কিডনি মানবদেহের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। মানুষের শরীরের দুটো কিডনি থাকে যেগুলো শরীরে পানির ভারসাম্য রক্ষা করে এবং বিভিন্ন দূষিত পদার্থ থেকে ফেলে।
এই কিডনি খারাপ হওয়ার কারণ এ শরীরের নানাবিধ সমস্যা দেখা দিবে। কিডনির রোগ একটি নীরব ঘাতক রোগ।
প্রতিবছর অনেক মানুষ এই রোগে মৃত্যুবরণ করছেন। বাংলাদেশ কিডনি রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। এই রোগের চিকিৎসায় ব্যয়বহুল তাই আগে থেকেই কিডনির যত্ন নেওয়া উচিত।
কিডনি ভালো রাখতে হলোে খাওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে, এমন কিছু খাবার রয়েছে যা খেলে আপনার কিডনি নষ্ট হতে পারে।
(১) কিডনি খারাপ হওয়ার কারণ

চলুন জেনে নেয়া যাক কিডনি খারাপ হওয়ার কারণগুলো-
১। রক্তচাপ ১৪৪ নম্বরের উপরে থাকলে কিডনির সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায় তাই কিডনি ভালো রাখতে রক্তচাপ সবসময় ১৩০ অথবা এর কম রাখার চেষ্টা করুন।
২। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখলে কিডনি রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়, নিয়মিত রক্তে সুগারের পরিমাণ পরীক্ষা করার সুগার বেশি থাকলে মিষ্টি জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন।
৩। কমবেশি প্রায় সব ঔষধি কিডনির জন্য ক্ষতিকর, বিশেষ করে ব্যথানাশক ঔষধ গুলো কিডনির জন্য ভালো নয়। নিয়ম না জেনে নিজে নিজে ঔষধ খাবেন না।
৪। মানুষের শরীরে প্রতিদিন ৫০০ মিলিগ্রামের বেশি ভিটামিন সি এর প্রয়োজন নেই। নিয়মিত প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ভিটামিন সি যুক্ত খাবার খেলে কিডনিতে পাথর হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। তাই প্রতিদিন ৫০০ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি গ্রহণ করুন।
৫। অনেকেই পানির বদলে কোমল পানীয় বা বিভিন্ন রকমের এনার্জি ড্রিংকস খেয়ে থাকেন, এই ধরনের পানীয় কিডনির জন্য খুবই ক্ষতিকর।
৬। ধূমপান ও মদ্যপানের কারণে ধীরে ধীরে কিডনিতে রক্ত চলাচল কমে যেতে থাকে এবং এর ফলে কিডনি কর্মক্ষমতা হরাস পায় ফলে ব্যক্তি এক পর্যায়ে গিয়ে কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন।
৭। প্রতিদিন অন্তত ৪ গ্লাস পানি বা তরল খাবার খাওয়া উচিত। তবে অতিরিক্ত ঘাম হলোে পানি খাওয়ার পরিমাণ আরও বাড়াতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি খেলে কিডনিতে পাথর হয় না এবং এর স্বাভাবিক কার্যক্রম ঠিক থাকে।
৮। মানুষের শরীরে প্রতিদিন মাত্র ১ চা-চামচ লবণ এর চাহিদা থাকে। তাই কিডনি সুস্থ রাখতে অতিরিক্ত লবন খাওয়া পরিহার করুন।
৯। গরুর মাংস খেলে কিডনির উপর চাপ পড়ে, এমনকি চিপস, প্রক্রিয়াজাত খাবার, ইনস্ট্যান্ট নুডুলস এবং লবণ দিয়ে ভাজা বাদাম ও কিডনির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
১০। খাদ্য তালিকায় অতিরিক্ত পরিমাণ প্রোটিন থাকলে কিডনির উপর চাপ পড়ে এবং কিডনির দুর্বল কোষগুলোর ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই প্রাণিজ প্রোটিন এড়িয়ে মাছ ডাল জাতীয় প্রোটিন রাখুন খাদ্যতালিকায়।
১১। দীর্ঘক্ষন প্রসাব না করে থাকা, কিনডির সমস্যা হওয়ার কারণগুলো মাঝে একটি, বিশেষত পর্যাপ্ত পাবলিক অভাবের শহরের নারীরা এই সমস্যায় বেশি ভোগেন।
দীর্ঘক্ষণ প্রস্ব আটকে রাখা শরীরের নানা বিধ জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। পেশির উপর চাপ থেকে শুরু করে ডাইভার্টিকিউলিটিস এর মতো জটিল রোগ হতে পারে।
এছাড়া দীর্ঘক্ষন প্রস্রাব না করে থেকে হাইড্রোনেফ্রোসিস বা কিডনিতে প্রস্রাবের চাপ বেড়ে যাওয়ার সমস্যা তৈরি হয়। এসব থেকেই কিডনির ক্ষমতা হারায় এবং ডায়ালাইসিসের প্রয়োজন পড়ে।
১২। সর্দি-কাশি কে পাত্তা না দেওয়া সাধারণ সর্দি-কাশি কে পাত্তা না দেওয়া আমাদের অনেকেরই অভ্যাস। কিন্তু এই সর্দি-কাশি কিডনির জন্য ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে, এছাড়া নানা গবেষণায় দেখা গেছে কিডনি সমস্যায় ভুগছেন এমন অনেকেরই অসুস্থতার সময় ঠিকমতো বিশ্রাম না নেওয়া ইতিহাসের রয়েছে।
১৩। রাত জেগে থাকা রাত জেগে থাকা, ঘুমাতে না পারা আমাদের অনেকেরই নিয়মিত সমস্যা। কিন্তু ঘুম শরীরের জন্য নানা কারণে খুবই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলোর ট্যিসুর নবায়ন ঘটে, ফলে ঘুমাতে না পারাটা নিয়মিত চলতে থাকলে শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলোর এই কাজ বাধাগ্রস্ত হয়। এতে কিডনির স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা কমে যায়।
(২) কিডনি ভালো রাখার উপায়

এবার চলুন কিডনি ভালো রাখার উপায় গুলো জেনে নেয়া যাক-
১। পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করুন, প্রতিদিন অন্তত 8 গ্লাস পানি বা তরল খাবার খান।
২। অতিরিক্ত লবন গ্রহণ পরিহার করুন, মানুষের শরীরে প্রতিদিন মাত্র 1 চা-চামচ লবণ এর চাহিদা থাকে।
৩। অতিরিক্ত প্রাণিজ প্রোটিন খাওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখুন।
৪। রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখুন।
৫। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করুন।
৬। ঔষধ খাওয়ার ক্ষেত্রে সাবধান হোন।
৭। প্রয়োজনের বেশি ভিটামিন সি কখনই খাবেন না, মানুষের শরীরে প্রতিদিন 500 মিলিগ্রামের বেশি ভিটামিন সি এর প্রয়োজন নেই।
৮। কোমল পানীয় ত্যাগ করুন।
৯। ধূমপান ও মদ্যপান ত্যাগ করুন।
১০। কিডনি পরীক্ষা করাতে হবে, উচ্চরক্তচাপ ডায়াবেটিস অতিরিক্ত ওজন অথবা পরিবারের কারো কিডনি সমস্যা থাকলে কিডনি রোগ হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে, যাদের কিডনি রোগের ঝুঁকি আছে তাদের অবশ্যই নিয়মিত কিডনি পরীক্ষা করানো উচিত।
মানব শরীর ও স্বাস্থ্য সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট স্বাস্থ্য’ (inbangla.net/sastho) এর সাথেই থাকুন।