Skip to content

লবণ দিয়ে দাঁত মাজলে কি হয়? লবণ দিয়ে দাঁত মাজার অপকারিতা

লবণ দিয়ে দাঁত মাজলে কি হয়, লবণ দিয়ে দাঁত মাজার অপকারিতা

আসসালামু আলাইকুম!

আজ আমরা একটি খুবই সাধারণ কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো, তা হলো অনেক বন্ধুরা প্রায়ই জিজ্ঞাসা করে থাকেন—”লবণ দিয়ে দাঁত মাজলে কি হয়? এর কি কোনো উপকার আছে? এটা কি ঠিক আছে?”

কেউ কেউ বলেন, “আমি মাঝে মাঝে লবণ দিয়ে দাঁত ব্রাশ করি, খুব আরাম পাই।” আবার অনেকে প্রশ্ন করেন, “টুথপেস্টে তো নুন থাকে? তাহলে লবণ দিয়ে ব্রাশ করলে কী সমস্যা?” আজকের এই আলোচনায় আমরা এই বিষয়টির গভীরে গিয়ে জানবো—লবণ দিয়ে দাঁত মাজলে কি হয়, লবণ দিয়ে দাঁত মাজার অপকারিতা ও উপকারিতা এবং এর পিছনে বিজ্ঞান কী বলে।

(১) লবণ দিয়ে দাঁত মাজার ইতিহাস ও প্রচলন

লবণ দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করার প্রথা অনেক পুরনো। আধুনিক টুথপেস্ট আবিষ্কারের আগে, বিশ্বের বিভিন্ন সংস্কৃতিতে মানুষ প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করে দাঁতের যত্ন নিতো।

আমাদের বাংলাদেশেও গ্রামাঞ্চলে অনেকে এখনো এই পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকেন। লবণ সহজলভ্য এবং সস্তা হওয়ায় এটি একটি জনপ্রিয় পছন্দ ছিল।

কিন্তু প্রশ্ন হলো, এটি কি সত্যিই দাঁতের জন্য উপকারী, নাকি এর পিছনে কোনো ক্ষতি লুকিয়ে আছে?

(২) লবণ দিয়ে দাঁত মাজলে কি উপকারিতা হয়? যা মানুষকে আকর্ষণ করে

লবণ দিয়ে দাঁত মাজলে কি উপকারিতা হয়

লবণের কিছু গুণ রয়েছে, যা এটিকে দাঁত পরিষ্কারের জন্য ব্যবহারযোগ্য করে তুলেছে। যেমন-

  1. জীবাণু ধ্বংস করার ক্ষমতা: লবণে অ্যান্টিসেপটিক বৈশিষ্ট্য আছে, যা মুখের জীবাণু ও ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করে। এটি মুখের দুর্গন্ধ কমাতে এবং সাময়িকভাবে মাড়ির সংক্রমণে স্বস্তি দিতে পারে।
  2. দাগ দূর করার ক্ষমতা: লবণের অ্যাব্রেসিভ (খসখসে) গুণের কারণে দাঁতের বাইরের দাগ, যেমনঃ চা-কফির দাগ, পানের দাগ, বা আয়রনের দাগসাময়িকভাবে দূর হয়। এটি ব্রাশ করার পর দাঁতকে চকচকে ও পরিষ্কার দেখায়, যা অনেকের কাছে ভালো লাগে।

(৩) লবণ দিয়ে দাঁত মাজার অপকারিতা: যা আপনার জানা জরুরি

লবণ দিয়ে দাঁত মাজার অপকারিতা

লবণের এই সুবিধাগুলো সত্ত্বেও এর ক্ষতিকর দিকগুলো অনেক বেশি গুরুতর। চলুন বিস্তারিত জানি-

  1. এনামেল ক্ষয়: দাঁতের উপরের আবরণ, যাকে আমরা এনামেল বলি, এটি দাঁতের প্রাকৃতিক সুরক্ষা। লবণের অ্যাব্রেসিভ গুণ এই এনামেলকে ক্ষয় করে ফেলে। ফলে দাঁত সাময়িকভাবে পরিষ্কার লাগলেও এটি দীর্ঘমেয়াদে দুর্বল হয়ে পড়ে। এনামেল ক্ষয় হয়ে গেলে তা আর ফিরে আসে না। এটি দাঁতের ক্ষয়, ভাঙন, এমনকি দাঁত পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।
  2. দাঁতের স্ক্রাচ ও সংবেদনশীলতা: নিয়মিত লবণ ব্যবহারে দাঁতের উপরিভাগে স্ক্রাচ পড়ে। এই স্ক্রাচগুলো দাঁতকে ঠান্ডা-গরমের প্রতি সংবেদনশীল করে তোলে এবং ক্যাভিটির ঝুঁকি বাড়ায়।
  3. মাড়ির ক্ষতি: লবণের রুক্ষ গঠন মাড়িতে আঘাত করতে পারে, যার ফলে মাড়ি ফুলে যাওয়া বা রক্তপাতের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

(৪) টুথপেস্টে লবণ থাকে কি?

অনেকে প্রশ্ন করেন, “টুথপেস্টে তো লবণের মতো উপাদান থাকে, তাহলে লবণ ব্যবহারে সমস্যা কী?” আসলে টুথপেস্টে যে অ্যাব্রেসিভ উপাদান থাকে (যেমন সিলিকা), তা নিয়ন্ত্রিত এবং দাঁতের জন্য নিরাপদ মাত্রায় ব্যবহৃত হয়। লবণের ক্ষেত্রে এই নিয়ন্ত্রণ নেই, তাই এটি অতিরিক্ত ঘষার কারণে ক্ষতি করে।

(৫) লবণের বিকল্প ব্যবহার: কী করা যায়?

লবণ পুরোপুরি বর্জন করতে হবে এমন নয়, তবে এটি সঠিকভাবে ব্যবহার করা উচিত।

নিয়মিত ব্রাশ করার জন্য লবণ ব্যবহার না করে বরং-

  • লবণ পানি দিয়ে কুলি: হালকা গরম পানিতে এক চিমটি লবণ মিশিয়ে দিনে ২-৩ বার কুলি করতে পারেন। এটি মুখের ইনফেকশন কমাতে, দাঁত উঠানোর পর ব্যথায় স্বস্তি দিতে, বা আঁকড়া দাঁতের ফাঁকে খাবার আটকে থাকলে পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। হালকা গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে দিনে ২-৩ বার কুলি করতে পারেন। তবে এটাও দীর্ঘমেয়াদে ১ সপ্তাহ বা ১০-১২ দিনের বেশি টানা করা উচিত নয়। কিছুদিন বিরতি দিয়ে আবার প্রয়োজনে করা যেতে পারে।
  • মাউথওয়াশ বিকল্প: বাজারে লবণযুক্ত মাউথওয়াশ পাওয়া যায়, যা দাঁত ও মাড়ির জন্য নিরাপদ। প্রয়োজনে সেটি ব্যবহার করতে পারেন।

(৬) দাঁতের যত্নে সঠিক পদ্ধতি

লবণের পরিবর্তে আধুনিক টুথপেস্ট ব্যবহার করাই সবচেয়ে নিরাপদ। কেন?

  • টুথপেস্টে ফ্লোরাইড থাকে, যা দাঁতের এনামেলকে শক্তিশালী করে এবং ক্ষয় রোধ করে।
  • এটি দাঁত ও মাড়ির জন্য ভারসাম্যপূর্ণ উপাদান দিয়ে তৈরি।
  • নিয়মিত ব্রাশ করা (দিনে দুইবার) এবং ফ্লসিং দাঁতের দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য নিশ্চিত করে।

(৭) উপসংহার

লবণ দিয়ে দাঁত ব্রাশ করা সাময়িকভাবে স্বস্তি বা পরিচ্ছন্নতার অনুভূতি দিলেও এটি দাঁতের এনামেল ক্ষয় করে এবং দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতির কারণ হয়। তাই এই অভ্যাস থাকলে ত্যাগ করাই উত্তম। লবণের জীবাণুনাশক গুণ কাজে লাগাতে চাইলে হালকা লবণ পানি দিয়ে কুলি করতে পারেন, তবে তাও সীমিত সময়ের জন্য। আধুনিক টুথপেস্ট ও দাঁতের যত্নের পদ্ধতি ব্যবহার করে আপনার দাঁতকে সুস্থ রাখুন।

আশা করি, উপরোক্ত আলেচনার দ্বারা এই লবণ দিয়ে দাঁত মাজলে কি হয়? লবণ দিয়ে দাঁত মাজার অপকারিতা ও উপকারিতা সম্পর্কে বুঝতে পেরেছেন। আজ এ পর্যন্তই। ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। ভবিষ্যতে আরও এমন তথ্যবহুল আলোচনা নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হবো। ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ হাফেজ!

মানব শরীর ও স্বাস্থ্য সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট স্বাস্থ্য’ (inbangla.net/sastho) এর সাথেই থাকুন।

[তথ্য সূত্র: ডাক্তার মোহাম্মদ আরিফুর রহমান]

অনুরোধ!! পোষ্ট ভালো লাগলে প্লিজ উপরের শেয়ার আইকনে ক্লিক করে পোষ্টটি শেয়ার করে দিন।

Leave a Reply

nv-author-image

ইন বাংলা নেট স্বাস্থ্য

মানব শরীর ও স্বাস্থ্য সম্পর্কিত যা কিছু বাংলাতে।View Author posts