ছাগলের খামারে লাভ কেমন? তার চেয়ে জানা বেশি জানা প্রয়োজন যে, কি কি ছাগল খামার করে লস হয়?
আমরা জানি ছাগলের ব্যবসা ভালো একটা লাভজনক ব্যবসা। ছাগলের ব্যবসা যদি ঠিকমতো করা যায়, যদি আপনারা ছাগলের খামার ঠিকমতো করতে পারেন তাহলে ছাগলের খামারে লাভ অনেক ভাল।
তারপরেও অনেক খামারি নতুন অবস্থায় ছাগলের খামারে লাভ করতে এসে এই ছাগলের খামারে ক্ষতির সম্মুখীন হয় এবং কিছুদিন পর ছাগলের খামার বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়।
কি কারণে তারা ক্ষতির সম্মুখীন হয়? আজকের এই ব্লগ পোষ্টটি সম্পূর্ণ পড়বেন তাহলে কিন্তু আপনারা উপকৃত হবেন। একটি ছাগলের খামারে লাভ করতে আপনারা কোন দিকটা ক্ষতিকর সেগুলি জানতে পারবেন। তাহলে চলুন শুরু করা যাক…..
নিম্নে কি কি কারণে ছাগল খামার করে লস হয়, ছাগলের খামারে লাভ কেমন তার একটি স্পষ্ট ধারণা তুলে ধরা হলো-
(১) জায়গা জমির ও জ্ঞানের অভাব
বিশেষ করে বর্তমানে কিন্তু অনেকের জায়গা-জমির নাই। যে ছাগল চড়িয়ে বেড়ায় কিংবা গাছ চাষ করবেন প্রচুর পরিমাণে, বিভিন্ন প্রকারের গাছ চাষ করে ছাগলকে খাওয়াবেন, সেইরকম কিন্তু ব্যবস্থা বাংলাদেশের মত ছোট একটি দেশে নেই।
কিন্তু তারপরেও অনেকে ছাগলের খামার করে থাকেন। তারা নিজের খামারের কাজগুলো না জেনে ছাগলের খামার করেন সেই কারণেও কিন্তু ছাগলের খামারে লাভ না হয়ে তারা ক্ষাতির সম্মুখীন হয়।
(২) শুধু দেশি ছাগল রাখা

বিশেষ করে আপনি যদি ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল খামার করেন এবং তাদের গৃহবন্দী করে পালন করেন, তাহলে কিন্তু সেই ছাগলের খামারে লাভবার কখনোই হতে পারবেন না। সেই ছাগলের খামারে লাভ হলেও সীমিত লাভ হবে। যেটা দিয়ে আপনার সংসার চালানো যাবেনা।
এমনকি ছাগলের ভরণপোষণ করতে গিয়ে আপনি সেই লাভটা আপনার চোখে ধরা দেবে না। সেক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই অল্প টাকার ভিতরে খামার করে ছাগলের খামারে লাভ চাইলে বিদেশি জাতের ছাগল গুলো বেছে নিতে হব।
(৩) সঠিক উন্নত জাতের ছাগল নির্বাচন করা

যে বিদেশি উন্নত ছাগলগুলো ছয় থেকে সাত মাস বয়স হলে বাচ্চা দেয় এবং প্রতি ১৪ মাসে দুইবার বাচ্চা দিয়ে থাকে সেই জাতের ছাগলকে নির্বাচন করতে হবে।
দেশি ছাগল বছরে দুইবার বাচ্চা দেয় কিন্তু ক্রস জাতের ছাগলগুলো একটু লেট করে। তারপরও আপনারা উন্নত জাতের ছাগল নির্বাচনের ক্ষেত্রে আপনারা সেই জাত নির্বাচন করবেন যে ১৪ মাসের ভিতর ২ বার বাচ্চা দেয়।
তাহলে কিন্তু আপনার এই ছাগলগুলো দিয়ে স্টল ফিডিং ছাগলের খামারে লাভবান হতে পারবেন কারণ এই ছাগলগুলোর গ্রথ ভালো।
(৪) খামারে পাঠা না রাখা
আর বিশেষ করে আমরা অনেকেই ছাগল খামার করে কিন্তু পাঠা রাখিনা। এটি কিন্তু একটা লসের বিষয় আপনাকে অবশ্যই পাঠাতে হবে।
ছাগলের খামারে পাঠা রাখলে কি হয়?
ছাগলগুলো নিয়মিত হিটে আসে। বাচ্চা দেওয়ার পর দেখা যায় এক মাস দেড় মাস পরে তারা আবার হিটে চলে আসে। আর যদি খামারে পাঠা না থাকে তারা কিন্তু অনেক ছাগল হিটে আসতে লেট করে থাকে এ বিষয়ে আপনাদের অবশ্যই জ্ঞান থাকা প্রয়োজন।
আপনারা অবশ্যই ভালো জাতের পাঠা সংগ্রহ করবেন সেটি হতে পারে হতে পারে শিরোহি, যমুনাপুরি, বারিবারি, বিটল হতে পারে।
বারবারই আপনারা যে জাতটিই নির্বাচন করেুন, অবশ্যই উন্নত জাতের পাঠাতে হতে হবে।
(৫) শুধু ইউটিউব দেখে খামার শুরু করা
আমার বন্ধুরা আর কিছু ক্ষতির দিক হলো অনেক খামারি শুধু ইউটিউব এর ভিডিও দেখে তাদের খাবার মেইন্টেইন করতে চায়। কিন্তু আপনাকে অবশ্যই নিজের কিছু জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
যেমন দানাদার খাবারের সম্পর্কে ইউটিউব চ্যানেলে দানাদার খাবার তৈরি করা শেখায় কিন্তু আপনার খামারে চলাতে হলে আপনার কিছু বেসিক ধারণা থাকতে হবে।
কিভাবে আপনি আপনার খামারে ছাগল গুলিকে অল্প খরচের ভেতর পালন করতে পারবেন, সেদিকে সেদিকে একটু জ্ঞান থাকতে হবে।
শুধু ভুষি খাওয়া কিংবা ভুট্টা খাওয়ান এগুলো কিন্তু দামি খাবার, দামি খাবার খাওয়ালে কিন্তু আপনি ছাগলের খামারে লাভ না করে লসের পথে যাবেন। আপনাদের দামি খাবারের সাথে অবশ্যই সস্তা সস্তা মানের কিছু খাবার মিক্স করতে হবে।
আপনাকে নিজেই প্রাকটিক্যাল ভাবে তৈরি করে নিতে হবে।
আপনি অবশ্য ইউটিউব দেখে শিখবেন, জানবেন, ধারণা নিবেন। কিন্তু শুধুমাত্র খাবারগুলো ইউটিউব এর দানাদার খাবার ভিডিও দেখে যদি আপনি ছাগলগুলো পালন করতে চান, আপনার কোন নিজস্বতা না থাকে, তাহলে কিন্তু বন্ধুরা অবশ্যই আপনারা ছাগলের খামারে লাভ এর পরিবর্তে ক্ষতির সম্মুখীন হবেন।
(৬) ছাগলের অসুখ হলে বিচলিত হওয়া
ছাগলের খামারে ছাগলের অসুখ হবেই এত কিন্তু আমাদের উত্তেজিত হওয়া যাবে না। ঠান্ডা মাথায় তার চিকিৎসা করতে হবে বা ঠান্ডা মাথায় তার চিকিৎসা দিতে হবে এবং সঠিক চিকিৎসা দিতে হবে।
এলোমেলো চিকিৎসা দিলে হয়তো ছাগলটা মারা যেতে পারে। এখানেও কিন্তু একটা ক্ষতি হয়ে যাবে। আপনাকে অবশ্যই ঠান্ডা মাথায়, নিকটস্থ ভালো একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে তার কাছ থেকে ওষুধ নেবে। ওষুধ নিয়ে খাওয়াবেন।
কেউ একজন বলল যে, ঠান্ডা জ্বরের জন্য কি ওষুধ খাওয়ান, কিন্তু আপনার ছাগলের দেখা গেল ঠান্ডা জ্বর আসে নাই, অন্য একটা রোগ হয়েছে, সেক্ষেত্রে আপনি ঠান্ডা জ্বরের ওষুধ খাওয়ালে, ছাগলের প্রবলেম হতে পারে বা তার আসল রোগটি আরগ্য হবে না।
প্রথমে এগুলো আপনাকে শিখতে হবে, জানতে হবে, আর আপনি যখন ছাগলগুলি পালন করা শুরু করবেন, আস্তে আস্তে কিন্তু আপনার এই একটা আইডিয়া এসে যাবে।
(৭) শুরুতেই বড় আকারে আরম্ভ করা
আপনি ৫-১০টি ছাগল দিয়ে শুরু করুন আস্তে আস্তে ৫/৬ মাস পালন করলেই কিন্তু অনেক কিছু শিখতে পারবেন। ছাগল সম্পর্কে সবাই কিন্তু সবকিছু জানে না, কেউ বলতে পারবেন না আমি ছাগল সম্পর্কে এ টু জেড জেনে গেছি, আমি সবই জানি , এটা কিন্তু ভুল। আপনি যত পালন করবেন ততই আপনার শিক্ষা হবে।
আপনি ৫-১০ ছাগল পালন করছেন, ছাগলগুলো খুব আরাম আয়েশের পালন করে যাচ্ছেন, আপনি ভাবছেন আপনি ১০০-২০০ ছাগলও পালন করতে পারবেন।
কিন্তু না আপনাকে আস্তে আস্তে ছাগলের সংখ্যা বাড়াতে হবে। আস্তে আস্তে খামারটি সচল হয়ে যাবে এবং আপনি এখান থেকে ভালো একটা আয় করতে পারবেন। আপনার ২/৩ মানুষকে কাজ দিতে পারবেন, ছাগলের খামারে লাভবান হবেন ও আপনি পরে আরও ভালো ভালো উপায় বাহির করতে পারবেন।
(৮) বসে না থেকে শুরু করে দিন
দেখা যায় আপনি এখন অবহেলায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু আপনি যদি এখন থেকেই ২-৪ টি ছাগল দিয়ে শুরু করেন, নতুবা বাড়িতেই পালন করেন, আস্তে আস্তে ছাগলগুলো বাচ্চাদের বাচ্চা হতে হতে আপনার খামারটি বড় হবে।
পরবর্তীতে আপনারা আর ছাগল কেনার প্রয়োজন পড়বে না। আপনি এই ছাগল থেকে দেখা যায় দুই চার পাঁচ বছরে আপনার অনেক ছাগল হয়ে গেছে।
তাই বন্ধুরা একবারে কোন কিছু না জেনে খামারে হাত দেবেন না একটু ধারনা থাকতে হবে।
(৯) ভুল স্থান থেকে ছাগল কেনা
আপনারা অবশ্যই ছাগলগুলো নিয়ে আসবেন কোন খমার থেকে, ব্রিডিং খামার রয়েছে যারা বাচ্চা তৈরি করে থাকে, সেই সকল খামারে আপনি তাদের সাথে আলোচনা করে এবং ছাগল সম্পর্কে ভালো একটা ধারণা নিয়ে তার কাছে ছাগল নিয়ে আসবেন, খামারে উঠাবেন এবং যদি পরে সমস্যায় পড়েন তার কাছে ফোন দিবেন সেখানে সমাধান দিয়ে দেবে।
আর আপনি যদি হাট বাজার থেকে কিংবা কোন দালালের কাছ থেকে ছাগল নিয়ে আসেন। পরে আপনার ছাগল বাড়িতে আনার পর বিভিন্ন রোগব্যাধি তাদের ফোন দিবেন তারা ফোন রিসিভ করবে না বা করলেও তারা কোন কিছু বলতে পারবে না।
তাই এ বিষয়ে আপনাদের সাবধান হতে হবে। আপনারা খামার করে ছাগলের খামারে লাভবান হতে চাইলে, অবশ্যই একটি খামার থেকে ছাগলগুলো নির্বাচিত করবেন ও ভালো জাতের ছাগল গুলো নিয়ে এসে খামার শুরু করবেন।
যদিও খামার থেকে ছাগল কিনলে হাটে-বাজারের তুলনায় কিছু টাকা একটু বেশি নিয়ে থাকে খামারিরা। তারপর তারপরও কিন্তু তাদের কাছে ছাগল কেনা নিরাপদ।
আর আপনি যদি, ছাগল সম্পর্কে অনেক কিছু জানা থাকে, বা অলরেডি দশ-বারোটা পালন করে থাকেন। তাহলে আপনারা আপনাদের মত যেখানে যেখান থেকে খুশি সেখান থেকে ছাগল কালেক্ট করতে পারবেন সমস্যা নাই।
আর যদি আপনি ছাগল পালন না করে থাকেন, নতুন অবস্থায় অবশ্যই আপনারা ভালো একটা খামার থেকে ছাগল কিনে, ছাগলের খামার করবেন।
যাইহোক বুঝতে পারলেন কি কি করলে ছাগলের খামারে লস হয়। কিন্তু কখনো লস হয়না শুধু মাত্র যদি ছাগল মারা যায় তাহলে কিন্তু আপনার লস হবে।
যদি ছিাগল বেঁচে থাকে এবং পরিপাটি চালাইতে পারেন তাহলে আপনি অবশ্যই ছাগলের খামারে লাভবান হতে পারবেন।
(১০) হিসাব না রাখা
আর বিশেষ করে অবশ্যই আপনি সবসময় হিসাবটা ঠিকমতো করবেন। আপনার ছাগলকে কতটা খাবার দিচ্ছেন? প্রতিদিন মাসে কত টাকা খরচা হচ্ছে? এগুলো একটা খাতায় লিখে রাখবেন।
যখন ছাগলগুলি বিক্রি করবেন ছাগলের বাচ্চা বিক্রি করবেন, সেখান থেকে আপনি লাভের অংশ বাহির করতে পারবেন।
আর যদি না করেন তাহলে দেখা যায় আপনার হিসাব থাকবে না আপনার ছাগলের খামারে লাভ কি হল সেটা কিন্তু বুঝতে পারবেন না। অবশ্যই আপনাকে হিসাব কষে ছাগলের খামার করতে হবে।
যাই হোক বন্ধুরা আজকে পর্যন্ত ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন দেখা হবে পরবর্তী আলোচনায়।
বিভিন্ন গবাদি পশু যেমন- গরু পালন, ছাগল পালন, মহিষ পালন, ভেড়া পালন ইত্যাদি সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট গবাদি পশু’ (inbangla.net/gobadi) এর সাথেই থাকুন।
[সূত্র: Krisna Dakua, West Bengal, India]