Skip to content

 

হাঁসের বৈশিষ্ট্য

হাঁসের বৈশিষ্ট্য

(১) হাঁসের জাত কত প্রকার?

মুরগির মতো বিভিন্ন জাতের হাঁস ও রাজহাঁসও ডিম ও মাংস উৎপাদনের জন্য খামারভিত্তিতে পালন করা হয়। হাঁস ডিম এবং মাংস উভয় উদ্দেশ্যেই পালন করা হয়।

ডিম এবং মাংস উৎপাদন সাধারণত জাতের উপর নির্ভরশীল। বিশেষ যে সব হাঁসের জাত ও উপজাত রয়েছে তা এশিয়া জাত এবং উপজাত হতে উদ্ভুত।

হাঁসের জাতকে নিম্নোক্ত কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-

  1. ডিমপাড়া জাত (Layer Breed): খাকী ক্যম্পবেল, ইন্ডিয়ান রানার, জিনডিং ইত্যাদি।
  2. মাংসের জাত (Meat Breed): পিকিন, আইলশবারি, মাসকোভি, রুয়েন ইত্যাদি।
  3. সৌন্দর্যবর্ধক জাত (Ornamental Breed): কল, ক্রেস্টেড, কায়াগো, ব্লু সুইডিস ইত্যাদি।

(২) হাঁসের বৈশিষ্ট্য

ক) খাকী ক্যাম্পবেল হাঁসের বৈশিষ্ট্য

চিত্র- খাকী ক্যাম্পবেল জাতের হাঁস
চিত্র- খাকী ক্যাম্পবেল জাতের হাঁস

উৎপত্তি এবং প্রাপ্তিস্থান: খাকী ক্যাম্পবেল ডিম উৎপাদনের জন্য একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় জাত। এদের উৎপত্তি ইংল্যান্ডে যা মিসেস ক্যাম্পবেল উদ্ভাবন করেন ১৯০১ সালে।

বৈশিষ্ট্য:

  1. পালকের রং খাকি।
  2. এদের মাথা গোলাকার।
  3. মাথা ঘন বাদামি ও চোখের চারপাশে গোল সবুজ বন্ধনী থাকে।
  4. হাঁসের পা ও পায়ের পাতা গাঢ় কমলা এবং হাঁসির পা ও পায়ের পাতা তামাটে।
  5. পূর্ণ বয়সে হাঁসা ২.০-২.৫ কেজি এবং হাঁসি ১.০-১.৫ কেজি হয়ে থাকে।
  6. এরা বছরে ২৫০- ৩০০টি পর্যন্ত ডিম পাড়ে।

খ) ইন্ডিয়ান রানার হাঁসের বৈশিষ্ট্য

চিত্র- ইন্ডিয়ান রানার জাতের হাঁস
চিত্র- ইন্ডিয়ান রানার জাতের হাঁস

উৎপত্তি এবং প্রাপ্তিস্থান: এ জাতের হাঁসের উৎপত্তি ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া। তবে এদের ডিম পাড়ার ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়েছে পশ্চিম ইউরোপে। বর্তমানে বিভিন্ন দেশে এ জাতটি পালিত হয়। আমাদের দেশের আবহাওয়ায় সহজেই এ জাতের হাঁস পালন করা যায়। 

See also  হাঁস পালন পদ্ধতি

বৈশিষ্ট্য:

  1. এদের গায়ের রং সাদা, ধূসর ও সাদা-ধূসর হয়ে থাকে।
  2. তবে এদের তিনটি উপজাতের মধ্যে সাদা রঙের রানার অধিক জনপ্রিয়।
  3. এদের আকার ছোট, গলা লম্বা, সরু ও ঘাড় দেহের সঙ্গে প্রায় সমান্তরাল।
  4. এদের মাথার উপরিভাগে বেশ চওড়া ও চোখ দুুটি উপরের দিকে অবস্থিত।
  5. এরা ওজনে ১.৫-২.৫ কেজি হয়ে থাকে।
  6. বছরে ২৫০-২৬০টি ডিম দেয়।

গ) জিনডিং জাতের হাঁসের বৈশিষ্ট্য

চিত্র- জিনডিং জাতের হাঁস
চিত্র- জিনডিং জাতের হাঁস

উৎপত্তি এবং প্রাপ্তিস্থান: এ জাতের হাঁসের উৎপত্তি চীনে। আমাদের দেশের আবহাওয়ায় সহজেই এ জাতের হাঁস পালন করা যায়। 

বৈশিষ্ট্য:

  1. এদের গলা লম্বা এবং আকারে সরু ও লম্বা।
  2. চোখের চারপাশে খাকী ক্যাম্পেল হাঁসের মতো গোল চক্র নেই।
  3. এদের পালকের রং খাকী-বাদামি মিশ্রিত ও কালো ফোঁটায় ভরা।
  4. ডিমের রং ঈষৎ নীল বা সবুজাভ হয়ে থাকে।
  5. পূর্ণ বয়সে হাঁসা ২.০-২.৫ কেজি এবং হাঁসি ১.০-১.৫ কেজি হয়।
  6. বার্ষিক ডিম উৎপাদান ২৭৫-৩০০টি।

ঘ) পেকিন জাতের হাঁসের বৈশিষ্ট্য

চিত্র- পেকিন জাতের হাঁস
চিত্র- পেকিন জাতের হাঁস

উৎপত্তি এবং প্রাপ্তিস্থান: এ জাতের হাঁসের উৎপত্তি চীনে। এরা দ্রুত বর্ধনশীল ও মাংসের জন্য বিখ্যাত। 

বৈশিষ্ট্য:

  1. এদের দেহ প্রশস্ত ও গোলাকার।
  2. পালকের রং সাদা।
  3. চোখের রং ধূসর-নীল এবং পায়ের পাতা লাল কমলা রঙের।
  4. পূর্ণবয়ষ্ক হাঁসা ৪-৫ কেজি এবং হাঁসি ৩-৪ কেজি হয়ে থাকে।
  5. বার্ষিক ডিম উৎপাদন- ১৫০-১৬০টি।

ঙ) মাসকোভি জাতের হাঁসের বৈশিষ্ট্য

চিত্র- মাসকোভি জাতের হাঁস
চিত্র- মাসকোভি জাতের হাঁস

উৎপত্তি এবং প্রাপ্তিস্থান: এদের উৎপত্তি ব্রাজিল ও দক্ষিণ আমেরিকা। আমাদের গ্রামাঞ্চলে এরা চীনা হাঁস নামে অধিক পরিচিত। 

বৈশিষ্ট্য:

  1. এরা আকারে বেশ বড়, শরীর বেশ গভীর ও প্রশস্ত।
  2. এদের গায়ের রং সাদা, কালো বাদামি-নীল বা মিশ্র রঙের হয়ে থাকে। তবে সাাদা পাখায় কালো রংয়ের মাসকোভি হাঁস অধিক জনপ্রিয়।
  3. এদের মাথার চারিদিকে ঝুঁটি থাকে।
  4. মাসকোভি হাঁসের মাথায় ও চোখের উপর দিয়ে লাল পালকমুক্ত অলংকার থাকে।
  5. পূর্ণবয়ষ্ক হাঁসা ৪-৫ কেজি এবং হাঁসি ২.৫-৩.০ কেজি হয়ে থাকে।
  6. এদের বার্ষিক ডিম উৎপাদন ১০০-১৫০টি।
See also  হাঁস পালন পদ্ধতি ও হাঁসের খাদ্য তালিকা

এসব উন্নতজাতের হাঁস ছাড়াও কিছুৃ দেশী জাতের হাঁস রয়েছে। এদের মধ্যে নাগেশ্বরী, সাদা হাঁস ও মাটি হাঁস উল্লেখযোগ্য। এদের নাগেশ্বরীর জাত বৈশিষ্ট্য আলোচনা করা হলো।

চ) নাগেশ্বরী জাতের হাঁসের বৈশিষ্ট্য

চিত্র- নাগেশ্বরী জাতের হাঁস
চিত্র- নাগেশ্বরী জাতের হাঁস

উৎপত্তি এবং প্রাপ্তিস্থান: সিলেট ও ভারতের কাছাড় জেলায় এই হাঁসের আদি উৎপত্তিস্থল। বর্তমানে বাংলাদেশের সর্বত্রই কিছু না কিছু এই জাতের হাঁস পরিলক্ষিত হয়। 

বৈশিষ্ট্য:

  1. এ জাতের হাঁস আকারে ছোট।
  2. এদের দেহের উপরিভাগের পালক কালো।
  3. গলার কিছু অংশ, বুক ও তলপেট সাদা।
  4. এরা অত্যন্ত কষ্ট সহিষ্ণু এবং নিকৃষ্ট মানের খাদ্য খেয়ে জীবন ধারণ করতে পারে।
  5. ডিমের খোসার রং সামান্য নীলাভ।
  6. পূর্ণবয়ষ্ক হাঁসার গড় ওজন ১.৭৫ কেজি এবং হাঁসি ১.৫০ কেজি।
  7. এদের বার্ষিক ডিম উৎপাদন- ১০০-১৫০টি। পরিচর্যা ও খাদ্য ব্যবস্থাপনার উন্নতি হলে এ জাতের হাঁস বছরে আরো বেশি ডিম দেয়।

(৩) রাজহাঁসের বৈশিষ্ট্য

রাজহাঁস প্রধানত সৌন্দর্যবৃদ্ধি ও মাংসের জন্য পালন করা হয়। রাজহাঁস ঋতুভিত্তিক ডিম উৎপাদন করে থাকে।

রাজহাঁস জাতের মধ্যে টলুউইস, অ্যাম্বডেন, আফ্রিকান ও চাইনিজ জাত উল্লেখযোগ্য। নিচে এদের জাত বৈশিষ্ট্য নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হলো।

ক) টলুউইস জাতের রাজহাঁসের বৈশিষ্ট্য

উৎপত্তি এবং প্রাপ্তিস্থান: এ জাতের রাজহাঁসের উৎপত্তি ফ্রান্স। এরা মাংসল ও বড় আকারের রাজহাঁস। এরা ইউরোপীয় দেশে বেশি জনপ্রিয়। 

বৈশিষ্ট্য:

  1. এদের বুক উঁচু, পুরু ও গভীর।
  2. ডানা লম্বা, লেজ খাটো, মাথা বড়, ঠোঁট মজবুত, গলা লম্বা ও পুরু এবং পা মজবুত।
  3. পালকের রং- দেহের পিছনের ভাগ গাঢ় ধূসর, তলপেট এবং বক্ষগহ্বর হালকা ধূসর ও সাদা।
  4. পায়ের নারা ও ঠোঁটের অগ্রভাগ কমলা।
  5. গলা ঝুলন্ত ও পালক ঢিলা।
  6. প্রাপ্ত বয়ষ্ক রাজহাঁসের ওজন ১২.৫-১৩.৫ কেজি এবং রাজহাঁসির ওজন ৯.০-১০.০ কেজি।
  7. এদের ডিম উৎপাদন প্রতি ঋতুতে প্রায় ৩৫টি।

খ) অ্যাম্বডেন জাতের রাজহাঁসের বৈশিষ্ট্য

উৎপত্তি এবং প্রাপ্তিস্থান: এ জাতের রাজহাঁসের উৎপত্তি জার্মানীতে। 

See also  ৫টি হাঁস পালনের পদ্ধতি

বৈশিষ্ট্য:

  1. এদের দেহে প্রশস্ত, পুরু ও গোলাকার।
  2. পিঠ লম্বা, সোজা ও মজবুত।
  3. ডানা আকারে লম্বা।
  4. মাথা লম্বা, ঠোঁট মজবুত, চোখ অত্যন্ত উজ্জ্বল।
  5. পা খাটো, পালক শক্ত ও সুবিন্যস্ত।
  6. পালকের রং সম্পূর্ণ উজ্জ্বল চকচকে সাদা।
  7. ঠোঁট কমলা-হলুদ ও চোখ হালকা নীল।
  8. পা ও পায়ের পাতা কমলা।
  9. প্রাপ্ত বয়ষ্ক রাজহাঁসের ওজন ১৩-১৫ কেজি এবং রাজহাঁসির ওজন ৯-১০ কেজি।
  10. এদের ডিম উৎপাদন প্রতি ঋতুতে প্রায় ৪০টি।

গ) চাইনিজ জাতের রাজহাঁসের বৈশিষ্ট্য

চিত্র- চাইনিজ জাতের রাজহাঁস
চিত্র- চাইনিজ জাতের রাজহাঁস

উৎপত্তি এবং প্রাপ্তিস্থান: এ জাতের উৎপত্তিস্থল এশিয়া। এদের ২টি প্রজাতি রয়েছে, যেমন- সাদা ও বাদামি। 

বৈশিষ্ট্য:

  1. এদের দেহ সরল ও রৈখিক।
  2. মাথা ও ঠোঁটের সংযোগস্থলে ক্ষুদ্র মাংসের মতো গুটি থাকে।
  3. এদের গলা লম্বা, অনেকটা সোয়ানের মতো।
  4. সাদা উপজাতের পা, ঠোঁট ও পায়ের নালা কমলা।
  5. বাদামী উপজাতের পা, ঠোঁট ও পায়ের নালা কালো।
  6. প্রাপ্তবয়ষ্ক পুরুষ ও স্ত্রী রাজহাঁসের দৈহিক ওজন যথাক্রমে ৪.৫-৫.৫ ও ৩.৫-৪.৫ কেজি।
  7. এদের ডিম উৎপাদন প্রতি ঋতুতে ৫০-৬০টি।

প্রিয় পঠক বন্ধু, উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে আমার বিভিন্ন জাতের বিভিন্ন ধরণের হাঁসের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানলাম।

হাঁস এবং রাজহাঁস মুরগির মত পোল্ট্রির দুটি অন্যতম প্রজাতি। মুরগির মত এদের ও বিভিন্ন জাত ও এসব জাতের বৈশিষ্ট্য রয়েছে। হাঁসের জাতের মধ্যে ডিম পারা জাত, মাংস উৎপাদনের জাত এবং উভয় উদ্দেশ্যে পালনের জাত রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ ডিমপারা জাতের মধ্যে জিনডিং, ইন্ডিয়ান রানার উল্লেখযোগ্য। আবার মাসকোভী জাতের হাঁস মাংস উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত।

বিভিন্ন পোল্ট্রি খামার যেমন- মুরগি পালন, হাঁস পালন, কোয়েল পালন ইত্যাদি সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট পোল্ট্রি’ (inbangla.net/poultry) এর সাথেই থাকুন।

Leave a Reply

nv-author-image

ইন বাংলা নেট কৃষি

পশু-পাখি পালন ও চাষাবাদ সম্পর্কিত যা কিছু বাংলাতে।View Author posts