Skip to content

 

আল্লাহর পথে দান ও কল্যাণময় জ্ঞানের মাহাত্ম্য সংক্রান্ত ১টি বিষয়ভিত্তিক হাদিস

আল্লাহর পথে দান ও কল্যাণময় জ্ঞানের মাহাত্ম্য সংক্রান্ত ১টি বিষয়ভিত্তিক হাদিস

নিম্নে আল্লাহর পথে দান ও কল্যাণময় জ্ঞানের মাহাত্ম্য সংক্রান্ত ১টি বিষয়ভিত্তিক হাদিসের অনুবাদ, ব্যাখ্যা ও শিক্ষা তুলে ধরা হলো-

অনুবাদ

হযরত ইবন মাসউদ (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,

নবী (স) বলেছেনঃ দু’জন লোক সম্পর্কে ঈর্ষা (حسد) করা সংগত, একজন হচ্ছে সেই লোক যাকে আল্লাহ ধন সম্পদ দান করেছেন এবং তা আল্লাহর পথে খরচ করার ক্ষমতা ও তাওফিক দিয়েছেন। আর দ্বিতীয়জন হচ্ছে সেই ব্যক্তি, যাকে আল্লাহ হিকমাত, জ্ঞান ও অন্তর্দৃষ্টি দান করেছেন এবং সে তদনুযায়ী বিচার-ফয়সালা করে ও লোকদেরকে তা শিক্ষাদান করে।

(বুখারি ও মুসলিম)

টীকা

হাসাদ (حسد) অর্থ- হিংসা। লাহাসাদ (لاحسد) অর্থ- হিংসা বা ঈর্ষা নেই। হাসাদ এর আভিধানিক অর্থ- হিংসা করা, ঈর্ষা করা, ঈর্ষাপোষণ করা, পরশ্রীকাতরতা ইত্যাদি এবং পারিভাষিক অর্থ- অপরের ধন-সম্পদ দেখে অন্তরে জ্বলে মরা এবং তার ধন-সম্পদ ও সুখ সামগ্রী নষ্ট হয়ে যাওয়ার কামনা করা, তা নিজে অর্জন করুক বা না করুক। ইসলামি শারীআতে হাসাদ নিষিদ্ধ।

গিব্তা (غبطة) হলো অন্যের সম্পদ নষ্ট না হয়ে অনুরূপ সম্পদ নিজে পাওয়ার ইচ্ছা। গিবতা জায়িয। এ হাদিসে ‘হাসাদ’ বলতে ‘গিবতা’ বুঝানো হয়েছে।

হিকমাত (الحكمة) অর্থ- জ্ঞান-বিজ্ঞান, সূক্ষ্মদর্শিতা, জ্ঞান ও নিখুঁতভাবে উপলব্ধিকরণ, বিচার ইত্যাদি। কোন কোন তত্ত্বজ্ঞানী ওহী কে হিকমাত বলেছেন। কুরআন ও হাদিসে এটা দ্বীনের বর্ণনায় ও দ্বীনের আহকাম অর্থেও ব্যবহৃত হয়েছে। হাদিসেও এটা ইলমে দ্বীনের অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।

ব্যাখ্যা

এ হাদিসে আল্লাহর পথে দন-সম্পদ ব্যয়, জ্ঞান অর্জন, জ্ঞান অনুযায়ী মানুষের বিচার ফায়সালা করা এবং মানুষকে জ্ঞানবিজ্ঞান শিক্ষাদানের মাহাত্ম্য ও শ্রেষ্ঠত্বের কথা বলা হয়েছে।

হিংসা করা মহাপাপ। হিংসা জঘন্য মানসিকতার পরিচায়ক। হিংসা মানুষের সৎ কার্যগুলোকে এমনভাবে ধ্বংস করে দেয় যেমন আগুন কাঠ জ্বালিয়ে ছাই করে ফেলে। হিংসা শব্দের অর্থ হল পরশ্রীকাতরতা, মানুষের সুখন্ডসুবিধা দেখে সহ্য করতে না পারা এবং মনে মনে তার ধ্বংস কামনা করা।

See also  রাসূলুল্লাহ (স)-এর প্রতি ভালোবাসা সংক্রান্ত ১টি বিষয়ভিত্তিক হাদিস

সুতরাং অত্র হাদিসে বর্ণিত হাসাদ (حسد) শব্দের আভিধানিক অর্থ হিংসা বা পরশ্রীকাতরতা নয়, বরং এখানে হিংসার অর্থ হল কোন মানুষের ধন-সম্পদ, সুখন্ডসুবিধা ও বিদ্যা-বুদ্ধি দেখে মনে মনে এমন ভাব পোষণ করা যে, আমিও যদি তার ন্যায় ধন-সম্পদ ও বিদ্যা-বুদ্ধি অর্জন করতে পারি, তবে এ সম্পদ ও বিদ্যা-বুদ্ধি দ্বারা তার মত কিংবা তার চেয়েও বেশি করে সৎকর্ম সম্পাদন করব এবং বেশি লোকের উপকার করব। এরূপ সৎকর্মে প্রতিযোগিতামূলক প্রতিদ্বন্ধিতা করা অবৈধ নয় ; বরং বৈধ, প্রশংসনীয় ও পুরস্কারযোগ্য।

শিক্ষা

অতএব আমরা এ হাদিস হতে যে শিক্ষা পেলাম তা হচ্ছে নিম্নরূপ-

১. ধন-সম্পদ আল্লাহর দান। আর তা তাঁরই পথে ব্যয় করতে পারা পরম সৌভাগ্যের ব্যাপার।

২. যে ব্যক্তি আল্লাহর দেওয়া সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় খরচ করে, তার মতো নিজেকে গড়ে তোলার প্রতিযোগিতা করা প্রশংসনীয় কাজ, যা করা আমাদের সকলের কর্তব্য।

৩. দান-খয়রাত, সমাজ সেবামূলক কাজ, সাদকায়ে জারিয়ামূলক সেবা ও কার্যক্রমে অংশগ্রহণ, এবং এসব ক্ষেত্রে অন্যের চেয়ে এগিয়ে যাওয়ার মনোভাব খুবই প্রশংসনীয়। তাতে আল্লাহ খুশি হন।

৪. অপর মানুষের অকল্যাণ ও ক্ষতি হয় এমন বিষয়ে প্রতিযোগিতা করা অপরাধ।

৫. কারো ক্ষতি সাধনের উদ্দেশে ঈর্ষা খুবই নিন্দনীয় কাজ।

৬. ইসলাম সম্পর্কিত জ্ঞান-বিজ্ঞান আল্লাহর দান। আর তদনুযায়ী নিজে চলা ও লোকদেরকে পরিচালনা করার যোগ্যতা অর্জনের প্রতিযোগিতা করাও প্রশংসনীয় কাজ।

৭. ইসলামি জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষা দান এবং প্রচার করাও মহৎ কাজ।

৮. ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব থাকাই শ্রেয়।

৯. ইসলামি জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষাদানের জন্য ব্যাপৃত থাকা এবং ন্যায় ইন্সাফ কায়েমের জন্য এগিয়ে যাওয়ার প্রতিযোগিতা করা খুবই কল্যাণকর কাজ।

সারসংক্ষেপ

উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে আমরা আল্লাহর পথে দান ও কল্যাণময় জ্ঞানের মাহাত্ম্য সংক্রান্ত ১টি বিষয়ভিত্তিক হাদিস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করলাম।

কেউ যদি কারও কোন সৎ কাজ দেখে সে কাজে তাকে অতিক্রম করার উদ্দেশে তার প্রতি ঈর্ষা পোষণ করে, কিংবা দেশ ও জাতির কল্যাণার্থে কারও সাথে প্রতিযোগিতামূলকভাবে অর্থ-সম্পদ ব্যয় করে, তবে এটাকে হিংসা বলা যাবে না। ইসলামে এটাকে বৈধ বলে স্বীকৃতি দিয়েছে। কেননা সৎপথে ব্যয় বলতে দান-খয়রাতে, আল্লাহর পথে সম্পদ খরচ, কিংবা সমাজসেবা বা জনহিতকর কার্যে দান করাকে বুঝায়, যা প্রশংসনীয় কাজ বলে বিবেচিত। সুতরাং এ ধরনের সৎ কাজে প্রতিদ্বন্দি্বতা করাকে হিংসা বলা যায় না। এটা অবৈধ নয়; বরং প্রশংসনীয়।

See also  হারাম খাদ্যের পরিণাম সংক্রান্ত ১টি বিষয়ভিত্তিক হাদিস

[সূত্র: ওপেন স্কুল]

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/islam

Islamic information to the point!View Author posts

You cannot copy content of this page