Skip to content

সরিষার জাত কী কী? সরিষার জাতের নাম ও পরিচিতি

সরিষার জাত কী কী সরিষার জাতের নাম ও পরিচিতি

বাংলাদেশের কৃষি উৎপাদনে সরিষার মত তেল ফসল খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

আমাদের বাংলাদেশে আবাদি তেল ফসলসমূহ হচ্ছে সরিষা, তিল, চীনাবাদাম, সূর্যমুখী, সয়াবিন, কুসুম ফুল, গর্জন তিল ও তিসি।

সরিষা বাংলাদেশের প্রধান ভোজ্য তেল ফসল। বিভিন্ন জাতের সরিষার বীজে ৪০-৪৪% তেল থাকে। খৈলে প্রায় ৪০% আমিষ থাকে। তাই খৈল গরু ও মহিষের জন্য খুবই পুষ্টিকর খাদ্য। একই সাথে খৈল একটি উৎকৃষ্ট জৈব সার।

(১) সরিষার জাত কী কী?

বাংলাদেশে সরিষার ফলন প্রতি হেক্টরে গড়ে ১,১৩৬ কেজি।

এ দেশে ২ প্রকার সরিষার চাষ হয়, যথা-

  1. টরি (পিঙ্গল ও শ্বেত)।
  2. রাই।

বর্তমানে আবাদযোগ্য নেপাস সরিষার জাতও উদ্ভাবন করা হয়েছে এবং তা আবাদ করা হচ্ছে।

উফশী জাতসমূহ এবং চাষাবাদের উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে তেল ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব।

(২) সরিষার জাতের নাম পরিচিতি

ক) টরি-৭

‘টরি-৭’ জাতটি বাছাইয়ের মাধ্যমে উদ্ভাবিত হয়েছে।

সরিষার জাত টরি-৭
সরিষার জাত টরি-৭
  • এ জাতের গাছের উচ্চতা ৬০-৭৫ সেমি। গাছ খাটো।
  • ফুলের বোঁটা লম্বা থাকে বলে প্রস্ফুটিত ফুল কুঁড়িসমূহের উপরে অবস্থান করে।
  • ফল বা সিলিকুয়া একটু মোটা। ফল দুই কক্ষ বিশিষ্ট।
  • বীজ গোলাকার ও পিঙ্গল বর্ণের। হাজার বীজের ওজন ২.৬-২.৭ গ্রাম। বীজে তেলের পরিমাণ ৩৮-৪১%।
  • ফসল বোনা থেকে পাকা পর্যন্ত ৭০-৮০ দিন সময় লাগে। উন্নত পদ্ধতিতে চাষ করলে হেক্টরপ্রতি ফলন ৯০০-১,০০০ কেজি হয়।
  • বর্তমানে জাতটি রোগবালাই ও পোকামাকড় দ্বারা আক্রান্ত হয়। ফলে কৃষক পর্যায়ে চাষাবাদে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।
See also
সরিষার চাষ করার পদ্ধতি, কীভাবে করতে হয়? সময় ও নিয়মসমূহ

খ) সোনালী সরিষা (এসএস-৭৫)

‘সোনালী সরিষা’ বা এসএস-৭৫ জাতটি ল্যান্ড রেসেস থেকে নির্বাচনের মাধ্যমে উদ্ভাবন করা হয় এবং ১৯৭৯ সালে অনুমোদন লাভ করে।

সরিষার জাত সোনালী সরিষা
সরিষার জাত সোনালী সরিষা
  • গাছের উচ্চতা ৯০-১০০ সেমি এবং প্রাথমিক শাখার সংখ্যা ৪-৬টি।
  • গাছে ফলের সংখ্যা ৯০-১২০টি। ফলে ৪টি কক্ষ থাকে এবং প্রতি ফলে বীজের সংখ্যা ৩৫-৪৫টি।
  • বীজের রং হলদে সোনালি। বীজ গোলাকার। হাজার বীজের ওজন ৩.৫-৪.৫ গ্রাম এবং বীজে তেলের পরিমাণ ৪৪-৪৫%।
  • গাছের কান্ড ও শিকড় শক্ত বলে অধিক সার ও সেচ প্রয়োগে গাছ নুয়ে পড়ে না।
  • ফসল পাকতে ৯০-১০০ দিন সময় লাগে। উন্নত পদ্ধতিতে চাষ করলে প্রতি হেক্টরে ১.৮-২.০ টন ফলন পাওয়া যায়।
  • বর্তমানে জাতটি অলটারনেরিয়া ব্লাইট রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা পরিলক্ষিত হচ্ছে।

গ) কল্যাণীয়া (টিএস-৭২)

‘কল্যাণীয়া’ বা টিএস-৭২ জাতটি সংকরায়ণের মাধ্যমে উদ্ভাবন করা হয় এবং ১৯৭৯ সালে অনুমোদিত হয়।

সরিষার জাত কল্যাণীয়া
সরিষার জাত কল্যাণীয়া
  • গাছের উচ্চতা ৭৫-৯০ সেমি। গাছে ৪-৬টি প্রাথমিক শাখা থাকে।
  • পাতা বোঁটাহীন ও পুষ্পপত্রের গোড়ার অংশ কান্ডকে সম্পূর্ণ ঘিরে রাখে।
  • বোঁটা লম্বা বলে প্রস্ফুটিত ফুল কুঁড়ির উপর অবস্থান করে।
  • প্রতি গাছে ফলের সংখ্যা ১২০-১৫০টি। ফলে ২টি কক্ষ থাকে এবং প্রতি ফলে বীজের সংখ্যা ১৫-২০টি।
  • বীজের রং পিঙ্গল বাদামী। বীজ গোলাকার। হাজার বীজের ওজন ২.৫-৩.০ গ্রাম। বীজে তেলের পরিমাণ ৪০-৪২%।
  • ফসল পাকতে ৮৫-৯০ দিন সময় লাগে। উন্নত পদ্ধতিতে চাষ করলে প্রতি হেক্টরে ১.৪৫-১.৬৫ টন ফলন পাওয়া যায়।

ঘ) দৌলত (আরএস-৮১)

সংগৃহীত জার্মপ্লাজম হতে বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ‘দৌলত’ (আর এস-৮১) উদ্ভাবিত হয় এবং ১৯৮৮ সালে অনুমোদন লাভ করে। এটি রাই জাতীয় সরিষা।

সরিষার জাত দৌলত
সরিষার জাত দৌলত
  • গাছের উচ্চতা ১০০-১১০ সেমি। গাছে ৪-৮টি শাখা থাকে।
  • প্রতি গাছে ফলের সংখ্যা ১১৫-১২৫টি। ফল কান্ডের সাথে লেগে থাকে। ফলে ২টি কক্ষ আছে। প্রতি ফলে বীজের সংখ্যা ১০-১৫টি। ফল থেকে বীজ ঝরে পড়ে না।
  • বীজের রং লালচে বাদামী। হাজার বীজের ওজন ২.০-২.৫ গ্রাম। বীজে তেলের পরিমাণ ৩৯-৪০%।
  • বপন থেকে তোলা পর্যন্ত ৯০-১০৫ দিন সময় লাগে।
  • হেক্টরপ্রতি ফলন ১.১-১.৩ টন।
  • দৌলত জাত খরা ও কিছুটা লবণাক্ততা সহনশীল। জাতটি অলটারনেরিয়া ব্লাইট রোগ সহনশীল।
See also
সরিষা চাষের পদ্ধতি, সময়, সারপ্রয়োগ এবং সরিষার গাছের রোগ ও পোকার প্রতিকারসহ

ঙ) রাই-৫

‘রাই-৫’ ল্যান্ড রেসেস থেকে বাছাইয়ের মাধ্যমে উদ্ভাবন করা হয় এবং ১৯৭৬ সালে অনুমোদিত হয়। নাবী ফসল হিসেবে ‘রাই-৫’ উপযোগী।

সরিষার জাত রাই-৫ (ইনসেটে দানা)
সরিষার জাত রাই-৫ (ইনসেটে দানা)
  • গাছের উচ্চতা ১২০-১৩৫ সেমি। প্রতি গাছে ৪-৬টি প্রাথমিক শাখা থাকে।
  • পাতা বোঁটাযুক্ত ও খসখসে। প্রস্ফুটিত ফুল কুঁড়ির নিচে অবস্থান করে।
  • প্রতি গাছে ফলের সংখ্যা ৯০-১২০টি। ফলে ২টি কক্ষ থাকে এবং প্রতি ফলে বীজের সংখ্যা ৮-১২টি।
  • বীজের রং লালচে বাদামী। বীজ ছোট ও গোলাকার। হাজার বীজের ওজন ১.৭-১.৯ গ্রাম। বীজে তেলের পরিমাণ ৩৯-৪০%।
  • ফসল পাকতে ৯০-১০০ দিন সময় লাগে। প্রতি হেক্টরে ১.০-১.১ টন ফলন পাওয়া যায়।
  • জাতটি খরা ও কিছুটা লবণাক্ততা সহনশীল।

চ) বারি সরিষা-৬ (ধলি)

‘বারি সরিষা-৬’ (ধলি) শ্বেত সরিষার একটি উচ্চ ফলনশীল জাত। ল্যান্ড রেসেস থেকে বাছাইকরণের মাধ্যমে এ জাতটি উদ্ভাবিত হয় এবং ১৯৯৪ সালে অনুমোদিত হয়।

বারি সরিষা-৬ (ধলি)
বারি সরিষা-৬ (ধলি)
  • গাছের উচ্চতা ১০০-১১৭ সেমি এবং প্রতি গাছে প্রাথমিক শাখার সংখ্যা ৪-৭টি।
  • গাছে ফলের সংখ্যা ৯৫-১৩০টি। ফল ২ কক্ষ বিশিষ্ট এবং প্রতি ফলে বীজের সংখ্যা ২২-২৫টি।
  • হাজার বীজের ওজন ৩-৪ গ্রাম। বীজের রং হলদে। বীজে তেলের পরিমাণ ৪৪-৪৫%।
  • কান্ড ও শিকড় শক্ত হওয়ায় গাছ হেলে পড়ে না। পরিপক্ক ফল ফেটে গিয়ে বীজ ঝরে পড়ে না। ফল ও ফলের ঠোঁট তুলনামূলকভাবে লম্বা।
  • বারি সরিষা-৬ (ধলি) পাকতে ৯০-১০০ দিন সময় লাগে।
  • পরিমাণমতো সার ও সেচ দিলে প্রতি হেক্টরে ১.৯-২.২ টন ফলন পাওয়া যায়।

ছ) বারি সরিষা-৭ (ন্যাপাস-৩১৪২)

‘বারি সরিষা-৭’ জাতটি ব্রাসিকা ক্যাম্পেস্ট্রিজ ও ব্রাসিকা ওলেরিশিয়া প্রজাতিদ্বয়ের সংকরায়ণের মাধ্যমে উদ্ভাবিত হয় এবং ১৯৯৪ সালে অনুমোদিত হয়।

বারি সরিষা-৭ জাতের ফসল
বারি সরিষা-৭ জাতের ফসল
  • গাছের উচ্চতা ৮০-১০০ সেমি। প্রতি গাছে প্রাথমিক শাখার সংখ্যা ৪-৫টি।
  • গাছের পাতা বোঁটাহীন ও তল মসৃণ।
  • ফুলের পাঁপড়ির রং সাদা।
  • প্রতি গাছে ফলের সংখ্যা ৯০-১২৫টি। ফল ২ কক্ষ বিশিষ্ট এবং প্রতি ফলে বীজের সংখ্যা ২৫-৩০টি।
  • বীজের রং পিঙ্গল কালো। বীজ বড় ও গোলাকার। হাজার বীজের ওজন ৩.৪-৩.৬ গ্রাম। বীজে তেলের পরিমাণ ৪২-৪৫%।
  • ফসল ৯০-৯৫ দিনে পাকে। পরিমাণমতো সার ও সেচ দিয়ে উন্নত পদ্ধতিতে চাষ করলে হেক্টরপ্রতি ২.০-২.৫ টন ফলন পাওয়া যায়।
  • জাতটি অলটারনেরিয়া ব্লাইট রোগ এবং সাময়িক জলাবদ্ধতা সহনশীল।
See also
সরিষা কোন মাটিতে ভালো হয়? সরিষা চাষ পদ্ধতি ও বিঘা প্রতি সরিষার ফলন

জ) বারি সরিষা-৮ (ন্যাপাস-৮৫০৯)

‘বারি সরিষা-৮’ জাতটি সংকরায়ণের মাধ্যমে উদ্ভাবন করা হয়েছে। ছোট দিনের উপযোগী এ জাতটি ১৯৯৪ সালে অনুমোদিত হয়।

বারি সরিষা-৮ (ইনসেটে দানা)
বারি সরিষা-৮ (ইনসেটে দানা)
  • গাছের উচ্চতা ৯০-১১০ সেমি এবং প্রতি গাছে ৪-৫টি প্রাথমিক শাখা থাকে।
  • পাতা বোঁটাহীন ও মসৃণ। পাতার গোড়া কান্ডকে অর্ধাবৃত করে রাখে।
  • ফুলের পাঁপড়ির রং হলদে।
  • প্রতি গাছে ফলের সংখ্যা ৯০-১২৫টি, ফল ২ কক্ষ বিশিষ্ট। প্রতি ফলে বীজের সংখ্যা ২৫-৩০টি।
  • বীজের রং কালচে। হাজার বীজের ওজন ৩.৪-৩.৬ গ্রাম। বীজে তেলের পরিমাণ ৪৩-৪৫%।
  • ফসল পাকতে ৯০-৯৫ দিন সময় লাগে। পরিমাণমতো সার ও সেচ দিয়ে আবাদ করলে প্রতি হেক্টরে ২.০-২.৫ টন ফলন পাওয়া যায়।
  • এ জাত অলটারনেরিয়া ব্লাইট রোগ ও সাময়িক জলাবদ্ধতা সহনশীল।

ঝ) বারি সরিষা-৯

সার্কভুক্ত দেশসমূহের মধ্যে কারিগরি সহযোগিতার আওতায় ভারত থেকে সংগৃহীত জার্মপ্লাজম থেকে এ জাতটি উদ্ভাবন করা হয় এবং ২০০০ সালে অনুমোদিত হয়। এটি ব্রাসিকা ক্যাম্পেস্ট্রিস প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত।

বারি সরিষা-৯
বারি সরিষা-৯
  • গাছের উচ্চতা ৮০-৯৫ সেমি এবং প্রতি গাছে ৪-৬টি প্রাথমিক শাখা থাকে।
  • পাতা হালকা সবুজ রঙের এবং মসৃণ। পাতার বোঁটা কান্ডকে সম্পূর্ণ ঘিরে রাখে।
  • প্রস্ফুটিত ফুল কুঁড়ির উপরে থাকে। ফুলের রং হলুদ।
  • প্রতি গাছে ফলের সংখ্যা ৮০-১০০টি। ফল ২ কক্ষ বিশিষ্ট। প্রতি ফলে বীজের সংখ্যা ১৫-২০টি।
  • বীজের রং পিঙ্গল। হাজার বীজের ওজন ২.৫-৩.০ গ্রাম। বীজে তেলের পরিমাণ শতকরা ৪৩-৪৪ ভাগ।
  • ফসল পাকতে ৮০-৮৫ দিন সময় লাগে। পরিমাণমতো সার ও সেচ দিলে প্রতি হেক্টরে ১.২৫-১.৪৫ টন ফলন পাওয়া যায়।
  • এ জাতটি টরি-৭ এর চেয়ে শতকরা ১০-২৫ ভাগ বেশি ফলন দেয়।
  • আমন ধান কাটার পর এবং বোরো ধান চাষের আগে স্বল্প মেয়াদী এ জাতটি সহজে চাষ করা সম্ভব।

ঞ) বারি সরিষা-১০

‘বারি সরিষা-১০’ দেশের ভেতর এবং বিদেশ থেকে সংগৃহীত জার্মপ্লাজমের মধ্য বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উদ্ভাবন করা হয়। জাতটি ২০০০ সালে অনুমোদন লাভ করে। এটি রাই জাতীয় সরিষা।

See also
পিঁয়াজ ও সরিষার বীজ উৎপাদন পদ্ধতি
বারি সরিষা-১০ (ইনসেটে দানা)
বারি সরিষা-১০ (ইনসেটে দানা)
  • গাছের উচ্চতা ৯০-১০০ সেমি। প্রতি গাছে ৪-৬টি প্রাথমিক শাখা থাকে। শাখা থেকে প্রশাখা বের হয়।
  • পাতা হালকা সবুজ রঙের। পাতা বোঁটাযুক্ত ও খসখসে।
  • প্রতি গাছে ফলের সংখ্যা ১০০-১২০টি। প্রতি ফলে বীজের সংখ্যা ১২-১৫টি।
  • বীজের রং পিঙ্গল। হাজার বীজের ওজন ২.০-৩.০ গ্রাম। বীজে তেলের পরিমাণ শতকরা ৪২-৪৩ ভাগ।
  • হেক্টরপ্রতি ফলন ১.২৫-১.৪৫ টন।
  • আমন ধান কাটার পর এ জাতটি নাবি জাত হিসেবে চাষ করা হয়।

ট) বারি সরিষা-১১

দেশের ভেতরে ও বিদেশ থেকে সংগৃহীত জার্মপ্লাজম হতে বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এ জাতটি উদ্ভাবিত হয় এবং ২০০১ সালে অনুমোদন লাভ করে। এটি ব্রাসিকা জুনসিয়া প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত।

বারি সরিষা-১১ এর ফসল
বারি সরিষা-১১ এর ফসল
  • গাছের উচ্চতা ১২০-১৩০ সেমি। গাছে ৩-৫টি প্রাথমিক শাখা থাকে।
  • পাতা বোঁটাযুক্ত ও খসখসে এবং সবুজ রঙের। শাখাগুলো মাটির একটু উপরে প্রধান কান্ড থেকে বের হয়।
  • প্রস্ফুটিত ফুল কুঁড়ির নিচে থাকে। ফুলের রং হলুদ।
  • প্রতি গাছে ফলের সংখ্যা ৭৫-১৫০টি। ফল ২ কক্ষ বিশিষ্ট। প্রতি ফলে বীজের সংখ্যা ১২-১৫টি।
  • বীজের রং পিঙ্গল। হাজার বীজের ওজন ৩.৫-৪.০ গ্রাম। বীজের ওজন অন্যান্য রাই
    সরিষার চেয়ে বেশি।
  • ফসল ১০৫-১১০ দিনে পাকে। প্রতি হেক্টরে ২.০-২.৫ টন ফলন পাওয়া যায়।
  • এ জাতটি দৌলতের চেয়ে ২০-২৫% বেশি ফলন দেয়।
  • আমন ধান কাটার পর এ জাতটি নাবি জাত হিসেবে চাষ করা যায়। জাতটি খরা এবং লবণাক্ততা সহনশীল।

ঠ) বারি সরিষা-১২

এ জাতটি ক্রুসিফেরী পরিবারের ব্রাসিকা ক্যাম্পেস্ট্রিস প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত। বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে লাইনটি উন্নত হিসেবে বিবেচিত হয় এবং ২০০২ সালে অনুমোদন লাভ করে।

বারি সরিষা-১২ (ইনসেটে দানা)
বারি সরিষা-১২ (ইনসেটে দানা)
  • গাছের উচ্চতা ৬৫-৮০ সেমি। গাছ খাটো। গাছে ৫-৬টি প্রাথমিক শাখা থাকে।
  • সদ্য প্রস্ফুটিত ফুল কুঁড়িসমূহের উপরে অবস্থান করে। ফুলের পাঁপড়ির রং হলদে।
  • প্রতি গাছে ফলের সংখ্যা ৭০-১০০টি। ফল ২ কক্ষ বিশিষ্ট। প্রতি ফলে বীজের সংখ্যা ১৫-২০টি।
  • বীজের রং পিঙ্গল। হাজার বীজের ওজন ২.৬-৩.২ গ্রাম। বীজে তেলের পরিমাণ ৪৩-৪৪%।
  • ফসল ৮৫-৯০ দিনে পাকে। প্রতি হেক্টরে ১.৪৫-১.৬৫ টন ফলন পাওয়া যায়।
  • এ জাতটি ‘টরি-৭’ জাতের চেয়ে ১৫-২০% বেশি ফলন দেয়।
See also
পিঁয়াজ, আলু ও সরিষার বীজ শোধন পদ্ধতি/উপায়/নিয়ম

ড) বারি সরিষা-১৩

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট সুইডেনের উপসালা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশের আবহাওয়া উপযোগী নেপাস প্রজাতির কয়েকটি লাইন উদ্ভাবন করে। ন্যাপ-১৯৮ লাইনটি আঞ্চলিক ফলন পরীক্ষায় বারি সরিষা-৭ ও বারি সরিষা-৮ এর চেয়ে বেশি ফলনশীল হওয়ায় লাইনটি নির্বাচন করা হয়। ন্যাপ-১৯৮ লাইনটি ২০০৪ সালের মার্চ মাসে বাংলাদেশে চাষাবাদের জন্য জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক ‘বারি সরিষা-১৩’ নামে অনুমোদন লাভ করে।

বারি সরিষা-১৩ এর ফসল
বারি সরিষা-১৩ এর ফসল
  • গাছের উচ্চতা ৮০-১০০ সেমি। প্রতি গাছে ৫-৬টি প্রাথমিক
    শাখা থাকে।
  • পাতা গাঢ় সবুজ রঙের মসৃণ ও লোমহীন। পাতা বোঁটাহীন এবং কান্ড কে অর্ধেক ঘিরে রাখে।
  • মঞ্জুরীদন্ডে সদ্য প্রস্ফুটিত ফুল কুঁড়ির নিচে অবস্থান করে। গাছে দীর্ঘ দিন যাবৎ ফুল ধরে। ফুলের পাঁপড়ির রং হলুদ।
  • প্রতি গাছে ফলের সংখ্যা ৬৫-৭৫টি। ফল ২ কক্ষ বিশিষ্ট। প্রতি ফলে বীজের সংখ্যা ২৮-৩০টি।
  • বীজের রং পিঙ্গল। হাজার বীজের ওজন ৩.৭-৩.৯ গ্রাম। বীজে তেলের পরিমাণ শতকরা ৪২-৪৩ ভাগ।
  • হেক্টরপ্রতি ফলন ২.২০-২.৮০ টন। ফসল ৯০-৯৫ দিনে পাকে।

ণ) বারি সরিষা-১৪

‘বারি সরিষা-১৪’ ক্রসিফেরী পরিবারের ব্রাসিকা ক্যাম্পেস্ট্রিজ প্রজাতির অন্তর্গত। তৈলবীজ গবেষণা কেন্দ্রের মাঠে ১৯৯৭ সালে টরি-৭ এর সাথে সোনালী সরিষার সংকরায়ণের মাধ্যমে লাইনটি উদ্ভাবন করা হয়। এ লাইনটি ২০০৬ সালে বারি সরিষা-১৪ নামে জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক অনুমোদন লাভ করে।

বারি সরিষা-১৪ এর ফসল
বারি সরিষা-১৪ এর ফসল
  • উচ্চতা ৭৫-৮৫ সেমি।
  • পাতা হালকা সবুজ রঙের এবং মসৃণ।
  • প্রতি গাছে শুঁটির সংখ্যা ৮০-১০০টি। শুঁটি যদিও দেখতে চার প্রকোষ্ঠ বিশিষ্ট মনে হয় কিন্তু আসলে দুই প্রকোষ্ঠ বিশিষ্ট। প্রত্যেক শুটিতে বীজের সংখ্যা ২২-২৬টি।
  • বীজের রং হলুদ বর্ণের। হাজার বীজের ওজন ৩.৫-৩.৮ গ্রাম।
  • স্থিতিকাল ৭৫-৮০ দিন। ফলন হেক্টরে ১.৪-১.৬ টন।
  • এ জাতটি টরি-৭ এর চেয়ে ২৫-৩০% বেশি ফলন দেয়। আমন ধান কাটার পর স্বল্পমেয়াদী জাত হিসেবে চাষ করে বোরো ধান রোপণ করা সম্ভব।
See also
সরিষার চাষ করার পদ্ধতি, কীভাবে করতে হয়? সময় ও নিয়মসমূহ

ত) বারি সরিষা-১৫

‘বারি সরিষা-১৫’ ক্রুসিফেরী পরিবারের ব্রাসিকা ক্যাম্পেস্ট্রিজ প্রজাতির অন্তর্গত। ২০০২ সালে বগুড়ার কাহালু থেকে জার্মপ্লাজম সংগ্রহ করে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে এ লাইনটি ২০০৬ সালে বারি সরিষা-১৫ নামে জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক চাষাবাদের জন্য অনুমোদন লাভ করে।

বারি সরিষা-১৫ এর ফসল
বারি সরিষা-১৫ এর ফসল
  • উচ্চতা ৯০-১০০ সেমি।
  • প্রতি গাছে শুঁটির সংখ্যা ৭০-৮০টি। শুঁটি দুই প্রকোষ্ঠ বিশিষ্ট। প্রত্যেক শুঁটিতে বীজের সংখ্যা ২০-২২টি। শুঁটি বারি সরিষা-১৪ এর তুলনায় সরু ও লম্বা।
  • বীজের রং হলুদ বর্ণের। হাজার বীজের ওজন ৩.২৫-৩.৫০ গ্রাম।
  • স্থিতিকাল ৮০-৮৫ দিন। ফলন প্রতি হেক্টরে ১.৫৫-১.৬৫ টন।
  • এ জাতটি ‘টরি-৭’ এর চেয়ে ৩০-৩৫% বেশি ফলন দেয়।
  • আমন ধান কাটার পর স্বল্পমেয়াদী জাত হিসেবে চাষ করে বোরো ধান রোপণ করা সম্ভব।

থ) বারি সরিষা-১৬

ইউরোপিয়ান কমিশনের অর্থানুকূল্যে পরিচালিত তৃতীয় বিশ্বের ‘উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা’ প্রকল্পের আওতায় প্লান্ট রিসার্চ ইন্টারন্যাশনাল, দি নেদারল্যান্ড এর কারিগরি সহায়তায় ২০০১ সালে হেপ্লয়েড প্রযুক্তির মাধ্যমে তৈলবীজ গবেষণা কেন্দ্র বিজেডিএইচ-১৮ লাইনটি উদ্ভাবন করে। উক্ত লাইনটি ব্রাসিকা জুনসিয়া প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত। লাইনটি উদ্ভাবনের পর তৈলবীজ গবেষণা মাঠে আ লিক ফলন পরীক্ষা এবং কৃষকের মাঠে ভাল ফলাফল প্রদর্শন করে। উক্ত লাইনটি ২০০৯ সালে ‘বারি সরিষা-১৬’ জাত হিসেবে অবমুক্ত হয়েছে।

বারি সরিষা-১৬ এর ফসল
বারি সরিষা-১৬ এর ফসল
  • উচ্চতা ১৭৫-১৯৫ সেমি। প্রতি গাছে শুঁটির সংখ্যা ১৮০-২০০টি। শুঁটি দুই কক্ষ বিশিষ্ট। প্রত্যেক শুঁটিতে বীজের সংখ্যা ৯-১১টি।
  • বীজের রং পিঙ্গল বর্ণের। হাজার বীজের ওজন ৪.৭-৪.৯ গ্রাম।
  • স্থিতিকাল ১০৫-১১৫ দিন। ফলন (শস্যদানা) ২.০-২.৫ টন/হেক্টর। জ্বালানি ৩.০-৩.৫ টন/হেক্টর।
  • আমন ধান কাটার পর বোরো ধান করে না এরূপ জমিতে এই জাতটি নাবি জাত হিসেবে চাষ করা যায়।
  • এই জাতটি খরা এবং লবণাক্ততা সহিষ্ণু।
  • এটি অলটারনেরিয়া রোগ ও অরোবাংকি পরজীবী সহনশীল।

দ) বারি সরিষা-১৭

‘বারি সরিষা-১৭’ জাতটি ক্রসিফেরী পরিবারের ব্রাসিকা বাপা প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত। বারি সরিষা-১৫ ও সোনালী সরিষা এর মধ্যে সংকরায়ণের মাধ্যমে লাইনটি উদ্ভাবন করা হয়। উদ্ভাবনের পর তৈলবীজ গবেষণা মাঠে, আ লিক ফলন পরীক্ষায় এবং কৃষকের মাঠে প্রচলিত জাতের তুলনায় ভাল ফলাফল প্রদর্শন করে। উক্ত লাইনটি ২০১৩ সালে ‘বারি সরিষা-১৭’ জাত হিসেবে জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক অনুমোদন লাভ করে।

See also
পিঁয়াজ, আলু ও সরিষার বীজ শোধন পদ্ধতি/উপায়/নিয়ম
বারি সরিষা-১৭ এর ফসল
বারি সরিষা-১৭ এর ফসল
  • ‘বারি সরিষা-১৭’ জাতটি স্বল্প মেয়াদী। স্থিতিকাল ৮২-৮৬ দিন।
  • গাছের উচ্চতা ৯৫-৯৭ সেমি। গাছ সহজে ঢলে পড়ে না।
  • প্রতি গাছে শুঁটির সংখ্যা ৬০-৬৫ এবং প্রতি শুঁটিতে বীজের সংখ্যা ২৮-৩০।
  • জাতটির ফুলের ও বীজের রং হলুদ। বীজের রং হলুদ হওয়ায় প্রচলিত বাদামী রঙের বীজের তুলনায় ৩-৪% তেল বেশি থাকে। হাজার বীজের ওজন ৩.০-৩.৪ গ্রাম।
  • প্রতি হেক্টরে ফলন ১.৭-১.৮ টন।
  • এ জাতটি ‘বারি সরিষা-১৪’ অপেক্ষা ৫-১০% বেশি ফলন দিয়ে থাকে।
  • জাতটি স্বল্প মেয়াদী হওয়ায় রোপা আমন-সরিষা-বোরো ধান শস্য বিন্যাসের জন্য উপযুক্ত অর্থাৎ আমন ধান কর্তনের পর উক্ত জাতটি চাষ করে বোরো ধান চাষ করা সম্ভব।

ধ) বারি সরিষা-১৮ (ক্যানোলা টাইপ)

বারি সরিষা-১৮ ক্রুসিফেরী পরিবারের ব্রাসিকা ন্যাপাস প্রজাতির অন্তর্গত একটি সরিষার জাত। এ জাতটি বাংলাদেশে উদ্ভাবিত প্রথম “ক্যানোলা” বৈশিষ্ট্যের জাত। অস্ট্রেলিয়ার ইঘ-১৪০৪ লাইন অধিকতর নির্বাচনের মাধ্যমে এ জাতটি উদ্ভাবন করা হয়েছে। এ জাতটি ২০১৮ সালে জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক নিবন্ধন করা হয়।

বারি সরিষা-১৮ এর ফসল
বারি সরিষা-১৮ এর ফসল
  • এই জাতের সরিষার গাছের উচ্চতা ৮৮-১২৬ সেমি (অপেক্ষাকৃত খাটো)।
  • বপন হতে কর্তন পর্যন্ত সময়কাল ৯৫-১০০ দিন।
  • সমগ্র বাংলাদেশে চাষ উপযোগী এ জাতের তেলে ইরুসিক এসিডের পরিমাণ ১.০৬%। যেখানে বর্তমানে বাংলাদেশে চাষকৃত অন্যান্য উন্নত সরিষার জাতে ইরুসিক এসিডের পরিমাণ ৩৫%-৪০%।
  • পরিমাণ মতো সার ও সেচ প্রয়োগে এ জাত ২.০-২.৫ টন/হেক্টর (৫০০-৬০০ কেজি/একর) পর্যন্ত ফলন দেয়।
  • এ জাতে তেলের পরিমাণ ৪০%-৪২%।
  • পুষ্টির গুণাগুণ বিবেচনায় বাণিজ্যিকভাবে সরিষা চাষের ক্ষেত্রে উদ্ভাবিত এ জাত বাংলাদেশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

বিভিন্ন উদ্ভিদ, গাছ ও ফসল যেমন- বিভিন্ন শস্য, সবজি, ফুল, ফল ইত্যাদি চাষাবাদ সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট চাষাবাদ’ (inbangla.net/casabad) এর সাথেই থাকুন।

Leave a Reply

nv-author-image

ইন বাংলা নেট চাষাবাদ

বিভিন্ন উদ্ভিদ, গাছ ও ফসল যেমন- বিভিন্ন শস্য, সবজি, ফুল, ফল ইত্যাদি চাষাবাদ সম্পর্কিত যা কিছু বাংলাতে।View Author posts