প্রিয় পাঠক-পাঠিকা, আসসালামু আলাইকুম, আশা করি আল্লাহর দয়ায় আপনার সকলেই ভালো আছেন।
আজকে আমরা সূরা বাকারায় বর্ণিত মুমিন ও মুত্তাকির পরিচয় সম্পর্কে আলোচনা করব।
এ আলোচনাটি অধ্যয়নে করলে আপনি- মুমিন-মুত্তাকি কাকে বলে, তা বলতে পারবেন; মুমিন-মুত্তাকির বৈশিষ্ট্য কি কি, তা জানতে পারবেন।
(১) মুমিন-মুত্তাকি কাকে বলে?
মুমিন-মুত্তাকি কাকে বলে: মুমিন মানে বিশ্বাসী। আর মুত্তাকি অর্থ হল পরহেযগার ও আল্লাহভীরু, আল্লাহর প্রিয় বান্দা। হযরত ইবনে আব্বাস (রা) বলেন, যারা ঈমান গ্রহণ করে শিরক, কবীরা গুণাহ, অশ্লীল কাজ হতে দূরে থাকে এবং আল্লাহর হুকুমআহকাম পালন করে, তারাই মুত্তাকি।
(২) মুমিন-মুত্তাকির বৈশিষ্ট্য
প্রকৃত মুমিন-মুত্তাকির বৈশিষ্ট্য হলো-
ক) তারা গায়েব বা অদৃশ্যে বিশ্বাসী
অদৃশ্যের প্রতি ঈমান আনা মুমিন-মুত্তাকির প্রথম গুণ। ইসলামি আকীদা-বিশ্বাস ও প্রত্যয়-সংস্কৃতি এবং আদর্শের মৌলিক বিষয় এটাই।
এ বিশ্বাসের মূল কথা হচ্ছে,
“যারা অদৃশ্যে বিশ্বাস করে।”
(সূরা আল-বাকারা ২:২)
অদৃশ্যের বিষয়াবলির মধ্যে আছে- মহান প্রভু আল্লাহর সত্তা ও গুণাবলি, ফেরেশতা, ওহী, আখিরাত, বেহেশত-দোযখ ইত্যাদি। অদৃশ্যে বিশ্বাস মুমিন-মুত্তাকি হওয়ার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বস্তুবাদীরা এ অদৃশ্যে বিশ্বাস না করে ধ্বংসের মধ্যে নিপতিত হয়েছে।
খ) তারা সালাত কায়েম করে
সালাত প্রতিষ্ঠা করা মুমিন-মুত্তাকির দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য। আল্লাহ বলেন,
“তারা সালাত কায়েম করে।”
(সূরা আল-বাকার-২: ২)
সালাতের মধ্য দিয়ে তারা এক আল্লাহর ইবাদাত ও আনুগত্যের বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। শুধু গায়েবে বিশ্বাস করে চুপচাপ বসে থেকে ‘জপ’ করলেই মুত্তাকি হওয়া যায় না। আনুগত্যের বাস্তব নমুনা দেখাতে হবে সালাতের মাধ্যমে। দিবা-রাত্র পাঁচবার ফরয সালাত ও সিজদার মাধ্যমে তারা শিরক থেকে মুক্ত হয়ে আল্লাহর সাথে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলে।
গ) তারা আল্লাহর দেওয়া রিয্ক থেকে ব্যয় করে
মুমিন-মুত্তাকির তৃতীয় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে,
“তাদেরকে যে রিয্ক দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে।”
(সূরা আল-বাকারা ২: ২)
যা কিছু ধন সম্পদ আছে তা মহান আল্লাহর দান। এর প্রকৃত মালিক আল্লাহ তা‘আলা। এ বিশ্বাস অর্থের মোহ থেকে মুক্ত করে। কাজেই মুমিন-মুত্তাকি অর্থের পূজারী হয় না। তার ধন-সম্পদে আল্লাহ ও অন্যান্য মানুষের যে অধিকার আছে সে তা থেকে ব্যয় করে।
ঘ) তারা আসমানি কিতাবে বিশ্বাস করে
মুমিন-মুত্তাকিদের চতুর্থ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে,
“এবং তোমার প্রতি যা নাযিল হয়েছে ও তোমার পূর্বে যা নাযিল হয়েছে তাতে তারা ঈমান আনে।”
(সূরা বাকার ২:৩)
মানব জাতির পথ নির্দেশনার জন্যে আল্লাহ তাআলা যে সব আসমানি কিতাব যুগেযুগে নাযিল করেছেন- মুমিন-মুত্তাকিগণ তা স্বীকার করে।
ঙ) তারা আখিরাত জীবনে সুদৃঢ় বিশ্বাসী
মুমিন-মুত্তাকির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে,
“এবং যারা আখিরাতে দৃঢ় বিশ্বাস রাখে।”
(সূরা আল-বাকার ২:৩)
এ বিশ্বাস কর্মকে কর্মফলের সাথে এবং সূচনাকে পরিণতির সাথে যুক্ত করে। এ বিশ্বাস মানুষকে এ চেতনা দান করে যে, পৃথিবীতে তার সৃষ্টি, তার কর্মকা-, তৎপরতা, বিশ্বাস, জীবনাচার কিছুই বৃথা যাবে না। সে নিরর্থক সৃষ্টি নয়। তাকে তার কর্মের জন্যে মহাবিচারকের নিকট হাযির হতে হবে। ভাল কাজের জন্যে পুরস্কার এবং মন্দ কাজের জন্যে শাস্তি পেতে হবে। এরূপ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী মুমিন-মুত্তাকির জীবনই সাফল্যময় হবে ইহজগতে ও পরজগতে।
মহান আল্লাহ আল-কুরআনকে বিশ্ব মানবতার পথনির্দেশনা হিসেবে নাযিল করেছেন। সূরা বাকারার শুরুতে বলা হয়েছে- ‘এটা একটা হিদায়াত ও পথ নির্দেশনার গ্রন্থ’। আর এ গ্রন্থ যদিও মানবজাতির প্রত্যেক সদস্যের জন্যই হিদায়াত গ্রন্থ, তবুও যারা হিদায়াত পাবার জন্য নিজেরা অগ্রসর হবে না, তাদেরকে এ গ্রন্থ হিদায়াত করতে পারবে না। কুরআন থেকে হিদায়াত লাভের উপযুক্ত করা, তাদের একটি সংক্ষিপ্ত পরিচয় সূরার প্রথমেই তুলে ধরা হয়েছে। তাছাড়া এর থেকে হেদায়াতের উপযুক্ত মুমিন-মুত্তাকির ও কতিপয় মৌলিক বৈশিষ্ট্যের কথা হয়েছে।
পবিত্র ইসলাম ধর্ম সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট ইসলাম’ (inbangla.net/islam) এর সাথেই থাকুন।