নিম্নে ছাত্রদের জন্য নসিহতমূলক কিছু কথা; প্রথমত, নির্দেশনা ও তার বাস্তব প্রয়োগ কেন প্রয়োজন? ও দ্বিতীয়ত, আত্নবিশ্বাসী হওয়া প্রয়োজন কেন? আত্ন বিশ্বাস কিভাবে কাজ করে? এই দুটি বিষয়ে উপর ভিত্তি করে একটি বক্তব্য তুলে ধরা হলো-
(১) ছাত্রদের জন্য নসিহতঃ নির্দেশনা ও তার বাস্তব প্রয়োগ কেন প্রয়োজন?
সংস্কৃত সাহিত্যে একটা বাক্য আছে, ‘ছাত্ৰনং অধ্যয়নং তপঃ’। অর্থাৎ ছাত্র-ছাত্রীদের উপাসনার প্রকৃত বিষয় হচ্ছে পড়াশোনা করা।
এই হিসাবে আমরা বলতে পারি, যারা পড়াশোনা করে তারাই ছাত্র বা ছাত্রী এবং যারা পড়াশোনা করে না— তারা এই হিসাবের বাইরে।
সুতরাং ভাল ছাত্র বা ছাত্রী তাদেরকেই বলা হয়- যারা পড়াশোনায় ভাল। তবে শুধু পড়াশোনায় ভাল হলেই যে একজনকে ভাল ছাত্র বা ছাত্রী বলা যাবে সেটাও কিন্তু সবসময় ঠিক নয়।
শুধু পড়াশোনায় ভাল অথচ অন্যান্য বিভিন্ন বিষয়ে যেমন তার আচার-আচরণ, মানসিকতা ইত্যাদি মানবেতর পর্যায়ের- সেই ক্ষেত্রে তাকে কিছুতেই একজন ভাল ছাত্র বা ছাত্রীর সমপর্যায়ে ফেলা যায় না। সে একজন ভাল ছাত্র হতে পারে কিন্তু একজন প্রকৃত ভাল ছাত্র বা ছাত্রী হতে পারে না। সুতরাং একজন ভাল ছাত্র বা ছাত্রী হতে হলে তার মধ্যে পড়াশোনার পাশাপাশি এই গুণগুলোও থাকতে হবে।
অন্য কথায় আমরা ছাত্র বা ছাত্রীর সংজ্ঞা হিসেবে বলতে পারি নিজেকে উপযুক্ত করে গড়ে তোলার জন্যে শৈশব কাল থেকে যে সমস্ত জ্ঞানের মাধ্যমে একটি শিশু পর্যায়ক্রমে বেড়ে উঠে পূর্ণবয়স্ক দায়িত্ববান মানুষ হয়ে ওঠে সেগুলোকে বলা হয় শিক্ষা। আর যারা এইসব শিক্ষার জন্যে পারিবারিক পর্যায় থেকে শুরু করে প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে লেখাপড়া করে তাদেরকেই বলা হয় ছাত্র বা ছাত্রী।
একথা অনেকেই মানতে বাধ্য হবে যে, ঠিকমতো পড়ালেখা করলে একজন অতি সাধারণ মাত্রার ছাত্র বা ছাত্রী খুব ভাল রেজাল্ট করতে পারে।
কিন্তু তার মধ্যে যদি সত্যিকারের দিক নির্দেশনা না থাকে তাহলে তার এই পড়ালেখা করে কোন লাভ নেই। কারণ নিজেকে ভবিষ্যতে সমাজ ও সংসারের সামনে কীভাবে উপস্থাপন করবে- এই দিক নির্দেশনা যদি তার মধ্যে না থাকে- তাহলে প্রকৃত ছাত্র বা ছাত্রী হওয়ার কোন অধিকার তার নেই।
এই কারণে ভাল ছাত্র বা ছাত্রী হতে হলে উপযুক্ত পড়াশোনায় মনোনিবেশের পাশাপাশি সঠিক দিক নির্দেশনা থাকতে হবে।
একটি শিশু যখনই বাবা-মায়ের কোল আলো করে জন্ম নেয়- তখন থেকেই বাবা-মায়ের মনে সুপ্ত ইচ্ছার জন্ম হয়। তাঁরা আশা করেন, এই শিশু একদিন সঠিক শিক্ষার মাধ্যমে বড়ো হয়ে সত্যিকারের মানুষ হবে। সমাজ সংসারের উপকারে লাগে এমন কাজ করবে। প্রায় প্রতিটি সচেতন পরিবারের বাবা-মায়ের এই আশা বা প্রার্থনা নিশ্চয় অমুলক নয়।
তবে এজন্যে সবচেয়ে আগে যে বস্তুটি প্রধানভাবে কাম্য সেটি হচ্ছে ছেলে বা মেয়ের বুড়ো হবার পাশাপাশি তার উপযুক্ত শিক্ষার ব্যবস্থা করা। এই শিক্ষা যে শুধু স্কুল কলেজের শিক্ষা— তা কিন্তু নয়। স্কুল কলেজের শিক্ষা তো অবশ্য প্রয়োজন- তবে সেই সাথে সাথে তার আত্মিক পরিশুদ্ধি অর্থাৎ নিজের আত্মার উন্নয়নও দরকার। আর তাহলেই একজন ছেলে বা মেয়ে নিজেকে উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে পারবে।
অধিকাংশ ছাত্র বা ছাত্রীর মাঝেই পড়ালেখার প্রতি যথেষ্ঠ প্রবণতা থাকে। প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রীই চায় নিজেকে উপযুক্ত ভাবে গড়ে তুলতে। তবে এই ইচ্ছা থাকাটাই শেষ নয়।
সেই সাথে দরকার সঠিক লক্ষ্য নির্ধারণ করা। আবার সঠিক লক্ষ্য থাকলেই যে একটি ছেলে বা মেয়ে উপযুক্তভাবে নিজেকে গড়ে তুলতে পারবে তাও ঠিক নয়। এই লক্ষ্যকে সঠিকভাবে কাজে লাগানোর জন্যে দরকার উপযুক্ত দিক-নির্দেশনা।
সত্যিকারের দিক-নির্দেশনা থাকলেই যে কোন মানুষের সঠিক লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য সফল হতে পারে।
একজন মেধাবী ছাত্র বা ছাত্রীর জন্যেও তাই প্রয়োজন উপযুক্ত দিক নির্দেশনা। এই দিক নির্দেশনার সূত্রপাত ঘটে বাড়ি থেকে।
পরবর্তীতে এর মাধ্যমে প্রকৃত লক্ষ্য অর্জনের জন্যে তাকে আশ্রয় নিতে হয় উপযুক্ত শিক্ষাঙ্গনের।
শিক্ষাক্ষেত্রের আভিধানিক ভাষায় ভাল ছাত্র বা ছাত্রী তাদেরকেই বলা হয় যারা লেটার মার্ক নিয়ে কিংবা স্টার মার্ক নিয়ে পরীক্ষায় ভাল ফল লাভ করে। আর খারাপ ছাত্র বা ছাত্রী বলা তাদেরকে যারা পড়াশোনা করে না বা পড়াশোনায় মনযোগ নেই। এইসব ছাত্র-ছাত্রী পরিণতিতে পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয় বা ফেল করে।
তবে ভাল বা খারাপ ছাত্র-ছাত্রী যেই হোক না কেন প্রত্যেকেরই কিন্তু একটা লক্ষ্য থাকে। সেই লক্ষ্য হলো পরীক্ষায় ভাল ফল অর্জন করা।
শুধু অন্ধের মতো বই পড়লেই যে পরীক্ষায় ভাল ফল লাভ করা যায়- এই ধারণাও সঠিক নয়।
এমন অনেক ছাত্র বা ছাত্রীকে দেখা গেছে- যারা দিবারাত্র পড়ার বই নিয়ে বসে থাকে; অথচ পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়। এগুলোর কারণ অনুসন্ধান করে দেখা গেছে- তাদের আসলে বিশেষ কোন দিক নির্দেশনা থাকে না। এই কারণে তাদের পরীক্ষায় ফল হয় আশানুরূপ খারাপ।
বিখ্যাত দার্শনিক ও লেখক বার্টান্ড রাসেল বলেছেন, ‘সঠিক দিক নির্দেশনার মাধ্যমেই একটি মানুষ তার লক্ষ্যবস্তুতে পৌছাতে পারে।’
আমি মনে করি, এই বাক্যটি শুধু ছাত্র-ছাত্রীদের ক্ষেত্রেই নয়- জীবনের সকল ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
এমন অনেক ছাত্র বা ছাত্রীকে দেখা গেছে সারাজীবন ধরে তারা নির্দিষ্ট কোন কিছু হবার জন্যে পড়াশোনা শুরু করে। যেমন কেউ হতে চায় ডাক্তার, কেউ ইঞ্জিনিয়ার, কেউ বা কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক।
কিন্তু বাস্তবে এসে দেখা গেছে তাদের মধ্যে অনেকেই এই লক্ষ্য থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। অথচ এমনটি তো হবার কথা নয়।
আবার এমন অনেক ছাত্র-ছাত্রীকে দেখা গেছে- সারাজীবন যেসব বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করেছে- পেশার ক্ষেত্রে এসে তার পড়াশোনার বিষয়ের সাথে উল্লিখিত পেশার কোন যোগাযোগ নেই।
কেউ হয়তো ম্যানেজমেন্ট নিয়ে পড়াশোনা করেছে— কিন্তু বাস্তবে তাকে হয়তো কেরানীর চাকরি করতে হচ্ছে।
আবার কেউ হয়তো একাউন্টিং নিয়ে পড়েছে অথচ তাকে হতে হয়েছে প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক।
আবার অনেক ছাত্র-ছাত্রী সারাজীবন সায়েন্স বা বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পড়াশোনার পরেও যুক্ত হয়ে পড়ে মানবিক বিভিন্ন পেশায়।
এই ধরনের উদাহরণ অনেক দেয়া যায়।
কিন্তু আদতে এইসব ছাত্র বা ছাত্রী কিন্তু একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়েই পড়াশোনা চালিয়ে এসেছিল। তাহলে কেন এমন হয়?
এর উত্তর একটাই।
শিক্ষাক্ষেত্রে যদি এইসব ছাত্র-ছাত্রী সঠিক দিকনির্দেশনার মাধ্যমে পরিবেশ বা পরিস্থিতি অনুযায়ী নিজেদের শিক্ষাক্রম ঠিক করে নিত- তাহলে হয়তো এমনটা ঘটতো না। অন্তত ঘটার সম্ভাবনা থাকতো খুবই কম।
সুতরাং প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রীর জীবনে সঠিক দিক নির্দেশনার বাস্তব প্রয়োগ প্রয়োজন।
(২) ছাত্রদের জন্য নসিহতঃ আত্নবিশ্বাসী হওয়া প্রয়োজন কেন? আত্ন বিশ্বাস কিভাবে কাজ করে?
সৃষ্টিকর্তা প্রায় সব মানুষকেই একইরকম আবেগ, অনুভূতি এবং জ্ঞান দিয়ে পৃথিবীতে পাঠান। কিন্তু তবুও সবাই ভাল ছাত্র বা ছাত্রী হতে পারে না।
এর কারণ অনুসন্ধান করতে গেলে দেখা গেছে প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই উক্ত খারাপ ছাত্র বা ছাত্রীর মধ্যে যে জিনিসটার প্রচন্ড অভাব- সেটা হচ্ছে আত্মবিশ্বাস।
অনেক ছাত্র বা ছাত্রী মনে করে- গোড়াতেই আমি একজন খারাপ ছাত্র; সুতরাং আমার দ্বারা এর চাইতে বেশি ভাল ফল আশা করা ঠিক নয়।
কিন্তু আসলেই কি তাই!
আসলে তা নয়। সুষ্ঠুভাবে চিন্তা করতে গেলে দেখা যায় কথাটা অপাঙ্গে মিথ্যা। এটা হলো আত্মবিশ্বাসের অভাব।
একজন অতি খারাপ ছাত্রও নিজের আত্মবিশ্বাসের দরুন ভাল ছাত্র হতে পারে অনায়াসে।
বিশ্বের বিভিন্ন প্রাতঃস্মরণীয় ব্যক্তিদের জীবনী ঘেঁটে দেখলে দেখা যাবে— শৈশবে বা বয়সকালেও তারা খুব একটা ভাল ছাত্র ছিলেন না। কিন্তু পরবর্তীতে নিজের আত্মবিশ্বাস আর সঠিক দিকনির্দেশনার মাধ্যমে তারা নিজের সহ সমাজ ও সংসারের প্রভূত উন্নতি সাধন করতে পেরেছেন।
এই প্রসঙ্গে জনৈক ইংরেজ কবি বায়রণ বলেছেন,
If you think, you are beaten you are
If you think, you dare not, you don’t.
If you like to win, but think you can’t,
Its almost a cinch you won’t
If you think you’ll lose, you’re lost,
For out in the world we find….
Success begins with a fellow’s will;
Its all in a state of mind.
life’s battles don’t always go
to the stronger or faster man;
But sooner or later
the man who wins
Is the one who thinks he can.
‘যদি মনে কর পরাজিত তুমি
তাহলেই তুমি পরাজিত
যদি মনে কর তোমার সাহসে কুলাবে না
তাহলেই তুমি প্রতিহত।
জিততে চাও, অথচ ভাবছ পারছো না
তাহলে কিছুতেই পারবে না তুমি।
যদি ভাবো তুমি হেরে যাবে
তাহলে হারকেই নিতে হবে চুমি।
পৃথিবীতে এটি দেখা যায়
সফল সেই-ই হয়, যে প্রাণ মনে চায়
জীবন যুদ্ধে সর্বদা জেতেনাক সেই
যে তোমার চেয়ে বলশালী, দ্রুতগামী।
সেই-ই জেতে যে বলে ভয় করি নাকো- পারব আমি।
আত্মবিশ্বাসের অভাবে আমরা যেটা মন থেকে করতে চাইনা, সেটাই করে ফেলি।
এই প্রসঙ্গে ড. ওয়েনি ডব্লু ডায়ারের বিখ্যাত বই ‘ইওর এরোনিয়স জোন’ থেকে কয়েকটি উদাহরণ তুলে ধরা যাক।
স্কুলে বা কলেজের শিক্ষক একটা বিষয়ে ভুল উদ্ধৃতি দিলেন। বিষয়টা হয়তো ক্লাসের অনেকেরই জানা আছে। অনেকেই জানে এটা ভুল। অথচ কেউ এই বিষয়ের প্রতিবাদ করল না। যদি আত্মবিশ্বাস থাকত তাহলে কোনও না কোনভাবে এর প্রতিবাদ করা হতো।
তোমার প্রাইভেট টিউটর খুব রাগী। অথচ তিনি যে নিয়মে একটি অঙ্ক তোমাকে করাচ্ছেন— সেটা সম্পূর্ণ অগোছালো বা ভুল। অথচ তুমি তার প্রতিবাদ করতে পারছ না। অন্ধের মতো অঙ্কটি কষে যাচ্ছ, বা বুঝতে চেষ্টা করছ। হয়তো ভাবছ, প্রতিবাদ করলে টিউটর যদি কিছু মনে করে।
পরীক্ষার খাতায় অবজেকটিভ টাইপ কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে হচ্ছে তোমাকে। তোমার জানা আছে সঠিক উত্তরটি। অথচ তোমার আত্মবিশ্বাসের অভাব থাকলে- সেই সঠিক উত্তরটিই কয়েকবার ভেবে দিতে হবে তোমাকে। এতে করে একদিকে যেমন তোমার সময় নষ্ট হবে, অপরদিকে ভুল উত্তরটিও বেছে নিতে পার তুমি।
কোন কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা ছাত্র- ছাত্রীদের মধ্যে অনেকেই মনে করে ভর্তি হবার সুযোগ হয়তো পাব না। বৃথাই পরীক্ষা দিচ্ছি। দেখা গেছে এইসব ছাত্র-ছাত্রী আসলেই সুযোগ পায় না। কিন্তু যদি তার সঠিক আত্মবিশ্বাস থাকত তাহলে নিশ্চয় ফলটা অন্যরকম হতে পারত।
তুমি ভাবছ এই কাজটা ঠিক, এটা ন্যায্য কিন্তু মুখে সেটা বলতে পারছ না; কারণ সত্যি কথা বললে তুমি যাকে ভয় করো, সে রাগ করবে। তোমার যদি আত্মবিশ্বাস থাকত তাহলে ভাবতে যে রাগ করে করুক। আমি যেটা ভাল বুঝেছি সেটা করবই। আমার নিজের সিদ্ধান্ত আমি নিজে নেবো।
যাকে পছন্দ করি না, আড়ালে তার সমালোচনা করি সামনে তাকে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে তেল মাখাই। আত্মবিশ্বাস থাকলে যাকে পছন্দ করি না তাকে পাত্তা দিতাম না। সামনে মিষ্টভাষী পিছনে ছোরাকাটারি ব্যক্তিরা খাঁটি লোক নয়। এমন বন্ধুরা বিষ মেশানো অমৃতের হাড়ির মত। এদের বর্জন করো।
কারও প্রতি মেজাজ দেখানো, কাউকে স্নব বলে গালাগাল দেওয়া। এর অর্থ হল অন্যের একটু মনোযোগ আকর্ষণ করা। অন্যের মনোযোগ আকর্ষণ করতে মানুষ তখনই চেষ্টা করে যখন তার আত্মবিশ্বাস কম থাকে।
এমন কাউকে চোখে পড়ে কী— তুমি যা বলছো তাতেই সে হাঁ, হাঁ করছে।
বিশেষ করে তুমি যদি তার চাইতে কিছুটা বেশি ক্ষমতাশালী কেউ হও, তাহলে তুমি যাই বলবে- এরা খুব খাঁটি কথা বলে ঘাড় নাড়বে। আত্মবিশ্বাসী মানুষ যখনই নিশ্চিত হন যে তিনি সঠিক এবং ন্যায় অধিকারের ওপর দাঁড়িয়ে তখন তিনি প্রয়োজনে প্রতিবাদ জানাতে ভয় পান না। ভালমন্দ নির্বিশেষে তিনি ঘাড় নাড়েন না।
উপরে উল্লিখিত বিষয়গুলো ঘটে শুধু সঠিক আত্মবিশ্বাসের অভাবে।
আত্মবিশ্বাসী মানুষ যে জেদী, গোঁয়ার মানুষ হবে তা নয়।
সে যে স্বেচ্ছাচারী হবে তারও কোন মানে নেই। বরং স্বেচ্ছাচার আত্মবিশ্বাসের অভাব থেকেই জন্ম নিতে পারে।
একটা গাড়ির ব্রেক কাজ না করলে গাড়িটা যেদিকে খুশী চলে এবং যতক্ষণ না সে কোন পাথর বা গাছের সঙ্গে ধাক্কা মারছে ততক্ষণ থামে না।
আত্মবিশ্বাসী মানুষ যেখানে মনে করবেন এই সিদ্ধান্ত আমার একেবারে ব্যক্তিগত এবং এই ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নেবার মত আমার বিচারবুদ্ধি সুপরিণত তাহলে সেক্ষেত্রে তিনি কারও মতামতের তোয়াক্কা না করে নিজেই সিদ্ধান্ত নেবেন।
যদিও তিনি ভাল করেই জানেন, সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষেত্রে তার যে কোন পরিণতির দায়দায়িত্ব তাঁকেই নিতে হবে। যদি ভুল হয় তার জন্য তিনি কাউকে দায়ী করবেন না।
যদি তাঁর মনে হয়, সিদ্ধান্তটি বিতর্কমুলক। পরিণাম ভালও হতে পারে, খারাপও হতে পারে। খারাপ হলে এর ফলভোগ করতে হবে তার নিজেকে সহ গোটা পরিবারকে অথবা সমাজকে কিংবা দেশকে। তাহলে তিনি গণতান্ত্রিক পদ্ধতির দ্বারা চালিত হবেন অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা করবেন। এবং অধিকাংশের মতামত গ্রহণ করবেন।
শুধু শিক্ষাক্ষেত্রেই নয়, বাস্তব ক্ষেত্রেও অনেক ধরনের পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে যেটি শুধু তোমাকে নিয়ে নয়- সিদ্ধান্তটির ওপর গোটা পরিবারের ভাল মন্দ নির্ভর করছে- সেখানে শুধু আত্মবিশ্বাস দেখিয়ে নিজের সিদ্ধান্ত জোর করে অন্যের ওপর চাপিয়ে দেওয়া ঠিক নয়।
এই ক্ষেত্রে উপযুক্ত বাবা-মায়ের উচিত ছেলেমেয়েদের ব্যক্তিগত পছন্দ অপছন্দের ব্যাপারে নিজেদের সিদ্ধান্ত তাদের ওপর না চাপিয়ে দেওয়া। বিশেষ করে কে কী পড়তে চায়, কী ধরনের পরিবেশে পড়তে চায়। কী ধরণের খাবার খেতে চায় এ সম্পর্কে তাদের উপর নিজেদের মতামত চাপিয়ে দেওয়া উচিত নয়। এতে ছেলেমেয়েদের আত্মবিশ্বাসের হানি ঘটে।
এসব ক্ষেত্রে তাঁরা তাঁদের মতামত দিতে পারেন মাত্র। সে মতামত গ্রহণ না করলে যেন তাঁরা মনঃক্ষুণ্ন না হন। কারণ ভুল করতে করতে অনেকে সঠিক জায়গায় গিয়ে পৌঁছতে পারে। অথবা আমরা কেউই ভুল করিনা। আমাদের অনেক চিন্তাভাবনা পরে বিভিন্ন পরিস্থিতির কারণে ভুল প্রমাণিত হয় মাত্র।
অনেক বুদ্ধিমান ব্যক্তিরও বহু সিদ্ধান্ত পরে ভুল প্রমাণিত হয়েছে।
বৈজ্ঞানিকদের গবেষণাগারের বহু পরীক্ষা ভুল হয়েছে।
মানুষ হল পরিবর্তনশীল প্রাণী। মানুষের মন আছে বুদ্ধি আছে যা অন্য প্রাণীর নেই। কে না জানে যে মনের কোন স্থিরতা নেই।
মানুষের মন ঘন ঘন বদলায়। নিজের ভাল পাগলেও বোঝে।
কিন্তু তাই কী?
আমার তো মনে হয় নিজের ভাল অধিকাংশ মানুষই বোঝে না।
তারা মনে করে সংকীর্ণ চিত্ত হওয়াই ভাল, বন্ধুকে বা প্রতিবেশীকে ঈর্ষা করাই ভাল। এতে মনের আরাম হয়।
কিন্তু তাই কী?
তুমি সংকীর্ণ চিত্ত হলে, স্বার্থপর হলে বা লোকের উপকার না করলে তোমার বিপদেও কেউ পাশে এসে দাঁড়াবে না।
তুমি যদি সাম্প্রদায়িক মনমানসিকতা সম্পন্ন হয় আর আশা করো অন্য সম্প্রদায়ের লোক অসম্প্রদায়িক হবে তা কী করে হয়? তুমি ঢিল মারবে আর আশা করবে প্রতিপক্ষ তোমাকে পাটকেল না ছুঁড়ে ফুল ছুঁড়বে, সেটা কী সম্ভব?
হ্যাঁ, তুমি লোকের উপকার করলে উপকারীদের ৯৯ জনই হয়তো তোমাকে স্মরণে রাখবে না। কিন্তু একজন নিশ্চয়ই মনে রাখবে। এটা প্রকৃতির নিয়ম।
তবে অন্যের ভাল করলে তোমার আত্মবিশ্বাসই বাড়বে। সুতরাং অপরের দ্বারা পরিচালিত না হয়ে নিজের সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিজেই নিতে শেখো।
এখন থেকেই শুরু করে দাও এই প্রক্রিয়া। হয়তো এতে করেই তোমার ভেতরকার ভাল দিকগুলো ফুটে উঠতে পারে। যেটা আমার সহ সমস্ত দেশবাসীর কাম্য। মনে রাখবে, তোমাদের ওপরই নির্ভর করছে আমাদের তথা দেশের আগামী দিনের ভবিষ্যৎ।