নিম্নে মনের প্রসন্নতা, আত্মশ্রদ্ধা ও দায়িত্ববোধ এবং শরীরের যত্ন সম্পর্কে একটি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে শিক্ষকের বক্তব্য তুলে ধরা হলো-
(১) মনের প্রসন্নতা বাড়াতে হবে

যারা মেজাজ খারাপ করে বসে থাকেন, সব সময় গোমড়া মুখ, তাদের চিন্তাও সর্বদা বিষাদমুখী হয়ে পড়ে। তাদের মন অন্যের থেকে বিষাদ টেনে নেয়।
আর যে সমস্ত লোক আশা, আত্মবিশ্বাস আর প্রসন্নতায় ভরপুর তারা অন্যের কাছ থেকে এই ধরণের চিন্তাই টেনে নেন। তারা সবকাজেই সফল হন।
এটা অনেকটা আলজে্বোর ফর্মূলার মত প্রাসে প্লাসে গ্রাস। কিন্তু গ্রাসে মাইনাসে মাইনাস।
তুমি যদি প্রসন্ন চিত্ত হও এবং দিলখোলা লোকদের সঙ্গে মেশো তাহলে তুমি প্রসন্নচিত্তই থাকবে। মুখ গোমড়াদের সঙ্গে মিশলে তাদের মতই হয়ে যাবে।
যারা প্রসন্ন থাকতে পারে না সর্বদা রেগে থাকে, কেন থাকে? কারণ তারা সব সময় নেতিবাচক চিন্তা করে।
অন্যের অমঙ্গল ভাবে। অপরকে ঈর্ধা করে। সব সময় নিজের সঙ্গে অপরের তুলনা করে। তাই তার রাগ মেজাজ বর্ধিত চিন্তারই প্রতিফলন।
বদমেজাজি লোক, হতাশ লোক, নেতিবাচক চিন্তার লোক অন্যের মধ্যে ধংসাত্মবক বৃত্তি সঞ্চালিত করে দেয়। মনই মানুষকে সাধু ও দুর্বৃত্তে রূপান্তরিত করে।
বাইরে থেকে দেখলে একজন সাধু ও একজন দুর্বৃত্তের মধ্যে কোন তফাৎ বোঝা যায় না। যিশুশবীষ্টের মত পবিত্র চেহারার একজন আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী দলের পাণ্ডা হতে পারেন৷ আবার বহু কুদর্শন লোকও সৎ হতে পারে। আসলে তফাৎটা হচ্ছে মনের। আমাদের প্রিয় নবী হজরত মহম্মদ (সঃ) সারাজীবন ভেবে গেছেন মানুষের মঙ্গলের কথা। আবার একজন সন্ত্রাসবাদী চিন্তা করে কীভাবে একটা সভ্যতা ধ্বংস করা যায়। কিন্তু অনেক সময়ই মানুষের মনের বহিঃপ্রকাশ বাইরের চেহারায় ফুটে উঠতে পারে।
সাইবাবা, রজনীশ, মহর্ষি যোগী, মাদার টেরেসা, আর্ট অব লিভিং-এর প্রবক্তা রবিশংকর, প্রয়াত স্বামী রোকেশ্বরানন্দ প্রমুখের চেহারার মধ্যে দিব্যভাব ছিল বা আছে। কারণ তারা সব সময় ইতিবাচক চিন্তা করে গেছেন।
কিন্তু যিনি সবসময় মানুষের অমঙ্গল চিন্তা করছেন তার চোখে মুখে সেই অমঙ্গলের ছাপও পড়ে। যিনি মানুষের মঙ্গল চিন্তা করেন তার কাছে গেলে যে কোন মানুষেরই ভাল লাগে। এই ধরণের অনেক মানুষ আছেন যারা সন্ন্যাসী নন গৃহী, কিন্তু তাদের দেখলে ভক্তি জাগে। প্রণাম করতে ইচ্ছা করে।
আবার কাউকে দেখলে ভয় জাগে। নিরাপত্তা বোধের অভাব দেখা দেয়। শুধু ভয়ে ভয়ে লোকজন তাদের সমীহ করে।
একটা জিনিস নিশ্চয় তোমার ছোট্ট বয়সে লক্ষ্য করে দেখে থাকবে, মান্তান, রাজনীতির লোক, বড়লোক, কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ওঠাবসা এমন লোককে লোকে বেশ সমীহ করে চলছে এবং তাদের যথেষ্ট তোয়াজ করছে। এটা করছে ভক্তিতে নয় ভয়ে। এমনকী হিন্দুদের দেব-দেবীর মধ্যেও এমন অনেক মাস্তান দেবদেবী আছেন যাদের নেতিবাচক ক্ষমতার জন্য লোকে তাদের ভয়ে ভয়ে পুজো করে।
অবচেতন মন হল মনের তলানি। আমাদের মন সব সময় কামনা-বাসনা করছে। অর্থাৎ নানা পার্থিব বিষয় পেতে ইচ্ছা প্রকাশ করছে।
এই সমস্ত অতৃপ্ত কামনা ও অপূর্ণ ইচ্ছা সবসময় আমাদের মনের সমুদ্রকে তোলপাড় করছে। তারপর এক সময় অবচেতন মনে চলে যাচ্ছে।
প্রবল নেতিবাচক অভিপ্রায় যাকে অভিসম্পাত বলা হয় সেটা এক ধরণের ধ্বংসাত্বক ইচ্ছা। অর্থাৎ অন্যের অমঙ্গল ইচ্ছা।
তুই আমার এই ক্ষতি করেছিস, তোরও এই এই ক্ষতি হোক।
গ্রামের অশিক্ষিত মহিলারা খুব চেঁচিয়ে চেচিয়ে অভিশাপ দিয়ে থাকে। যেমন তোর এই সর্বনাশ হোক, তোর এই হোক। তুই অমুক অসুখে ভুগে পঙ্গু হয়ে যা। এগুলি Killing instinct। বলাবাহুল্য এই ইচ্ছা চালান করে দিতে চাইলেই তা চালান হয় না।
কারণ অসৎ অভিপ্রায় সঞ্জাত এবং বিনা অপরাধে শুধুমাত্র হিংসাজাত অশুভ ইচ্ছা ব্যুমেরাং হয়ে অভিসম্পাতকারির কাছেই ফিরে আসতে পারে।
তুমি যদি গভীর দুঃখবোধ থেকে কোন অশুভ ইচ্ছা অবচেতন মনেও প্রকাশ করে থাকো সে ইচ্ছা ফলবতী হতে পারে। তোমার মনে অকারণে কেউ দুঃখ দিলে তোমার দুঃখ সঞ্জাত ক্ষোভ অশুভ ইচ্ছায় রূপান্তরিত হয়ে দুঃখদাতার ক্ষতি করতে পারে।
আমি আমার অভিজ্ঞতায় এমন অনেক ঘটনা দেখেছি। ডাক্তার রোগ নিরাময়ের জন্য রোগীকে সাজেশান দেন- আপনি সেরে উঠছেন। আজ অনেকটা ভাল দেখছি। রোগী তখন অবচেতন মনে ভাবতে থাকেন, সত্যি সত্যি তিনি ভাল হয়ে উঠছেন।
শিক্ষক যদি কোন ছাত্রকে বার বার বলতে তাকেন, তুই একটা গাধা, তোর কিস্যু হবে না। তাহলে যে সব ছাত্রের আত্মবিশ্বাস জাগ্রত অবস্থায় নেই তাদের আত্মবিশ্বাস আর জাগতে পারে না। তারা ভাবতে থাকে সত্যি সত্যি সে গাধা।
নিরুৎসাহ ব্যঞ্জক কথাবার্তা অপরকে প্রচণ্ড ক্ষতি করে এমনকী একজন সুস্থ লোককেও রুগ্ন করে দিতে পারে।
‘মাথা খারাপ’, ‘পাগল’, এই কথা সবাই যদি একজনকে বলতে থাকে তাহলে সে সত্যি সত্যি পাগল হয়ে যেতে পারে। এক কথায় ব্যক্তিত্বের ওপর ক্ষতিকর কথাবার্তার প্রভাব খুবই বেশী।
সাপে কাটা রোগীকে ঝাড় ফুঁক করে বীচানো যায়না। সাপের ওঝারা যেসব সাপে কাটা রোগীকে ঝাড় ফুঁক করে নিরাময় করে তোলে তারা নির্বিষ সাপে কাটা রোগী।
কিন্তু সাপে কামড়ালে সেই মুহূর্তে বিষধর কী নির্বিষ তা রোগীর পক্ষে বোঝা মুশকিল। তাই আসন্ন মৃত্যুভয়ে সে অজ্ঞান হয়ে যায়।
ওঝারা ধীরে ধীরে তার জ্ঞান ফিরিয়ে আনে। নানামন্ত্র পড়ে সে বার বার রোগীকে বলে বলো ’নেই’- রোগী বলে নেই।
বারবার নেই বলতে বলতে রোগী মনে করে সত্যিই মন্ত্রবলে তার বিষ উঠে গেছে। সে বাচবে। তখন সে তার নার্ভাসনেশ কাটিয়ে ওঠে।
(২) আত্মশ্রদ্ধা ও দায়িত্ববোধ দৃঢ় করতে হবে

আত্মশ্রদ্ধার ইংরেজি হচ্ছে- Self Esteem। এর অর্থ নিজের প্রতি শ্রদ্ধা। যে নিজেকে শ্রদ্ধা করতে পারে না সে অন্যকে শ্রদ্ধা করবে কী করে?
ইউরোপ-আমেরিকার শ্বেতাঙ্গরা, ভারতের উচ্চবর্ণ হিন্দুরা এতদিন কৃষণঙ্গদেরও নিম্নবর্ণের মানুষকে ঘৃণা করে এসেছে।
তার ফলে কৃষ্ণাঙ্গ ও নিম্নবর্ণের মানুষদের আত্মপ্রত্যয়ে চিড় ধরে। একটা সময় তারা ঘৃনিত হতে হতে ভাবত মানুষ হিসাবে তারা উচ্চবর্ণের চেয়ে নিকৃষ্ট।
ক্রমাগত আন্দোলনের ফলে এখন কৃষ্ণাঙ্গ ও নিশ্নবর্গের মানুষেরা বুঝতে পেরেছে তারা কোন অংশে কম নয়।
এখন তারা আত্মপ্রত্যয়ে নিষ্ঠ। তারা এখন শ্বেতাঙ্গ ও উচ্চবর্ণের মানুষদের সঙ্গে সমানতালে নানাধরণের কাজকর্ম করছে। বর্ণাশ্রম প্রথা ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছে। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে তাদের মধ্যে অনেকে প্রতিশোধ স্পৃহায় আবার শ্বেতাঙ্গ ও উচ্চ বর্ণ হিন্দুদের ঘৃণা করতে শুরু করেছে।
এই, পালটা ঘৃণার ভাবটা কিন্তু আত্মবিশ্বাসের পরিচয় নয়।
হীনমন্যতা যখন প্রকৃতই দূর হয়ে যায় তখন মানুষ মনে করে প্রতিটি মানুষই সমান সমান।
আর যখন হীনমন্যতা লুপ্ত হতে হতে কিছুটা তার বীজ থেকে যায় তখন ভেদ বুদ্ধিও অন্তর থেকে যায় না। (Social tension) সমাজে থেকেই যায়। এটা তোমার মধ্যে থাকলে এখনই তা দূর করতে হবে। ছোট বড়ো বা গরীব ধনীর মধ্যেকার ভেদাভেদ সম্পর্কে তোমার মনের মধ্যে যদি কোন বৈষম্য থাকে- তাহলে সেটা ঝেড়ে ফেলে দিতে হবে।
ছোটবেলা থেকে শিশুর মধ্যে দায়িত্ববোধ জন্মে দিতে হয়। তাকে স্বাধীনভাবে নানা কাজ করতে দিতে হয়।
অনেক সিদ্ধান্ত তাকে নিজে নিতে দিতে হয়। তা নাহলে তার মধ্যে সাবালক হয়েও আত্মবিশ্বাস আসে না। সে অজানা অচেনা পরিবেশের মুখোমুখি হতে ভয় পায়। তার মধ্যে বিচ্ছিন্নতা (alineation) আসে।
সে ক্রমশ স্বার্থপর ও আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়ে। তুমি শিশু নও। অন্তত এই বইটি যখন পড়ছো তখন আশা করা যায় তোমার মধ্যে থেকে শিশুতু ভাব চলে গেছে। সুতরাং তুমি এখন অনায়াসে বড়োদের এইসব কথাবার্তাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনে তোমার জীবনে কাজে লাগাতে পারবে।
দায়িত্বোধ আসে আত্মবিশ্বাস থেকে। যার নিজের ওপরেই বিশ্বাস নেই তার মৃল্যবোধেও বিশ্বাস নেই।
তারা যেটা তাদের সুবিধা সেটাই করে। কারণ সামাজিক জীবন হিসাবে বাস করতে গেলে দায়িতৃজ্ঞান ও আত্মত্যাগ দরকার। দায়িত্ব নিতে গেলে কিছুটা আত্মত্যাগ করতেই হয়।
যেমন আমরা জানা একজন একজন মেয়ে মানুষ তিনি ২৩ বছর বয়সে তার পিতার সংসারের পুরো দায়িত্ব তুলে নিয়েছিল। তখন তার ভাই ক্লাস সেভেন ও সবচেয়ে ছোটবোন ক্লাস থিতে পড়ে। তার বাবা মা ভাইবোন এবং এক বিবাহিত বোনকে ঢাকায় বাসা ভাড়া করে নিজের কাছে রেখে প্রতিপালন করেছে।
এই দায়িত্ব নেওয়ার জন্য অবশ্যই কিছুটা আত্মত্যাগ বা স্বার্থত্যাগ করতে হয়েছে। তার স্বামীকেও স্বার্থত্যাগ করতে হয়েছে। কিন্তু একদিকে কিছুটা বাহ্যিক সুখ-স্বাচ্ছন্দয হারালেও অন্যদিকে লাভ হয়েছে।
এর ফলে তার আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। আর আত্মবিশ্বাস যত বেড়েছে ততই দায়িত্বকে ভয় পায়নি।
দায়িত্ব বোধ থেকে আত্মবিশ্বাস জন্মায়।
অনেকে দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে চায়, দায়িত্বকে ভয় পায়। আমি তিনি যে দায়িত্বতে ভয় পাইনি তাতে তার নিজেরও অনেক সুবিধা হয়েছে, যে কোন পরিস্থিতিতে যে কোন পরিবেশে সে নিজেকে মানিয়ে নিতে পেরেছি।
সহজ নমনীয় অথবা অপরিণত ব্যক্তিত্বের অধিকারীদের পক্ষে আত্মবিশ্বাস অর্জন করা বেশ কঠিন।
এই ধরণের ব্যক্তিত্বের উচিত একটি বিশ্বাসের প্রতি একনিষ্ঠ থাকা ৷ কোন একজনকে মানা। এজন্য গুরুমুখী শিষ্যরা তাদের ব্যক্তিত্বের উপর গুরুর ব্যক্তিত্ব আরোপ করে মনে আত্মবিশ্বাস নিয়ে আসেন। উপজাতিদের মধ্যে তাদের নেতার প্রতি আনুগত্য এমন অচল অনড়।
(৩) শরীরকে সুস্থ্য রাখতে হবে

একটা কথা তো সবার জানা, কোন চালু যন্ত্রও যদি ঠিকমতো তেল পানি দিয়ে পরিচর্যা করে সচল না রাখা যায় তাহলে সেটা কয়েকদিনের মধ্যেই ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ে।
সুতরাং মানুষের দেহও এক যন্ত্র বিশেষ। এতেও একদিকে যেমন খাদ্য প্রদানের দরকার আছে। অপরদিকে একে সচল আর সুস্থ্য রাখতে পরিমিত মাত্রার ব্যায়ামেরও দরকার।
তবে তুমি যতটা পরিশ্রম করবে ঠিক ততটা সময় তোমাকে ঘুমের মাধ্যমে বিশ্রাম নিতে হবে। শরীরকে সুস্থ বা সবল রাখতে ঘুমের বা বিশ্রামের কোন বিকল্প নেই।
বিশ্রামের মাধ্যমে শরীরকে তুমি পুনরায় কাজের জন্য চাঙ্গা করে তুলতে পার। এই কারণে ঘুম আমাদের জীবনে এক প্রাত্যহিক শারীরিক অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।
তবে ঘুমের ক্ষেত্রে একটা নির্দিষ্ট সময় বেছে নিতে হবে। রাতটাই ঘুমের জন্যে অধিক কার্যকর।
যারা দিনে ঘুমায় তাদের মধ্যে একধরনের আলস্য কাজ করে থাকে। অনেকে বলে দিনে ঘুমালে নাকি রাতে খুব ভাল পড়াশোনা করা যায়। আমি এই কথার প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আসলে দিনে ঘুমালে সন্ধ্যের দিকে ঘুম থেকে ওঠার পর শরীরটা কেমন যেন আলস্যে ভরে থাকে।
এই অবস্থায় পড়াশোনা করাটা কেমন যেন অতিরিক্ত বোঝার মতো মনে হয়। সুতরাং দিনের বেলা ঘৃমটাকে পরিহার করতে হবে।
তাছাড়া, তোমরা যারা স্কুল কলেজে পড়াশোনা কর, তাদের মধ্যে অনেকেই দিনের বেলা ঘুমানোর সময় পাওয়ার কথা কল্পনাই করতে পার না।
কারণ এ সময়টায় তোমরা হয় স্কুল কিংবা কলেজে পড়াশোনায় ব্যস্ত থাক। এটা একটা ভাল লক্ষণ।
অনেকের মধ্যে ঘুমের প্রাবল্য লক্ষ্য করা যায়। তারা দেরি করে ঘুমাতে যায় আর দেরি করে ঘুম থেকে ওঠে। আবার অনেকের ক্ষেত্রে দেখা গেছে বিশ্রামের আশায় ঘুমাতে গেছে কিন্তু তার কিছুতেই ঘুম আসছে না।
একটার পর একটা কৌশল অবলম্বন করার পরেও তার ঘুম আসছে না।
এগুলোর কোনটাই সুস্থ মানুষের স্বাভাবিক জীবনের লক্ষণ নয়। মানুষের মধ্যে জাত এবং ঘুমন্ত এই দুটি চেতনা সবসময় কার্যকর থাকে।
ব্রেনের জাগ্রত কেন্দ্র থেকে যে হরমোনের নিঃসরণ হয় তার মাত্রা বেশি থাকলে ঘুম আসে না।
আবার জাগ্রত কেন্দ্র সজাগ থাকলে হরমোনের নিঃসরণের মাত্রা অব্যহত থাকে। এই অবস্থায়ও ঘুম আসতে পারে না। সুতরাং এই অবস্থা যদি তোমার হয় অর্থাৎ ঘুমোতে যাবার পরেও যদি তোমার ঘৃম না আসে তাহলে তুমি নিচের পদ্ধতি অবলম্বন করতে পার।
ঘুম না আসরে করণীয় কি? ঘুম আসার উপায়-
- চোখ বন্ধ করে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করো এখন তুমি ঘুমোবে।
- মনে মনে একটি মাঠ কল্পনা করে নাও।
- কল্পনা করো মাঠে দিগন্তবিস্তৃত সবুজ ঘাস।
- সেই মাঠে অসংখ্য ভেড়া বা ছাগল চরে বেড়াচ্ছে। ছাগলগুলো খুবই চঞ্চল। কোন কিছুতেই একজায়গায় স্থির থাকছে না। বারবার নড়েচড়ে বেড়াচ্ছে।
- তুমি সেই ছাগলগুলোকে গুনতে শুরু করো।
উপরের নিয়মে দেখবে তুমি কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়েছো। যদি উপরের নিয়মে তুমি ঘুমাতে না পার তাহলে নিচের পদ্ধতি অবলম্বন করতে পার।
- চিৎ হয়ে শুয়ে দুই চোখ বন্ধ করে মনে মনে ভাব এখন তোমাকে ঘুমাতে হবে।
- প্রথমে তোমার দুই পা শক্ত করো তারপর পায়ের পেশীতে টিলা দাও।
- এবার তোমার দুই হাত শক্ত করো তারপর হাতের পেশীতে টিলা দাও।
- সমস্ত শরীর শক্ত করো তারপর শরীরের যাবতীয় পেশীকে টিলা দাও।
- এবার এক হাজারের উল্টো দিক থেকে গুনতে থাকো।
এই প্রক্রিয়া ব্যবহার করে দেখো, আশা করি তোমার ঘুমহীন রাতগুলো ভরে যাবে চমৎকার শান্তির বিশ্রামে।
তবে একটা কথা অবশ্যই মনে রাখবে, ঘুমের ক্ষেত্রে একটা নির্দিষ্ট পরিমিত মাত্রা থাকা অত্যন্ত জরুরী। রাতে একটা নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমিয়ে পড়া এবং সকাল ভোরে ঘুম থেকে ওঠা একটা অত্যন্ত ভাল অভ্যাস।
এতে করে ভোরের তাজা বাতাসে তোমার মানসিক শান্তি দৃঢ় হবে। শরীরটাও বেশ তরতাজা লাগবে। তাছাড়া ভোমের আবহাওয়ায় পড়াশোনা করলে সেই সময় পড়াশোনাটাও বেশ ভাল হয়।
সহজে মুখস্ত হয় এবং কোন জটিল অংক তুমি এইসময় করে দেখো, সেই অংক বেশ সহজেই করতে পারবে তুমি।
ব্যায়ামের ক্ষেত্রে তুমি বিভিন্ন শরীরচর্চামূলক খেলাধুলাকে বেছে নিতে পার। তবে মনে রাখতে হবে সেই খেলাধুলা যেন অবসর সময়ে হয়। নতুবা খেলাধূলার দিকেই তোমার মন পড়ে থাকবে। বিভিন্ন খেলাধুলার মধ্যে ফুটবল, ক্রিকেট, দৌড় ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
দৌড় একটি খুব ভাল ব্যায়াম। দৌড়ালে শরীরের সকল পেশী সঞ্চালিত হয়ে পেশীগুলোকে সতেজ আর দৃঢ় রাখে।
দৌড়ালে সবচেয়ে উপকার হয় পেটের। সকাল বেলা অর্থাৎ ভোর বেলার সময়টুকু দৌড়ের জন্যে সবচেয়ে সুবিধাজনক। কারণ এইসময় রাস্তাঘাটে লোকজন বা গাড়ি ঘোড়ার চল কম থাকে।
এই ফাকা রাস্তায় তুমি ভোরের হাওয়ায় একদিন দৌড়ালেই এর মর্ম বুঝতে পারবে। প্রতিদিন অন্তত দুই মাইল দৌড়ানো উচিত। তুমি বাড়ি থেকে একমাইল দৌড়ে তারপর বাড়িতে দৌড়ে ফিরে আসলে মোট দুইমাইল দৌড়ানো হয়ে যাবে। ধীরে সুস্থে সমস্ত শরীরের পেশীকে আন্দোলিত করে দৌড়ানো ভাল।
অনেকে রাস্তায় দৌড়ানোর চাইতে ঘরের ভেতর একজায়গায় দাড়িয়ে দৌড়ানোর অভ্যাস করে থাকে। এটাও খুব একটা ভাল লক্ষণ। তুমি ইচ্ছে করলে এই প্রক্রিম্নাতেও দৌড়ের কাজ করতে পার। তবে খেয়াল রাখবে এই প্রক্রিয়াতে তোমার সমস্ত শরীরের পেশীগুলো যেন আন্দোলিত হয়। না হলে তোমার পরিশ্রমটা বৃথা যাবে।
গোসল করা প্রতিটি মানুষের জন্য অবশ্য কর্তব্য। গোসল করলে একদিকে যেমন শরীরকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা যায়। অপরদিকে গোসলের মাধ্যমে শরীরের জড়তা কেটে যায়।
এই গোসল যদি তুমি কোন নদী কিংবা পরিষ্কার পানির পুকুরে করতে পার তাহলে খুব ভাল হয়। এতে একদিক থেকে তোমার গোসল হবে সুন্দর অপরদিকে গোসলের সাথে সাথে তুমি সাতারের মাধ্যমে একটি ভাল ব্যায়ামের আশ্রয় নিতে পারবে।
এখানে সাতার বলতে আমি ফ্রি স্টাইল অর্থাৎ হাত পা ছুঁড়ে সাতার কাটাকে বোঝাচ্ছি। এই প্রক্রিয়ায় তুমি অনায়াসে সমস্ত শরীরকেই আন্দোলিত করতে পারবে। দ্রুত হাটাটাও এক ধরনের ব্যায়াম। এই প্রক্রিয়ায় তুমি নিজের শরীরের সমস্ত পেশীগুলোকে আন্দোলিত করতে পার।
অনেকে ফুসফুসজনিত প্রদাহের কারণে দৌড়াতে পারে না। তাদের জন্য জোর হাটাটাও দৌড়ের মতোই কাজ দেবে। জোরে হাটার জন্যেও তুমি ভোরবেলাকে বেছে নিতে পার।
কারণ এই সময় ভোরের তাজা শীতল বাতাস তোমার ফুসফুসকে সতেজ হয়ে উঠতে সাহায্য করবে।
খাদ্যগ্রহণের ক্ষেত্রে তোমাকে বেছে নিতে এমন সব খাবার যেগুলো- তোমার হজমশক্তিতে কোনরকম বাধার সৃষ্টি করবে না। পেলাম আর খেলাম- এই ধরনের মানসিকতাকে সবসময় পরিহার করবে।
মনে রেখো, সবধরনের খাবারই যে তোমার শরীর সঠিকভাবে গ্রহণ করবে তার কোন বাধ্যবাধকতা নেই। সবসময় চেষ্টা করবে সুষম খাবার খেতে। আর খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রে দিনে কিংবা রাতে একটা নির্দিষ্ট সময় বেছে নেবে। কোনক্রমেই দেরি কিংবা তাড়াহুড়ো করে খাবার খাবে না।
তোমার শরীর যদি স্থুলকায় হয়- তাহলে চেষ্টা করবে শরীরটাকে স্লিম রাখার। একটা কথা মনে রাখবে স্বাস্থ্য ভাল তাকেই বলে যে চিকন হলেও নিরোগ দেহ নিয়ে চলতে পারে। সুতরাং মোটা হলেই যে স্বাস্থ্য ভাল বলতে হবে তা কিন্তু নয়।
বরং মোটা হলেই তোমার শরীরে নানা রকম রোগ বাসা বাধতে পারে। আর রোগ হলে পড়াশোনা যে শিকেয় উঠবে এটাতো জানা কথা। তাই শরীরটাকে নিরোগ রাখার জন্যে যা যা করা দরকার সেইমতো করবে।
কখনও রোগ হলে উপযুক্ত চিকিৎসক ছাড়া অন্য কারও পরামর্শে ওষুধ খাবে না। এতে করে হিতে বিপরীত হয়ে যেতে পারে।
একজন যোগ্য চিকিৎসকই মানুষের দেহ সম্পর্কে অবহিত হয়ে থাকেন। সুতরাং তার পরামর্শ মতো ওষুধ গ্রহণ করা উচিত।
আত্ম-উন্নয়ন ও মোটিভেশন সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট মোটিভেশন’ (inbangla.net/motivation) এর সাথেই থাকুন।
অনুরোধ!! পোষ্ট ভালো লাগলে প্লিজ উপরের শেয়ার আইকনে ক্লিক করে পোষ্টটি শেয়ার করে দিন।