Skip to content

সূরা বাকারার আলোচ্য বিষয়

সূরা বাকারার আলোচ্য বিষয়

প্রিয় পাঠক-পাঠিকা, আসসালামু আলাইকুম, আশা করি আল্লাহর দয়ায় আপনার সকলেই ভালো আছেন।

আজকে এ আলোচনাটি অধ্যয়নে আপনি- সূরা আল-বাকারার আলোচ্য বিষয় উল্লেখ করতে পারবেন; সূরা আল-বাকারার আলোচ্য বিষয়সমূহ বিশ্লেষণ করতে পারবেন।

নিম্নে সূরা বাকারার আলোচ্য বিষয়সমূহ তুলে ধরা হলো-

রাসূলুল্লাহ (স)-এর মদীনা জীবনের সূচনাতে এ সূরা নাযিল হয়। এ সূরায় ইসলামের বেশ কিছু মৌলিক বিষয় আলোচিত হয়েছে।

১। সূরার কেন্দ্রীয় আলোচ্য বিষয়

সূরা আল-বাকারায় অনেক বিষয় আলোচিত হয়েছে। তবে একটি মাত্র কেন্দ্রীয় বিষয় সেসব আলোচ্য বিষয়কেই সংযুক্ত করেছে। আলোচনার দু’টি প্রধান ধারা। একটি হল- মদীনায় অবস্থিত ইয়াহুদি, খ্রিস্টান ও মুনাফিক শ্রেণির ইসলামের বিরোধিতার জবাব ও তাদের অসারতা প্রমাণ করা। দ্বিতীয় ধারাটি হচ্ছে- পৃথিবীতে তাওহীদের একমাত্র ধারক-বাহক জাতি হিসেবে মুসলমানদের গড়ে তোলার দিক নির্দেশনা দেওয়া। এ দুটো ধারাই সূরা আল-বাকারার কেন্দ্রীয় আলোচ্য বিষয়। 

২। কুরআনের নির্ভুলতা

এ সূরার প্রথমেই বলে দেওয়া হয়েছে- ‘এ কিতাব, এতে কোন সন্দেহ নেই।’ পরবর্তীতে চ্যালেঞ্জ দেওয়া হয়েছে- ‘এটা কোন মানুষের রচিত গ্রন্থ নয়।’

৩। মু’মিন-মুত্তাকির বৈশিষ্ট্য

সূরার শুরুতে মু‘মিন-মুত্তাকিদের গুণ-বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হয়েছে। মু‘মিনগণ কীভাবে আল্লাহর আদেশ মান্য করে এবং তাদের জীবন-ই যে সাফল্যময়-তার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে।

৪। কাফির-নাস্তিকদের ব্যর্থতা

নাস্তিক-কাফিরদের চিরাচরিত বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- তারা সত্য-সুন্দরকে সব সময় প্রত্যাখ্যান করে। এ কারণে বলে দেওয়া হয়েছে কাফিরদের অন্তর সত্য গ্রহণের উপযুক্ত নয়। এদের জীবন চরমভাবে ব্যর্থ।

৫। মুনাফিকদের পরিণতি

মুনাফিকরা সুবিধা আদায়ের জন্য ইসলাম গ্রহণ করে। কিন্তু এ চক্রটি ইসলাম ও মুসলমানের ভীষণ ক্ষতি করে। তাদের ঘৃণ্য আচরণ, তাদের জীবনের পরিণতির কথা বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে।

৬। মানব সৃষ্টির উদ্দেশ্য

মানব সৃষ্টির উদ্দেশ্য হিসেবে বলা হয়েছে- পৃথিবীতে আল্লাহর প্রতিনিধির দায়িত্ব দিয়ে পাঠানো হয়েছে মানুষকে।

৮। আদম (আ) সৃষ্টির কাহিনী

পড়ুন
মাক্কী ও মাদানী সূরার বৈশিষ্ট্য

হযরত আদম (আ)-এর সৃষ্টি কাহিনী, পৃথিবীতে প্রেরণ ও দায়িত্ব-কর্তব্য প্রসঙ্গে আলোচিত হয়েছে।

৯। ইয়াহুদি জাতির মুখোশ উন্মোচন

বনী ইসরাঈলের প্রতি আল্লাহ তা‘আলার অনুগ্রহ এবং তাদের অপকর্মের বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে। আরও আলোচিত হয়েছে যে, কীভাবে তারা পৃথিবীর নেতৃত্বে এসেছিল এবং দুষ্কর্মের কারণে কীভাবে তারা নেতৃত্ব থেকে দূরে সরে গিয়ে অভিশপ্ত হয়।

১০। ইয়াহুদি-খ্রিস্টানদের মধ্যে বিরোধ

হযরত মূসা ও হযরত ঈসা (আ)-এর প্রসঙ্গ নিয়ে তাদের মধ্যে বাকবিতন্ডার বিবরণ দেওয়া হয়েছে। আরও বিবরণ দেওয়া হয়েছে যে, কীভাবে আহলে কিতাবের লোকেরা নিজেদের ধর্মের বিরোধিতা করেছে। হযরত মুহাম্মাদ (স)-কে প্রতিশ্রুত আখেরী নবী হিসেবে অস্বীকার করে তাদের স্বার্থহানির ভয়ে তারা যেসব কথা বলেছে, সে কথাও এ সূরায় বর্ণিত হয়েছে। 

১১। কুরআনের মুজিযা

আল-কুরআন মহানবী (স)-এর চিরন্তন মুজিযা। এটা মানব রচিত নয় বরং মহান আল্লাহ প্রেরিত। এ বিষয়টি চ্যালেঞ্জ আকারে বিশ্ববাসীর সামনে উপস্থাপন করা হয়েছে।

১২। হযরত ইবরাহীম (আ) ও কাবা ঘর প্রসঙ্গ

এ সূরায় মুসলিম জাতির পিতা হযরত ইবরহীম (আ)-এর প্রসঙ্গ এবং ইসমাইল-ইসহাক ও কাবা ঘর নির্মাণ-একে পবিত্রকরণ, তাওহীদের প্রতিষ্ঠা, সর্বজনীন ধর্ম হিসেবে ইসলামের প্রতিষ্ঠা এবং তাদের প্রার্থনা সংক্ষেপে ও সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে। তাছাড়া হযরত সুলায়মান (আ)-এর নির্মিত বায়তুল মোকাদ্দাসের পরিবর্তে কা‘বা শরীফকে বিশ্ব মুসলিমের কিবলা নির্ধারণ এবং একে কেন্দ্র করে ইবাদাতানুষ্ঠান করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এভাবে মুসলিম উম্মাহকে পুনর্গঠন করে পূর্ণাঙ্গ ইসলামি সমাজ প্রতিষ্ঠার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

১৩। ইসলামি শরীআতের প্রবর্তন

ইসলামি শরীআতের বিভিন্ন হুকুম-আহকাম, খাদ্য-পানীয়, সালাত, সাওম, যাকাত, হজ্জ, কিসাস, অসীয়ত, জিহাদ, বিবাহ, তালাক, মুহরানা, ক্রয়-বিক্রয়, সুদ, বন্ধক, মদ, জুয়া, অনাথ-ইয়াতিম, ঋণের আদান-প্রদান ইত্যাদি প্রসঙ্গ আলোচিত হয়েছে। আর এসব শরীআতের বিধান সমাজে প্রবর্তন করা হয়েছে।

১৪। তাওহীদ-রিসালাত ও আখিরাতের বর্ণনা

এ সূরায় তাওহীদ, রিসালাত ও আখিরাতে বিশ্বাসের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। আল্লাহর একত্ববাদ, রাসূলগণের পরস্পর বিশেষত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণিত হয়েছে। হযরত ইবরাহীম-নমরুদ বিরোধ তুলে ধরে তাওহীদের বিষয় স্পষ্ট করা হয়েছে।

পড়ুন
সূরা ইয়াসিন অর্থসহ বাংলা উচ্চারণ ও ফজিলত

১৫। সফলতার জন্যে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা

মানব জীবনের সফলতা নির্ভর করছে আল্লাহর মর্জির উপর। কাফির-নাস্তিকদের বিরুদ্ধে সফল ও বিজয়ী হওয়ার জন্য এবং জীবনের সফলতার জন্য সবর্তোভাবে মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করার দৃষ্টান্ত তুলে ধরে সূরার সমাপ্তি টানা হয়েছে। 

সূরা আল-আল-বাকারায় ইসলামের অধিকাংশ মূলনীতি বর্ণনা করা হয়েছে। এ সূরার মধ্যে সালাত, সাওম, হজ্জ, যাকাত, বিবাহ-তালাক, হালাল-হারাম, তেজারত, জিহাদ ইত্যাদি নানাবিধ বিষয় বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। হযরত আদম ও হাওয়ার সৃষ্টি কাহিনী, তাঁদের জান্নাতে অবস্থান, ফেরেশতা কর্তৃক তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন, শয়তানের প্ররোচনায় নিষিদ্ধ ফল ভক্ষণ ও জান্নাত থেকে পৃথিবীতে অবতরণ ও তাঁদের তাওবা কবুল হওয়ার বিষয় আলোচিত হয়েছে। মুনাফিকদের পরিচয়, বৈশিষ্ট্য এবং ইয়াহুদিদের প্রতি আল্লাহর বিভিন্ন অনুগ্রহদান ও তাদের নাফরমানীর কথাও বর্ণিত হয়েছে। মুসলমানদের কিবলা বায়তুল মুকাদ্দাসের পরিবর্তে কাবা শরীফ নির্বাচনের ঘটনাও এ সূরায় উল্লেখ করা হয়েছে। সর্বশেষে দুনিয়া ও আখিরাতে পরম কল্যাণ, সাফল্য অর্জনের নিমিত্তে আল্লাহ তাঁর বান্দাদের একটি হৃদয়গ্রাহী দু‘আও শিক্ষা দিয়েছেন এ সূরার মাধ্যমে।


পবিত্র ইসলাম ধর্ম সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট ইসলাম’ (inbangla.net/islam) এর সাথেই থাকুন।

অনুরোধ!! পোষ্ট ভালো লাগলে প্লিজ উপরের শেয়ার আইকনে ক্লিক করে পোষ্টটি শেয়ার করে দিন।

Leave a Reply

nv-author-image

ইন বাংলা নেট ইসলাম

পবিত্র ইসলাম ধর্ম সম্পর্কিত যা কিছু বাংলাতে।View Author posts