Skip to content

 

আখিরাতের স্তর কয়টি? বলতে কী বুঝায়? স্তর সমূহের বর্ণনা

আখিরাতের স্তর কয়টি বলতে কি বুঝায় স্তর সমূহের বর্ণনা

(১) আখিরাতের স্তর কয়টি?

আখিরাতের স্তর নয়টি। অর্থাৎ, আমরা কুরআন ও হাদীস থেকে যে বর্ণনা পাই তা থেকে, আখিরাতের জীবনের মোটামুটি ৯টি স্তর খুঁজে পাওয়া যায়। তা হলো: ১. মৃত্যু, ২. কবর, ৩. কিয়ামত, ৪. হাশর, ৫. মিজান, ৬. পুলসিরাত, ৭. শাফায়াত, ৮. জান্নাত ও ৯. জাহান্নাম।

(২) আখিরাত বলতে বলতে কী বুঝায়?

আখিরাত হলো পরকাল। মৃত্যু পরবর্তী জীবনকে আখিরাত বলে। এ জীবন চিরস্থায়ী ও অনন্ত। এ জীবনের কোনো শেষ নেই। আখিরাত বা পরকালের বেশ কয়েকটি স্তর বা পর্যায় রয়েছে।

(৩) আখিরাতে স্তর সমূহের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি/বর্ণনা

ক) আখিরাতের এক নং স্তর: “মৃত্যু”

আখিরাত বা পরকালীন জীবনের শুরু হয় মৃত্যুর মাধ্যমে। সুতরাং মৃত্যু হলো পরকালের প্রবেশদ্বার।

আল্লাহ তায়ালা সকল প্রাণীর মৃত্যু নির্ধারণ করে রেখেছেন। তিনি বলেন,

“প্রত্যেক প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে।”

(সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১৮৫)

দুনিয়ার কোনো প্রাণীই মৃত্যুর হাত থেকে রেহাই পাবে না। ছোট-বড়, ধনী-দরিদ্র, সুস্থ-অসুস্থ, শাসক-শাসিত কেউই মৃত্যুকে এড়াতে পারবে না।

যত বড় ক্ষমতাধারীই হোক আর যত সুরক্ষিত স্থানে বসবাস করুক সবার নির্দিষ্ট সময়ে মৃত্যু হবেই। এ ছাড়াও অন্যান্য প্রাণীরও মৃত্যু অনিবার্য।

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“তোমরা যেখানেই থাক না কেন মৃত্যু তোমাদের নাগাল পাবেই, এমনকি সুউচ্চ সুদৃঢ় দুর্গে অবস্থান করলেও।”

(সূরা আন-নিসা, আয়াত ৭৮)

মৃত্যুর সাথে সাথে আখিরাতের জীবন শুরু হয়। পুণ্যবান মানুষের মৃত্যু হয় আল্লাহ তায়ালার রহমতের সাথে। আর পাপীদের মৃত্যু খুব কষ্টকর হয়।

খ) আখিরাতের দুই নং স্তর: “কবর”

মৃত্যুর পর থেকে পুনরুত্থান পর্যন্ত সময়কে কবরের জীবন বলা হয়। এর অপর নাম বারযাখ।

এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“আর তাদের সামনে বারযাখ থাকবে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত।”

(সূরা আল-মুমিনুন, আয়াত ১০০)

দুনিয়াতে মানুষকে মৃত্যুর পর কবরস্থ করা হয়। এসময় মুনকার-নাকির নামক দুজন ফেরেশতা কবরে আসেন। তাঁরা মৃত ব্যক্তিকে তিনটি প্রশ্ন করেন। এগুলো হলো-

তোমার রব কে?

তোমার দীন কী?

তোমার নবি কে? অথবা, রাসুল (সাঃ) এর প্রতি ইঙ্গিত করে বলা হবে এই ব্যক্তি কে?

যাদের কবর দেওয়া হয় না তাদেরও এ প্রশ্ন করা হবে।

দুনিয়াতে যারা ইসলাম অনুসারে জীবন পরিচালনা করবে তারা এ প্রশ্নগুলোর সঠিক উত্তর দিতে পারবে। তাদের জন্য কবরের জীবন হবে শান্তিময়।

আর যারা ইসলাম অনুসরণ করবে না তারা এসব প্রশ্নের জবাব দিতে পারবে না। তারা বলবে ‘আফসোস। আমি জানি না।’ কবরের জীবনে তারা কঠোর শাস্তি ভোগ করবে।

গ) আখিরাতের তিন নং স্তর: “কিয়ামত”

আকাইদ শাস্ত্রে কিয়ামত বলতে দুটি অবস্থাকে বোঝানো হয়।

প্রথমত: কিয়ামত অর্থ মহাপ্রলয়। আল্লাহ তায়ালা এ গোটা বিশ্ব মানুষের জন্য সৃষ্টি করেছেন। আর মানুষকে তাঁর ইবাদত করার জন্য সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু এমন একদিন আসবে যখন গোটা বিশ্বে মহান আল্লাহর ইবাদত করার মতো কেউ থাকবে না। এমনকি আল্লাহ নাম নেওয়ার মতোও কাউকে পাওয়া যাবে না। সকল মানুষ গোমরাহি ও নাফরমানিতে লিপ্ত হয়ে পড়বে। সেসময় আল্লাহ তায়ালা এ পৃথিবী ধ্বংস করে দেবেন। তাঁর নির্দেশে হযরত ইসরাফিল (আঃ) শিঙ্গায় ফুঁক দেবেন। ফলে চন্দ্র-সূর্য ও তারকারাজি খসে পড়বে, পাহাড় পর্বত তুলার ন্যায় উড়তে থাকবে, ভূগর্ভস্থ সবকিছু বের হয়ে যাবে, সকল প্রাণী মৃত্যু বরণ করবে এবং গোটা পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। এ সময় শুধু আল্লাহ তায়ালা থাকবেন। আর কেউ বিদ্যমান থাকবে না। পৃথিবী ধ্বংসের এ মহাপ্রলয়ের নাম কিয়ামত।

দ্বিতীয়ত: কিয়ামতের অন্য অর্থ দাঁড়ানো। পৃথিবী ধ্বংসের বহুদিন পর আল্লাহ তায়ালা আবার সকল জীব ও প্রাণীকে জীবিত করবেন। আল্লাহর নির্দেশে ইসরাফিল (আঃ) পুনরায় শিঙ্গায় ফুঁক দেবেন। তখন মানুষ পুনরায় জীবিত হয়ে কবর থেকে উঠে হাশরের ময়দানে হিসাব নিকাশের জন্য সমবেত হবে। ঐ সময়ে কবর থেকে উঠে দাঁড়ানোকে বলা হয় কিয়ামত। একে ‘ইয়াওমুল’ বা ‘আছ’ বা পুনরুত্থান দিবসও বলা হয়।

কিয়ামতের এ উভয়বিধ অবস্থা প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“আর শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়া হবে। ফলে যাদের আল্লাহ ইচ্ছা করেন তারা ব্যতীত আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সকলেই মূর্ছিত হয়ে পড়বে। অতঃপর আবার শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়া হবে, তখনই তারা দণ্ডায়মান হয়ে তাকাতে থাকবে।”

(সূরা আয্-যুমার, আয়াত ৬৮)

ঘ) আখিরাতের চার নং স্তর: “হাশর”

হাশর হলো মহাসমাবেশ। আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে সকল মানুষ ও প্রাণীকুল মৃত্যুর পর পুনরায় জীবিত হবে। সকলেই সেদিন একজন আহবানকারী ফেরেশতার ডাকে হাশরের ময়দানে সমবেত হবে। এ ময়দান বিশাল ও সুবিন্যস্ত। পৃথিবীর প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সকল মানুষই সেদিন এ মাঠে একত্রিত হবে। মানুষের এ মহাসমাবেশকেই হাশর বলা হয়।

হাশরের ময়দান হলো হিসাব নিকাশের দিন, জবাবদিহির দিন। এদিন আল্লাহ তায়ালা হবেন একমাত্র বিচারক।

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“তিনি (আল্লাহ) বিচার দিবসের মালিক।”

(সূরা আল-ফাতিহা, আয়াত ৩)

হাশরের সকল মানুষের সমস্ত কাজকর্মের হিসাব নেওয়া হবে। হাশরের ময়দানে মানুষের আমলনামা দেওয়া হবে। যাঁরা পুণ্যবান তারা ডান হাতে আমলনামা লাভ করবেন। আর পাপীরা বাম হাতে আমলনামা পাবে।

হাশরের ময়দান ভীষণ কষ্টের স্থান। সেদিন সূর্য মাথার উপর একেবারে নিকটে থাকবে। মানুষ প্রচণ্ড তাপে ঘামতে থাকবে। সেদিন আল্লাহ তায়ালার আরশের ছায়া ব্যতীত আর কোনো ছায়া থাকবে না।

সাত শ্রেণির লোক সেদিন আরশের ছায়াতলে স্থান পাবে। এদের মধ্যে একশ্রেণি হলো সেসব ব্যক্তি যে যৌবনকালে আল্লাহর ইবাদত করেছে।

হাশরের ময়দানে পানীয় জলের কোনো ব্যবস্থা থাকবে না। একমাত্র হাউজে কাউছারের পানি থাকবে। আমাদের প্রিয়নবি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) সেদিন তাঁর অনুসরী উম্মতগণকে হাউজে কাউছার থেকে পানি পান করাবেন। পাপীরা সেদিন তৃষ্ণায় নিদারুণ কষ্ট ভোগ করবে।

বস্তুত পুণ্যবানগণ হাশরের ময়দানে নানাবিধ সুবিধাজনক স্থান লাভে ধন্য হবেন। পক্ষান্তরে পাপীরা হাশরের ময়দানেই কঠোর শাস্তি ভোগ করবে।

ঙ) আখিরাতের পাঁচ নং স্তর: “মিযান”

মিযান অর্থ পরিমাপক যন্ত্র বা দাঁড়িপাল্লা। হাশরের ময়দানে মানুষের আমলসমূহ ওজন করার জন্য আল্লাহ তায়ালা যে পাল্লা প্রতিষ্ঠা করবেন তাকে মিযান বলা হয়।

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“আর আমি কিয়ামতের দিন ন্যায়বিচারের মানদণ্ড স্থাপন করব।”

(সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত ৪৭)

মিযানের পাল্লায় মানুষের পাপ পুণ্য ওজন করা হবে। যার পুণ্যের পাল্লা ভারী হবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যার পাপের পাল্লা ভারী হবে সে হবে জাহান্নামি।

চ) আখিরাতের ছয় নং স্তর: “সিরাত”

সিরাত এর শাব্দিক অর্থ পথ, রাস্তা, পুল, সেতু ইত্যাদি।

ইসলামি শরিয়তের ভাষায়, সিরাত হলো হাশরের ময়দান হতে জান্নাত পর্যন্ত জাহান্নামের উপর দিয়ে চলমান একটি উড়াল সেতু।

এ সেতু পার হয়ে নেক আমলকারী বান্দা জান্নাতে প্রবেশ করবেন। আখিরাতে সকল মানুষকেই এ সেতুতে আরোহণ করে তা অতিক্রম করতে হবে।

সিরাত সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ বলেন,

“এবং তোমাদের প্রত্যেকেই তা অতিক্রম করবে, এটা তোমার প্রতিপালকের অনিবার্য সিদ্ধান্ত।”

(সূরা মারইয়াম, আয়াত ৭১)

এ সম্পর্কে মহানবি (সাঃ) বলেন,

“জাহান্নামের উপর সিরাত স্থাপিত হবে।”

(মুসনাদে আহমাদ)

নেক আমলকারী বান্দাগণকে মহান আল্লাহ জান্নাতে যাওয়ার অনুমতি দেবেন। জান্নাতিগণ সিরাতের উপর দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবেন।

নেককারদের জন্য তাঁদের আমল অনুসারে সিরাত প্রশস্ত হবে। ইমানদারগণ নিজ নিজ আমল অনুযায়ী সিরাত অতিক্রম করবেন। কেউ বিদ্যুৎগতিতে, কেউ ঝড়ের গতিতে, কেউ ঘোড়ার গতিতে, কেউবা দৌড়ের গতিতে, কেউ হেঁটে হেঁটে আবার কেউ কেউ হামাগুড়ি দিয়ে সিরাত পার হবেন।

সিরাত হলো অন্ধকার পুল। সেখানে মুমিন ও নেক আমলকারী ব্যক্তির জন্য আলোর ব্যবস্থা থাকবে। কিন্তু যারা ইমানদার নয় এবং পাপী তাদের জন্য কোনো আলোর ব্যবস্থা থাকবে না।

সুতরাং দুনিয়ায় যে দৃঢ় ইমান ও বেশি নেক আমলের অধিকারী সিরাত তাঁর জন্য সবচেয়ে বেশি আলোকিত হবে। ইমানের আলোতে সে সহজেই সিরাত অতিক্রম করবে।

অন্যদিকে যারা ইমানদার নয় এবং পাপী মহান আল্লাহ তাদের জাহান্নামে যাওয়ার নির্দেশ দেবেন। জাহান্নামিদের জন্য সিরাত অত্যন্ত ভয়াবহ স্থান।

তাদের জন্য সিরাত হবে চুলের চাইতেও সূক্ষ্ম এবং তরবারি অপেক্ষা ধারালো। এ অবস্থায় সিরাতে আরোহণ করে তারা কিছুতেই তা অতিক্রম করতে পারবে না। বরং তারা করুণভাবে জাহান্নামে পতিত হবে।

অতএব, আমরা সিরাতে বিশ্বাস স্থাপন করব। সহজে সিরাত অতিক্রম করার জন্য প্রকৃত ইমানদার হব এবং সকল প্রকার অন্যায় ও পাপ কাজ বর্জন করে অধিক পরিমাণে নেক আমল করব। মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আদেশ-নিষেধ অনুযায়ী দৈনন্দিন জীবন পরিচালনা করব।

ছ) আখিরাতের সাত নং স্তর: “শাফাআত”

শাফাআত শব্দের অর্থ সুপারিশ করা, অনুরোধ করা ইত্যাদি।

ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায়, কল্যাণ ও ক্ষমার জন্য আল্লাহ তায়ালার নিকট নবি-রাসুল ও নেক বান্দাগণের সুপারিশ করাকে শাফাআত বলে।

কিয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা মানুষের সকল কাজকর্মের হিসাব নেবেন। তারপর আমল অনুযায়ী প্রত্যেকের জন্য জান্নাত বা জাহান্নাম নির্ধারণ করবেন। তখন মহান আল্লাহ পুণ্যবানগণকে জান্নাতে ও পাপীদের জাহান্নামে যাওয়ার নির্দেশ দেবেন।

নবি-রাসুল ও পুণ্যবান বান্দাগণ এ সময় আল্লাহর অনুমতিতে আল্লাহর দরবারে বিশেষ বিবেচনায় শাফাআত বা সুপারিশ করবেন। ফলে অনেক পাপীকে মাফ করা হবে। এরপর তাদেরকে জাহান্নাম থেকে জান্নাতে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে।

আবার অনেক পুণ্যবানের জন্যও এদিন শাফাআত করা হবে। ফলে তাঁদের মর্যাদা বৃদ্ধি করা হবে।

কিয়ামতের দিন সকল মানুষকে এক বিশাল ময়দানে সমবেত করা হবে। সেদিন সূর্য খুব নিকটবর্তী হবে। মানুষ অসহনীয় দুঃখ-কষ্টে নিপতিত থাকবে। এ সময় তারা হযরত আদম (আঃ), হযরত নূহ (আঃ), হযরত ইবরাহিম (আঃ), হযরত মুসা (আঃ) ও হযরত ঈসা (আঃ) এর নিকট উপস্থিত হয়ে হিসাব-নিকাশ শুরু করার জন্য আল্লাহর নিকট শাফাআত করতে অনুরোধ করবে। তাঁরা সকলেই অপারগতা প্রকাশ করবেন। এ অবস্থায় সকল মানুষ মহানবি (সাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হবে। তখন মহানবি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহ তায়ালার নিকট শাফাআত করার অনুমতি চাইবেন, আল্লাহ তায়াল তার অনুরোধ গ্রহণ করবেন, তখন তিনি আল্লাহর নিকট শাফাআত করবেন।

অন্যদিকে কিয়ামতের দিন পাপীদের ক্ষমা ও পুণ্যবানদের মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য শাফাআত করা হবে। নবি-রাসুল, ফেরেশতা, শহিদ, আলেম, হাফিয এ শাফাআতের সুযোগ পাবেন। আল-কুরআন ও সিয়াম (রোযা) কিয়ামতের দিন শাফাআত করবে বলেও হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে।

কিয়ামতের দিন নবি-রাসুল ও নেক বান্দাগণ আল্লাহর নিকট সুপারিশ করবেন। আল্লাহ তায়ালা এসব শাফাআত কবুল করবেন এবং বহু মানুষকে জান্নাত দান করবেন। তবে শাফাআতের সবচেয়ে বেশি ক্ষমতা থাকবে আমাদের প্রিয়নবি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর অধিকারে।

তিনি নিজেই বলেছেন,

“আমাকে শাফাআত (করার অনুমতি) দেওয়া হয়েছে।”

(সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম)

অন্য একটি হাদিসে রাসুল (সাঃ) বলেছেন,

“পৃথিবীতে যত ইট ও পাথর আছে, আমি তার চেয়েও বেশি লোকের জন্য কিয়ামতের দিন শাফাআত করব।”

(মুসনাদে আহমাদ)

শাফাআত একটি বিরাট নিয়ামত। মহানবি (সাঃ)-এর শাফাআত ব্যতীত কিয়ামতের দিন সফলতা, কল্যাণ ও জান্নাত লাভ করা সম্ভব হবে না।

অতএব, আমরা শাফাআতে বিশ্বাস স্থাপন করব। আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সাঃ)-কে ভালোবাসব। আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সাঃ)-এর আদেশ-নিষেধ অনুযায়ী আমাদের জীবন পরিচালনা করব। তাহলে পরকালে আমরা প্রিয়নবি (সাঃ)-এর শাফাআত লাভে ধন্য হয়ে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারব।

জ) আখিরাতের আট নং স্তর: “জান্নাত”

জান্নাত অর্থ উদ্যান, বাগান, সুশোভিত কানন।

ইসলামি পরিভাষায়, পরকালীন জীবনে পুণ্যবানগণের জন্য পুরস্কার স্বরূপ যে আরামদায়ক স্থান তৈরি করে রাখা হয়েছে তাকে বলা হয় জান্নাত।

জান্নাতে সবধরনের নিয়ামত বিদ্যমান। মুমিনগণ সেখানে চিরকাল অবস্থান করবেন। তাঁরা সেখানে তাঁদের পুণ্যবান মাতা-পিতা, স্ত্রী-পুত্র, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনদের সাথে মিলিত হবেন। তাঁরা যা চাইবেন তাই সাথে সাথে লাভ করবেন।

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“সেখানে (জান্নাতে) তোমাদের জন্য রয়েছে যা কিছু তোমাদের মন চায় এবং সেখানে তোমাদের জন্য রয়েছে যা তোমরা ফরমায়েশ কর। এটি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু আল্লাহর পক্ষ থেকে আপ্যায়ন।”

(সূরা হা-মিম আস-সাজদা, আয়াত ৩১-৩২)

বস্তুত জান্নাতের সুখ-শান্তি ও নিয়ামত অফুরন্ত। এর বর্ণনা শেষ করা যায় না।

একটি হাদিসে কুদসিতে স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,

“আমি আমার নেক বান্দাদের জন্য (জান্নাতে) এমন সব নিয়ামত প্রস্তুত করে রেখেছি যা কোনো চোখ দেখেনি, কোনো কান কোনোদিন তা শুনেনি এবং কোনো মানব হৃদয় কখনো কল্পনাও করতে পারেনি।”

(সহিহ বুখারি)

আল্লাহ তায়ালা মুমিনদের জন্য আটটি জান্নাত তৈরি করে রেখেছেন। এগুলো হলো-

(১) জান্নাতুল ফিরদাউস, (২) দারুল মাকাম, (৩) দারুল কারার, (৪) দারুস্স্সালাম, (৫) জান্নাতুল মাওয়া, (৬) জান্নাতুল আদন, (৭) দারুন নাইম ও (৮) দারুল খুলদ।

জান্নাত চরম সুখের আবাস। দুনিয়াতে যারা ইসলামকে পরিপূর্ণভাবে অনুসরণ করে চলবে তারা পরকালে জান্নাত লাভ করবে। সকল কাজকর্মে আল্লাহ তায়ালার আদেশ ও রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর সুন্নাহ অনুসরণ করলে জান্নাত লাভ করা সম্ভব হবে।

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“আর যে ব্যক্তি স্বীয় প্রতিপালকের সম্মুখে উপস্থিত হওয়ার ভয় রাখে এবং কুপ্রবৃত্তি থেকে নিজেকে বিরত রাখে জান্নাতই হবে তার আবাস।”

(সূরা আন-নাযিআত, আয়াত ৪০-৪১)

সুতরাং আমরাও জান্নাত লাভের জন্য সদা সর্বদা আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করব, তাঁর আদেশ নিষেধ মেনে চলব, অন্যায় ও পাপ কাজ থেকে নিজেকে রক্ষা করে উত্তম চরিত্র গঠন করব। তাহলে মহান আল্লাহ আমাদের উপর সন্তুষ্ট হবেন, আমরা পরকালে জান্নাত লাভ করব।

ঝ) আখিরাতের নয় নং স্তর: “জাহান্নাম”

জাহান্নাম হলো শাস্তির স্থান। পরকালে মুমিনগণের জন্য যেমন জান্নাতের ব্যবস্থা রয়েছে তেমনি পাপীদের জন্য রয়েছে শাস্তির স্থান। আর জাহান্নামই হলো সে শাস্তির জায়গা। জাহান্নামকে (নার) বা আগুন ও বলা হয়।

জাহান্নাম চির শাস্তির স্থান। এর শাস্তি অত্যন্ত ভয়াবহ। মানুষের পাপের পরিমাণ অনুসারে শাস্তির পরিমাণ নির্ধারণ করা হবে। জাহান্নামের আগুন অত্যন্ত উত্তপ্ত।

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,

“তোমাদের এ পৃথিবীর আগুন জাহান্নামের আগুনের সত্তর ভাগের এক ভাগ মাত্র।”

(সহিহ বুখারি)

এ আগুনে মানুষের হাড়, চামড়া, গোশত সবকিছুই পুড়ে যাবে। কিন্তু তাতে তার মৃত্যু হবে না। বরং আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে পুনরায় তার দেহ পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়া হবে। পুনরায় তা পুড়ে দগ্ধ হবে। এভাবে পুনঃপুনঃ চলতে থাকবে।

জাহান্নাম বিষাক্ত সাপ, বিচ্ছুর আবাসস্থল। সেখানকার খাদ্য হলো বড় বড় কাঁটাযুক্ত বৃক্ষ। উত্তপ্ত রক্ত ও পুঁজ হবে জাহান্নামিদের পানীয়। মোটকথা জাহান্নাম অতি যন্ত্রণাদায়ক স্থান।

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“যারা কুফরি করে তাদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে আগুনের পোশাক, তাদের মাথার উপর ঢেলে দেওয়া হবে ফুটন্ত পানি, ফলে তাতে তাদের পেটে যা আছে তা এবং তাদের চামড়া বিগলিত হয়ে যাবে, আর তাদের জন্য থাকবে লৌহমুদ্গর। যখনই তারা যন্ত্রণায় কাতর হয়ে জাহান্নাম থেকে বের হতে চাইবে তখনই তাদেরকে তাতে ফিরিয়ে দেওয়া হবে। আর তাদের বলা হবে, আস্বাদন কর দহন-যন্ত্রণা।”

(সূরা আল-হাজ্জ, আয়াত ১৯-২২)

পাপীদের শাস্তি দানের জন্য আল্লাহ তায়ালা ৭টি দোযখ তৈরি করে রেখেছেন। এগুলো হলো-

(১) জাহান্নাম, (২) হাবিয়া, (৩) জাহিম, (৪) সাকার, (৫) সাইর, (৬) হুতামাহ এবং (৭) লাযা।

জাহান্নাম হলো ভীষণ শাস্তির স্থান। কাফির, মুশরিক ও মুনাফিকরা তথায় চিরকাল শাস্তি ভোগ করবে।

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“অনন্তর যে সীমালঙ্ঘন করে এবং দুনিয়ার জীবনকে প্রাধান্য দেয় জাহান্নামই হবে তার আবাস।”

(সূরা আন- নাযিআত, আয়াত ৩৭-৩৯)

যাদের ইমান রয়েছে কিন্তু পাপের পরিমাণ বেশি এমন মুমিনরাও জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করবে। তবে তাদের পাপের শাস্তি শেষ হওয়ার পর তারা জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে।

আমরা সব রকম পাপ থেকে মুক্ত থাকব। খাঁটি ইমানদার হব। আল্লাহ ও তাঁর রাসুল হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর আনুগত্য করব। তাহলেই জাহান্নামের আগুন ও শাস্তি থেকে আমরা রেহাই পাব।

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/islam

Islamic information to the point!View Author posts

You cannot copy content of this page