Skip to content

মেহগনি গাছ লাগানোর নিয়ম বা মেহগনি গাছ রোপন পদ্ধতি বা মেহগনি গাছ চাষ পদ্ধতি এবং মেহগনি গাছের বৈশিষ্ট্য সমূহ

মেহগনি গাছ লাগানোর নিয়ম বা মেহগনি গাছ রোপন পদ্ধতি বা মেহগনি গাছ চাষ পদ্ধতি এবং মেহগনি

মেহগনির আদি নিবাস জামাইকা ও মধ্য আমেরিকা। মেহগনি গাছের প্রজাতি হিসেবে ২টি নাম পাওয়া যায়। এর মধ্যে বাংলাদেশে Swietenia macrophylla প্রজাতি প্রধান। যশোর, খুলনা, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলাসমূহে মেহগনি গাছ বেশি পাওয়া যায়।

বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে বনায়ন সৃষ্টিতে প্রায় সারা দেশে ব্যাপক হারে এ গাছ লাগানো হচ্ছে। সড়ক, বাঁধ, বসতবাড়ি, প্রতিষ্ঠানিক প্রাজ্ঞাণ, সামাজিক বন ও ব্যক্তিগত বনবাগানে এ গাছের চাষাবাদ বাড়ছে।

(১) মেহগনি গাছের বৈশিষ্ট্য

চিত্র- মেহগনি গাছ
চিত্র- মেহগনি গাছ
  • এটি একটি দ্বিবীজপত্রী কাষ্ঠল উদ্ভিদ। এ উদ্ভিদের কান্ড লম্বা, শক্ত ও বাদামি রঙের। পাতা যৌগিক।
  • ফুল সবুজাভ-সানা। ফল বাদামি রঙের, ডিম্বাকৃতি এবং আকারে বেশ বড়।
  • শীতকালে এ বৃক্ষের সব পাতা ঝরে যায়। এ জন্য একে পত্রঝরা উদ্ভিদ বলে।
  • মেহগনি গাছের জন্য প্রধানত বীজ থেকে উৎপাদিত চারা রোপণ করতে হয়। মার্চ-এপ্রিল মাসে বীজ সংগ্রহ করে নার্সারির বীজতলায় বুনতে হয়। জুন থেকে শুরু করে আগস্ট মাস পর্যন্ত মেহগনি চারা রোপণ করা হয়। উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমিতে মেহগনি গাছ ভালো জন্মে।
  • মেহগনি কাঠ খুবই শক্ত ও টেকসই। এ কাঠের রং লালচে খয়েরি। তবে গাছ বেশি পরিপক্ব হলে, কাঠের রং অনেক সময় গাঢ় কালচে খয়েরি রঙের দেখায়।
  • মেহগনি উন্নতমানের কাঠ উৎপাদনকারী উদ্ভিদ হিসেবে পরিচিত। বাসগৃহের দরজা জানালা, আসবাবপত্র তৈরিতে মেহগনি কাঠের খুব কদর রয়েছে। মেহগনি কাঠের আঁশ খুব মিহি এবং কালচে খয়েরি রঙের।
  • এ কাঠের আঁশ খুবই মিহি। এ কাঠ খুব সুন্দর পলিশ নেয়। বাসগৃহের সব রকম আসবাবপত্র তৈরিতে এ কাঠের বহু ব্যবহার রয়েছে। তাছাড়া ঘরের দরজা, জানালার ফ্রেম তৈরিতেও মেহগনি কাঠ উত্তম। মেহগনি কাঠ নিয়ে হরেক রকমের সৌখিন শিল্প সামগ্রীও তৈরি হয়।
পড়ুন
বসতবাড়িতে বৃক্ষরোপণের নিয়ম ও পদ্ধতি

(২) মেহগনি গাছ লাগানোর নিয়ম/মেহগনি গাছ রোপন পদ্ধতি/মেহগনি গাছ চাষ পদ্ধতি

চিত্র- মেহগনির পাতা, ফুল ও ফল
চিত্র- মেহগনির পাতা, ফুল ও ফল

ক) বীজ সংগ্রহ ও রোপণ

  • মেহগনি গাছের জন্য প্রধানত বীজ থেকে উৎপাদিত চারা রোপণ করা হয়। তবে স্টাম্প বা মোথাও রোপণ করা যায়।
  • ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত বীজ সংগ্রহ করে নার্সারির বীজতলায় বা পলিব্যাগে বুনতে হয়।
  • দুই ভাগ দোলাশ মাটি ও একভাগ জৈব সার মিশ্রিত মাটি দিয়ে পলিব্যাগে বীজ বপন করতে হবে।
  • প্রতি পলিব্যাগে দুটি বীজ বপন করতে হয়।
  • বেডের সারিতে ৮-১০ সেমি দূরে দূরে বীজ বপন করতে হয়। মাটির ৩-৪ সেমি গভীরে বীজ ঢুকিয়ে দিতে হয়।
  • বীজ একটু কাত করে লাগাতে হবে যেন বীজের পাথা উপরের দিকে থাকে।
  • বীজ বপনের পর হালকা সেচ দিতে হবে।
  • ছোট অবস্থায় চারায় দুপুর রোদের সময় ছায়ার জন্য ঢাকনা দিতে হবে।
  • বীজের অঙ্কুরোদগমে ২০-৩০ দিন লাগে।
  • এই চারা শ্রাবণ-ভাদ্র মাসে বা পরের বছর রোপণ করা হয়।
  • চারার রোপণ দূরত্ব ১-১০ মিটার হলে ভালো হয়।

খ) মাটি তৈরি

  • উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমিতে মেহগনি গাছ ভালো জন্মে। দোআঁশ ও পলি-দোআঁশ মাটি মেহগনি গাছের জন্য উত্তম।
  • চারা রোপণের পূর্বে নির্বাচিত জায়গা আবর্জনামুক্ত ও সমান করে নিতে হবে।
  • চারার আকার অনুসারে গর্তের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও গভীরতা ৬০-৮০ সেমি হওয়া দরকার।
  • গর্ত করার পর গর্ভের মাটিতে সার মেশাতে হবে। সার মেশানো মাটি দিয়ে ভরাটকৃত গর্ভ ১৫ দিন ফেলে রাখতে হবে। অতঃপর মাটি পুনরায় কুপিয়ে ঝুরঝুরে করে চারা রোপণ করতে হবে।

গ) সার প্রয়োগ

মাটি তৈরির সময় সার প্রয়োগের নিয়মাবলি: মাটি তৈরির সময় জৈব সার ১০-১৫ কেজি, ছাই ১-২ কেজি, ইউরিয়া ২০০-৩০০ গ্রাম, টিএসপি ১০০-৫০০ গ্রাম ও এমওপি ৫০-১০০ গ্রাম দিতে হয়। 

ঘ) সেচ ও ও অন্যান্য পরিচর্যা

  • খরার সময় পানি সেচ দিতে হবে।
  • নিয়মিত আগাছা পরিষ্কার করতে হবে।
  • চারা অবস্থায় মূল গাছের পার্শ্বকুড়ি অপসারণ করতে হবে।
  • চারার খুঁটি ও বেড়া দিতে হবে।
  • সেচের পর গাছের গোড়ায় মালচিং বা জাবড়া দিতে হবে।
  • গাছ বড় হওয়ার পর ডাল ছাঁটাই করে কাঠামো তৈরি করতে হবে।
পড়ুন
বাঁশ গাছের বৈশিষ্ট্য এবং বাঁশ গাছ চাষ বা বাঁশ গাছ লাগানোর পদ্ধতি

কৃষি সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট কৃষি’ (inbangla.net/krisi) এর সাথেই থাকুন।

অনুরোধ!! পোষ্ট ভালো লাগলে প্লিজ উপরের শেয়ার আইকনে ক্লিক করে পোষ্টটি শেয়ার করে দিন।

Leave a Reply

nv-author-image

ইন বাংলা নেট কৃষি

কষি সম্পর্কিত যা কিছু বাংলাতে।View Author posts