Skip to content
লেটুস চাষ পদ্ধতি

সালাদ হিসেবে ব্যবহার্য যত সবজি আছে তার মধ্যে লেটুসের স্থান উপরে। শীত প্রধান অঞ্চলে এটি দৈনন্দিন খাদ্য তালিকার অংশ। টাটকা অবস্থায় খাওয়া হয় বলে লেটুসের খাদ্য প্রাণ নষ্ট হয় না, পুষ্টির দিক থেকে লেটুস একটি উৎকৃষ্ট সবজি।

(১) লেটুসের জাত পরিচিতি

বারি লেটুস-১:

বারি লেটুস-১
বারি লেটুস-১
  • বাছাই প্রক্রিয়ায় উদ্ভাবিত এটি বাংলাদেশের প্রথম লেটুসের জাত।
  • আকর্ষণীয় সবুজ রঙের পাতা, স্থানীয় আবহাওয়ায় প্রচুর পরিমাণে বীজ উৎপাদনে সক্ষম।
  • লেটুসের পাতায় ৯৪% পানি, ১.৪% আমিষ, ২.৯% শ্বেতসার, ০.২% স্নেহ থাকে।
  • প্রতি ১০০ গ্রামে ৩০০-১৫০০ আন্ত একক ক্যারোটিন, ০.০৯ মিলি গ্রাম থায়ামিন, ০.১২ মিলি গ্রাম রাইবোফ্লাভিন, ০.৪ মিলি গ্রাম নায়াসিন, ১০ মিলি গ্রাম খাদ্য প্রাণ, ৫০ মিলি গ্রাম ক্যালসিয়াম এবং ২.০ মিলি গ্রাম লোহা আছে।
  • বাংলাদেশের সব অঞ্চলে এ জাতটি চাষ করা যায়।
  • প্রতি গাছের ফলন ৩৫০-৪০০ গ্রাম এবং হেক্টরপ্রতি ফলন ১৫-২০ টন।

(২) লেটুস চাষ পদ্ধতি বর্ণনা

ক) জলবায়ু ও মাটি

  • লেটুস জন্মানোর উপযোগী পারিবেশ অবস্থার সীমানা বেশ বিস্তৃত এবং জাত অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন।
  • অধিকাংশ জাত ১৫-২৫০ সে. তাপমাত্রায় ভাল জন্মে। উচ্চতর তাপমাত্রায় পাতা সংখ্যায় কম ও তিক্ত হয়। ২৫০ সে. এর উপরে গাছ দ্রুত ফুল উৎপাদন করে।
  • ইউরোপে শীতকালে কাঁচঘরে (Green house) লেটুস জন্মাতে হয়। তাপমাত্রা অধিক প্রখর হলে পাতা পুড়ে (Trip burn) যায়।
  • লেটুসের জন্য সুনিষ্কাশিত দোআঁশ মাটি সবচেয়ে উপযোগী (অনুকূল অম্লতা ৫.৮-৬.৬)।
  • বাংলাদেশে কেবল রবি মৌসুমে, বিশেষভাবে নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত লেটুসের চাষ করা সম্ভব।
  • লেটুস গাছের জীবনকাল: ৫০-৫৫ দিন।

খ) চারা উৎপাদন ও বয়স

  • বীজ তলায় ৫×৫ সেমি দূরত্বে বীজ বপন করে চারা উৎপাদন করা হয়।
  • লেটুসের বীজ আলোক সংবেদনশীল। এর বীজ ফটোব্লাস্টিক (Photoblastic)।
  • মাঠে লেটুসের বীজের অঙ্কুরোদগম হার অনেক সময় কম হয়। ১০ পিপিএম GA3 দ্রবণে বীজ ১২ ঘণ্টা ভিজিয়ে বপন করলে কাঙ্খিত অঙ্কুরোদম হার পাওয়া যায়।
  • ২০-২২ দিনের চারা বীজ তলায় উৎপাদন করে মূল জমিতে রোপণ করতে হয়।

গ) বীজ বপন পদ্ধতি

  • বীজ সরাসরি ছিটিয়ে বা চারা রোপণ করে লেটুসের চাষ করা যায়। জাতভেদে ৪০-৪৫ সেমি দূরত্বে সারি করে একটু ঘনভাবে বীজ বোনা যায়। পরবর্তী সময় দুটি গাছের মধ্যে ২৫-৩০ সেমি ব্যবধান থাকে। খুব ছোট বীজ তাই বোনার আগে বীজের সাথে ছাই মিশিয়ে নেওয়া উত্তম। বৃষ্টির মৌসুম শেষ না হলে এ পদ্ধতি ঝুঁকিপূর্ণ।
  • অথবা বীজ তলায় চারা তৈরি করে চারা বপন করা যায়।
  • সাধারনত ১ বয়সী লেটুস পাতার চারা বপন করা উত্তম।
  • লাইন করে চারা বপন করলে লাইন থেকে লাইনের দূরত্ব হবে ১২ ইঞ্চি।
  • আর চারা থেকে চারার দূরত্ব হবে ৮ ইঞ্চি।
  • চারা বপনের পর চারার গোড়ায় মাটি দিয়ে হালকা ভাবে চেপে দেওয়া ভালো।
  • এছাড়া রোদ ও বৃষ্টি থেকে রক্ষা ৩-৪ দিন চারা ঢেকে রাখা প্রয়োজন।
  • বর্তমানে বাংলাদেশে অতি সীমিত আকারে লেটুসের চাষ হয়। বাংলাদেশে ক্রিস্পহেড, বাটার হেড ও ঢিলে পাতা শ্রেণির লেটুস জন্মানো হয়।

ঘ) সারের মাত্রা ও প্রয়োগ পদ্ধতি

অধিক ফলন পেতে লেটুস পাতা চাষাবাদের জমিতে প্রয়োজন মত সার প্রয়োগ করতে হবে।

স্বল্পমেয়াদি ফসল বিধায় সব সার ফসল লাগানোর পূর্বে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়া হয়। তবে পরিস্থিতিভেদে ইউরিয়া এক অংশ উপরি প্রয়োগ করতে হয়।

লেটুসের জন্য হেক্টরপ্রতি: ১০ টন গোবর, ২০০ কেজি ইউরিয়া, ৭৫ কেজি টিএসপি এবং ১০০ কেজি এমওপি সুপারিশ করা হয়।

অথবা, শতকপ্রতি: গোবর সার ২০ কেজি, খৈল ৮০০ গ্রাম, ইউরিয়া ৪০০ গ্রাম, টিএসপি ১০০ গ্রাম ও পটাশ ১০০ গ্রাম যেতে পারে।

গোবর চাষের প্রথম দিকে এবং শেষ চাষের সময় টিএসপি ও পটাশ সার মাটির সাথে ভালো করে মিশিয়ে প্রয়োগ করতে হবে।

এছাড়া ইউরিয়া সার ২ কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হবে (প্রথম বার চারার বয়স ১০ দিন হলে আর দ্বিতীয় বার চারার বয়স ২০ দিন হলে)।

ঙ) সেচ ও পরিচর্যা

  • চারা লাগানোর পর ছোট পাখিরা ঠুকরে ঠুকরে সেই পাতা খেয়ে ফেলতে পারে। এই ক্ষেত্রে পাতলা পলিথিনের গায়ে ছোট ছোট ছিদ্র করে সেটি দিয়ে গাছটি ঢেকে দেওয়া দরকার।
  • এছাড়াও যেইসব পাতা শুকিয়ে গেছে, সেগুলি তুলে ফেলা উচিত।
  • আশানুরূপ ফলন পেতে জমিতে সব সময় আগাছা মুক্ত রাখতে হবে।
  • গাছ বড় হলে মাঝে মাঝে লেটুস পাতা গাছের গোড়ার মাটি চেপে দিতে হবে।
  • গাছে যদি খুব বেশি ঘন হয়ে যায় তাহলে তা পাতলা করে দিতে হবে। এতে একদিকে যেমন গাছ বেড়ে উঠবে ঠিকভাবে, অন্যদিকে উত্তোলিত গাছ ব্যবহার করা যাবে।
  • লেটুস পাতার ক্ষেতে নিয়মিত সেচ দিতে হবে; তবে পানি যেন জমে না থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। অতিরিক্ত পানি বের করে দিতে হবে।

ঙ) রোগবালাই ও পোকামকড় দমন

  • লেটুস পাতা গাছের গোড়া পচা রোগ দেখা দিলে  পাতা নুয়ে পড়ে, পাতার আগা পুড়ে যায়। এই ক্ষেত্রে গাছ তুলে ফেলা উত্তম। তবে বীজ ও মাটি শোধন করলে রোগ থেকে বাঁচা যায়।
  • এছাড়া জাব পোকা লেটুসের যম হিসাবে বিবেচিত। এই পোকা আক্রমন করলে হাত দিয়ে তুলে পোকা মেরে ফেলতে হবে। তবে এই পোকার আক্রমন বেশি হলে প্রয়োজনীয় পরিমানে জৈব উপায়ে তৈরী কীটনাশক স্প্রে করতে হবে।

ঙ) ফসল সংগ্রহ

লেটুসের ফসল সংগ্রহের সুনির্দিষ্ট সময় নেই, মাথা বাঁধার পর সংগ্রহ করতে হবে। ঢিলে পাতা জাত একবারে অথবা নিচের দিক থেকে ক্রমান্বয়ে পাতা সংগ্রহ করা যেতে পারে।

চ) ফলন

  • হেক্টরপ্রতি ২০-৩৫ টন।
  • লেটুস পাতার চারা বপনের ৩০ থেকে ৩৫ দিনের মধ্যেই ফসল তোলার জন্য প্রস্তুত হয়ে যায়। গাছে পাতা তোলার উপযুক্ত হলে পাতা সংগ্রহ করতে হবে।
  • এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ গাছ তুলে ফেলা ভালো।
  • তবে বাসা বাড়িতে যদি চাষ করা হয় তখন গাছ থেকে প্রয়োজনীয় পাতা সংগ্রহ করা উচিত।

(৩) টবে লেটুস পাতা চাষ পদ্ধতি

এখন শাক-সবজি উৎপাদনের জন্য সাধারণ জমি কিংবা বাগানই একমাত্র ভরসা নয়। আধুনিক চিন্তা-বুদ্ধি প্রয়োগ করে শহরেও শাক-সবজি উৎপাদন করা যায়। জমি না থাকে তাহলে বাসা-বাড়ির ছাদে বা বারান্দায় বড় বড় টবে, মাটির চাঁড়িতে, ড্রামে কিংবা একমুখ খোলা কাঠের বাক্সে সার মাটি ভরে অনায়াসেই শাকসবজি চাষ করা যায়

তাজা লেটুসপাতা খুব সহজেই নিম্ন লিখিত উপায়ে বসতবাড়ি বা ছাদে টবে চাষ করা যায়-

  1. টবের মাটি অবশ্যই উর্বর, হালকা এবং ঝুরঝুরে হতে হবে।
  2. পানি শুকিয়ে গেলে টবের মাটি যেন ফেটে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরি।
  3. টবের মাটি ঝুরঝুরা রাখতে হলে সমপরিমাণে দো-আঁশ মাটি ও জৈব সার একসাথে ভালভাবে মিশিয়ে নিতে হবে।
  4. সাধারণ ভাবে প্রত্যেক টবের মাটিতে চা চামচের চার চামচ টিএসপি সার ও ৫/৬ দিন আগে ভেজানো ১১৬ গ্রাম পরিমাণ সরিষার খৈল মিশাতে হবে।
  5. সাধারণতভাদ্র মাসের মাঝামাঝি থেকে অগ্রহায়ণের মাঝামাঝি পর্যন্ত বীজ থেকে চারা তৈরি করে টবে লাগানোর সঠিক সময়।
  6. টবে বীজ বুনলে ৩ থেকে ৪ দিনের মধ্যে চারা গজাবে। চারার ৪/৫ টি পাতা গজালে মূল টবে লাগিয়ে দিতে হবে।
  7. সাধারণত লেটুস চাষের জন্য খুব বড় টবের প্রয়োজন হয় না। পরন্ত বিকেলে চারা লাগাতে হয়।
  8. চারা রোপণের সময় চারার গোড়ার মাটি খুবই হালকাভাবে চেপে দিতে হয় যাতে চারার নরম শিকড় চাপে ছিঁড়ে না যায়।
  9. চারা লাগানোর পর ৩ থেকে ৪ দিন ঢাকনী দিয়ে চারাকে রোদ-বৃষ্টি থেকে রক্ষা করতে হবে এবং সকাল-বিকাল চারার গোড়ায় পানি দিতে হবে।
  10. প্রয়োজনে সেচ দিতে হবে এবং মাঝে মাঝে চারার গোড়ার মাটি হালকাভাবে আলগা করে দিতে হবে।
  11. টবে চারা লাগানোর পরেই অনেক সময় দেখা যায় চড়াই, শালিক, বাবুই ইত্যাদি ছোট ছোট পাখি চারার কচি পাতা এবং ডগা খেয়ে ফেলে, অনেক ক্ষেত্রে চারা উপড়ে ফেলে। সেক্ষেত্রে কয়েকটা ছিদ্রবিশিষ্ট পাতলা পলিথিন কাগজ বা লোহার নেট দিয়ে আলতো ভাবে টবটি ঢেকে রাখতে হবে।
  12. তাছাড়া শুকনো পাতা বা রোগাক্রান্ত অংশ কেটে ফেলতে হবে। পচা, আগা পোড়াদেখা দিলে গাছ তুলে ফেলা উচিত। জাব পোকা লেটুসের খুব ক্ষতি করে থাকে। জৈব কীটনাশক স্প্রে করতে হবে।

বিভিন্ন উদ্ভিদ, গাছ ও ফসল যেমন- বিভিন্ন শস্য, সবজি, ফুল, ফল ইত্যাদি চাষাবাদ সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট চাষাবাদ’ (inbangla.net/casabad) এর সাথেই থাকুন।

Leave a Reply

nv-author-image

ইন বাংলা নেট চাষাবাদ

বিভিন্ন উদ্ভিদ, গাছ ও ফসল যেমন- বিভিন্ন শস্য, সবজি, ফুল, ফল ইত্যাদি চাষাবাদ সম্পর্কিত যা কিছু বাংলাতে।View Author posts