবলম্বন করতে হবে,

iv) রোগ প্রতিরোধী জাতের মাসকালাই চাষ করতে হবে ও 

v) সাদা মাছি দমনের জন্য ম্যালাথিয়ন স্প্রে করতে হবে। 

(১৩) ফসল কাটা, মাড়াই ও গুদাম জাতকরণ

পরিপক্ষ ফসল সকালের দিকে সংগ্রহ করতে হয়। জাতভেদে এক বা একাধিকবার ফসল সংগ্রহ করতে হয়। প্রথমদিকে পরিপক্ক ফল হাত দিয়ে এবং সর্বশেষ কাঁচি দিয়ে গাছগুলো কেটে নিতে হয়।

খরিপ-১ মৌসুমে মে মাসের শেষে এবং খরিপ-২ মৌসুমে অক্টোবর মাসের শেষে ফসল সংগ্রহ করা হয়। গাছগুলো রোদে শুকিয়ে পরিষ্কার ও ঠান্ডা করে টিন বা মাটির পাত্রে মুখ বন্ধ করে গুদামজাত করতে হয়।

(১৪) ফলন

প্রতি হেক্টরে ১.৫-২ টন হয়ে থাকে।

মাসকালাই একটি গুরুত্বপূর্ণ ডাল ফসল। এ ফসল গোখাদ্য ও সবুজ সার ফসল হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। সুনিষ্কাশিত উচ-নিচু সব ধরনের জমিতেই এ ফসল চাষ করা যায়। এর উন্নত ও স্থানীয় জাত রয়েছে। এ ফসল সারিতে বা ছিটিয়ে চাষ করা হয়। এ ফসলে জীবানু সার প্রয়োগ করা হলে ইউরিয়া সার দিতে হয় না। সঠিক পন্থায় ও ঠিক সময়ে পোকা ও রোগ দমন করে এ ফসলের ভালো ফলন নিশ্চিত করা যায়।

পড়ুন
মাসকলাই চাষের, জাত, সময় ও পদ্ধতিসমূহ

উপরোক্ত আলেচনার মাধ্যমে আমরা মাসকলাই ডাল চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে একটা স্পষ্ট ধারণা অর্জন করলাম।

বিভিন্ন উদ্ভিদ, গাছ ও ফসল যেমন- বিভিন্ন শস্য, সবজি, ফুল, ফল ইত্যাদি চাষাবাদ সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট চাষাবাদ’ (inbangla.net/casabad) এর সাথেই থাকুন।

অনুরোধ!! পোষ্ট ভালো লাগলে প্লিজ উপরের শেয়ার আইকনে ক্লিক করে পোষ্টটি শেয়ার করে দিন।

Leave a Reply

nv-author-image

ইন বাংলা নেট চাষাবাদ

বিভিন্ন উদ্ভিদ, গাছ ও ফসল যেমন- বিভিন্ন শস্য, সবজি, ফুল, ফল ইত্যাদি চাষাবাদ সম্পর্কিত যা কিছু বাংলাতে।View Author posts