Skip to content

 

আসমানি কিতাব কাকে বলে, বলতে কী বুঝায়? এটি কয়টি বা কয়খানা? আসমানি কিতাব ১০৪ খানার নাম কী কী?

আসমানি কিতাব কাকে বলে, বলতে কি বুঝায় এটি কয়টি বা কয়খানা আসমানি কিতাবসমূহ ১০৪ খানার নাম কি কি

(১) আসমানি কিতাব কাকে বলে?

ইসলামি পরিভাষায়, যেসব কিতাব আল্লাহ তায়ালা মানবজাতির হিদায়াতের জন্য দিকনির্দেশনা স্বরূপ নাজিল করেছেন তাকে আসমানি কিতাব বলে। অন্যকথায় আল্লাহ তায়ালার বাণী সম্বলিত গ্রন্থাবলিকে আসমানি কিতাব বলা হয়।

(২) আসমানি কিতাব বলতে কী বুঝায়?

কিতাব শব্দের অর্থ লিপিবদ্ধ বা লিখিত বস্তু। এর প্রতিশব্দ হলো গ্রন্থ, পুস্তক, বই ইত্যাদি। আসমানি কিতাব হলো এমন গ্রন্থ যা আল্লাহ তায়ালা থেকে অবতীর্ণ হয়েছে।

সুতরাং আসমানি কিতাব হলো আল্লাহর বাণীসমষ্টি। আল্লাহ তায়ালা জিবরাইল (আঃ)-এর মাধ্যমে তাঁর বাণী রাসুলগণের নিকট প্রেরণ করেছেন। অতঃপর নবি-রাসুলগণ তা মানুষের নিকট পৌছে দিয়েছেন।

(৩) আসমানি কিতাবের বিষয়বস্তু

আল্লাহ তায়ালা আসমানি কিতাবসমূহে নানা বিষয়ের আলোচনা উপস্থাপন করেছেন। যেমন-

১. আল্লাহ তায়ালার সত্তাগত পরিচয়।

২. আল্লাহ তায়ালার গুণাবলির বর্ণনা।

৩. নবি-রাসুলগণের বর্ণনা।

৪. পূর্ববর্তী জাতিসমূহের বিবরণ।

৫. অবাধ্য ও কাফিরদের পরিণতির বিবরণ।

৬. হালাল-হারামের বর্ণনা।

৭. বিধি-বিধান সংক্রান্ত বিবরণ।

৮. শাস্তি ও সতর্কীকরণ বিষয়ে আলোচনা।

৯. উপদেশ ও সুসংবাদ সম্পর্কে বিবরণ।

১০. আকিদা সংক্রান্ত বিষয়সমূহের বিবরণ।

১১. পরকাল সংক্রান্ত বিষয়সমূহের বিবরণ ইত্যাদি।

(৪) আসমানি কিতাব কয়টি বা কয়খানা?

মহান আল্লাহ কুবআন কারীমে বারংবার বলেছেন যে, তিনি নবী ও রাসূলগণকে গ্রন্থাদি প্রদান করেছেন। কিন্তু এ সকল কিতাব ও সহীফার কোনো সংখ্যা কুরআন কারীমে বা কোনো সহীহ হাদীসে উল্লেখ করা হয় নি।

(৫) আসমানি কিতাব ১০৪ খানার নাম কী কী?

‘১০৪’ কিতাব ও সহীফার কথাটি আমাদের দেশে অত্যন্ত প্রসিদ্ধ। কোনো নির্ভরযোগ্য হাদীসে কথাটি পাওয়া যায় না। ১ লক্ষ ২৪ হাজার পয়গম্বর’ বিষয়ক যে হাদীসটি আবূ যার (রা) থেকে বর্ণিত হয়েছে, সে হাদীসের মধ্যে এ ১০৪ সহীফা ও কিতাবের কথাটি উল্লেখ করা হয়েছে। আমরা দেখেছি যে, ইবনে হিব্বানের উক্ত হাদিসটি অত্যন্ত দুর্বল কেউ কেউ এটিকে জাল হাদীস বলে উল্লেখ করেছেন।

যেহেতু আসমানি কিতাবের নির্দিষ্ট সংখ্যা কুরআনে আল্লাহ্‌ উল্লেখ করেন নি। রাসূল (সঃ)-এর সহীহ হাদীসেও প্রকৃত সংখ্যা উল্লেখ করা হয় নি, তাই এগুলোকে কোন সংখ্যায় সীমাবদ্ধ করে তার উপর বিশ্বাস রাখা ইমানদারের লক্ষণ নয়।

কেননা মুমিন ও মুত্তাকির পরিচয় দিতে গিয়ে আল্লাহ্‌ বলেন,

“এবং যারা তোমার উপর যা অবতীর্ণ করা হয়েছে ও তোমার পূর্বে যা অবতীর্ণ করা হয়েছিল, তদবিষয়ে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং পরকালের প্রতি যারা দৃঢ় বিশ্বাস রাখে”।

(সূরা বাকারা, আয়াত-৪)

এখানে কুরআনসহ ইতোপূর্বে যত কিতাব ও সহীফা নাযিল করা হয়েছে তত কিতাব ও সহীফার উপর বিশ্বাস করা একজন ইমানদারের বৈশিষ্ট্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

See also  আল-কুরআন শিক্ষার গুরুত্ব

এখন আমরা যদি ১০৪ খানা কিতাবের উপর ঈমান আনি আর আল্লাহ্‌র কিতাবের সংখ্যা যদি ১০৪ থেকে বেশি হয় তবে সকল কিতাবের উপর আমাদের বিশ্বাস স্থাপন করা হল না। এর এই মানে দাঁড়ায় যে আল্লাহ্‌র নাযিল করা সকল কিতাবের উপর ঈমান আনা হল না। আর তাহলে তো ঈমান পরিপূর্ণতা লাভ করতে পারবে না।

তাই আমাদের উচিৎ কুরআনসহ পূর্ববর্তী সকল কিতাবের উপর বিশ্বাস স্থাপন করা।

(৬) প্রসিদ্ধ আসমানি কিতাবসমূহ

বড় চারখানা কিতাব চারজন প্রসিদ্ধ রাসুলের উপর নাজিল হয়। এগুলো হলো-

১. তাওরাত – হযরত মুসা (আঃ)-এর উপর নাজিল হয়েছে। 

২. যাবুর – হযরত দাউদ (আঃ)-এর উপর নাজিল হয়েছে।

৩. ইঞ্জিল – হযরত ঈসা (আঃ)-এর উপর নাজিল হয়েছে। 

৪. কুরআন – বিশ্বনবি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর উপর নাজিল হয়েছে।

(৭) আসমানি কিতাবে বিশ্বাসের গুরুত্ব

আসমানি কিতাবসমূহে বিশ্বাস স্থাপন করা ইমানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আসমানি কিতাবসমূহে বিশ্বাস স্থাপন না করলে ইমানের মূল বিষয়ই নড়বড়ে হয়ে যায়। কেননা অসমানি কিতাবগুলোর মাধ্যমেই মানুষ আল্লাহ তায়ালা, নবি-রাসুল, ফেরেশতা, পরকাল ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে পেরেছে। এসব বিষয় সম্পর্কে পবিত্র আল-কুরআনের মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি।

যদি কেউ আসমানি কিতাবসমূহ ও তাতে বর্ণিত বিষয়সমূহে অবিশ্বাস করে তবে স্বভাবতই সে ইমানের অন্যান্য বিষয়গুলোও অস্বীকার করে। সুতরাং ইমান আনার জন্য আসমানি কিতাবসমূহের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা অপরিহার্য। অন্যথায় পূর্ণ মুমিন হওয়া যায় না।

আসমানি কিতাবসমূহ হলো সকল জ্ঞান ও বিজ্ঞানের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উৎস। এর মাধ্যমেই আমরা সৃষ্টিজগৎ, মানবসৃষ্টি, পরকাল ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে জানতে পারি। মানব জীবনে চলার পথ সম্পর্কে সঠিক দিকনির্দেশনা আসমানি কিতাবসমূহেই পাওয়া যায়। আসমানি কিতাবসমূহে বিশ্বাসই এসব বিষয়কে আমাদের বাস্তবজীবনে অনুশীলনের অনুপ্রেরণা দেয়।

(৮) সর্বশেষ আসমানি কিতাব ‘কুরআন’

আল-কুরআন আল্লাহ তায়ালার বাণী। মানবজাতির হিদায়াতের লক্ষ্যে আল্লাহ তায়ালা হযরত জিবরাইল (আঃ)-এর মাধ্যমে সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর উপর এ কিতাব নাজিল করেন। আল-কুরআনই হলো সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানি কিতাব।

নবি করিম (সাঃ)-এর ৪০ বছর বয়সে হেরাগুহায় ধ্যানমগ্ন থাকাবস্থায় সর্বপ্রথম সূরা আলাকের প্রথম ৫টি আয়াত নাজিল হয়। এভাবে পবিত্র কুরআন নাজিল শুরু হয়। অতঃপর রাসুল (সাঃ)-এর নবুয়তের ২৩ বছরে অল্প অল্প করে প্রয়োজন মাফিক সম্পূর্ণ কুরআন নাজিল হয়।

আল-কুরআন ৩০টি খণ্ডে বিভক্ত। এগুলোর প্রত্যেকটিকে এক একটি পারা বলা হয়। এর সূরা সংখ্যা ১১৪টি এবং রুকু সংখ্যা ৫৫৮টি।

(৯) কুরআনের নামকরণ

কুরআন অর্থ পঠিত। আল-কুরআন পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি পঠিত গ্রন্থ। প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাযে বাধ্যতামূলকভাবে কুরআন তিলাওয়াত করা হয়। এ দৃষ্টিকোণ থেকে এ মহাগ্রন্থকে কুরআন বলা হয়।

See also  আল-কুরআন সংরক্ষণ ও সংকলন

কুরআনের অন্য অর্থ একত্র করা বা জমা করা। আল-কুরআনে পূর্ববর্তী সকল আসমানি কিতাবের শিক্ষা ও মূলনীতি একত্র করা হয়েছে বিধায় একে কুরআন বলা হয়।

আল-কুরআনের বেশকিছু নাম রয়েছে। এগুলোর মধ্যে প্রসিদ্ধ নাম-

১. আল-কিতাব – গ্রন্থ।

২. আল-ফুরকান – (সত্য-মিথ্যার) পার্থক্যকারী।

৩. আল-হিকমা – জ্ঞান, প্রজ্ঞা।

৪. আল-বুরহান – সুস্পষ্ট প্রমাণ।

৫. আল-হক – সত্য।

৬. আন-নুর – জ্যোতি।

৭. আল-হুদা – পথনির্দেশ।

৮. আয-যিকর – উপদেশ।

৯. আশ-শিফা – নিরাময়।

১০. আল-মজিদ – সম্মানিত, মহিমান্বিত।

১১. আল-মাওয়িযা – সদুপদেশ।

১২. আর-রাহমাহ – অনুগ্রহ, দয়া ইত্যাদি।

(১০) কুরআনের বৈশিষ্ট্য ও মাহাত্ম্য

আল-কুরআন সর্বশ্রেষ্ঠ ও সবচেয়ে মর্যাদাবান গ্রন্থ। এটি দুনিয়ার সকল গ্রন্থ, এমনকি অন্যান্য আসমানি কিতাবের তুলনায় স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। এর সমকক্ষ আর কোনো কিতাব নেই।

আল-কুরআন পরিপূর্ণ ও পূর্ণাঙ্গ কিতাব। এ গ্রন্থ সকল জ্ঞান-বিজ্ঞানের আধার। সব বিষয়ের মূলনীতি এ গ্রন্থে বিদ্যমান।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, 

“আমি এই কিতাবে কোনো কিছুই বাদ দেই নি।”

(সূরা আল-আনআম, আয়াত ৩৮)

সুতরাং আল-কুরআন হলো পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ। মানবজীবনের প্রয়োজনীয় সকল বিষয়ের যথাযথ নির্দেশনা এ কিতাবে বিদ্যমান।

আল-কুরআন সর্বশেষ আসমানি কিতাব। আল্লাহ তায়ালা মহানবি (সাঃ)-এর মাধ্যমে ইসলামকে পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা হিসেবে ঘোষণা করেছেন। ফলে পৃথিবীতে আর কোনো নবি-রাসুল আসবেন না। কোনো আসমানি কিতাবও নাজিল হবে না। কুরআনের শিক্ষাই কিয়ামত পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।

তা ছাড়া পূর্ববর্তী সকল আসমানি কিতাবের সার-নির্যাসও কুরআনে রয়েছে। সুতরাং এটি সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানি কিতাব। আল-কুরআন সন্দেহমুক্ত কিতাব।

দুনিয়ার কোনো গ্রন্থই নির্ভুল বা অকাট্য নয়। কিন্তু কুরআন নির্ভুল এবং এটি সন্দেহেরও বাইরে। সন্দেহের উদ্রেক হতে পারে এমন কোনো বিষয়ই এতে নেই।

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“এটি (কুরআন) সেই কিতাব, যাতে কোনো সন্দেহ নেই।”

(সূরা আল-বাকারা, আয়াত ২)

সর্বজনীন কিতাব হিসেবেও আল-কুরআনের মর্যাদা অনন্য। এটি কোনো দেশ, কাল বা জাতির জন্য সীমাবদ্ধ নয়। বরং সকল যুগের সব মানুষের জন্য এটি উপদেশ ও পথনির্দেশক। সুতরাং এটি সর্বজনীন কিতাব।

আল-কুরআন একমাত্র অবিকৃত গ্রন্থ। নাজিলের পর থেকে আজ পর্যন্ত এর একটি হরকত বা নুকতাও পরিবর্তিত হয়নি। স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা এর রক্ষক।

তিনি বলেন,

“আমিই কুরআন অবতীর্ণ করেছি এবং অবশ্য আমিই এর সংরক্ষক।”

(সূরা আল-হিজর, আয়াত ৯)

বস্তুত আল-কুরআন অবিকৃত ও অপরিবর্তিত গ্রন্থ। আজ পর্যন্ত এতে কোনোরূপ সংযোজন, সংশোধন, পরিমার্জন, পরিবর্ধন বা বিয়োজন হয়নি, আর ভবিষ্যতেও হবে না।

কুরআন সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ ও মর্যাদাপূর্ণ কিতাব। এতে আরবের সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্য, ইতিহাস, ভবিষ্যদ্বাণী, বিজ্ঞান, সৃষ্টি রহস্য ইত্যাদি বিষয় খুব সুন্দরভাবে লিপিবদ্ধ রয়েছে। এটি যেহেতু আল্লাহ তায়ালার বাণী সুতরাং এর মর্যাদাও তাঁরই ন্যায় অতুলনীয়।

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“বস্তুত এটি সম্মানিত কুরআন। সংরক্ষিত ফলকে লিপিবদ্ধ।”

(সূরা আল-বুরুজ, আয়াত ২১-২২)

আল-কুরআন মহান আল্লাহর বাণী। এটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য ও মহিমায় ভাস্বর। এটি পরিবর্তন, বিকৃতি, সংযোজন-বিয়োজন থেকে মুক্ত ও পবিত্র। এটিই সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ আসমানি কিতাব।

আমরা পবিত্র কুরআনের মাহাত্ম্য অনুধাবন করব। ভক্তি ও সম্মান সহকারে আমরা কুরআন পাঠ করব এবং এর শিক্ষা সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান লাভ করে তা আমাদের বাস্তব জীবনে কার্যকর করব। কুরআনই হবে আমাদের জীবন চলার পাথেয়।

(১১) নৈতিক জীবন গঠনে আসমানি কিতাবের ভূমিকা

পথহারা ও পথভ্রষ্ট মানুষের হিদায়াতের জন্য আল্লাহ তায়ালা নবি-রাসুলগণের মাধ্যমে যে কিতাব অবতীর্ণ করেছেন তাই আসমানি কিতাব।

See also  কুরআন অর্থ, কি, কাকে বলে? পবিত্র কুরআনের সংক্ষিপ্ত পরিচয়

আসমানি কিতাব হলো আল্লাহ তায়ালার বাণী ও বিধি-নিষেধের সমন্বিত গ্রন্থ। মানব জীবনকে নৈতিক ও আদর্শিক পথে পরিচালনা করতে আসমানি কিতাব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

আসমানি কিতাবগুলো মানুষকে আল্লাহ তায়ালার সত্তা, গুণাবলি, ক্ষমতা ইত্যাদি সম্পর্কে ধারণা প্রদান করে। তাছাড়া মানুষ আসমানি কিতাবের বর্ণনা দ্বারা পরকাল, জান্নাত-জাহান্নাম ইত্যাদি বিষয়ের জ্ঞান ও পরিচয় জানতে পারে। এসব বিষয়ের জ্ঞান মানুষকে সত্য ও সুন্দর জীবন গঠনে অনুপ্রাণিত করে।

আল্লাহ তায়ালা আসমানি কিতাবসমূহে বহু নবি-রাসুলের ঘটনাও বর্ণনা করেছেন। পাশাপাশি তাঁদের অনুসারী পুণ্যবান ও মুমিনদের সফলতার কাহিনীও তুলে ধরেছেন। আসমানি কিতাবের মাধ্যমে মানুষ এসব কাহিনী ও ঘটনা জানতে পারে। তাঁদের সফলতা ও সম্মানের মূল চাবিকাঠি হিসেবে নৈতিকতার গুরুত্ব বুঝতে পারে। ফলে মানুষ নৈতিক জীবন গঠনে উৎসাহিত হয়।

নবি-রাসুলগণের ঘটনার পাশাপাশি আসমানি কিতাবসমূহে কাফির, মুশরিক ও পাপাচারীদের ঘটনাও বর্ণনা করা হয়েছে। এরূপ করা হয়েছে এজন্য যে, মানুষ যেন এসব ঘটনা থেকে শিক্ষা লাভ করে।

আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ আসমানি কিতাব আল-কুরআনে ফিরআউন, নমরূদ, কারুন প্রমুখ নাফরমানের ঘটনা বর্ণনা করেছেন। আদ, ছামুদ ইত্যাদি পাপাচারী জাতিসমূহের কথাও বর্ণনা করা হয়েছে। এ ছাড়াও আল্লাহ তায়ালার প্রতি অকৃতজ্ঞতা, অবাধ্যতা, গর্ব-অহংকার, পাপাচার, মিথ্যাচার, অনৈতিক ও অশ্লীল কার্যকলাপের দরুন তাদের শোচনীয় পরিণতির কথা আমরা আসমানি কিতাবের মাধ্যমেই জানতে পারি। এসব ঘটনা আমাদের অনৈতিক ও অন্যায় কার্যাবলি থেকে বিরত থাকতে এবং সৎ ও মানবিক জীবনযাপনে অনুপ্রাণিত করে।

জ্ঞান বা শিক্ষা হলো এক প্রকার আলো। এটি মানুষের অন্তর চক্ষুকে খুলে দেয়। শিক্ষিত মানুষ ব্যর্থতার কারণ ও সফলতার সোপান সম্পর্কে অবগত থাকে। সুশিক্ষিত মানুষ নৈতিক ও উন্নত চরিত্রের অধিকারী হয় এবং ইহকালীন ও পরকালীন জীবনে শান্তি ও সফলতা লাভ করে থাকে।

আসমানি কিতাব মূলত জ্ঞানের সর্বোত্তম উৎস। আসমানি কিতাব মানুষকে সবধরনের কল্যাণের পথনির্দেশ করে।

আল-কুরআন প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“এটি সেই কিতাব যাতে কোনো সন্দেহ নেই। এটি মুত্তাকিদের জন্য পথনির্দেশক।”

(সূরা আল-বাকারা, আয়াত ০২)

আল-কুরআন হলো সকল জ্ঞানের আধার। মানবজীবনের প্রয়োজনীয় সকল জ্ঞান-বিজ্ঞানের মূলনীতি ও সারকথা এ গ্রন্থে নির্ভুলভাবে বর্ণিত হয়েছে। এভাবে আল-কুরআনের শিক্ষা মানুষকে সুশিক্ষিত করে তোলে ও নৈতিকতা বিকাশে সহায়তা করে।

আসমানি কিতাবসমূহে মানুষকে নীতি-নৈতিকতার আদর্শ অনুসরণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এসব গ্রন্থে উন্নত আদর্শ ও সৎগুণাবলির নানা বিষয় অত্যন্ত সুন্দরভাবে বর্ণিত হয়েছে। পাশাপাশি যেসব কাজ ও অভ্যাসের দ্বারা নৈতিক জীবনাচরণ লঙ্ঘিত হয় সে সম্পর্কে সতর্ক ও নিষেধ করে দেওয়া হয়েছে।

তাওরাত, যাবুর, ইঞ্জিল ইত্যাদি কিতাব পাঠ করলেও মানবিকতার বহু দৃষ্টান্ত দেখতে পাওয়া যায়। পবিত্র কুরআন নাজিল হওয়ার পর থেকে অন্য কিতাবগুলোর কার্যকারিতা রহিত করা হয়েছে।

সর্বোপরি আল-কুরআনে নীতি-নৈতিকতার পরিপূর্ণ দিকনির্দেশনা রয়েছে। এ কিতাব অনুসরণে জীবন পরিচালনা করলে মানব জীবন নীতি-নৈতিকতামণ্ডিত সুন্দর ও শান্তিময় হয়।

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/islam

Islamic information to the point!View Author posts

You cannot copy content of this page