Skip to content

 

সালোকসংশ্লেষণ কাকে বলে? সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া

সালোকসংশ্লেষণ কাকে বলে, সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া

নিম্নে সালোকসংশ্লেষণ কাকে বলে ও সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করা হলো-

(১) সালোকসংশ্লেষণ কাকে বলে?

চিত্ৰঃ সালোকসংশ্লেষণ
চিত্ৰঃ সালোকসংশ্লেষণ

সালোকসংশ্লেষণ কাকে বলে: সবুজ উদ্ভিদের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো যে এরা সূর্যালোকের উপস্থিতিতে কার্বন ডাই-অক্সাইড (CO) এবং পানি থেকে কার্বোহাইড্রেট বা শর্করাজাতীয় খাদ্য তৈরি করে। সবুজ উদ্ভিদে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাদ্য তৈরি হওয়ার এ প্রক্রিয়াকে সালোকসংশ্লেষণ (Photosynthesis) বলা হয়।

সালোকসংশ্লেষণ একটি জটিল এবং দীর্ঘ প্রক্রিয়া। 1905 সালে ইংরেজ শারীরতত্ত্ববিদ ব্ল্যাকম্যান (Blackman) এ প্রক্রিয়াকে দুটি পর্যায়ে ভাগ করেন। পর্যায় দুটি হলো, আলোকনির্ভর পর্যায় (Light dependent phase) এবং আলোক নিরপেক্ষ পর্যায় (Light Independent phase)।

এই প্রক্রিয়ায় আলোকশক্তি রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। সবুজ উদ্ভিদে প্রস্তুত খাদ্য উদ্ভিদ নিজে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় বিপাকীয় প্রক্রিয়া সম্পাদন করতে ব্যবহার করে এবং অবশিষ্ট খাদ্য ফল, মূল, কাণ্ড অথবা পাতায় সঞ্চিত রাখে। উদ্ভিদে সঞ্চিত এই খাদ্যের উপরেই মানবজাতি ও অন্যান্য জীবজন্তুর অস্তিত্ব নির্ভর করে।

(২) সালোকসংশ্লেষণের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ

সালোকসংশ্লেষণের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণগুলো হলো: ক্লোরোফিল, আলো, পানি এবং কার্বন ডাই- অক্সাইড। 

সালোকসংশ্লেষণ একটি জৈব রাসায়নিক (biochemical) বিক্রিয়া, যেটি এরকম: 6CO2 + 12H2O → আলে → ক্লোরোফিল → C6H12O6 + 6H2O + 6O2

  • পাতার মেসোফিল টিস্যু সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার প্রধান স্থান।
  • স্থলজ সবুজ উদ্ভিদ মাটি থেকে মূলের মাধ্যমে পানি শোষণ করে পাতার মেসোফিল টিস্যুর ক্লোরোপ্লাস্টে পৌঁছায় এবং স্টোমা বা পত্ররন্থের মাধ্যমে বায়ু থেকে CO, গ্রহণ করে, যা মেসোফিল টিস্যুর ক্লোরোপ্লাস্টে পৌঁছে।
  • জলজ উদ্ভিদ পানিতে দ্রবীভূত CO, গ্রহণ করে। বায়ুমণ্ডলে 0.03% এবং পানিতে 0.3% CO, আছে, তাই ফলজ উদ্ভিসে সালোকসংশ্লেষণের হার স্থলজ উদ্ভিদ থেকে বেশি।
  • অক্সিজেন এবং পানি সালোকসংশ্লেষণের উপজাত দ্রব্য (by-product)। এটি একটি জারণ-বিজারণ প্রক্রিয়া (oxidation-reduction process)। এ প্রক্রিয়ায় HO জারিত হয় এবং CO, বিষ্ফারিত হয়।

(৩) সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া

সালোকসংশ্লেষণ একটি জটিল এবং দীর্ঘ প্রক্রিয়া। 1905 সালে ইংরেজ শারীরতত্ত্ববিদ ব্ল্যাকম্যান (Blackman) এ প্রক্রিয়াকে দুটি পর্যায়ে ভাগ করেন। পর্যায় দুটি হলো, আলোকনির্ভর পর্যায় (Light dependent phase) এবং আলোক নিরপেক্ষ পর্যায় (Light Independent phase)।

চিত্রঃ একটি পত্ররন্ধ্র বা স্টোমা
চিত্রঃ একটি পত্ররন্ধ্র বা স্টোমা

ক) আলোকনির্ভর পর্যায়

  • আলোকনির্ভর পর্যায়ের জন্য আলো অপরিহার্য। এ পর্যায়ে সৌরশক্তি রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়।
  • এ প্রক্রিয়ার ATP (অ্যাডিনোসিন ট্রাইফসফেট), NADPH (বিচ্ছুরিত নিকোটিনামাইড অ্যাডনিন ডাইনিউক্লিওটাইড ফসফেট) এবং H’ (হাইড্রোজেন আয়ন বা প্রোটন) উৎপন্ন হয়। এই রূপান্তরিত শক্তি ATP-এর মধ্যে সঞ্চিত হয়।
  • এই বিক্রিয়ায় ক্লোরোফিল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ক্লোরোফিল অণু আলোকরশ্মির ফোটন (photon) শোষণ করে এবং শোষণকৃত ফোটন থেকে শক্তি সঞ্চয় করে ADP (অ্যাডিনোসিন ডাইফসফেট) অজৈব ফসফেট (Pi = Inorganic phosphate)-এর সাথে মিলিত হয়ে ATP তৈরি করে। ATP তৈরির এই প্রক্রিয়াকে ফটোফসফোরাইলেশন (photophosphorylation) বলে।

ADP + Pi → আলো → ক্লোরোফিল → ATP

সূর্যালোক এবং ক্লোরোফিলের সাহায্যে পানি বিয়োজিত হয়ে অক্সিজেন, হাইড্রোজেন ও ইলেকট্রন উৎপন্ন হয়। এ প্রক্রিয়াকে পানির ফটোলাইসিস (photolysis) বলা হয়।

খ) আলোক নিরপেক্ষ পর্যায় বা অন্ধকার পর্যায়

  • আলোক নিরপেক্ষ পর্যায়ে আলোর প্রত্যক্ষ প্রয়োজন পড়ে না, তবে আলোর উপস্থিতিতেও এই প্রক্রিয়া চলতে পারে। বায়ুমণ্ডলের CO2 পত্ররঞ্জের মধ্য দিয়ে কোষে প্রবেশ করে।
  • আলোক পর্যায়ে তৈরি ATP, NADPH এবং H+ এর সাহায্যে আলোক নিরপেক্ষ পর্যায়ে CO. বিজরিত হয়ে কার্বোহাইড্রেটে পরিণত হয়।
  • সবুচ্ছ উদ্ভিদে CO2 বিজারণের তিনটি পতিপথ শনাক্ত করা হয়েছে সেগুলো হচ্ছে ক্যালভিন চক্র, হ্যাঁচ ও স্প্যাক চক্র এবং ক্রেসুলেসিয়ান এসিড বিপাক। এদের মধ্যে প্রথম দুটির সংক্ষিপ্ত আলোচনা নিচে দেওয়া হলো।
চিত্রঃ উদ্ভিদে সালোকসংশ্লেষণের দুটি ধাপের আলোকনির্ভর পর্যায় ও ক্যালভিন চক্র
চিত্রঃ উদ্ভিদে সালোকসংশ্লেষণের দুটি ধাপের আলোকনির্ভর পর্যায় ও ক্যালভিন চক্র

i) কালভিন চক্র বা গতিপথ (Calvin cycle বা C cycle)

CO2 আত্তীকরণের এ পতিপথকে আবিষ্কারকদের নামানুসারে ক্যালভিন—বেনসন ও ব্যাশাম চক্র বা সংক্ষেপে ক্যালভিন চক্র বলা হয়। ক্যালভিন তার এ আবিষ্কারের জন্য 1961 সালে নোবেল পুরস্কার পান। অধিকাংশ উদ্ভিসে এই প্রক্রিয়ায় শর্করা তৈরি হয় এবং প্রথম স্থায়ী পদার্থ ও কার্বনবিশিষ্ট ফসফোগ্লিসারিক এসিড বলে এই ধরনের উদ্ভিদকে বলে C, উদ্ভিদ।

ii) হ্যাচ ও ল্যাৰু চক্র বা C গতিপথ (Hatch and Slack cycle বা C cycle)

অস্ট্রেলীয় বিজ্ঞানী MD. Hatch ও C.R. Slack (1966 সালে) CO, বিজারণের আর একটি গতিপথ আবিষ্কার করেন। এই গতিপথের প্রথম স্থায়ী পদার্থ হলো 4 কার্বনবিশিষ্ট অক্সালো এসিটিক এসিড তাই, একে G গতিপথ বলে। C4 উদ্ভিদে একই সাথে হ্যাচ ও স্প্যাক চক্র এবং ক্যালভিন চক্র পরিচালিত হতে দেখা যায়। C, উদ্ভিদের তুলনায় C, উদ্ভিদে সালোকসংশ্লেষণের হার বেশি এবং উৎপাদন ক্ষমতাও বেশি। সাধারণত ভুট্টা, আখ, অন্যান্য ঘাসজাতীয় উদ্ভিদ, মুথা ঘাস, অ্যামারেনথাস (Amaranthus) ইত্যাদি উদ্ভিদে পরিচালিত হয়।

(৪) সালোকসংশ্লেষণে ক্লোরোফিলের ভূমিকা

পাতার ফ্লোরোফিলের পরিমাণের সাথে সালোকসংশ্লেষণের হারের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে, কারণ একমাত্র ক্লোরোফিলই আলোকশক্তি গ্রহণ করতে পারে। পুরাতন ক্লোরোপ্লাস্ট নষ্ট হয়ে যায় এবং তখন নতুন ক্লোরোপ্লাস্ট সংশ্লেষিত হয়। নতুন ক্লোরোপ্লাস্ট এবং ক্লোরোপ্লাস্টের উপাদান সৃষ্টির হারের উপর সালোকসংশ্লেষণের হার নির্ভরশীল। সালোকসংশ্লেষণ ক্ষমতা রক্ষা করার জন্য ক্লোরোপ্লাস্টের বিভিন্ন উপাদান দ্রুত এবং প্রচুর পরিমাণে পুনর্গঠিত হওয়া প্রয়োজন। তবে কোষে খুব বেশি পরিমাণ ক্লোরোফিল থাকলে এনজাইমের অভাব দেখা দেয় এবং সালোকসংশ্লেষণ কমে যায়।

(৫) সালোকসংশ্লেষণে আলোর ভূমিকা

  • সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় আলোর গুরুত্ব অপরিসীম। পানি এবং CO2 থেকে শর্করা তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় শক্তির উৎস আলো।
  • সূর্যালোক ক্লোরোফিল সৃষ্টিতে অংশগ্রহণ করে। সূর্যালোকের প্রভাবেই পত্ররন্ধ্র উন্মুক্ত হয়, CO2 পাতার অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে পারে এবং খাদ্য প্রস্তুতকরণে অংশগ্রহণ করে। কিন্তু পাতায় যেটুকু আলো পড়ে, তার অতি সামান্য অংশই সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত হয়। আবার আলোকবর্ণালির লাল, নীল, কমলা এবং বেগুনি অংশটুকুতেই সালোকসংশ্লেষণ ভালো হয়।
  • সবুজ কিংবা হলুদ আলোতে সালোকসংশ্লেষণ ভালো হয় না। একটি নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত আলোর পরিমাণ বাড়লে সালোকসংশ্লেষণের হারও বেড়ে যায়। কিন্তু আলোর পরিমাণ অত্যধিক বেড়ে গেলে পাতার ভিতরকার এনজাইম নষ্ট হয়ে যায়, ক্লোরোফিল উৎপাদন কম হয়। ফলে সালোকসংশ্লেষণের হারও কমে যায়।
  • সাধারণত 400 nm থেকে 480 nm এবং 680nm (ন্যানোমিটার) তরঙ্গদৈর্ঘ্য বিশিষ্ট আলোতে সালোকসংশ্লেষণ সবচেয়ে ভালো হয়।

(৬) সালোকসংশ্লেষণের প্রভাবক

আলো এবং ক্লোরোফিল ছাড়াও সালোকসংশ্লেষণ আরও কতগুলো প্রভাবক দিয়ে প্রভাবিত হয়। প্রভাবকগুলো কিছু বাহ্যিক এবং কিছু অভ্যন্তরীণ। প্রভাবকের উপস্থিতি, অনুপস্থিতি, পরিমাণের কম-বেশি সলোকসংশ্লেষণের পরিমাণও কম-বেশি করে থাকে।

প্রভাবকগুলো হচ্ছে-

ক) বাহ্যিক প্রভাবকসমূহ

i) আলো: এ সম্পর্কে ইতিমধ্যে আলোচনা করা হয়েছে।

ii) কার্বন ডাই-অক্সাইড: কার্বন ডাই-অক্সাইড ছাড়া সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া চলতে পারে না। এ প্রক্রিয়ায় যে খাদ্য প্রস্তুত হয় তা কার্বন ডাই-অক্সাইড বিজারণের ফলেই হয়ে থাকে। বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ 0.03 ভাগ, কিন্তু এ প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদ শতকরা এক ভাগ পর্যন্ত কার্বন ডাই-অক্সাইড ব্যবহার করতে পারে। তাই বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সামঞ্জস্য রেখে সালোকসংশ্লেষণের পরিমাণও বেড়ে যায়। তবে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ খুব বেশি মাত্রায় বেড়ে গেলে পাতার মেসোফিল টিস্যুর কোষের অম্লত্বও বেড়ে যায় এবং পত্ররন্দ্র বন্ধ হয়ে সালোকসংশ্লেষণের হার কমে যায়।

iii) তাপমাত্রা: সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় তাপমাত্রা বিশেষ প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। সাধারণত অতি নিম্ন তাপমাত্রা (০° সেলসিয়াস, এর কাছাকাছি) এবং অতি উচ্চ তাপমাত্রায় (45° সেলসিয়াসের উপরে) এ প্রক্রিয়া চলতে পারে না। সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার জন্য পরিমিত (optimum) তাপমাত্রা হলো 22° সেলসিয়াস থেকে 35° সেলসিয়াস পর্যন্ত। তাপমাত্রা 22° সেলসিয়াসের কম বা 35° সেলসিয়াসের বেশি হলে সালোকসংশ্লেষণের হার কমে যায়।

iv) পানি: সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় শর্করা তৈরির উদ্দেশ্যে CO2 কে বিজারণের জন্য প্রয়োজনীয় H+ (হাইড্রোজেন আয়ন) পানি থেকেই আসে। পানির ঘাটতি হলে পত্ররন্ত্রের রক্ষীকোষেও স্ফীতি হারিয়ে রন্ধ্র বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বাতাস থেকে CO, অনুপ্রবেশ বাধাগ্রস্ত হয়। অতিরিক্ত পানি ঘাটতির ফলে এনজাইমের সক্রিয়তা বিনষ্ট হয়ে সালোকসংশ্লেষণ বাধাগ্রস্থ হতে পারে।

v) অক্সিজেন: বাতাসে অক্সিজেনের ঘনত্ব বেড়ে গেলে সালোকসংশ্লেষণের হার কমে যায় আর অক্সিজেনের ঘনত্ব কমে গেলে সালোকসংশ্লেষণের হার বেড়ে যায়। তবে অক্সিজেনবিহীন পরিবেশে সালোকসংশ্লেষণ সম্পূর্ণ বন্ধ থাকে।

vi) খনিজ পদার্থ: ক্লোরোফিলের প্রধান উপকরণ হচ্ছে নাইট্রোজেন এবং ম্যাগনেসিয়াম। লোহার অনুপস্থিতিতে পাতা ক্লোরোফিল সংশ্লেষণ করতে পারে না, ফলে পাতা হলুদ হয়ে যায়। কাজেই মাটিতে এসব খনিজের অভাব হলে সালোকসংশ্লেষণের হার কমে যায়।

vii) রাসায়নিক পদার্থ: বাতাসে ক্লোরোফর্ম, হাইড্রোজেন সালফাইড, মিথেন বা কোনো বিষাক্ত গ্যাস থাকলে সালোকসংশ্লেষণে ব্যাঘাত ঘটে বা একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়।

খ) অভ্যন্তরীণ প্রভাবকসমূহ

i) ক্লোরোফিল: এ সম্পর্কে ইতিপূর্বে আলোচনা করা হয়েছে।

ii) পাতার বয়স ও সংখ্যা: একেবারে কচি পাতা এবং একেবারে বয়স্ক পাতায় ক্লোরোফিলের পরিমাণ কম থাকে বলে সালোকসংশ্লেষণ কম হয়। বয়স বাড়ার সাথে সাথে ক্লোরোপ্লাস্টের সংখ্যাও বেশি হয়। মধ্যবয়সী পাতায় সবচেয়ে বেশি সালোকসংশ্লেষণ ঘটে। পাতার সংখ্যা বেশি হলে সালোকসংশ্লেষণ বেশি হয়।

iii) শর্করার পরিমাণ: সালোকসংশ্লেষণ চলাকালীন শর্করার পরিবহন কম হলে তা সেখানে জমা হয়ে থাকে। বিকেলে পাতায় বেশি শর্করা জমা হয় বলে সালোকসংশ্লেষণের গতি মন্থর হয়।

iv) পটাশিয়াম: পটাশিয়ামের অভাবে সালোকসংশ্লেষণের পরিমাণ বেশ কমে যেতে দেখা যায়। কারণ, সম্ভবত এ প্রক্রিয়ায় পটাশিয়াম অনুঘটক হিসেবে কাজ করে।

v) এনজাইম: সালোকসংশ্লেষণের জন্য বিভিন্ন ধরনের এনজাইমের প্রয়োজন হয়।

(৭) জীবজগতে সালোকসংশ্লেষণের গুরুত্ব

  1. সালোকসংশ্লেষণ বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়া। এ বিক্রিয়ার মাধ্যমেই সূর্যালোক এবং জীবনের মধ্যে সেতুবন্ধ সৃষ্টি হয়েছে। নিচের সংক্ষিপ্ত আলোচনা থেকে সালোকসংশ্লেষণের গুরুত্ব উপলব্ধি করা যাবে। বিশ্বজুড়ে এ বিক্রিয়ার ব্যাপকতা লক্ষ করে কোনো কোনো বিজ্ঞানী এ প্রক্রিয়াকে জৈব রাসায়নিক কারখানা নামে অভিহিত করেছেন।
  2. সমস্ত শক্তির উৎস হলো সূর্য। একমাত্র সবুজ উদ্ভিদই সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় সৌরশক্তিকে রাসায়নিক শক্তিতে পরিণত করে খাদ্যের মধ্যে আবদ্ধ করতে পারে। কোনো প্রাণীই তার নিজের খাদ্য প্রস্তুত করতে পারে না। আমরা খাদ্য হিসেবে ভাত, রুটি, ফলমূল, মাছ, মাংস, দুধ, ডিম ইত্যাদি যা-ই গ্রহণ করি না কেন, তার সবই প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে সবুজ উদ্ভিদ থেকে পেয়ে থাকি। কাজেই খাদ্যের জন্য সমগ্র প্রাণিকুল সবুজ উদ্ভিদের উপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল, আর সবুজ উদ্ভিদ এ খাদ্য প্রস্তুত করে সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায়। কাজেই বলা যায়, পৃথিবীর সকল উদ্ভিদ এবং প্রাণীর খাদ্য প্রস্তুত হয় সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায়, বিশেষ করে O2 ও CO-এর সঠিক অনুপাত রক্ষায় সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া এক বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। বায়ুতে অক্সিজেন গ্যাসের পরিমাণ 20.95 ভাগ এবং CO2 গ্যাসের পরিমাণ 0.033 ভাগ।
  3. পৃথিবীতে উদ্ভিদ ও প্রাণীর স্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং জীবনযাপনের জন্য বায়ুতে এ দুটি গ্যাসের পরিমাণ স্বাভাবিক পর্যায়ে থাকতে হয়। এ পরিমাণের তারতম্য ঘটলে বায়ুমণ্ডল জীবজগতের জন্য ক্ষতিকর হয়ে উঠবে। আমরা জানি, সব জীবেই (উদ্ভিদ ও প্রাণী) সব সময়ের জন্য শ্বসনক্রিয়া চলতে থাকে। শ্বসন প্রক্রিয়ায় জীব O2 গ্রহণ করে এবং CO2 ত্যাগ করে। কেবল শ্বসন প্রক্রিয়া চলতে থাকলে বায়ুমণ্ডলে গ্যাসের স্বল্পতা এবং CO2 গ্যাসের আধিক্য দেখা দিত। কিন্তু সবুজ উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় বায়ুমণ্ডল থেকে CO2 গ্রহণ করে এবং Oz ত্যাগ করে বলে এখনও বায়ুমণ্ডলে O2 ও CO2 গ্যাসের সঠিক অনুপাত রক্ষিত হচ্ছে। তবে বর্তমানে অধিক হারে বন-জঙ্গল ধ্বংস করার ফলে বায়ুমণ্ডলে এ দুটি গ্যাসের অনুপাত নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, কাজেই আমাদেরকে অবশ্যই অধিক হারে গাছ লাগাতে হবে।
  4. মানবসভ্যতার অগ্রগতি অনেকাংশে সালোকসংশ্লেষণের উপর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নির্ভরশীল। অন্ন, বস্ত্র, শিল্পসামগ্রী (যেমন নাইলন, রেয়ন, কাগজ, সেলুলোজ, কাঠ, রাবার), ঔষধ (যেমন কুইনাইন, মরফিন), জ্বালানি কয়লা, পেট্রল, গ্যাস প্রভৃতি উদ্ভিদ থেকে পাওয়া যায়। তাই সালোকসংশ্লেষণ না ঘটলে মানবসভ্যতা ধ্বংস হবে, বিলুপ্ত হবে জীবজগৎ। সুতরাং সালোকসংশ্লেষণ জীবজগতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়া।
  5. শুধু তা-ই নয়, আজ থেকে প্রায় 5 বিলিয়ন বছর আগে যখন পৃথিবী সৃষ্টি হয়, তখন এখানে কোনো গ্যাসীয় অক্সিজেন ছিল না। আদি উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় অক্সিজেন তৈরি করে এই পৃথিবীকে আমাদের জন্য বাসযোগ্য করে দিয়েছিল।

শিক্ষা বা লেখাপড়া সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট শিক্ষা’ (inbangla.net/sikkha) এর সাথেই থাকুন।

Leave a Reply

nv-author-image

ইন বাংলা নেট শিক্ষা

শিক্ষা বা লেখাপড়া সম্পর্কিত যা কিছু বাংলাতে।View Author posts