Skip to content

 

১০টি গাভী পালনে আয় ব্যয় কত? গাভী পালনে লাভ কেমন? (বাজার দরঃ ২০২০)

১০টি গাভী পালনে আয় ব্যয় কত, গাভী পালনে লাভ কেমন

প্রশ্ন: ১০টি গাভী পালনে আয় ব্যয় কত? গাভী পালনে লাভ কেমন?

উত্তর: ২০২০ সালের বাজার দর অনুযায়ী, ১০টি গাভী পালনে, প্রতি বছরে, আড়াই থেকে তিন লক্ষ টাকা লাভ করা সম্ভব। যার মাধ্যমে একটি পরিবার সুন্দরভাবে সংসার চালনা করতে পারবে। বড় লোক না হলেও সাবলম্বি হওয়া সম্ভব।

চলুন গাভী পালনে আয় ব্যয় কত ও গাভী পালনে লাভ কেমন হয়ে তার বিস্তারিত বর্ণান জেনে নিই-

দুধ উপাদনকারী ১০টি গাভী পালনে আয় ব্যয় হিসাব করে গাভী পালনে লাভ হিসাব নির্ণয় করা সম্ভব। গাভী পালনে লাভবান হওয়ার জন্য আয় ব্যয়ের হিসাব রাখা অতি জরুরী। চলুন জেনে নেই দুধ উপাদনকারী ১০টি গাভী পালনের হিসাব সম্পর্কে।

আয় ব্যয়, গাভী পালনে লাভ কেমন

(১) দশটি গাভী পালনে ব্যয় কত?

ক) একককালীন স্থায়ী খরচ

১। গাভীর ঘর নির্মাণ ২০ ফিট * ২০ ফিট (উপরে টিন, চারদিকে দেয়াল), মোট ৮০,০০০ টাকা।

২। ১০ টি গাভী ক্রয় (বাছুরসহ দুধের গাভী) প্রতিটি ৮০০০০ করে, মোট ৮,০০,০০০ টাকা।

৩। খানার পাত্রসহ আনুষঙ্গিক খরচ ১০,০০০ টাকা।

৭। টিউবওয়েল স্থাপন ৮,০০০ টাকা।

৮। পানি সাপ্লাইয়ের মোটর ৮,০০০ টাকা।

৯। ৮ টি ফ্যান ২০০০ টাকা করে, মোট ১৬,০০০ টাকা।

১০। অনির্দষ্ট কিছু খরচ ধরি ৩০০০ টাকা।

সর্বমোট একককালীন খরচ = ৯,২৫,০০০ (নয় লক্ষ পঁচিশ হাজার) টাকা।

খ) চলতি খরচ

১। প্রতিদিন দানাদার খাদ্য খরচ (১টির জন্য ২০০ টাকা) ১০ টির জন্য (২০০০ * ৩০) = ৬০,০০০ টাকা (প্রতি মাসে)।

২। কাচা ঘাস এবং খড় এছাড়াও অন্যান্য খাবার বাবদ মাসে খরচ, ১ টির জন্য ১০০ টাকা হিসেবে ১০ টির জন্য ১ মাসে খরচ (১০০০ * ৩০) = ৩০০০০ টাকা।

See also  কৃত্রিম প্রজনন কি? গরুর কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতি, গাভীকে বীজ দেওয়ার সঠিক সময় ও নিয়ম

৩। ওষুধ, ভিটামিন (মাসিক) ৫০০০ টাকা।

৫। বিদ্যুৎবিল প্রতি মাসে ৫০০০ টাকা।

সর্বমোট চলতি খরচ প্রতি মাসে = ১,০০,০০০ টাকা (এক লক্ষ টাকা), আর ১২ মাসে চলতি খরচ আসবে = ১২,০০,০০০ (বারো লক্ষ) টাকা।

(২) দশটি গাভী পালনে দুধ বিক্রি করে আয় কত?

১। প্রতিটি গাভী দৈনিক ১০ লিটার দুধ দেবে। প্রতি লিটারের দাম ৫০ টাকা। একটি গাভীর দুধ থেকে প্রতিদিন গড়ে পাওয়া যাবে (৫০ * ১০) = ৫০০ টাকা। তাহলে ১০ টি গাভীর দুধ থেকে প্রতিদিন ৫০০ * ১০ = ৫০০০ টাকা আয় হবে। ফলে ৩০ দিনে ১০ টি গাভীর দুধ বিক্রি থেকে (৫০০০ * ৩০) = ১,৫০০০০ (দেড় লক্ষ) টাকা।

২। গাভী প্রায় ৮ মাস ধরে গড়ে ১০ লিটার দুধ দেবে। এরপর দুধের পরিমাণ কমতে থাকবে। দুধ বিক্রি থেকে ৮ মাসে আয় (১,৫০০০০ * ৮) = ১২,০০,০০০ (বারো লক্ষ) টাকা।

৩। পূর্বের চলতি খরতের হিসাব থেকে আমরা জানি ১২ মাসে চলতি খরচ ১২,০০,০০০ টাকা।

৪। এবার, ৮ মাস পর দুধ দেয়ার পরিমাণ কমে যাবে। গড়ে ৫ লিটারে নেমে আসবে। তাহলে ১০ টি গাভী থেকে ৫০ লিটার দুধ পাওয়া যাবে। ৫০ টাকা লিটার দরে বিক্রি করলে ৫০ লিটার দুধ থেকে দৈনিক আয় ২৫০০ টাকা। ৬০ দিনে আয় ২৫০০ * ৬০ = ১,৫০,০০০ (দেড় লক্ষ) টাকা।

৫। তাহলে প্রথম ৮ মাসে দুধ বিক্রি থেকে আয় ১২,০০,০০০ টাকা + পরবর্তী ২ মাসে আয় ১,৫০,০০০ টাকা। ১০ টি গাভীর এক বছরে মোট দুধ বিক্রি থেকে আয় ১৩,৫০,০০০ (তের লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) টাকা ও মোট খরচ ১২,০০,০০০ (বারো লক্ষ) টাকা।

অর্থ্যাৎ বছরে মোট দুধ বিক্রি ও মোট খরচ বিয়োগ করে দেড় লক্ষ টাকা লাভ থাকে মাত্র।

(৩) দশটি গাভী পালনে লাভ কেমন?

১। নিট লাভটা হলো বাছুর বা গরুর থেকে পাওয়া বাচ্চাগুলো। যেহেতু বছরে মোট দুধ বিক্রি ও মোট খরচ প্রায় সমান। সেহেতু উক্ত ১০টি গাভী থেকে যে ৮ থেকে ১০টি বাচ্চা পাওয়া যাবে সবগুলো নিজের নিট লাভ থাকবে।

See also  গর্ভবতী গাভীর পরিচর্যা কি কি ও কিভাবে করবেন?

২। বাচ্চা দেবার ১ থেকে ২ মাসের মাঝে গরু হিটে আসলে কৃত্রিম প্রজনন দিতে হবে। কৃত্রিম প্রজনন দেয়ার প্রায় ৮-৯ মাস পর গাভী বাচ্চা দেবে। এরপর প্রতিবার ১২-১৫ লিটার করে দুধ দেবে। এ গাভী ৪ থেকে ৫ বছর পর্যন্ত পোষা যাবে। ১ বছর পর এক-একটি বাছুর প্রায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করা যাবে। ৩ বছর পর বাছুরগুলো আবার গর্ভবতী হবে। তখন এক-একটির দাম ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকায় দাঁড়াবে। এ কারণে বাছুরগুলো রেখে ষাঁড়গুলো বিক্রি করে দিতে হবে।

৩। গাভীকে দানাদার খাদ্য, কঁচা ঘাস, খড়, চালের কুঁড়া ও প্রচুর পরিমাণে পানি দিতে হবে। পরবর্তী বছরগুলোতে ঘর নির্মাণ খরচ লাগবে না, গাভীও কিনতে হবে না। ৮ মাস পর আবার গাভীগুলো দুধ দেবে। আগের বাছুর বড় হবে। এসময় ঘর নির্মাণ খরচ, গাভী ক্রয় খরচ, টিউবওয়েল নির্মাণ খরচ আর লাগবে না, তবে খাদ্য খরচ বেড়ে যাবে।

৪। আগের ১০টি গাভী, ১০ টি বড় বাছুর, নতুন ১০ টি ছোট বাছুর সব মিলে ৩০ টি গরু হবে। আগের বাছুরের মধ্যে যদি ষাঁড় থাকে তাহলে বিক্রি করে দিতে হবে। ১০ টি বাছুরের মধ্যে যদি ৫ টি ষাঁড় থাকে তাহলে প্রতিটি ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি করলে (২৫০০ * ৫) = ১,২৫,০০০ টাকা আয় হবে। এর বেশিও আয় হতে পারে।

৫। এছাড়া প্রতি বছর বাছুর বিক্রি থেকে এবং গোবর বিক্রি করেও টাকা অর্জন করা যাবে। গাভীগুলো ৪ থেকে ৫ বছর পর্যন্ত দুধ দেয়ার পর এগুলো বিক্রি করে দিতে হবে। এ ধরনের একটি গাভী ৬০ থেকে ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করা যাবে।

পরিশেষে বলা যায়, দশটি গাভী থেকে দুধ বিক্রি করে ১,৫০,০০০ ও বাছুর বিক্রি করে ১,২৫,০০০ বিক্রি করে, সর্বমোট ২,৭৫,০০০ (দুই লক্ষ পঁচাত্তর) টাকা ইনকাম হয়েছে।

See also  দুধের গরুর খাবার তালিকা ও পরিচর্যা

উল্লেখ্য, ডেইরী ফার্মে খুব বেশী লাভ হয় না প্রথম দিকে, দুধ উপাদনের খরচ এবং দুধ বিক্রিতে যা আয় হয় তা খুবই কম তবে হ্যাঁ প্রতি বছর বছর যে বাচ্চা পাবেন সেটাই আপনার ভালো লাভ বয়ে আনবে।

১০টি গাভী পালন করে আপনি বড় লোক হয়ে যাবেন না, কিন্তু সাবলম্বি হতে পারবেন, সুন্দরভাবে চলতে পারবেন। তবে পরিশ্রমকে ভয় করলে চলবে না।

বিভিন্ন গবাদি পশু যেমন- গরু পালন, ছাগল পালন, মহিষ পালন, ভেড়া পালন ইত্যাদি সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট গবাদি পশু’ (inbangla.net/gobadi) এর সাথেই থাকুন।

Leave a Reply

nv-author-image

ইন বাংলা নেট গবাদি

বিভিন্ন গবাদি পশু যেমন- গরু পালন, ছাগল পালন, মহিষ পালন, ভেড়া পালন ইত্যাদি সম্পর্কিত যা কিছু বাংলাতে।View Author posts