Skip to content

 

আল কুরআন কি? আল কুরআনের সংক্ষিপ্ত পরিচয়

আল কুরআন কি, আল কুরআনের সংক্ষিপ্ত পরিচয়

প্রিয় পাঠকবৃন্দ! এই পোষ্টটিতে আল কুরআন কি? ও আল কুরআনের সংক্ষিপ্ত পরিচয় উপস্থাপন করা চেষ্টা করেছি। যে সকল ভাই-বোন পবিত্র কুরআন এর ব্যাপারে প্রাথমিক ধারণা পেতে চান তাদের উদ্দেশ্যে আজকের এই পোষ্টটি।

চলুন জেনে নিই-

(১) আল কুরআনের পরিচয়

ক) কুরআর শব্দের অর্থ কি?

‘কুরআন’ (القرآن) শব্দটি আরবি। এর অর্থ হলো বহুল পঠিত।

কুরআন মাজীদ মানবজাতির হিদায়াতের উৎস ও মুক্তির সনদ। আল-কুরআন পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি পঠিত কিতাব। প্রত্যেক দিন কোটি-কোটি মুসলমান এ গ্রন্থ তিলাওয়াত করে থাকে। আমরা পাঁচ ওয়াক্ত সালাতে এ গ্রন্থ থেকে বিভিন্ন সূরা ও আয়াত পাঠ করে থাকি। এ জন্য এ কিতাবের নাম রাখা হয়েছে ‘আল-কুরআন’।

খ) কুরআন কাকে বলে?

ইসলামি পরিভাষায়, আল্লাহ তা’আলা মানবজাতির হিদায়াতের জন্য হযরত জিবরাইল (আঃ)-এর মাধ্যমে মহানবি হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর উপর যে কিতাব নাযিল করেছেন তাকেই আল-কুরআন বলা হয়।

গ) আল কুরআন কি?

আল কুরআন আল্লাহ তা’আলার পবিত্র বাণী। এটি মানবজাতির জন্য সুস্পষ্ট দলীল, বিশ্বাসীদের জন্য হেদায়ত ও রহমত। আল্লাহ তা‘আলা মহানবি হযরত মুহাম্মাদ (সা.) এর উপর সুদীর্ঘ ২৩ বছরে এটি নাজিল করেন। আসমানি কিতাব সমূহের মধ্যে এটি সর্বশেষ নাজিল করা হয়েছে। এরপর আর কোনো কিতাব আসেনি। আর ভবিষ্যতেও আসবে না। কিয়ামত পর্যন্ত এ কিতাবের বিধি-বিধান ও শিক্ষা বলবৎ থাকবে। এটি সর্বকালের সকল মানুষের জন্য হিদায়াতের উৎসস্বরূপ। আল-কুরআনের নির্দেশনা মেনে চললে মানুষ দুনিয়াতে শান্তি ও সম্মান পাবে। আর আখিরাতে চিরশান্তির জান্নাত লাভ করবে।

আল্লাহ তা’আলা বলেন,

“এই কিতাব আমি নাযিল করেছি, যা কল্যাণময়। অতএব, তোমরা এর অনুসরণ কর এবং সাবধান হও, হয়তো তোমাদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করা হবে।”

(সূরা আল-আন’আম, আয়াত: ১৫৫)

এটি সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানি কিতাব। মানবজাতির হিদায়াতের জন্য আল্লাহ তা’আলা হযরত জিবরাইল (আঃ)-এর মাধ্যমে শেষ নবি হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর উপর সুদীর্ঘ ২৩ বছরে এ কিতাবটি নাযিল করেন। এটি মানুষের প্রতি আল্লাহর সীমাহীন ভালোবাসা ও রহমতের নিদর্শন। মানুষের দুনিয়ার জীবন যাতে সফল, শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ হয় এবং সেই সাথে পরকালীন জীবনের অনাবিল শান্তিও যেন সে লাভ করতে পারে তার বিস্তারিত পথ নির্দেশনা এ কিভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। এটি এক মহাবিজ্ঞানময় প্রশ্ন।

আল-কুরআন এমন একটি কিতাব যার মধ্যে কোন প্রকার সন্দেহ নেই। আল কুরআন মহান আল্লাহর বাণী। আল্লাহ তা‘আলা নিজে আল কুরআন সংরক্ষণের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। আজ পর্যন্ত এটি অবিকৃত রয়েছে। কেউ এর একটি অক্ষর, শব্দ বা হরকতও পরিবর্তন করতে পারেনি। এটি যেভাবে নাযিল হয়েছিল আজও ঠিক সেভাবেই বিদ্যমান আছে।

মহান আল্লাহ বলেছেন,

“নিশ্চয়ই আমিই কুরআন অবতীর্ণ করেছি এবং অবশ্যই আমিই এর সংরক্ষক।”

(সূরা আল-হিজর, আয়াত: ৯)

আর কিয়ামত পর্যন্ত এটি অবিকৃতই থাকবে। কেননা আল্লাহ তা’আলা স্বয়ং আল কুরআনের সংরক্ষক। তিনি তাঁর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে এ কিতাব সংরক্ষণ করেন। এ জন্য আজ পর্যন্ত এ কিতাবের একটি হরফ (অক্ষর), হরকত বা নুকতারও পরিবর্তন হয়নি। এটি যেভাবে নাজিল হয়েছিল আজও ঠিক সেভাবেই বিদ্যমান। আর কিয়ামত পর্যন্ত অবিকৃত থাকবে।

পবিত্র কুরআন সেই প্রথম থেকে এখন পর্যন্ত অগণিত হাফেযের (সম্পূর্ণ কুরআন মুখস্তকারী) মাধ্যমেও সংরক্ষিত আছে। কেউ ভুল করলে সাথে সাথে অন্যরা-এমনকি সালাত অবস্থায়ও সংশোধন করে দেন।

(২) আল কুরআন অবতরণ

আল্লাহ তা’আলা আমাদের প্রিয়নবি হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর উপর আল-কুরআন নাজিল করেন। এটি লাওহে মাহফুয বা সংরক্ষিত ফলকে লিপিবদ্ধ রয়েছে। লাওহি মাহফুজ থেকে আল-কুরআন প্রথমে কদরের রাতে প্রথম আসমানে “বাইতুল ইযযাহ’ নামক স্থানে এক সাথে নাজিল করা হয়। এরপর সেখান থেকে মহাগ্রন্থ আল কুরআন নাজিলের সূচনা হয়েছিল মক্কার অদূরে হেরা পর্বতের গুহায়, ফেরেশতা জিবরাইল (আঃ) এর মাধ্যমে। তখন মহানবি (সা.) এর বয়স হয়েছিল ৪০ বছর। হেরাগুহায় ধ্যানমগ্ন থাকাকালে সর্বপ্রথম সূরা আলাকের প্রথম ৫টি আয়াত অবতীর্ণ হয়। তারপর রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি প্রয়োজন অনুসারে অল্প অল্প করে ২৩ বছরে সম্পূর্ণ কুরআন নাজিল হয়।

See also  আদর্শ সমাজ গঠনে আল-কুরআনের অবদান

আল কুরআন আল্লাহ তা’আলার কালাম। আল্লাহ তা’আলা ৬১০ খ্রিষ্টাব্দে রমযান মাসের ২৭ তারিখ লাইলাতুল ক্বদর বা মহিমান্বিত রাতে কুরআন মাজিদ নাযিল করা শুরু করেন। আমরা এ রাতকে শবে কদরও বলে থাকি। এটি লাওহে মাহফুজ বা সংরক্ষিত ফলকে লিপিবদ্ধ আছে।

এ সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা বলেন,

“বস্তুত এটি সম্মানিত কুরআন। সংরক্ষিত ফলকে লিপিবদ্ধ”

(সূরা আল বুরূজ, আয়াত: ২১-২২)

আল কুরআন আল্লাহর বাণী যা তিনি আরবি ভাষায় নাযিল করেছেন। কারণ, আমাদের প্রিয়নবি হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর ভাষা ছিলো আরবি। তিনি আরব দেশের মক্কা নগরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর জন্মের সময় গোটা আরব ছিল অজ্ঞতা ও বর্বরতায় আচ্ছন্ন। তারা মূর্তির পূজা করত। নবি করিম (সা.) আরবদের এরূপ অজ্ঞতা ও বর্বরতা পছন্দ করতেন না। তিনি সব সময় সত্য ও সুন্দরের অনুসন্ধান করতেন। এ জন্য তিনি হেরা গুহায় ধ্যানমগ্ন থাকতেন। হেরা গুহায় ধ্যানমগ্ন অবস্থাতেই তাঁর নিকট সর্বপ্রথম কুরআনের বাণী নাজিল হয়। তিনি সত্যের সন্ধান পান। তখন তাঁর বয়স ছিল চল্লিশ বছর। আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে শেষ নবি ও রাসুল হিসেবে মনোনীত করেন এ সময় মহান আল্লাহর নির্দেশে হযরত জিবরাইল (আঃ) সূরা আলাকের প্রথম ৫ আয়াত নিয়ে তাঁর নিকট আগমন করেন। এটাই ছিল সর্বপ্রথম ওহি। তাঁর জীবদ্দশায় আল্লাহ তা’আলা প্রয়োজন অনুসারে আল কুরআনের। বিভিন্ন অংশ অল্প অল্প করে নাযিল করেন। কখনো ৫ আয়াত, কখনো ১০ আয়াত, কখনো আয়াতের অংশবিশেষ, আবার কখনো একটি পূর্ণাঙ্গ সূরা একসাথে নাযিল হতো। এভাবে দীর্ঘ ২৩ বছরে আল কুরআন সম্পূর্ণ অবতীর্ণ হয়।

(৩) আল কুরআন সংরক্ষণ

কুরআন মাজিদের কোনো অংশ নাযিল হলে সর্বপ্রথম মহানবি (সা.) তা নিজে মুখস্থ করে নিতেন। এরপর তা সাহাবিগণকে মুখস্থ করতে বলতেন। মহানবি (সা.)-এর উৎসাহ ও নির্দেশে সাহাবিগণ আল-কুরআন মুখস্থ করতেন, দিনরাত তিলাওয়াত করতেন, নামাযে পাঠ করতেন এবং পরিবার-পরিজন, স্ত্রী-সন্তান ও বন্ধু- বান্ধবদের মুখস্থ করাতেন। এভাবে আল-কুরআন সর্বপ্রথম মুখস্থ করার মাধমে সংরক্ষণ করা হয়। উল্লেখ্য, তৎকালীন আরবদের স্মৃতিশক্তি ছিল অসাধারণ। তারা কোনো জিনিস শিখলে তা আর কখনো ভুলত না। সম্ভবত আল কুরআন মুখস্থ করার জন্যই আল্লাহ তা’আলা তাঁদের এরূপ অসাধারণ স্মরণশক্তি দান করেছিলেন। তাদের এ অসাধারণ স্মরণশক্তির কারণে কুরআন মাজিদ সহজেই তাদের স্মৃতিপটে সংরক্ষিত হয়।

আল কুরআন লেখনীর মাধ্যমেও সংরক্ষণ করা হয়। কুরআনের কোনো অংশ নাযিল হলে তা মুখস্থ করার পাশাপাশি লিখে রাখার জন্যও নবি করিম (সা.) নির্দেশ দিতেন। যে সকল সাহাবি লিখতে জানতেন তাঁরা এ দায়িত্ব পালন করতেন। তাঁদের বলা হয় কাতিবে ওহি বা ওহি লেখক। তাঁদের সংখ্যা ছিল ৪২ জন। প্রধান ওহি লেখক সাহাবি ছিলেন হযরত যায়দ ইবন সাবিত (রা.)। ওহি লেখক সাহাবিগণের মধ্যে কেউ না কেউ সদা সর্বদা নবি (সা.)-এর সাথে থাকতেন। কুরআনের কোন অংশ নাযিল হলে তাঁরা সাথে সাথেই তা লিখে রাখতেন। সেসময় কুরআন মাজিদ খেজুর গাছের ডাল, পশুর হাড়, চামড়া, ছোট ছোট পাথর ইত্যাদিতে লিখে রাখা হতো।

(৪) আল কুরআন সংকলন

মহানবি (সা.) এর সময়ে আল কুরআন মুখস্থ ও লেখনীর মাধ্যমে পুরোপুরি সংরক্ষণ করা হয়। কিন্তু সে সময় তা একত্রে গ্রন্থাবদ্ধ হয়নি। বরং তাঁর তত্ত্বাবধানে লিপিবদ্ধ টুকরোগুলো নানাজনের নিকট সংরক্ষিত ছিল। হযরত আবু বকর (রা.)-ই সর্বপ্রথম কুরআন সংকলনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন।

See also  কুরআন সংকলনের ইতিহাস

হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) ছিলেন ইসলামের প্রথম খলিফা। তাঁর সময় ইয়ামামার যুদ্ধে কুরআনের বহুসংখ্যক হাফিজ শাহাদাৎবরণ করেন। এ অবস্থা দেখে হযরত উমর (রা.) ভাবলেন কুরআনের হাফিজগণ এভাবে ইন্তেকাল করলে কুরআনের অনেক অংশ বিলুপ্ত হয়ে যাবে। তাই তিনি হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) কে কুরআন সংকলনের পরামর্শ দেন। হযরত উমর (রা.) এর পরামর্শক্রমে হযরত আবু বকর (রা.) কুরআন সংকলনের উদ্যোগ নেন। তিনি প্রধান ওহী লেখক সাহাবি হযরত যায়েদ ইবনে সাবিত (রা.) কে সাহাবিদের নিকট সংরক্ষিত কুরআনের লিখিত অংশগুলো একত্র করেন। পাশাপাশি তিনি কুরআনের হাফিজগণের সাহায্যও গ্রহণ করেন। কুরআনের প্রতিটি অংশ তিনি লেখনী ও মুখস্থ উভয় পদ্ধতির সাথে মিলিয়ে দেখেন। এভাবে তিনি সর্বোচ্চ সতর্কতার সাথে আল কুরআনের প্রামাণ্য পাণ্ডুলিপি প্রস্তুত করেন। আল কুরআনের এ কপিটি খলিফা হযরত আবু বকর (রা.) এর নিকট সংরক্ষিত ছিল। তাঁর ইন্তেকালের পর তা দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমর (রা.) এর তত্ত্বাবধানে সংরক্ষিত থাকে। হযরত উমর (রা.)-এর শাহাদাতের পর এ কপিটি তাঁর মেয়ে উম্মুল মুমিনীন হযরত হাফসা (রা.)-এর নিকট সংরক্ষিত থাকে।

ইসলামের তৃতীয় খলিফা ছিলেন হযরত উসমান (রা.)। তাঁর সময়ে ইসলামি সাম্রাজ্য ছিল বিশাল-বিস্তৃত। পৃথিবীর নানা প্রান্তে ও দেশে ইসলাম ছড়িয়ে পড়েছিল। ফলে মুসলমানদের সংখ্যাও ছিল অগণিত। এ সময় বিভিন্ন অঞ্চলে কুরআনের পাঠরীতি নিয়ে মারাত্মক বিপর্যয় দেখা দেয়। এ নিয়ে মুসলমানদের মধ্যে নানা অনৈক্যের সৃষ্টি হয়। এমতাবস্থায় হযরত উসমান (রা.) বিশিষ্ট সাহাবীগণের সাথে পরামর্শ করে আল কুরআনের একক ও প্রামাণ্য পাঠরীতি প্রচারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এজন্য তিনি হযরত যায়েদ (রা.)-এর নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করেন। এ কমিটি হযরত হাফসা (রা.)-এর নিকট সংরক্ষিত মূল পাণ্ডুলিপি থেকে আরও সাতটি অনুলিপি প্রস্তুত করেন। এরপর বিভিন্ন প্রদেশে আল কুরআনের একটি করে কপি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ফলে পবিত্র কুরআনের পাঠরীতি নিয়ে মুসলমানদের অনৈক্য দূর হয়। আল কুরআন সংরক্ষণের এরূপ অসামান্য অবদানের জন্য হযরত উসমান (রা.) কে ‘জামিউল কুরআন’ বলা হয়। জামিউল কুরআন অর্থ হলো- কুরআন সংকলক বা কুরআন একত্রকারী।

(৫) আল-কুরআনের বৈশিষ্ট্য

আল-কুরআন বিশ্ববাসীর জন্য রহমতস্বরূপ। এটি সত্য-মিথ্যা ও ন্যায়-অন্যায়ের মধ্যে পার্থক্যকারী। এটি মানব জাতিকে সত্যের দিকে পথ প্রদর্শন করে। আমাদের জীবনকে সুন্দরভাবে পরিচালিত করার জন্য সব উপদেশ এতে বর্ণিত হয়েছে। এটি সর্বপ্রকার দোষত্রুটি, সংশয় সন্দেহ ও ভুলের ঊর্ধ্বে।

এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা’আলা বলেছে,

“এটি সেই কিভাব, যাতে কোনো সন্দেহ নেই, মুত্তাকীদের জন্য এটি পথপ্রদর্শক।”

(সুরা আল-বাকারা, আয়াত: ২)

মানবজাতির হেদায়াতের জন্য আল্লাহ তা’আলা সর্বমোট ১০৪ (একশত চার) থানা আসমানি কিতাব নাযিল করেছেন। এগুলোর মধ্যে ১০০ (একশত) খানা ছোট কিতাব। এগুলোকে বলা হয় সহিফা। আর ৪ (চার) খানা বড় কিতাব। এগুলো হলো: তাওরাত, যাবুর, ইনজিল ও কুরান। আল কুরআন হলো সর্বশেষ আসমানি কিতাব। কেয়ামত পর্যন্ত এটি সকল মানুষের হেদায়েতের উৎস। এরপর আর কোন কিতাব নাযিল হবে না।

কুরান মাজিদ সহজ ও সাবলীল ভাষায় নাযিলকৃত। এতে কোনো প্রকার অস্পষ্টতা কিংবা জটিলতা নেই। বরং এতে খুবই সহজ, সরল ও স্পষ্ট ভাষায় নানা বিষয় বর্ণনা করা হয়েছে। অতিসাধারণ মানুষও এ কুরআন থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।

আল কুরআন ইসলামি শরিয়তের মূল উৎস। মানব জাতির জীবন পরিচালনার মূলনীতি ও নির্দেশনা এতে বিদ্যমান। পূর্ববর্তী আসমানী গ্রন্থসমূহের মূল শিক্ষাও এতে বর্ণিত রয়েছে। এটি কোনো নির্দিষ্ট জাতি, গোষ্ঠি বা দেশের জন্য অবতীর্ণ হয়নি, বরং এটি সর্বকালের সকল মানুষের হেদায়েতের জন্য অবতীর্ণ হয়েছে। তাই আল কুরআান সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানি কিতাব।

See also  কুরআন অর্থ, কি, কাকে বলে? পবিত্র কুরআনের সংক্ষিপ্ত পরিচয়

(৬) আল-কুরআনের গুরুত্ব

মহাগ্রন্থ আল-কুরআনের গুরুত্ব অপরিসীম। এটি মানব জাতির হেদায়েতের প্রধান উৎস। এতে রয়েছে আল্লাহ তা’আলার পরিচয়, তাঁর গুণাবলির বর্ণনা, তাঁর ক্ষমতা ও নিয়ামতসমূহের বর্ণনা। আল-কুরআনে মানব সৃষ্টির অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে। আসমান-জমিন, সৌরজগৎ, নক্ষত্ররাজি, পাহাড়, পর্বত, সাগর-মহাসাগর সবকিছু সম্পর্কেই এতে উল্লেখ করা হয়েছে। মানবজাতির স্বভাব-প্রকৃতি, আত্মিক উৎকর্ষ ও নৈতিক অধঃপতন ও এর পরিণতির কথা এতে বিধৃত হয়েছে। পূর্ববর্তী জাতিসমূহের ঘটনা, নবি-রাসুলগণের বিবরন, পূণ্যবান ও পাপীদের অবস্থা এবং ইহ-পরকালের নানান অদৃশ্য ও অজানা বিষয় এ মহাগ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে। তাই আল- কুরআন বহুবিধ জ্ঞানের ভাণ্ডার এবং মানুষের সফলতা ও ব্যর্থতার প্রকৃত মানদণ্ড।

আল-কুরআনে মানব জাতির জন্য প্রয়োজনীয় সকল বিধিবিধান ও আইনকানুন বর্ণিত হয়েছে। কীভাবে চললে মানুষ দুনিয়া ও আখিরাতে শান্তি লাভ করবে এর দিকনির্দেশনাও আল-কুরআনে বর্ণিত আছে। এটি মানুষকে সিরাতুল মুস্তাকিম তথা চিরসত্য ও সুন্দর পথে পরিচালিত করে। এটি আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে মানব জাতির জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ, অমূল্য ও অদ্বিতীয় সম্পদ।

এর গুরুত্ব বর্ণনায় মহানবি (সা.) বলেছেন,

“নিশ্চয়ই এই কুরআন আল্লাহর রজ্জু (রশি), অতি উজ্জ্বল আলো এবং উপকারী মহৌষধ। যে ব্যক্তি (কুরআন) দৃঢ়ভাবে আঁকড়িয়ে ধরবে তার জন্য এটা মুক্তির সনদ হবে এবং যে এটা মেনে চলবে সে নাজাত পাবে।”

(কানযুল উম্মাল)

(৭) নাযিরা তিলাওয়াত

কুরআন মাজিদ আল্লাহর কালাম বা বাণী। কুরআন মাজিদ দেখে দেখে পড়াকে নাযিরা তিলাওয়াত বলে।

দেখে দেখে কুরআন তিলাওয়াত একটি উত্তম ইবাদাত। কুরআনের প্রতিটি হরফ তিলাওয়াতের জন্য মহান আল্লাহ তিলাওয়াতকারীকে অন্তত দশটি নেকী দান করেন। যে ঘরে কুরআন মাজিদ তিলাওয়াত করা হয় সে ঘরে আল্লাহর রহমত নাযিল হয়। কুরআন পাঠে দক্ষ ব্যক্তির মর্যাদা অনেক।

এমনকি যে কুরআন পড়তে গিয়ে আটকে যায় এবং তিলাওয়াত তার জন্য কষ্টসাধ্য হয় তাকেও আল্লাহ তা’আলা রকুরআন পাঠে দ্বিগুণ সওয়াব দেবেন বলে মহানবি (সা.) উল্লেখ করেছেন।

আর যে অন্তরে কুরআন মাজিদের একটি আয়াতও নেই মহানবি (সা.) সে অন্তরকে একটি শূন্য ঘরের সাথে তুলনা করেছেন। কাজেই আমরা শুদ্ধরুপে কুরআন তিলাওয়াত শিখব এবং প্রত্যহ তিলাওয়াত করব।

(৮) কুরআন তিলাওয়াতের আদব

কুরআন তিলাওয়াতের কতিপয় আদব নিচে দেওয়া হলো-

  • সুন্দরভাবে ওযু করে পবিত্র স্থানে কিবলামুখী হয়ে বসা।
  • পবিত্র কুরআনকে কোন কিছুর উপরে রেখে তিলাওয়াত করা।
  • তিলাওয়াতের পূর্বে কয়েকবার দরূদ শরিফ পাঠ করা।
  • আউযুবিল্লাহ ও বিসমিল্লাহ পড়ে তিলাওয়াত শুরু করা।
  • ধীরে ধীরে তাজবিদের সাথে মিষ্টি-মধুর স্বরে তিলাওয়াত করা।
  • তিলাওয়াতের সময় হাসি-তামাশা বা কোন রুপ কথা বার্তা না বলা
  • একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে তিলাওয়াত করা।
  • তিলাওয়াত শেষে কুরআনকে খুব সম্মানের সাথে কোন উঁচু স্থানে রেখে দেওয়া।

কুরআন মাজিদের মাহাত্ম্য ও মর্যাদা অতুলনীয়। সৃষ্টিজগতের সকল কিছুর ইহকালীন ও পরকালীন মঙ্গল এ কিতাবে বর্ণিত বিধি-নিষেধ মেনে চলার মধ্যে নিহিত। এ পবিত্র কালাম তিলাওয়াতের সময় এর মর্যাদা ও মাহাত্ম্যের প্রতি লক্ষ্য রাখা একান্ত অপরিহার্য কর্তব্য।

সুতরাং অত্যন্ত আদবের সাথে এ কিতাব তিলাওয়াত করা উচিত। বাহ্যিক আদব রক্ষার সাথে সাথে মানসিক প্রস্তুতি গ্রহণ করা দরকার। তিলাওয়াতের সময় নিজের মনকে যাবতীয় কলুষ থেকে মুক্ত করে আল্লাহর অভিমুখী করে তিলাওয়াত শুরু করা উচিত।

আলোচনাটি এখানেই সমাপ্ত হচ্ছে। আশা করি পোষ্টটি থেকে আমরা আল কুরআন কি ও আল কুরআনের সংক্ষিপ্ত পরিচয় জানতে পেরেছি। পরবর্তী পোষ্টে আরও ব্যাপক ও বিস্তারিতভাবে পবিত্র আল কুরআনের পরিচয়কে তুলে ধরার চেষ্টা করব, ইংশাআল্লাহ।

Queries discussed: আল কুরআনের পরিচয়, কুরআর শব্দের অর্থ কি, কুরআন কাকে বলে, আল কুরআন কি, আল কুরআন অবতরণ, আল কুরআন সংরক্ষণ, আল কুরআন সংকলন, আল-কুরআনের বৈশিষ্ট্য, আল-কুরআনের গুরুত্ব, নাযিরা তিলাওয়াত, কুরআন তিলাওয়াতের আদব।

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/islam

Islamic information to the point!View Author posts

You cannot copy content of this page