মুসলমানদের অন্যতম পবিত্র গ্রন্থ হচ্ছে আল কুরআন। আল কুরআনের ১১৪ টি সূরার মাঝে ১০৯ তম সূরা হলো সূরা আল কাফিরুন। এর ৬ টি আয়াত রয়েছে। মক্কায় অবতীর্ণ হওয়ায় এটি মাক্কী সূরা নামে পরিচিত। এ সূরায় মহান আল্লাহ তা’আলার একত্ববাদ ও ইবাদতের কথা উল্লেখ করা আছে। তাহলে আর দেরি না করে চলুন সূরা আল কাফিরুন বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ জেনে নিই।
(১) সূরা আল কাফিরুন সম্পর্কে সাধারন কিছু তথ্য
সূরার নাম: | সূরা আল কাফিরুন |
শ্রেণী: | মাক্কী |
আয়াত সংখ্যা: | ০৬ |
সূরার ক্রম: | ১০৯ |
পারার ক্রম: | ৩০ |
রুকু সংখ্যা: | ০১ |
(২) সূরা আল কাফিরুন বাংলা উচ্চারণ ছবি

(৩) সূরা আল কাফিরুন আরবি, বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ
সুরা কাফিরুন ছোট্ট একটি সুরা। মাত্র ছয়টি আয়াত। পড়তে এক মিনিট লাগে না।
আরবি আয়াত | বাংলা উচ্চারণ | বাংলা অর্থ |
قُلْ يَٰٓأَيُّهَا ٱلْكَٰفِرُونَ | কুল ইয়াআইয়ুহাল কা-ফিরূন। | বলুন, হে কাফেরকূল। |
لَآ أَعْبُدُ مَا تَعْبُدُونَ | লাআ‘বুদুমা-তা‘বুদূন। | আমি এবাদত করিনা, তোমরা যার এবাদত কর। |
وَلَآ أَنتُمْ عَٰبِدُونَ مَآ أَعْبُدُ | ওয়ালাআনতুম ‘আ-বিদূনা মাআ‘বুদ | এবং তোমরাও এবাদতকারী নও, যার এবাদত আমি করি |
وَلَآ أَنَا۠ عَابِدٌ مَّا عَبَدتُّمْ | ওয়ালাআনা ‘আ-বিদুম মা-‘আবাত্তুম। | এবং আমি এবাদতকারী নই, যার এবাদত তোমরা কর। |
وَلَآ أَنتُمْ عَٰبِدُونَ مَآ أَعْبُدُ | ওয়ালাআনতুম ‘আ-বিদূনা মাআ‘বুদ। | তোমরা এবাদতকারী নও, যার এবাদত আমি করি। |
لَكُمْ دِينُكُمْ وَلِىَ دِينِ | লাকুম দীনুকুম ওয়ালিয়া দীন। | তোমাদের কর্ম ও কর্মফল তোমাদের জন্যে এবং আমার কর্ম ও কর্মফল আমার জন্যে। |
(৪) সূরা আল কাফিরুনের শানে-নুজুল
সূরা কাফিরুন একটা ঘটনার প্রেক্ষিতে নাযিল হয়। ঘটনাটি হলো-
রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-কে ইসলাম প্রচার হইতে বিরত করিবার জন্য মক্কার কাফেরগণ তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করিল কিন্তু কোনই ফল হইল না দেখিয়া তাহারা হযরত আব্বাস (রাঃ)-এর মারফত হযরত (সাঃ) এর নিকট আপােষ মীমাংসার ফর্মূলা হিসাবে এই প্রস্তাব পাঠাইল যে, হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) যদি তাহাদের দেব-দেবীকে মান্য করেন, তবে তাহারা তাহার আল্লাহকে মান্য করিবে এবং তিনি যদি তাহাদের দেব-দেবীর মূর্তিসমূহের পূজা করেন, তবে তাহারাও তাঁহার আল্লাহর এবাদত করিবে। হযরত রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) অন্ততঃ এক বৎসরের জন্য হইলেও এই চুক্তিতে রাজী হউন, এই আগ্রহও তাহারা প্রকাশ করিল। তাহাদের এই হীন প্রস্তাবের উত্তরে আল্লাহ্ তায়ালা এই সূরা কাফিরুন নাজিল করিলেন। এই সূরা হইতে প্রমাণ হইল যে, মিথ্যার সহিত সত্যের কখনও আপােষ হইতে পারে না।
(তাফসীরে ইবনে কাসীর)
(৫) সূরা আল কাফিরুনের গুরুত্ব
এ সূরা শানে নুযুল থেকে বুঝা যায় এর গুরুত্ব অনেক। আল্লাহ এ সূরায় সব কাফিরদের বুঝিয়েছেন যে, যাদের ব্যাপারে আল্লাহ তা’আলা জানতেন তারা কাফের হয়েই মরবে। তাদের মৃত্যুও শিরক অবস্থায় হবে। এর গুরুত্ব বুঝে অনেক মুশরিক ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে এবং আল্লাহর একত্বতা স্বীকার করে। তাছাড়া এ সূরার অন্যতম একটি শিক্ষা হলো আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে অন্য কারো শামিল করা শিরক। তাই এমন কিছু করা যাবে না যা শিরকের দিকে নিয়ে যায়।
এ সূরার গভীরে প্রবেশ করলে বুঝা যায়, কাফিররা যখন নবী (সাঃ) কে শান্তি চুক্তির জন্য অনৈতিক প্রস্তাব দিল, তা ছিল সম্পূর্ণ তাওহীদের বিপরীত। এর উওরে রাসূল (সাঃ) বললেন, এটা কখনোই সম্ভব নয়, আমি তাওহীদের পথ পরিত্যাগ করে কখনোই শিওরকের পথ অবলম্বন করব না, যেমন তোমরা চাচ্ছ।
নবী (সাঃ) আরও বলেন, মহান আল্লাহ যদি তোমাদের জন্য হিদায়াত না লিখে থাকেন তাহলে তোমরাও আল্লাহর হিদায়াত থেকে বঞ্চিত হবে। আর যদি তোমরা দ্বীন নিয়ে সন্তুষ্ট থাক, আর তা ছাড়তে রাজি না হও তাহলে আমিও নিজের দ্বীন নিয়ে সন্তুষ্ট, তা ছাড়ব কেন?
সুতরাং এসব থেকে দেখা যায় সূরা আল কাফিরুনের গুরুত্ব অপরিসীম।
(৬) সূরা আল কাফিরুনের ফজিলত
সূরা আল কাফিরুন তেলাওয়াতের অনেক ফজিলত রয়েছে। বিভিন্ন হাদিস দ্বারা এর প্রমাণ পাওয়া যায়। তাহলে আর দেরি না করে চলুন এ সম্পর্কে জেনে নেই-
জাবির (রাঃ) বলেন,
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাওয়াফের দুই রাকাত নামাজে ‘কুল ইয়া আইয়ুহাল কাফিরুন এবং কুল হুয়াল্লাহু আহাদ’ পড়তেন।”
(মুসলিম; ১২১৮)
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
“যখন তুমি বিছানায় যাবে, তখন তুমি ‘কুল ইয়া আইয়ুহাল কাফিরুন’ পাঠ করবে। কারণ এতে শিরক থেকে মুক্তির ঘোষণা রয়েছে।”
(তাবানী শরীফ)
আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন,
“রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সুন্নাত নামাজে সূরা দুটি ‘কুল ইয়া আইয়ুহাল কাফিরুন এবং কুল হুয়াল্লাহু আহাদ’ আদায় করেছিলেন।”
(মুসলিম; ৭২৬)
অন্য এক হাদিসে বলা হয়েছে-
আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
“ইজা জুলজিলাত সুরা যে ব্যক্তি পাঠ করবে, অর্ধেক কোরআনের সমান তার সওয়াব হবে। ক্বুল ইয়া আইয়্যুহাল কাফিরুন যে ব্যক্তি পাঠ করবে, তার কোরআনের এক-চতুর্থাংশ পাঠের সমান সওয়াব হবে।”
(জামে তিরমিজি, হাদিস নং ২৮৯৩)
অর্থাৎ সূরা কাফিরুন এর বড় একটি ফজিলত হলো এটি এক বার পাঠ করলে অর্ধেক কুরআন খতমের সওয়াব পাওয়া যাবে। সুবহানআল্লাহ।
মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে সূরা কাফিরুন এর অর্থ, প্রেক্ষাপট বুঝে এবং এ সূরার গুরুত্ব সম্পর্কে জেনে সে অনুযায়ী আমল করার তৈফিক দান করুন। আমিন।
পবিত্র ইসলাম ধর্ম সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট ইসলাম’ (inbangla.net/islam) এর সাথেই থাকুন।