(১) হাঁস-মুরগির জন্য ঘর তৈরির উদ্দেশ্য
পারিবারিকভাবে ১০-১৫টি হাঁস-মুরগি পালনের জন্য শুধু রাতে আশ্রয়ের জন্য ছোট খোঁয়াড় বা বাসস্থান তৈরি করা হয়। কিন্তু আধুনিক পদ্ধতিতে খামারভিত্তিক হাঁস-মুরগি পালন করতে হলে এদের জন্য ঘর বা বাসস্থান প্রয়োজন।
নিম্নলিখিত উদ্দেশ্যগুলোকে সামনে রেখে পাখির বাসস্থান করা হয়ে থাকে। যথা-
- আরামদায়ক পরিবেশ সৃষ্টি
- নিবিড়ভাবে যত্ন নেওয়া
- সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা
- খারাপ আবহাওয়া থেকে রক্ষা
- সহজে টিকা দেওয়া
- বন্য পশুপাখির আক্রমণ থেকে রক্ষা
- চোরের হাত থেকে রক্ষা
- সহজে ডিম সংগ্রহ
- সহজে খাদ্য ও পানি সরবরাহ
- হাঁস-মুরগির রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ
- সহজে লিটার পরিষ্কার
- শ্রমিক কম লাগা ইত্যাদি।
(২) হাঁসমুরগির ঘর তৈরির ধাপসমূহ
- হাঁস-মুরগির বাসস্থান বা ঘরের স্থান নির্বাচন করা
- ঘরের ডিজাইন নির্বাচন করা
- হাঁস-মুরগি পালনের জন্য বিভিন্ন প্রকার ঘর তৈরির পরিকল্পনা করা
- হাঁস-মুরগির ঘর তৈরি করা
- হাঁস-মুরগিকে প্রয়োজনীয় জায়গা দেওয়া ইত্যাদি।
(৩) হাঁস-মুরগির ঘরের স্থান নির্বাচন করা
নিম্নলিখিত সুবিধাগুলো পাওয়ার জন্য হাঁস-মুরগির বাসস্থান বা ঘর তৈরি করতে হবে-
- উঁচু ও বন্যামুক্ত এলাকা
- বাজার, মহাসড়ক ও বসতি থেকে দূরে
- ডিম ও মাংস বাজারজাত করার সুবিধা
- ভালো যাতায়াত ব্যবস্থা
- বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহের সুবিধা
- পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার সুবিধা সম্পন্ন স্থান
- ভবিষ্যতে খামার বড় করার সুযোগ ইত্যাদি থাকতে হবে।
(৪) ঘরের ডিজাইন
হাঁস-মুরগি পালনের জন্য আয়তাকার ঘর সবচেয়ে ভালো। হাঁসমুরগির সংখ্যার উপর ঘরের দৈর্ঘ্য নির্ভর করে।
- তবে ঘরের দৈর্ঘ্য যাই হোক না কেন প্রস্থ ৪.৫-৯.০ মিটারের মধ্যে হতে হবে।
- হাঁস-মুরগির ঘর পূর্ব পশ্চিমে লম্বালম্বি এবং দক্ষিণমুখী হতে হবে।
ছাদের ডিজাইনের উপর ভিত্তি করে দু’ধরনের মুরগির ঘর বেশি দেখা যায়।
ক) শেড টাইপ
- শেড টাইপ বা একচালা ঘর খুব সহজেই তৈরি করা যায়।
- খোলা অবস্থায় বা অর্ধ-আবদ্ধ অবস্থায় হাঁস-মুরগি পালনের জন্য এ ধরনের ঘর খুবই উপযোগী।
খ) গ্যাবল টাইপ
- গ্যাবল টাইপ বা দোচালা ঘর তৈরিতে খরচ বেশি হয়। এ ধরনের ঘরের ছাদ ঢালু থাকে।
- সাধারণত যেসব অঞ্চলে বেশি বৃষ্টিপাত হয়, সেখানকার জন্য গ্যাবল টাইপ ঘর খুবই উপযোগী।
ঘরের ডিজাইন যে প্রকারের হোক না কেন, বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহারের জন্য হাঁস-মুরগির খামারে নিম্নলিখিত ঘরের ধরণগুলো থাকবে।
(৫) ঘরের ধরণ
ক) বাচ্চার ঘর বা ব্রুডার ঘর
এখানে সদ্য ফোটা বাচ্চাদের জন্ম থেকে ৪ বা ৬ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত কৃত্রিমভাবে তাপ প্রদান, টিকা, লিটার, খাদ্য ও পানির ব্যবস্থা করতে হয়।
খ) বাড়ন্ত হাঁস-মুরগির ঘর বা গ্রোয়ার ঘর
এখানে ডিম উৎপাদনকারী হাঁস-মুরগির বাচ্চাকে ৫/৭ সপ্তাহ থেকে ২০ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত পালন করা হয়।
গ) ডিমপাড়া হাঁস-মুরগির ঘর
এখানে ডিম উৎপাদনকারী হাঁস-মুরগি ২১ থেকে ৭২ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত পালন করা হয়।
ঘ) হ্যাচারি ঘর
যে খামারে বীজ ডিম থেকে ইনকিউবেটরের সাহায্যে বাচ্চা ফোটানো হয়, তাকে হাঁস-মুরগির হ্যাচারি খামার বলে এবং যে ঘরে বাচ্চা ফোটে তাকে হ্যাচারি ঘর বলা হয়।
ঙ) ব্রয়লার ঘর
- যে খামারে মাংস উৎপাদনকারী ব্রয়লার মুরগি পালন করা হয় তাকে ব্রয়লার খামার বলে এবং যে ঘরে পালন করা হয় তাকে ব্রয়লার ঘর বলা হয়।
- ব্রয়লার ঘরে মুরগিকে ৪ থেকে ৬ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত পালন করা হয়।
(৬) ঘর তৈরিকরণ
ক) ছাদ বা চালা
টিন, অ্যাসবেস্টাস এবং করোগেটেড শিট দিয়ে ঘরের ছাদ তৈরি করা হয়ে থাকে। তবে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে সিমেন্ট ও কংক্রিটের তৈরি ছাদ সবচেয়ে ভালো।
গ্রামীণ পরিবেশে পারিবারিক হাঁস-মুরগির খামারে ছন ও উপযুক্ত গাছের পাতা ব্যবহার করা যাবে।
খ) মেঝে
ঘরের মেঝে শুষ্ক রাখার জন্য হাঁস-মুরগিকে ইটের মেঝে বা মাচার উপর রাখা উত্তম।
গ) দেয়াল
- মুরগির ঘরের দেয়াল মাটি, বাঁশ, কাঠ, ইট, তারের নেট ইত্যাদি দিয়ে তৈরি করা যায়।
- দেয়ালের উচ্চতা ব্রয়লারের ক্ষেত্রে ০.৩ মিটার (১ ফুট) ও লেয়ারের ক্ষেত্রে ০.৬ মিটার (২ ফুট) পর্যন্ত দেওয়া যেতে পারে।
- আর দেয়ালের উপরের অংশে তারের নেট দেওয়া হয়ে থাকে। তবে শীতের দিনে উপরের নেটের অংশটুকু চটের বস্তা বা ত্রিপল দিয়ে ঢাকার ব্যবস্থা করতে হবে।
ঘ) দরজা
হাঁস-মুরগির ঘরের দরজা দক্ষিণ দিকে থাকতে হবে। ঘরের দরজা আকারে বড় হওয়া উচিত।
ঙ) জানালা
ঘরের লম্বালম্বি পাশে নেট থাকায় জানালা থাকে না। তবে, প্রস্থ পাশ দেয়াল দ্বারা বন্ধ থাকলে জানালা দিতে হবে।
(৭) হাঁস-মুরগির প্রয়োজনীয় জায়গা
ঘরে হাঁস-মুরগির জন্য প্রয়োজনীয় জায়গার ব্যবস্থা করতে হবে বয়সভেদে বিভিন্ন পদ্ধতিতে হাঁস-মুরগির জন্য প্রয়োজনীয় জায়গার পরিমাণ নিম্নে উল্লেখ করা হলো।
প্রতিটির জন্য প্রয়োজনীয় জায়গার পরিমাণ দেওয়া হলো।
বয়স | লিটার পদ্ধতি | খাঁচা পদ্ধতি | মাচা পদ্ধতি |
(১ম দিন থেকে বয়স্ক পাখি) | ০.০৫ – ০.২৮ বর্গমিটার | ০.০২ – ০.০৭ বর্গমিটার | ০.০২ – ০.১৯ বর্গমিটার |
বিভিন্ন পোল্ট্রি খামার যেমন- মুরগি পালন, হাঁস পালন, কোয়েল পালন ইত্যাদি সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট পোল্ট্রি’ (inbangla.net/poultry) এর সাথেই থাকুন।