নিম্নে আত্নবিশ্বাসী হওয়া প্রয়োজন কেন? আত্মবিশ্বাস অর্জনের উপায়, আত্মবিশ্বাস কিভাবে অর্জন করা যায়? এই বিষয়ে একটি সুন্দর আলোচনা উপস্থাপন করা হলো-
আত্মবিশ্বাস ব্যাপারটা অনেকটা মহত্ত্বের মত। কিছু কিছু লোক আছে যাঁরা মহৎ হয়েই জন্মান আবার কিছু লোককে মহত্ত্ব অর্জন করতে হয়। তেমনি কিছু মানুষ আত্মবিশ্বাস নিয়েই জন্মান। কিছু লোককে আত্মবিশ্বাস অর্জন করতে হয়।
যারা আত্মবিশ্বাস নিয়ে জন্মান তাঁরা ছোটবেলা থেকে একটু অন্যরকম। নিজেকে কেউকেটা না ভাবলেও তাদের মধ্যে দেখা যায় এক অন্য ধরনের গরিমা।
এই বিষয়ে বিখ্যাত ঔপন্যাসিক ও কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের শ্রীকান্ত উপন্যাসের ইন্দ্রনাথ চরিত্রটি উদাহরণ দেবার মত।
শ্রীকান্ত উপন্যাসের ইন্দ্রনাথ বাঘ ভয় পায় না, বরং এগিয়ে গিয়ে দেখতে যায় সত্যি বাঘ কিনা। যে গভীর অন্ধকারে গভীর নদীতে মৃত্যুকে উপেক্ষা করে মাছ চুরি করতে যায়।
উক্ত উপন্যাসের কিছু সংলাপ এখানে উল্লেখ না করলেই নয়।
“অন্ধকারে ডিঙি বাইছে ইন্দ্রনাথ ও শ্রীকান্ত। মাঝে মাঝেই ভুট্টাগাছের ডগা থেকে ছপাৎ ছপাৎ করে কি যেন পানিতে পড়ার শব্দ হচ্ছে।“
এবার শরৎচন্দ্রের ভাষাতেই বলি-
‘সশঙ্কিত হইয়া সেদিকে ইন্দ্রের মনোযোগ আকৃষ্ট করিলাম।
ইন্দ্র অত্যন্ত সহজভাবে বলিল, ও কিছু না সাপ জড়িয়ে আছে; তাড়া পেয়ে জলে ঝাঁপিয়ে পড়েছে।
কিছু না-সাপ। শিহরিয়া নৌকার মাঝখানে জড়সড় হইয়া বসিলাম অস্ফুটে কহিলাম, কি সাপ ভাই?
ইন্দ্র কহিল, সব রকম আছে, ঢোঁড়া, বোড়া, গোখরো, করেত, জলে ভেসে গাছে জড়িয়ে আছে- কোথাও ডাঙ্গা নেই দেখচিস নে?
সেতো দেখচি। কিন্তু ভয়ে যে পায়ের নখ হইতে মাথার চুল পর্যন্ত আমার কাঁটা দিয়া রহিল।
সে লোকটি কিন্তু ভ্রূক্ষেপমাত্র করিল না; নিজের কাজ করিতে করিতে বলিতে লাগিল, কিন্তু কামড়ায় না।
ওরা নিজেরাই ভয়ে মরচে- দুটো তিনটে আমার গা ঘেঁষে পালালো। এক একটা মস্ত বড়- সেগুলো বোড়া ঢোঁড়া হবে বোধ হয়।
আর কামড়ালেই বা কি করত। মরতে একদিন ত হবেই ভাই! এমনি আরও কত কি সে মৃদু স্বাভাবিক কণ্ঠে বলিতে বলিতে চলিল;
আমার কানে কতক পৌছিল, কতক পৌছিল না। আমি নির্বাক নিষ্পন্দ কাঠের মত আড়ষ্ট হইয়া একস্থানে একভাবে বসিয়া রহিলাম। নিঃশ্বাস ফেলিতেও যেন ভয় করিতে লাগিল— ছপাৎ করিয়া একটা যদি নৌকার উপরেই পড়ে।”
এখানে শরৎবাবু দুটো চরিত্র এঁকেছেন। একটি সাহসী অকুতোভয় চরিত্র…আর একটি অসাহসী ভীরু চরিত্র। ইন্দ্রনাথ সাহসী হয়েই জন্মেছিল। তাই তার কোন ভয় ডর ছিল না।
শ্রীকান্তের সাহস ছিল না। সে ঘটনাচক্রে ইন্দ্রনাথের সঙ্গী হয়েছিল।
শ্রীকান্ত ইন্দ্ৰনাথ সম্পর্কে ভাবছেঃ ওই লোকটি কি মানুষ? দেবতা? পিশাচ? কে ও? কার সঙ্গে এই বনের মধ্যে ঘুরিতেছি। যদি মানুষই হয় তবে ভয় বলিয়া কোন বস্তু বিশ্বসংসারে আছে সে কথা কি ও জানেও না? বুকখানা কি পাথর দিয়া তৈরি? সেটা কি আমাদের মত সঙ্কুচিত বিস্ফোরিত হয় না?”
ইন্দ্রনাথের মত ছেলেরা নিঃসন্দেহে সাধারণ ছেলেমেয়েদের থেকে ব্যতিক্রম, কিন্তু দুর্লভ নয়। যদি দুর্লভ হত তাহলে ক্ষুদিরাম, সূর্য সেন, ভগৎ সিং এর মত অসংখ্য ছেলেমেয়ে মৃত্যুকে তুচ্ছ করে স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ত না।
আজও সাহসী মানুষের অভাব নেই আমাদের দেশে। যারা দুর্গম গিরি লংঘন করে, সশস্ত্র দুর্বৃত্তের মোকাবেলা করে খালি হাতে। যে কোন দুঃসাহসিক কাজে নির্ভয়ে এগিয়ে আসে। এর জন্য মৃত্যুবরণ করতেও কুণ্ঠিত হয় না।
তবে আমাদের সমাজে বা সংসারে দেখা গেছে, অধিকাংশ লোকই নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে সব কিছু উপভোগ করে। কেউ আক্রান্ত হতে দেখলে তারা সংঘবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে না তুলে ঘরের দরজা বন্ধ করে বসে থাকে।
তারা ঝুঁকি নিতে চায়না।
আর অর্থনীতির মোদ্দা কথা ‘নো রিস্ক নো গেন’, ব্যক্তির জীবন সম্পর্কেও খাটে।
এমন কোন সফল মানুষ পাওয়া যাবে না- তা তিনি যুদ্ধক্ষেত্রের একজন সেনানীই হন, আর একজন ব্যবসায়ীই হন অথবা একজন সফল শিল্পী বা সফল রাজনীতিবিদ হন, যিনি ঝুঁকি নেননি।
আর ঝুঁকি নিতে তিনিই পারেন, যাঁর নিজের ওপর বিশ্বাস আছে। যিনি মনে ভাবেন, আমি পারব। আমাকে পারতেই হবে। যেখানে প্রবল ইচ্ছা আছে, সেখানেই সাফল্য। যেখানে গভীর সংকল্প আছে সেখানেই আসে সাহস।
অধিকাংশ মানুষই ঝুঁকি নিতে পারেন না, প্রয়োজনের সময় ঝটপট সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না, কারণ তাঁরা অজানাকে ভয় পান। শ্রীকান্তর মত তাঁরা ঘটনাক্রমে পরিচিত পরিবেশের বাইরে এসে পড়লেও ভয়ে সিঁটিয়ে থাকেন।
ইন্দ্রনাথের মত অজানাকে উপভোগ করতে পারেন না। এঁদের মত মানুষের আত্মবিশ্বাসও কিন্তু বাড়ানো যায়। একজন ভেঙে পড়া মানুষকেও আবার দাঁড় করিয়ে দেওয়া যায়।
পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর মহামনীষীদের জীবনী সম্পর্কে জানতে গেলে আমরা দেখতে পাই— শৈশবে তাদের অনেকের সম্পর্কে মন্তব্য করা হয়েছিল, তাদের দিয়ে কোন কাজ হবে না।
যেমন উইনস্টন চার্চিল ও আইনষ্টাইনকে দেখে তাঁর শিক্ষকরা বলেছিলেন, এদের দ্বারা কিছুই হবে না। ২৩ বছর বয়সে হিটলার সৈনিক হবার জন্য ভিয়েনা আকাদেমিতে ভর্তি হতে গিয়েছিলেন, তাঁকে ভর্তির অযোগ্য বলে ফেরৎ দেওয়া হয়েছিল।
বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বড় ধনী বিল গেট যখন কলেজ থেকে ড্রপ আউট হয়েছিলেন, তখন তাঁর শিক্ষকেরা ভেবেছিলেন ছেলেটা গোল্লায় গেল।
ডারউইন ডাক্তারি পড়তে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু লাশ কাটতে হবে দেখে ভয় পেয়ে ডাক্তারি ছেড়ে দেন। তাঁর বন্ধু-বান্ধব শিক্ষক সবাই ভেবেছিল ডারউইনের ভবিষ্যৎ অন্ধকার।
এঁরাও কিন্তু কেউ আত্মবিশ্বাস নিয়ে জন্মাননি। অথচ পরবর্তীতে আত্মবিশ্বাস অর্জন করেছেন।
সুতরাং আত্মবিশ্বাস অর্জন করা যায়।
ইউলিয়ম হ্যাজলিট বলেছেন ‘If you think you can win, you can win. Faith is necessary to victory.
এর অর্থ হলো, যদি তুমি মনে করো তুমি জিতবে, তুমি জিতবেই, জয়ের পক্ষে জরুরি হল বিশ্বাস।
অথবা কেন ফেন্ডম্যানের সেই বিখ্যাত উক্তিটি : A man is only as big as he thinks he is. There is no limit on what you can do. অর্থাৎ, একজন মানুষ যতবড় চিন্তা করতে পারে সে তত বড়। তুমি কি করতে পারো- তার কোন সীমারেখা নেই।
তোমার ক্লাশের সবচাইতে ভাল ছাত্রটি – যে কিনা তোমার চেয়ে ভাল ফল করে পরীক্ষায়, যাকে তুমি ঈর্ষা করো, তার প্রতিভা বা বুদ্ধি তোমার চেয়ে যে সবসময় বেশী হবে তার কোন মানে নেই।
এমনকী, তুমি হয়তো মনে মনে ভাবো, ওকে তো বুদ্ধু বলেই জানতাম, অথচ ইদানিং এতো ভাল ফলাফল করে কি করে!
এর কারণ হলো যে, তোমার তুলনায় তার আত্মবিশ্বাস বেশী। সে হয়তো ঝুঁকি নিতে পেরেছে। পড়াশোনার দিকে কঠোর পরিশ্রম করতে ভয় পায়নি।
তুমি আরাম করছো- সে হয়তো তখন পড়েছে। তুমি হয়তো যখন নিজের সম্পর্কে হাল ছেড়ে দিয়ে বন্ধুদের সাথে অনিয়মিত আড্ডায় যোগ দিয়ে ছাত্রজীবনের মূল্যবান সময় অপচয় করছ— সে তখন হয়তো ভাবছে কীভাবে আরও ভাল ফলাফল আশা করা যায় পরীক্ষায়। বাস্তবেও তাই ঘটেছে। ভাল ফলাফল অর্জন করে আজ সে তোমার কাছে ঈর্ষার পাত্র।
এর উপযুক্ত করণ হলো তোমার ভেতর আত্মবিশ্বাসের অভাব।
তুমি হয়তো ভাবছো, ভাল ছাত্র হওয়া তোমার দ্বারা হবে না। যা হয়েছে যথেষ্ট হয়েছে। এখন কোনমতে ছাত্রজীবনটা পার হলেই চলে। এইসময় হয়তো সেই ছাত্রটি ভাবছে, কিছুই হয়নি, এখনও বহুদূর যেতে হবে। এই আত্মবিশ্বাস যদি নিজের মধ্যে থাকে- তাহলে যে কেউ তার নির্দিষ্ট লক্ষ্যবিন্দুতে পৌছাতে পারবেই পারবে।
থ্যাকারে, ডিকেন্স, লিভিংস্টোন, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, আলামোহন দাসের মত বহু মানুষের সে বিশ্বাস ছিল। তাই তাঁরা সফল হয়েছেন। যে কোন বড় সাফল্যের জন্য আত্মবিশ্বাস চাই।
আফ্রিকার আবিষ্কারক লিভিংস্টোন ছিলেন তাঁতীর ছেলে। ছোটবেলায় তিনি কারখানার শিশু শ্রমিক ছিলেন। ১৪ ঘণ্টা তাঁকে দিনে পরিশ্রম করতে হত।
কিন্তু তাঁর স্বপ্ন ছিল তিনি বড় হবেন সেই সঙ্গে ছিল আত্মবিশ্বাস। তাই তিনি রাতের অবৈতনিক স্কুলে ভর্তি হলেন।
১৯ বছর বয়সে তিনি ঠিক করলেন, বছরে ৬ মাস কাজ করবেন, আর সে টাকা জমিয়ে বাকী ছ’মাস গ্লাসগো শহরে গিয়ে পড়াশোনা করবেন। এইভাবে তিনি ডাক্তারি পাশ করেন।
তারপর ২৭ বছর বয়সে তিনি ধর্মপ্রচারকের চাকরি নিয়ে গহীন আফ্রিকার জঙ্গলে গিয়ে আদিবাসীদের মধ্যে কাজ করতে থাকেন। সেখানে গিয়ে ঠিক করেন আফ্রিকার পূর্ব থেকে পশ্চিমে যাওয়ার রাস্তা তিনি আবিষ্কার করবেন।
চাকরি ছেড়ে দিয়ে তিনি দুঃসাহসিক অভিযানে নেমে পড়েন। এইভাবে আফ্রিকার অজানা দেশ তিনি আবিষ্কার করেন।
কঠিন আত্মবিশ্বাসের বলেই তিনি এটা করতে পেরেছেন।
পারস্য সম্রাট জোরক্লিস বলতেন, প্রত্যেক কাজে সাফল্য ও বিফলতার পরিমাণ সমান সমান।
ভবিষ্যতের দাঁড়ি পাল্লা কোনদিকে ঝুঁকবে তা কী করে জানব? সফলতা তারাই অর্জন করে যারা এগিয়ে এসে কোন কাজে হাত দেয়।
যারা ভীরু তারা কেবল চুলচেরা হিসাব করেই খালাস। তাদের পক্ষে সাফল্য অর্জন করা সুদূর পরাহত।
পানি দিয়ে যেমন কানের ভেতর ঢোকা পানি বের করতে হয় তেমনি আত্মবিশ্বাস দিয়েই আবাহন করা হয় সাফল্যকে।
অনেকেই বলেন, সাফল্যই সাফল্য নিয়ে আসে। Nothing succeeds like success।
কিন্তু আমি বলি- Nothing succeeds like self-confidence। বার বার অসফল হয়েও যে কোন মানুষ একটা না একটা সময় সাফল্যের মুখ দেখেই।
যেমন, রবার্ট ব্রুশ ১৮ বার পরাজয়ের পর সফল হয়েছেন।
যারা আই. এ. এস., আই.পি.এস. হয়েছেন তাদের অনেকেই প্রথমবারের চেষ্টায় সফল হননি।
পড়াশোনার ক্ষেত্রে সাফল্যের কোন শুরু নেই, শেষ নেই। কারণ, সাফল্যের জন্য সঠিক দিকনির্দেশনায় পড়াশোনা শুরু করাটাই সাফল্যের প্রধান ধাপ।
চুপচাপ বসে না থেকে সামান্যভাবে সাধ্যমত শুরু করো। তারপর ধীরে ধীরে এগিয়ে যাও তোমার লক্ষ্যে দিকে।
যদি একবারেই সফল হতে পার- তো খুব ভাল। না হতে পারলেও কোন আফশোস করো না। শুধু মনে মনে হিসাব করো। যেখান থেকে শুরু করেছিলে, সেখান থেকে অন্তত এক ইঞ্চি এগিয়ে যেতে পেরেছো কিনা।
যেখানে ছিলে সেখানে চিরদিন পড়ে থাকা মানে পিছিয়ে পড়া। পৃথিবী প্রতিদিন এগিয়ে যাচ্ছে, তুমি যদি এক জায়গাতেই দাঁড়িয়ে থাকো, তাহলে তোমাকে ছেড়ে সবাই এগিয়ে যাবে। একমাত্র তুমিই তাহলে পিছিয়ে থাকবে।
সেজন্য প্রতিদিন এগিয়ে যাবার চেষ্টা করতে হবে। নিজেকে প্রতিদিন বদলাতে হবে।
রাতারাতি আগাগোড়া বদলানো যায় না, ধীরে ধীরে বদলাতে হয়।
সেই পরিবর্তনই স্থায়ী হয়, যা ধীর কিন্তু প্রবহমান। পুকুর ও নদীর মধ্যে যা তফাৎ।
পুকুর একই জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকে কিন্তু নদী বয়ে চলে। বহতা নদীতে তাই শেওলা জমতে পারে না। ময়লা জমে না। কিন্তু পুকুরে যেটা সম্ভব। সবসময় এই আত্মবিশ্বাস রাখতে হবে যে যতক্ষণ শ্বাস ততক্ষণ আশ।
যতক্ষণ দেহে প্রাণ আছে, ততক্ষণ আত্মবিশ্বাসকে জাগিয়ে রাখতে হবে।
আমরা সবাই জানি যে সব কিছু আমরা বদলাতে পারব না কিন্তু বদলাবার চেষ্টা না করলে কিছুই বদলানো যাবে না। এই বদলাবার দৃঢ় ইচ্ছাটাই সব থেকে বড়।
কোন অর্থনৈতিক প্রতিবন্ধকতা এই ইচ্ছাকে দমন করতে পারে না। তুমি যদি অনাথও হও— তবুও তুমি অসহায় নও। যদি তোমার নিজের আত্মবিশ্বাস অটুট থাকে।
পৃথিবীতে বহু পিতৃমাতৃহীন, অনাথ শিশু নিজের নিজের ক্ষেত্রে কৃতিত্ব অর্জন করেছেন।
সত্যজিৎ রায়, শৈশবে বাবাকে হারিয়েছিলেন। বাল্যে পিতৃহীন হন শিল্প।
গণেশ পাইন, তাঁর চার পিতৃব্য মিলে তাঁর পাঁচ ভাই বোনকে মানুষ করেন।
বিখ্যাত আন্তর্জাতিক শিল্পপতি রজত গুপ্ত ১৬ বছর বয়সে বাবাকে হারান। ১৮ বছর বয়সে মাকে। কিন্তু এজন্য তাঁর দিল্লির আই.আই.টি-তে পড়া আটকায়নি।
আই.আই.টি-র ইঞ্জিনিয়ার আই.টি.সি-র শিক্ষানবীশ হিসাবে জীবন শুরু করেন। এখন তিনি আমেরিকার বিরাট শিল্পপতি।
আর একজন বিখ্যাত শিল্পপতি পূর্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায় ১৯৫০ সালে মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। দশ বছর বয়সে তিনি পিতৃহীন হন। কিন্তু তাতে তাঁর বড় হওয়া অটকায়নি।
রামকৃষ্ণ মিশন ও খড়গপুর, আই.আই.টি-র ছাত্র আমেরিকায় গিয়ে ১৯৭৪ সালে বার্কলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পি.এইচ. ডি. হন। আমেরিকায় তিনি চাকরি শুরু করেন ম্যাকিনসে। তারপর নিজেই তৈরি করেন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান চ্যাটার্জি গ্রুপ।
নোবেল বিজয়ী বিখ্যাত ফরাসি সাহিত্যিক আলবেয়ার কাম্যু ও তাঁর বন্ধু জা-পল ষাঁত্রে শৈশবেই পিতৃহীন ছিলেন। কাম্যুর মা নিরক্ষর ছিলেন। লোকের বাড়ি ঝি-এর কাজ করতেন। বাবা একটা মদের কোম্পানিতে সামান্য চাকরি করতেন।
পৃথিবীতে স্বচ্ছল পরিবারের বাবা-মায়ের অত্যধিক আদরে বহু ছেলে-মেয়ে বখে গেছে। কিশোর অপরাধী ও স্কুল ড্রপ আউটদের মধ্যে বাবা-মা জীবিত এবং স্বচ্ছল পরিবারের ছেলে-মেয়ে যথেষ্ট। অনাথ শিশুরা ছোটবেলা থেকে বড়দের কাছ থেকে শোনে তোমার বাবা নেই, অথবা তোমার বাবা মা নেই, তোমাকেই নিজেকে দেখতে হবে। বড় হতে হবে।
ছোট,বলা থেকে অসহায়ত্ববোধই তাদের কঠোর সংগ্রামী করে তোলে। যা ছিল, অভিশাপ সেটাই অনেকক্ষেত্রে আশীর্বাদ হয়ে দাঁড়ায়। তারা আত্মবিশ্বাস আহরণ করে জীবন থেকে।
পৃথিবীতে বহু লোক আছেন যাঁরা বিভ্রান্ত। যে কোন প্রশ্ন করলে এরা হ্যাঁ কিংবা না সঠিক জবাব দিতে পারেন না। বলেন, ‘জানি না’। সমীক্ষকরা এই শ্রেণীর নাম দিয়েছে ‘ডোন্ট নো’।
এঁরা যে সব সময় জানেন না তা নয়, আসলে সত্যি কথাটা বলতে ভয় পান। কোন বিতর্কে জড়িয়ে পড়তে চান না। যেটিকে সত্য বলে মনে করব সেটাকে প্রাণপণে আঁকড়ে ধরে রাখব এই মনোভাব গভীর আত্মবিশ্বাস জাগ্রত না হলে আসে না।
আত্মবিশ্বাস জাগ্রত হলে আত্মবিশ্বাসী ব্যক্তিই কোদালকে কোদাল বলতে ভয় পান না।
আত্মবিশ্বাস একজন প্রকৃত নেতার অপরিহার্য গুণ। তিনি ঘন ঘন আদর্শের সঙ্গে সমঝোতা করেন না। ঘন ঘন শিবির কদল করেন না। তাঁর কথা. ও কাজের মধ্যে একটা সংহতি থাকে। তিনি কথা দিয়ে কথা রাখেন। কারও সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেন না।
বিশ্বাসের ভিত্তি কিন্তু জ্ঞান। জ্ঞান সর্বদা যুক্তি নির্ভর। আমার মনে একটা ধারণা বা অনুমান আসতে পারে। কিন্তু মুক্তি দিয়ে সেই অনুমানকে প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
আমি যদি বর্নবিদ্বেষে বিশ্বাস করি, যদি একনায়কতন্ত্রে বিশ্বাস করি। যদি পুরুষ আধিপত্যে বিশ্বাস করি, অথবা উদ্ভট অলৌকিক যা মানবতা বিরোধী মতবাদে বিশ্বাস করি, তাহলে তা যুক্তির ধোপে টিকবে না।
সুতরাং সব বিশ্বাসই ব্যক্তির উন্নতির অনুকূল নয়। তর্কে বহু দূর, কিন্তু তর্ক থেকেই বিশ্বাসে আসতে হয়।
বিশ্বাস একটি ইতিবাচক গুণ। বিশ্বাস সংশয় কাটিয়ে তোলে। সংশয় থেকে উদ্বেগ জাগে।
এ কাজটা কী ভাল করলাম? এটা না করলেই হত। এটা বোধহয় অন্যায় করেছি। যখন আমরা কোনটা ভাল কোনটা মন্দ বুঝতে পারি না তখনই সংশয়ের উৎপত্তি হয়।
সংশয় থেকে আসে বিভ্রান্তি বা Confusion. পৃথিবীতে অনেক বিষয় আছে যা নিয়ে নানা মুনির নানা মত। কেউ বলে এটা ভাল। কেউ বলে ওটা ভাল। সমাজতন্ত্র ভাল না ধনতন্ত্র ভাল এটা নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক আছে।
হোমিওপ্যাথি, কবিরাজি না অ্যালোপ্যাথি এর মধ্যে কোন চিকিৎসা পদ্ধতি ভাল এ নিয়েও বিতর্কের শেষ নেই। আজ কালতো অনেক অ্যালোপ্যাথিক ডাক্তার হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করছেন। আবার একই ডাক্তারখানায় অ্যালোপ্যাথির সঙ্গে কবিরাজি ওষুধ বিক্রি হচ্ছে।
ঈশ্বর আছেন কি নেই- এ প্রশ্নের কী কোন দিন মীমাংসা হবে? সুতরাং এক্ষেত্রে কোন একটা মতবাদে বা কোন মানুষকে বিশ্বাস করলে উদ্বেগের উপশম হয়। সন্দেহ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
বিশ্বাস আনে নিশ্চয়তা এবং যতক্ষণ পর্যন্ত না সে বিশ্বাস ভেঙে যায় ততক্ষণ বিশ্বাস করে মানুষ উদ্বেগামুক্ত থাকে।
মনোবিদরা বলেন, বিশ্বাস মানুষকে একটা নিজস্ব কর্মপন্থা ঠিক করে দেয়। সংশয় থাকলে কর্মে প্রবৃত্তি হয় না। পক্ষান্তরে বিশ্বাসই কর্মবিরোধের অবাসন ঘটায়।
এটি আধুনিক মনঃস্তত্বের প্রবৃত্তি হয় না। পক্ষান্তরে বিশ্বাসই কর্মবিরোধের অবসান ঘটায়। এটি আধুনিক মনঃস্তত্বের একেবারে গোড়ার কথা।
মনোবিদদের মতে প্রত্যক্ষ ও স্মৃতি বিশ্বাসের মূল ভিত্তি। যেমন ধরা যাক, তোমার ক্লাসের কয়েকজনের মুখে তোমার নিন্দা শুনে কেউ কেউ তোমার প্রতি বিরূপ ধারণা পোষণ করেছে।
কিন্তু পরবর্তীতে দেখা গেছে তোমার সঙ্গে আলাপ হওয়ার পর তোমার সম্পর্কে তাদের ধারণা পালটে গেল। এটা ঘটল প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার জন্য। বিশ্বাসকেও গ্রহণ করতে হয় যুক্তি দিয়ে। ক্রোধ-ভয়-ঘৃণা থেকেও উপযুক্ত পাত্রে অবিশ্বাস আসতে পারে।
যেমন রাগের মাথায় আমি অকারণে নিরপরাধকেও অবিশ্বাস করতে পারি। ভয় থেকে শিশু (এমনকী বয়স্করাও) তুকতাক, ভুত, অলৌকিক বিশ্বাস করে। আর ঘৃণা থেকেও অবিশ্বাস জন্মায়।
একজন সাধারণ শ্বেতাঙ্গ একজন কৃষ্ণাঙ্গকে বিশ্বাস করে না। আরব-ইহুদি, হিন্দু-মুসলমান, পরস্পরকে বিশ্বাস করে না।
আবার শ্রদ্ধা ও সম্মান থেকেও কতগুলি মূল্যবোধ তৈরি হয়। এই মূল্যবোধ থেকে যেমন বিশ্বাস জন্মায় তেমনি অন্ধবিশ্বাসও জন্মাতে পারে।
আত্মবিশ্বাসই একমাত্র অন্ধ বিশ্বাস থেকে মুক্তির পথ। আত্মবিশ্বাসী মানুষকে মুক্তমনা এবং সদভাবনার অধিকারী হতে হয়।
আত্মবিশ্বাসী জানেন, বাইরে থেকে যতই বিশ্রান্তি আসুক তাঁর ভাবনটাই ঠিক। আত্মবিশ্বাসী জানেন, তিনি কখনও অন্যায় বা নীতি বিগর্হিত কাজ করেননি, কাজেই তাঁর কোনরকম ক্ষতি হবেনা।
তিনি জানেন, পৃথিবীতে অন্তত একটিমাত্র লোককে বিশ্বাস করতে পারেন সে হল তিনি নিজে।
আত্মবিশ্বাসই মানুষকে আরও বড় করে। আত্মবিশ্বাসের অভাবে লোকে যে তিমিরে ছিল সে তিমিরেই থেকে যায়।
আমি নিজে ঢাকার বাংলাবাজারের বহু ফুটপাথের দোকানদারকে পরবর্তীতে বিরাট প্রকাশক হতে দেখেছি।
আবার দেখেছি বিরাট প্রকাশকের ছেলেরা বাবার প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে ঠিকমতো টিকিয়ে রাখতে পারেনি।
এই যে মানুষ বড় লোক থেকে গরিব হয়ে যাচ্ছে আবার কেউ কেউ পথের ভিখারি হয়ে যাচ্ছে আবার পথের ভিখারি থেকে বড়লোক হচ্ছে তা যাদুবলে নয়। তাদের প্রবল ইচ্ছাশক্তির বলে।
ইচ্ছার সঙ্গে কর্মোদ্যম আর আত্মবিশ্বাস এসে মিশলে তবেই মানুষ তার অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে পারে। সবাই তা পারে না।
আবার এক ধরণের লোক আছেন তাঁরা কিছুই ভাবেন না। তাঁরা অল্পেই সন্তুষ্ট থাকেন অথবা ভাবেন, এর চেয়ে বড় কিছু করতে পারব না।
আমাদের বাসার সামনে একটা ছোট খেলার মাঠ আছে। সেই মাঠের এক কোণে গত পনের বছর ধরে এক দর্জি বসে কাজ করে। সে একটা মেশিন নিয়ে খোলা জায়গায় বসে কাজ করে।
এখন মাথার ওপর একটা তেরপল খাটিয়ে নিয়েছে। আজ থেকে পনের বছর আগে সে যত অর্ডার পেত এখন তার চেয়ে দ্বিগুণ অর্ডার পাচ্ছে। এই পনের বছরে আমাদের এলাকায় অনেক ব্যবসায়ীকে কপাল ফেরাতে দেখলাম।
তাহলে এই লোকটির কপাল ফিরল না কেন?
একদিন তার সঙ্গে কথা বলে বুঝলাম, এখান থেকে উঠে একটা দোকান নিয়ে বড় করে ব্যবসা করার কোন স্বপ্নই তার মধ্যে নেই। আগেও ছিল না।
কারণ সে সবসময়ই ভাবে তার দ্বারা এর চেয়ে বড় কিছু সম্ভব নয়। তার অর্ডার যে আগের চেয়ে বেশী আসছে এতেই সে খুশী।
বড় করে সে ভাবতে পারছে না, কারণ বড় করে ভাবতে গেলে যে আত্মবিশ্বাস দরকার সেটা তার নেই।
আত্মবিশ্বাসের অভাবে মানুষ প্রতিটি ক্ষেত্রে দোলাচলের মধ্যে থাকে। তিনি সিদ্ধান্ত নিতে ভয় পান। প্রতিটি সমস্যাকে তিনি জিইয়ে রেখে দেন। তিনি ভাবেন যে কোন সিদ্ধান্ত নিলেই যার পক্ষে সিদ্ধান্ত যাবে না সে চটবে। কাজেই তার চেয়ে সিদ্ধান্ত যতদিন স্থগিত রাখা যায় ততদিন জনপ্রিয়তা থাকবে।
পৃথিবীতে দু’ধরণের আত্মবিশ্বাসী মানুষ আছেন। যাঁরা প্রথম জীবনে প্রচণ্ড সংগ্রাম করে একটা সময় থেকে থিতু হয়ে বসেছেন। আর তাঁদের পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি।
কিন্তু আবার এমন মানুষও আছেন যাদের সারাজীবন সংগ্রাম করে যেতে হয়েছে।
যেমন বিখ্যাত জার্মান কমপোজার উলফগাঙ্গ মোজার্ট পাঁচ বছর বয়স থেকেই পিয়ানো অর্গান, বেহালা বাজানোর পারদর্শী হয়ে ওঠেন। তেরো বছর বয়সেই পূর্ণবয়স্ক একজন সুরকারের মতই তিনি দক্ষ হয়ে ওঠেন। লিখে ফেলেন সিম্ফনি আর অপেরা। তেরো বছর বয়সেই তাঁর অপেরা জনপ্রিয় হয় এবং পোপের কাছ থেকে সম্মানজনক খেতাব পান ‘অর্ডার অব দ্য গোল্ডেন স্পার’।
কিন্তু এই অসীম প্রতিভাধর শিল্পীকেও কঠোর জীবন সংগ্রামে নামতে হয়।
তিনি খ্যাতি-প্রশংসা পেলেও উপযুক্ত পারিশ্রমিক কোনদিন পাননি। তাই তাঁর সংসারে অভাব লেগেই ছিল। টাকা রোজগারের জন্য গীর্জার একবড় পাদ্রীর কাছে চাকরি নেন। সেই পাদ্রী তাঁর সঙ্গে চাকর-বাকরের মতই ব্যবহার করতেন। মোজার্ট ওই দুর্ব্যবহার নীরবে হজম করতেন চাকরি যাবার ভয়ে। কিন্তু তাও চাকরিটি রাখতে পারেননি। অভাবের তাড়নায় অসম্ভব পরিশ্রমে অল্প বয়সেই তাঁর শরীর ভেঙে যায়।
কিন্তু তাই বলে তাঁর সৃষ্টি থেমে থাকেনি। অসীম আত্মবিশ্বাসের ওপর ভর করে তিনি রচনা করে চলেন একচল্লিশটি অনুপম সিম্ফনি, যা তাঁকে কালজয়ী করে রেখেছে। মাত্র ছত্রিশ বছর বেঁচেছিলেন মোজার্ট।
অথচ এই অল্প সময়ের মধ্যেও তিনি যা করে গেছেন এখনও পর্যন্ত পৃথিবীর সঙ্গীতানুরাগীরা অত্যন্ত শ্রদ্ধার সাথে সেসব মনে রেখেছে। জীবদ্দশায় শুধুই সংগ্রাম, মৃত্যুর পর খ্যাতি জুটেছে অনেক প্রতিভাবানের। কিন্তু খ্যাতি জোটেনি বলে যদি প্রতিভার চর্চা ছেড়ে দিতেন তাহলে তাঁদের কথা কেউ মনে রাখত না। আবার খ্যাতি পেয়েছেন অথচ অর্থ পাননি। এই অবস্থায় মোজার্ট যদি সিম্ফনি রচনা ছেড়ে দিয়ে একটা নিরাপদ চাকরি নিয়ে বাইরে চলে যেতেন তাহলে কোনদিনই তাঁর কথা কেউ জানতে পারত না।
সাফল্য বস্তুটি যেন আলো-আঁধারিতে ঢাকা। সাধনায় বহু সাধকই সিদ্ধিলাভ করতে পারেন না। কিন্তু ছেড়ে দিলেই সব শেষ।
একবার যদি আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরে, অনেক চেষ্টা করলাম আমার আর কিছুই হবে না। কাজেই পড়াশোনা করে, এত কষ্ট করে আর কী হবে— তাহলে যেটুকু হওয়ার সম্ভাবনা ছিল সেটুকুও হবে না।
চেষ্টা শুধু চেষ্টা। ফলাফল ভাল হবে এই আত্মবিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে আপ্রাণ চেষ্টা।
আত্মবিশ্বাস না থাকলে এটা কখনই সম্ভব নয়।
এখানে কয়েকটি প্রশ্ন দেয়া আছে। প্রশ্নগুলোর উত্তর এককথায় হ্যাঁ অথবা না দিয়ে দিতে হবে। উক্ত প্রশ্নগুলো ঠিকমতো পড়ে যাও, তারপর উত্তর দাও। এতে করে তোমার মধ্যে আত্মবিশ্বাসের পরিমাণ কতটুকু সেটা পরিমাপ করা সম্ভব হবে।
শিক্ষাক্ষেত্রে তোমার কোন সফল বন্ধুর সঙ্গে দেখা হলে তুমি কী তার সামনে দাঁড়াতে সঙ্কোচবোধ করো।
হ্যাঁ/না
তুমি কী প্রায়ই ভাবো, গর্ব করার মত কোন কাজ এই পর্যন্ত তুমি করো নি।
হ্যাঁ/না
তুমি কী ভাবো, তোমার বাবা তোমার জন্য আরও ব্যয় করলে তুমি পড়াশোনায় আরও ভাল ফল করতে পারতে।
হ্যাঁ/না
তুমি কী ভাবো, তোমার ভাগ্য খারাপ তাই পড়াশোনায় প্রচুর পরিশ্রম করলেও কোন সুফল আসছে না।
হ্যাঁ/না
তুমি কি ভাবো, অন্যদের মত তোমার যথেষ্ট মেধা নেই তাই তোমার পক্ষে পড়াশোনায় উপযুক্ত সাফল্য লাভ সম্ভব হচ্ছে না।
হ্যাঁ/না
তুমি কী ভাবো, বাংলাদেশে না জন্মে ইওরোপ আমেরিকায় জন্মালে তুমি আরও অনেক ভাল ফলাফল অর্জন করতে পারতে।
হ্যাঁ/না
তুমি কী ভাবো, তুমি বর্তমানে যে স্কুল বা কলেজে পড়ছো- এর চেয়ে অন্য কোন স্কুল বা কলেজে পড়লে তোমার ফলাফল আরও ভাল হতো।
হ্যাঁ/না
তুমি কী ভাবো, যারা তোমার থেকে ভাল ফলাফলের অধিকারী হয়েছে তারা সবাই তাদের ভাগ্যে হয়েছে- এদের সঙ্গে কঠোর পরিশ্রম বা যোগ্যতার সম্পর্ক নেই।
হ্যাঁ/না
তুমি কী মাঝে মাঝেই ভাবো, আমাকে দিয়ে কিছু হবে না- পরীক্ষায় আমার কাছ থেকে ভাল ফলাফল আশা করা বৃথা।
হ্যাঁ/না
যদি ওপরের নয়টি প্রশ্নের মধ্যে অন্তত ছয়টির উত্তর যদি হাঁ হয়, তাহলে বুঝতে হবে তোমার ভেতর আত্মবিশ্বাসের অভাব রয়েছে। সুতরাং এখনই সতর্ক হবার সময়। কারণ এর পরে আর হয়তো সময় থাকবে না। সারাজী ব্যর্থতার গ্লানি বহন করে বেড়াতে হবে তোমাকে।
সুতরাং এখনই সময় তোমার ভেতরকার সুপ্ত আত্মবিশ্বাসকে জাগ্রত করবার।
তুমি কে বা তোমার চারপাশের পরিবেশ কি রকম এটার উপর নির্ভর না করে নিজের ভেতর আত্মবিশ্বাসের ভিতটাকে দৃঢ় করো। আর তাহলেই দেখবে সফলতা তোমার কাছে আসার জন্যে আকুলি-বিকুলি করছে।