সজিনা একটি জনপ্রিয় এবং পুষ্টিকর সবজি। বাংলাদেশের প্রায় সব জায়গায় সজিনার চাষাবাদ হয়। সজিনার পাতা, ফুল ও অপরিপক্ক ফল সবজি হিসাবে ব্যবহৃত হয়। সজিনা ভিটামিন ‘এ’, ভিটামিন ‘সি’ এবং খনিজ পদার্থ যেমন ক্যালসিয়াম, ফসফরাস এবং আয়রন সমৃদ্ধ সবজি।
(১) সজিনার জাত পরিচিত
বারি সজিনা-১:
প্রায় সারা বছর ফল ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ‘বারি সজিনা-১’ বাংলাদেশের প্রথম সজিনার জাত। বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ২০১৯ সালে এ জাতটি মুক্তায়িত হয়।
দেশে সজিনার অত্যাধিক চাহিদা এবং প্রায় সারা বছর ব্যাপী এই জাতটি ফল ধারণে সক্ষম বিধায় বানিজ্যিকভাবে চাষাবাদের পর্যাপ্ত সুযোগ রয়েছে।

- এ জাতের সজিনায় জানুয়ারি মাস থেকে ফুল আসা আরম্ভ হয় এবং অক্টোবর মাস পর্যন্ত ক্রমাগত ফুল আসে।
- ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি ব্যতিরেকে বছরের প্রায় সময়েই গাছে ফুল বা ফল পাওয়া যায়।
- ‘বারি সজিনা-১’ জাতের সজিনায় বছরে ৩ থেকে ৬ বার ফল ধরে।
- ফল লম্বা এবং হালকা সবুজ বর্ণের।
- প্রতি ফলের গড় ওজন ৩০ গ্রাম।
- ফল সাধারণত একক এবং গুচ্ছাকারে ধরে।
- পাঁচ বছর বয়সী প্রতিটি গাছে গড় ফলের সংখ্যা ১৪৫০ টি এবং ফলন ৪৫ কেজি/গাছ/ বছর এবং ৪০ টন/হে./বছর।
- বয়স বাড়ার সাথে সাথে ফলন বৃদ্ধি পায়।
(২) সজিনা চাষ পদ্ধতি বর্ণনা
ক) মাটি ও জলবায়ু
- সজিনা অবগ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলের একটি উদ্ভিদ তবে উষ্ণ অঞ্চলেও জন্মে।
- প্রায় সব ধরণের মাটিতে সজিনা চাষ করা যায়। তবে উচু ও সুনিষ্কাশিত বেলে দোয়াশ থেকে দোয়াশ মাটি সজিনা চাষের জন্য সর্বোত্তম।
- সজিনা নিরপেক্ষ থেকে হালকা অম্লীয় মাটিতে ভাল হয় (pH ৬.৩-৭.০)।
- এটি পাহাড়ী এলাকাসহ বাংলাদেশের সর্বত্র চাষযোগ্য।
- সজিনা গাছ রোদ্রজ্জ্বল পরিবেশে ভাল জন্মে কিন্তু জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না।
খ) বংশ বিস্তার
বীজ বা কলমের মাধ্যমে (শাখা কলম, দাবা কলম, গ্রাফটিং) সজিনার বংশ বিস্তার করা হয়।
গ) জমি তৈরী
- ভালভাবে চাষ ও মই দিয়ে জমি সমতল ও আগাছা মুক্ত করে নিতে হবে।
- চারা রোপনের জন্য বর্গাকার বা আয়তকার পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে।
- চারা রোপনের জন্য ৮০ x ৮০ x ৮০ সেমি. গর্ত করে ৫ কেজি জৈব সার,
২০০ গ্রাম ইউরিয়া, ২৫০ গ্রাম টিএসপি, ১৫০ গ্রাম এমওপি এবং ২৫ গ্রাম বোরিক এসিড সার প্রতি গর্তে প্রয়োগ করতে হবে। - বৃষ্টি মৌসুমের প্রারম্ভে অর্থাৎ ফাল্গুন-জেষ্ঠ্য মাস (মার্চ-মে) চারা লাগানোর উপযুক্ত সময়।
- ‘বারি সজিনা-১’ জাতের সজিনা ৩.৫ x ৩.৫ মিটার দূরত্বে লাগানো উত্তম।
- শাখা কলমের ক্ষেত্রে ১২০ সেমি. লম্বা এবং ১৫ সেমি. প্রস্থ শাখা লাগানোই উত্তম।
- চারা রোপনের পর হালকা সেচ এর ব্যবস্থা করতে হবে।
ঘ) সার প্রয়োগ
সজিনাতে বছরে ৩ বার সার প্রয়োগ করা উচিত। মাটিতে জো অবস্থায় সার প্রয়োগ করতে হয়। গাছের বৃদ্ধির সাথে সারের পরিমান বৃদ্ধি করতে হবে।
সার | গাছের বয়স (বছর) ১-২ | গাছের বয়স (বছর) ৩-৫ | গাছের বয়স (বছর) ৬ বছরের উর্ধে |
গোবর | ১০ কেজি | ১৫ কেজি | ২০ কেজি |
ইউরিয়া | ২০০ গ্রাম | ৩০০ গ্রাম | ৩৫০ গ্রাম |
টিএসপি | ২৫০ গ্রাম | ৩৫০ গ্রাম | ৪০০ গ্রাম |
এমওপি | ১৫০ গ্রাম | ২৫০ গ্রাম | ৩০০ গ্রাম |
জিপসাম | ১৫ গ্রাম | ৫০ গ্রাম | ৬০ গ্রাম |
জিংক সালফেট | ৪ গ্রাম | ৬ গ্রাম | ৮ গ্রাম |
বরিক এসিড | ৪ গ্রাম | ৮ গ্রাম | ১০ গ্রাম |
ঙ) সার প্রয়োগ পদ্ধতি
- জৈব এবং অজৈব সার গাছের গোড়া হতে ১ মিটার দূরে প্রয়োগ করে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।
- উল্লেখিত সার ৩ ভাগে এবং ৩ কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হবে।
- প্রথম কিস্তি বর্ষার প্রারম্ভে মে-জুন), দ্বিতীয় কিস্তি বর্ষার শেষে (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর) প্রয়োগ করতে হবে এবং তৃতীয় কিস্তি ফেব্রুয়ারি মাসে প্রয়োগ করতে হবে।
চ) সেচ প্রয়োগ
গাছের বৃদ্ধির জন্য শুকনা মৌসুমে সেচ প্রয়োগ করা উত্তম। ফলন্ত গাছের বেলায় ফুল ফোটার শেষ পর্যায়ে এবং পড/ফল গঠন হওয়ার পর সেচ দিতে হবে। গাছে সার প্রয়োগের পর হালকা সেচ প্রয়োগে সুফল পাওয়া যায়।
ছ) আন্তঃ পরিচর্যা
- গাছের গোড়া সব সময় আগাছা মুক্ত রাখতে হবে।
- ১-২ বছর পর্যন্ত গাছে কোন ফল না রাখাই উত্তম। তাই এ সময়ে ফুল ধারণ করলেও ফুল ফেলে দেয়া হলে গাছের বৃদ্ধি ভাল হয়।
- গাছের উচ্চতা ৩ ফিট না হওয়া অবধি পার্শ্ব ডাল ছাটাই করা উত্তম। মরা, রোগ-পোকা আক্রান্ত ডাল ছাটাই করতে হবে।
জ) রোগ বালাই ও পোকা মাকড়
সজিনার এ জাতটিতে রোগ ও পোকা মাকড় আক্রমণ অত্যন্ত কম।
ঝ) ফল সংগ্রহের সময়
এ জাতে প্রায় সারা বছরই সজিনা উৎপন্ন হয় তবে ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাসে খুবই কম ফল হয়। বছরে প্রায় ৩-৬ (এপ্রিল-নভেম্বর) বার ফল সংগ্রহ করা যায়।
ঞ) ফলন

পাঁচ বছর বয়সী প্রতিটি গাছে গড় ফলের সংখ্যা ১৪৫০ টি এবং ফলন ৪৪ কেজি/গাছ/বছর এবং ৪০ টন/হেক্টর/বছর। বয়স বাড়ার সাথে সাথে গড় ফলন বাড়ে।
বিভিন্ন উদ্ভিদ, গাছ ও ফসল যেমন- বিভিন্ন শস্য, সবজি, ফুল, ফল ইত্যাদি চাষাবাদ সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট চাষাবাদ’ (inbangla.net/casabad) এর সাথেই থাকুন।
অনুরোধ!! পোষ্ট ভালো লাগলে প্লিজ উপরের শেয়ার আইকনে ক্লিক করে পোষ্টটি শেয়ার করে দিন।