(১) হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে চাষ কি ও কেন?
হাইড্রোপনিক পদ্ধতি কি: আধুনিক কৃষিতে হাইড্রোপনিক একটি সময়োপযোগী ও বিজ্ঞানভিত্তিক ফসল উৎপাদন পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে অতি লাভজনক ফসল মাটির পরিবর্তে পানিতে গাছের প্রয়োজনীয় খাদ্যোপাদান সরবরাহ করে ফসল উৎপাদন করা হয়।
হাইড্রোপনিক পদ্ধতির সুবিধা/উপকারিতা কি: বাংলাদেশের মতো জনবহুল দেশে যেখানে স্বাভাবিক চাষের জমি অপ্রতুল সেখানে মাটির পরিবর্তে ঘরের ছাদে বা আঙিনায়, পলিটানেল, নেট হাউজে বা গ্রীন হাউজে হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে সবজি, ফল ও ফুল উৎপাদন করা সম্ভব। এই পদ্ধতিতে সারা বছরই ফসল উৎপাদন করা সম্ভব এবং উৎপাদিত ফসলে কীটনাশক ব্যবহার করার প্রয়োজন হয় না। ফলে এ ফসল নিরাপদ এবং এর বাজারমূল্যও অধিক।
সম্প্রতি বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রে হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে মাটি বিহীন বড় স্টিলের বা প্লাস্টিকের ট্রেতে গাছের অত্যাবশ্যকীয় খাদ্যোপাদান সরবরাহ করে সাফল্যজনকভাবে ক্যাপসিকাম উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছে। গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফলে দেখা যায় যে, এ পদ্ধতিতে ফলন দ্বিগুণ হয় এবং উৎপাদন খরচও কম হয়।
(২) হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে টমেটো চাষের পদ্ধতি




হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে টমেটো চাষের পদ্ধতি বর্ণনা করা হলো-
ক) জাত
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত টমেটোর জাতগুলোর মধ্যে নিম্নোল্লিখিত জাতগুলো চাষ করা যেতে পারে। যেমন বারি টমেটো ১৪, বারি টমেটো ১৫ (শীতকালের জন্য), বারি হাইব্রিড টমেটো ৪, বারি হাইব্রিড টমেটো ৫ (গ্রীষ্ম-বর্ষাকালের জন্য)। এছাড়াও বিভিন্ন কোম্পানির আমদানিকৃত কিছু ভালো জাতও বাংলাদেশে চাষ করা যেতে পারে। সাধারণত টমেটোর জীবনকাল ১২০-১৫০ দিন হয়ে থাকে। ফোমের মধ্যে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর (শীতকালের জন্য) এবং মে-জুলাই (গ্রীষ্ম-বর্ষাকালের জন্য) মাসে বীজ বপনের উপযুক্ত সময়।
খ) চারা উৎপাদন
- চারা উৎপাদনের জন্য স্পঞ্জ ব্লক ব্যবহার করা হয়। ৩০X৩০ সে.মি. সাইজের একটি স্পঞ্জ-কে ২.৫-২.৫ সে.মি. সাইজে ব্লক ব্লক করে কেটে প্রতিটি ব্লকের মাঝে ছিদ্র করে বীজ স্থাপন করতে হবে।
- বীজ অঙ্কুরিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত বীজের উপরে কাগজ দিয়ে ঢেকে রাখতে হয়। চারা অঙ্কুরিত হওয়ার পর পরই ঐ কাগজ সরিয়ে ফেলতে হবে।
- চারার বয়স ২০-২৫ দিন হলে স্পঞ্জ ব্লকসহ চারা বালতি/ট্রেতে স্থানান্তর করতে হবে।
গ) রাসায়নিক উপাদানের পরিমাণ (প্রতি ১০০০ লিটার পানির জন্য)
ক্রম | রাসায়নিক উপাদান | পরিমান |
১ | পটাশিয়াম হাইড্রোজেন ফসফেট | ২৭০ গ্রাম |
২ | পটাসিয়াম নাইট্রেট | ৫৮০ গ্রাম |
৩ | ক্যালসিয়াম নাইট্রেট | ১০০০ গ্রাম |
৪ | ম্যাগনেসিয়াম সালফেট | ৫১০ গ্রাম |
৫ | ইউডিটিএ আয়রন | ৮০ গ্রাম |
৬ | ম্যাঙ্গানিজ সালফেট | ৬.১ গ্রাম |
৭ | ৰৱিক এসিড | ১.৮ গ্রাম |
৮ | কপার সালফেট | ০.৪ গ্রাম |
৯ | অ্যামনিয়াম মলিবটেড | ০.৩৮ গ্রাম |
১০ | জিংক সালফেট | ০.৪৪ গ্রাম |
ঘ) পরবর্তী পরিচর্যা বা EC ও PH এর মান নিয়ন্ত্রণ
বৈদ্যুতিক পরিবাহিতা (Electrical Conductivity) EC হলো কোনো দ্রবণে দ্রবীভূত পদার্থসমূহের পরিমাণ যার উপর বিদ্যুৎ প্রবাহের মাত্রা নির্ভর করে।
- চারা লাগানোর সময় দ্রবণের ইসি এর মান ০.৭৫-১.০ WGm/wg এবং PH ৫.৫-৬.০ মধ্যে রাখতে হবে। চারা রোপণের ১ মাস পর ইসি এর মান ০.৭৫-১.৫ ডিএস/মি এর মধ্যে রাখতে হবে। PH এর মান সব সময় ৫.৫-৬.৫ এর মাঝে রাখতে হবে।
- ইসি বেশি হলে বিশুদ্ধ পানি যোগ করে ইসি কমাতে হবে। ইসি কমে গেলে খাদ্যউপাদান সমেত জলীয় দ্রবণ যোগ করতে হবে।
- PH বাড়লে সাধারণ এসিড যেমন হাড্রোক্লোরিক এসিড বা কনফিউরিক এসিড যোগ করতে হয়। pH কমে গেলে সোডিয়াম হাইড্রোঅক্সাইড বা ক্যালসিয়াম হাইড্রোঅক্সাইড যোগ করতে হবে।
- গাছে দৈহিক বৃদ্ধির পর্যায়ে হঠাৎ করে PH বা ইসি পরিবর্তন করা যাবে না। গাছকে খাড়া রাখার জন্য নাইলনের রশি দ্বারা গাছ বেঁধে নিতে হবে।
ঙ) ফলন
হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে টমেটো চাষে জাত ভেদে ৫০-৯০ টন/হেক্টর টমেটো উৎপাদিত হয়ে থাকে।
বিভিন্ন উদ্ভিদ, গাছ ও ফসল যেমন- বিভিন্ন শস্য, সবজি, ফুল, ফল ইত্যাদি চাষাবাদ সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট চাষাবাদ’ (inbangla.net/casabad) এর সাথেই থাকুন।
অনুরোধ!! পোষ্ট ভালো লাগলে প্লিজ উপরের শেয়ার আইকনে ক্লিক করে পোষ্টটি শেয়ার করে দিন।