আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
প্রিয় পাঠক বন্ধু, আপনাদেরকে সবাইকে স্বাগতম।
আজকে আমরা আলোচনা করব- বাংলাদেশের যত ধরনের ভূমি অফিস আছে, এই ভূমি অফিসগুলো সাথে আপনাদেরকে পরিচয় করিয়ে দিব, আশা করি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ধৈর্যের পড়বেন, আশা করি উপকৃত হবেন।
নিম্নে জমির কাজে কোন ভূমি অফিসে যাবেন? বাংলাদেশের ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা ও বিভাগ কেন্দ্রিক সকল প্রকার ভূমি অফিসের পরিচয় সংক্ষিপ্তাকারে তুলে ধারা হলো-
(১) ইউনিয়ন পর্যায়ে ভূমি অফিস
ইউনিয়ন ভূমি অফিস বা তহসিল অফিস: বাংলাদেশের যত ধরনের ভূমি অফিস আছে তার মধ্যে থেকে সবচেয়ে নিচের ভূমি অফিস হচ্ছে- ইউনিয়ন ভূমি অফিস। এই অফিসে ভূমির খাজনা আদায় করা হয়। খাজনা বলতে 1976 সালের পর থেকে সংগ্রহ করা ভূমি উন্নয়ন করকে বুঝানো হয়।
এই অফিসের প্রধান কে প্রচলিত ভাষায় ‘তহসিলদার’ বলা হয়, আর অফিসকে ‘তহসিল অফিস’ বলে হয়ে থাকে।
আর আইনের ভাষায় বা কাগজে-কলমে এই অফিসের প্রধানকে ‘ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (ভূসক)’ বলা হয়ে থাকে।
বাংলাদেশের প্রতিটি ইউনিয়নে এই ইউনিয়ন ভূমি অফিস থাকে আর পৌরসভার অন্তরাভুক্ত একাল এই অফিসকে ‘পৌর ভূমি অফিস’ বলে এবং ঢাকা শহরে এই অফিসকে ‘সার্কেল রাজস্ব অফিস’ হিসেবে বলা হয়ে থাকে।
প্রতিবাংলা বছরে একবার জমির প্রতি শতাংশ হিসেবে খাজনা দিতে হয় এবং প্রদানকৃত খাজানার একটি রশিদ দেওয়া হয়, যেই রশিদটাকে প্রচিত ভাষায় ‘খাজানার রশিদ’ বা ‘দাখিলা’ বলে হয়ে থাকে।
এই হলো ইউনিয়ন ভূমি অফিস বা তহসিল অফিস পরিচয় যা আপনারে নিকট সংক্ষিপ্তভঅবে তুলে ধরা হলো।
(২) উপজেলা পর্যায়ের ভূমি অফিস
প্রিয় পাঠক, তারপর আসেন উপজেলা পর্যায়ে আমাদের ভূমি অফিসগুলো নিয়ে আমরা একটু আলোচনা করব।
উপজেলা পর্যায়ে তিনটি ভূমি অফিস পাওয়া যায়-
এক নম্বর. উপজেলা ভূমি অফিস
দুই নম্বর. উপজেলা সাব রেজিস্ট্রি অফিস
তিন নম্বর. উপজেলা সেটেলমেন্ট অফিস
উপজেলা ভূমি অফিস: ভূমির যাবতীয় খাজনা নির্ধারণ, খতিয়ান সংশোধন, সম্পত্তির নামজারি, সরকারি সম্পত্তির যাবতীয় দেখাশোনা এ উপজেলা ভূমি অফিস করে থাকে। পজেলা ভূমি অফিসের প্রধান কে ‘সরকারি কমিশনার ভূমি’ বা ‘এসি ল্যান্ড’ বলা হয়ে থাকে।
সম্পত্তির নামজারী করার জন্য এই অফিসে সরাসরি বা অনলাইন আবেদন করতে হয় এবং এসি ল্যান্ডের এর পাশাপাশি এই অফিসের মধ্যে আরো কিছু পদবী রয়েছে, যেমন- কানুনগো, নাজির, চেইনম্যান, সার্ভেয়ার সহ আরও কিছু পদ আছে যারা এসি ল্যান্ডের অধিনে কাজ করে থাকে।
প্রিয় পাঠক, এখন আপনাদের সাথে আলোচনা করব উপজেলা সাব রেজিস্ট্রি অফিস নিয়ে।
উপজেলা সাব রেজিস্ট্রি অফিস: একজন সাব রেজিস্টার এই অফিসে প্রধান দায়িত্ব পালন করেন, জমির দলিল রেজিস্ট্রেশনের কাজে এই অফিসের যাবতীয় সরকারি ফি প্রদানের মাধ্যমে দলিল রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। দলিল বিষয়ক যাবতীয় কিছু এই অফিসে পাওয়া যায়, জমির দলিল আসল না ভুয়া এ অফিসে তল্লাশি দিয়ে এবং সরকারি বালাম হতে যাচাই-বাছাই করে এবং নির্ধারিত ফি দিয়ে সেখান থেকে তথ্য নেওয়া যায়। পুিরাতন দলিলের নকল তুলতেও এই উপজেলা সাব রেজিস্ট্রি অফিসে যেতে হয়।
এখন আসেন উপজেলা কেন্দ্রিক আরেকটি ভূমি অফিস সম্পর্কে জানি সেটা হচ্ছে সেটেলমেন্ট অফিস।
উপজেলা সেটেলমেন্ট অফিস: এখানে জমির জরিপকালীন যাবতীয় পর্চা এবং নকশার কাজ করা হয়। ভূমি জরিপকালীন কাকে যে কোন সমস্যা বা বিরোধ দেখা দিলে এই অফিস যেতে হয়। এখানে একজন অফিসের থাকে যিনি এই অফিসের যাবতীয় কাজের জন্য দায়িত্বরত থাকেন তাকে স্যাটেলমেন্ট অফিসার বলা হয়ে থাকেভ দায়িত্ব ওরাও তো আছেন তাকে ‘সেটেলমেন্ট অফিসার’ বলে থাকে। সেটেলমেন্ট অফিসার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন, যদি খতিয়ানের বিষয়ে কোনো ভুল ভ্রান্ত হয়ে থাকে বা কোন সমস্যা হয়ে থাকে।
(৩) জেলা পর্যায়ের ভূমি অফিস
প্রিয় পাঠক, উপরে আমরা তিনটি উপজেলা পর্যায়ের ভূমি অফিসের বিষয়ে আপনাদের সামনে আলোচনা করছি। তো এখন আপনাদের সামনে আলোচনা করব জেলা পর্যায়ে তিনটি ভূমি অফিসের কার্যক্রম নিয়ে।
ভূমি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে কাজ করে জেলা পর্যায়ে এমন তিনটি অফিস পাওয়া যায়-
এক নম্বর. জেলা প্রশাসকের কার্যালয় বা ডিসি অফিস
দুই নম্বর. জেলা রেজিস্ট্রি অফিস
তিন নম্বর. জেলা জজ আদালত
প্রিয় পাঠক এখন আপনাদের সামনে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় নিয়ে একটু তথ্য দিবো।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয় বা ডিসি অফিস: বাংলাদেশের জমি-জমার যাবতীয় কাজ জেলা ভিত্তিক, তাই আপনার ঠিকানা যেই জেলায় অবস্থিত তার প্রাথমিক যাবতীয় কিছুই সেই জেলায় হয়ে থাকে। জেলা প্রশাসকের রেকর্ড রুম থেকে জমির যাতীয় খতিয়ান বা পর্চার নকল, জমির নকশার নকল বা সার্টিফিকেট কপি পাওয়া যায়। জমি অধিগ্রহণের যাবতীয় বিষয় এবং ক্ষতিপূরণের চেক প্রধান এখান থেকেই করা হয়ে থাকে।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সম্পর্কে একটু আলোচনা করছি, তো এখন আপনাদের সামনে আলোচনা করব এডিসি রেভিনিউ অফিস সম্পর্কে।
এডিসি রেভিনিউ অফিস হলো জেলা প্রশাসকের কার্যালযয়ের একটি অফিস। ডিসি অফিসের মধ্যেই এডিসি রেভিনিউ অফিস। এই অফিসে সহকারী কমিশনার ভূমি এর যে কোন আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করা যায়, জমির নকশা ভুল হলে এই অফিসের মাধ্যমেই ভূমি রেকর্ড এবং অধিদপ্তরের আবেদন করতে হয়।
প্রিয় পাঠক, এখন আলোচনা করব জেলা রেজিস্ট্রি অফিস সম্পর্কে।
জেলা রেজিস্ট্রি অফিস: জমির দলিল রেজিস্ট্রেশন আমরাও উপজেলা সাব রেজিস্ট্রি অফিসে করি কিন্তু যদি সাব রেজিস্টার দলিলের রেজিস্ট্রেশনে অস্বীকার করে তাহলে জেলা রেজিস্ট্রি অফিস থেকে আবেদন করতে হয়। অনেক পুরাতন দলিলেল নকল যেগুলো উপজেলা সাব রেজিস্ট্রি অফিস পাওয়া যায়ে না, সেগুলো পুরাতন দলিলের বালাম নকল তল্লাশী ও উত্তলেন জেলা রেজিস্ট্রি অফিসের থেকে করতে হয়। দলিল লেখকগণের লাইসেন্সও এই জেলা রেজিস্ট্রি অফিস থেকে দিয়ে থাকে।
এ হচ্ছে জেলা রেজিস্ট্রি অফিসের কিছু কার্যক্রম। .
এবার আপনাদের সামনে আলোচনা করব জেলা আদালত সম্পর্কে।
জেলা জজ আদালত: প্রতিটি জেলাতেই দেওয়ানী ও ফৌজদারী আদালদ আছে। জমি-জমার কাজে সাধারণত ৫ প্রকারের আদালত আছে জেলায়।
এক নম্বর. জেলা জজ আদালত
দুই নম্বর. অতিরিক্ত জেলা জজ আদালত
তিন নম্বর. যুগ্ন জেলা আদালত
চার নম্বর. সিনিয়র সহকারী জজ আদালত এবং
পাঁচ নম্বর. সহকারী জজ আন্দোলন
তবে, আইনী প্রতিকার পেতে জমির মূল্য বা বিষয়ে উপর ভিত্তি করে প্রথম তিন শ্রেণীর বিচারকের আদালতের মোকাদ্দামা করতে হয়। প্রথমে যে আদালতে মুকাদ্দামা করা হয় তাকে আদি এখতিয়ার সম্পন্ন বা মূল আদালত বলা হয়, এই আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে উপরের আদালতে যেতে হয়।
প্রথম তিন শ্রেণীর বিচারকের রায়ের বিরুদ্ধে মূল্য অনুপাতে জেলা জজ বা হাইকোর্ট বিভাগে যেতে হয়। হাইকোর্ট বিভাগের আদেশের বিরুদ্ধে চেম্বার জজ আদালতে লিভ টু আপিল দায়ের করতে হয়। এবং এই লিভ টু আপিল গৃহিত হলে আপিল বিভাগে যাওয়া যায়।
বাংলাদেশের দেওয়ানী বিষয়ে আপিল বিভাগের রায় বা আদেশ চূড়ান্ত আর কোন যাওয়ার কোন জায়গা নাই আইনগতভাবে, শুধু একবার রিভিউ করা যায় আপিল বিভাগের আইনগতভাবে।
এই হচ্ছে আপনাদের জন্য আমি একটু পাঁচটি আদালত সম্পর্কে একটু আলোচনা করছি।
এখন আসেন বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় সম্পর্কে জানি।
(৪) বিভাগীয় বা দেশব্যাপী পর্যায়ের ভূমি অফিস
বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়: বাংলাদেশেল ৬৪টি জেলার, জেলা প্রশাসকের বা ডিসির যেকোনো আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বা অভিযোগ দায়ের করা যায় বিভাগীয় কমিশনারের কাছে। জমির নামজারী বা খারিজের কাজে এডিসি রেভিনিউ এর কোনও আদেশের বিরুদ্ধে দুই মাসের মধ্যে এই কার্যালয়ে আবেদন করতে হয়।
এ গেল বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় সংক্ষিপ্ত পরিচয়, এখন আপনাদের সামনে আলোচনা করব জোনাল সেটেলমেন্ট অফিস সম্পর্কে।
জোনাল সেটেলমেন্ট অফিস: বাংলাদেশের প্রতিটি উপজেলা সেটেলমেন্ট অফিস থাকলেও প্রতিটি জেলায় কিন্তু জেলা সেটেলমেন্ট অফিস নাই, তাই কয়েকটি জেলা মিলে একটি জোনাল সেটেলমেন্ট অফিস করা হয়েছে। জরিপ কাজের সেটেলমেন্ট অফিসারের আদেশের বিরুদ্ধে বা জরিপকালীন যেকোন বিরুদ্ধে এই অফিসে আবেদন করতে হয়।
প্রিয় পাঠক, এখন আমি আপনাদের সাথে আলোচননা করি ভূমি রাজস্ব বোর্ড সম্পর্কে।
ভূমি আপিল বোর্ড: ভূমি সংক্রান্ত রাজস্ব সম্পর্কীয় মামলা, নামজারি বা খারিজ বিষয়ক মামলা, ছাইরত ও জলমহল সংক্রান্ত মামলা, ভূমি উন্নয়ন কর সার্টিফিকেট মামলা, এছাড়াও নিচের ভূমি অপিসগুলোর কার্যক্রম পরিদর্শন, অণুবীক্ষণ, মূল্যায়ন সহ নানান কাজে এই বোর্ড কাজ করে। ভূমি সংক্রান্ত আইন ও আদেশ সম্পর্কে সরকার কর্তৃক প্রেরিত বিষয়য়াদিতে পরামর্শ দেওয়া হয়। জমির নামজারির কাজে বিভাগীয় কমিশনারের আদেশের বিরুদ্ধে তিন মাসের মধ্যে ভূমি আপিল বোর্ডে আবেদন করতে হয়।
তো প্রিয় পাঠক, আমি আপনাদের সামনে ভূমি আপিল বোর্ডের একটু পরিচয় তুলে ধরছি এখন আপনাদের সামনে আলোচনা করব ভূমির রেকর্ড এবং অধিদপ্তর সম্পর্কে।
ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর: ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর মানুষের ভূমির মালিকানা সত্ব মোতাবেক পর্চা বা খতিয়ান ও নকশা প্রণয়ন করে। ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর জনগণের প্রতি খন্ড ভূমিকে ভিন্ন ভিন্ন প্লট বা দাগে বিভক্ত করে মৌজা নকশা তৈরি করে এবং প্রত্যেক প্লেটে দাগ নম্বর বসিয়ে নকশা ও পর্চা বা খতিয়ানের সমন্বয়ের জনগণের ভূমিস্বত্বকে চিহ্নিত করে। বাংলাদেশের সকল ম্যাপ এই অফিসে পাওয়া যায়।
এই হচ্ছে ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর সম্পর্কে একটু ধারণা, এখন আপনাদের সামনে আলোচনা করব এই ভূমি মন্ত্রণালয় সম্পর্কে।
ভূমি মন্ত্রণালয়: ভূমি সক্রান্ত কাজের যাবতীয় কিছু এই মন্ত্রণালয় পরিচালনা করে। তহসিল অফিস, ভূমি অফিস, ভূমি আপিল বোর্ড, ভূমি সংস্কার বোর্ডসহ সবকিছুই এই মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণে থাকে।
প্রিয় পাঠক বন্ধু, বাংলাদেশের সকল ধরনের ভূমি অফিস নিয়ে কিছু কথা, কিছু পরিচয়, আপনাদের আলোচনা করলাম। তো আশা করি বিষয়গুলো বুঝতে পারছেন। যদি আলেচনাটি আপনাদের ভালো লেগে থাকে অবশ্যই স্যোসাল মিডেয়াতে একটি শেয়ার করবেন। করে ভাল থাকবেন সুস্থ থাকবেন আবার দেখা হবে নতুন কোন আলোচনায়, ইংশাল্লাহ।